আইনসভার ক্ষমতা হ্রাসের কারণসমূহ

আইনসভার ক্ষমতা হ্রাসের কারণসমূহ আলোচনা কর।

earn money

ভূমিকাঃ একটি দেশের আইনসভা রাষ্ট্রের আইন প্রণয়ন, সংশোধন ও বাতিলের মূল কেন্দ্রবিন্দু। তবে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংবিধানিক ও সামাজিক কারণে অনেক সময় আইনসভার ক্ষমতা হ্রাস পায়। আইনসভার ক্ষমতা হ্রাস মানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভারসাম্য নষ্ট হওয়া, যা রাষ্ট্রের সার্বিক শাসন ব্যবস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বর্তমান বিশ্বে অনেক দেশে আইনসভার ক্ষমতা সীমিত হওয়ার একাধিক কারণ বিদ্যমান।

আইনসভার ক্ষমতা হ্রাসের কারণসমূহ

১. নির্বাহী বিভাগের আধিপত্যঃ বেশিরভাগ দেশে নির্বাহী বিভাগ আইনসভাকে নিয়ন্ত্রণ করে। বিশেষ করে রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর অতিরিক্ত ক্ষমতা আইনসভার কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। আইন প্রণয়ন ও বাজেট অনুমোদনের ক্ষেত্রে নির্বাহী বিভাগের চাপ আইনসভার স্বাধীনতা হ্রাস করে।

২. সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে ক্ষমতা সীমিতকরণঃ অনেক দেশে সংবিধান সংশোধন করে আইনসভার ক্ষমতা কমানো হয়। এটি প্রধানত স্বৈরাচারী শাসক বা একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর ফলে আইনসভা কেবল আনুষ্ঠানিক অনুমোদনের প্রতিষ্ঠান হিসেবে রয়ে যায়।

ইউটিউবে ভিডিও লেকচার দেখুনঃ


আরো পড়ুনঃ উত্তম সংবিধানের বৈশিষ্ট্য ও শ্রেণীবিভাগ লিখ

৩. বিচার বিভাগের অতিরিক্ত হস্তক্ষেপঃ বিচার বিভাগ যদি আইনসভাকে নিয়ন্ত্রণ করে বা আইনসভার গৃহীত আইনগুলো বাতিল করে দেয়, তবে আইনসভার কার্যকারিতা কমে যায়। অনেক সময় সাংবিধানিক রায়ের মাধ্যমে আইনসভার ক্ষমতা সীমিত করা হয়।

৪. দলীয় রাজনীতি ও স্বার্থবাদী আচরণঃ আইনসভার সদস্যরা যদি দলীয় স্বার্থে পরিচালিত হয় এবং স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করতে পারে, তবে তাদের ক্ষমতা হ্রাস পায়। দলীয় প্রধানের প্রভাবের কারণে আইনসভার ভূমিকা কমে গিয়ে কেবল নির্দিষ্ট দলের নীতির প্রতিফলন ঘটায়।

৫. সংবাদমাধ্যম ও জনমতের অবমূল্যায়নঃ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সংবাদমাধ্যম ও জনমতের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে যদি আইনসভা জনগণের স্বার্থ উপেক্ষা করে এবং শুধুমাত্র রাজনৈতিক নেতাদের আদেশ পালন করে, তাহলে তার শক্তি কমতে থাকে এবং বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হয়।

৬. নিয়ন্ত্রিত বা প্রতীকী নির্বাচন ব্যবস্থাঃ যেখানে নির্বাচন নিয়ন্ত্রিত বা কারসাজির মাধ্যমে পরিচালিত হয়, সেখানে প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব থাকে না। অনির্বাচিত বা দুর্বল জনপ্রতিনিধিরা আইনসভায় প্রবেশ করলে এর কার্যকারিতা কমে যায় এবং আইনসভা শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকতা পালনকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়।

৭. সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপঃ সামরিক শাসন বা সেনাবাহিনীর প্রভাবশালী ভূমিকা আইনসভার ক্ষমতা হ্রাসের অন্যতম কারণ। অনেক দেশে সামরিক বাহিনী সরাসরি বা পরোক্ষভাবে আইনসভার কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে, যা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে দুর্বল করে।

আরো পড়ুনঃ সংসদীয় সরকার বলতে কী বুঝ

৮. অর্থনৈতিক ও বহিরাগত চাপঃ অনেক সময় বৈদেশিক ঋণদাতা সংস্থা, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বা প্রভাবশালী রাষ্ট্রসমূহ একটি দেশের আইনসভাকে নিয়ন্ত্রণ করে। এর ফলে আইনসভা স্বাধীনভাবে নীতি নির্ধারণ করতে পারে না এবং রাজনৈতিক স্বার্থের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

উপসংহারঃ আইনসভার ক্ষমতা হ্রাস গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর এবং রাষ্ট্রের সুশাসন নিশ্চিত করতে আইনসভার স্বাধীনতা অপরিহার্য। জনগণের অংশগ্রহণ, সঠিক প্রতিনিধিত্ব, স্বচ্ছ নির্বাচন ও সাংবিধানিক ভারসাম্য রক্ষা করার মাধ্যমে আইনসভার কার্যকারিতা নিশ্চিত করা সম্ভব। আইনসভার প্রকৃত ক্ষমতা নিশ্চিত না হলে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল হয়ে পড়বে, যা রাষ্ট্রের সার্বিক স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।

Shihabur Rahman
Shihabur Rahman
Hey, This is Shihabur Rahaman, B.A (Hons) & M.A in English from National University.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

ফেসবুক পেইজ

কোর্স টপিক