নির্বাচকমণ্ডলীর সংজ্ঞা দাও।
ভূমিকাঃ নির্বাচকমণ্ডলী (Electoral College) হলো একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া বা প্রতিষ্ঠান, যা সাধারণত গণতান্ত্রিক নির্বাচনী ব্যবস্থার অংশ হিসেবে কোনো রাষ্ট্রের শাসনক্ষমতা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি বিশেষভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, তবে অন্যান্য কিছু দেশেও নির্বাচকমণ্ডলীর ধারণা বিদ্যমান।
নির্বাচকমণ্ডলীর ধারণাঃ নির্বাচকমণ্ডলী এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে জনগণ সরাসরি সরকারপ্রধান বা উচ্চপদস্থ নেতাদের নির্বাচন না করে নির্বাচকদের (Electors) নির্বাচন করে, যারা পরবর্তীতে নির্দিষ্ট পদের জন্য ভোট প্রদান করে। এটি একধরনের পরোক্ষ ভোটদান পদ্ধতি, যা সরাসরি গণভোটের বিকল্প হিসেবে গৃহীত হয়।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা:
নির্বাচকমণ্ডলী (Electorate) বলতে একটি দেশের সেই সকল নাগরিকের সমষ্টিকে বোঝায়, যারা আইন অনুযায়ী ভোটাধিকার প্রাপ্ত এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করে।
জে. ডব্লিউ. গার্নার (J.W. Garner): “নির্বাচকমণ্ডলী হলো সেই নাগরিকদের সমষ্টি, যারা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সরকারের রূপ ও কার্যাবলী নির্ধারণ করে এবং যারা রাষ্ট্রের কার্য পরিচালনার জন্য নেতাদের নির্বাচন করে।“
উইলবি (Willoughby): “প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হচ্ছে নির্বাচকমণ্ডলী।“
আরো পড়ুনঃ ক্ষমতার পূর্ণ স্বতন্ত্রীকরণ সম্ভব নয়, বাঞ্ছনীয়ও নয়
লাস্কি (Laski): “নির্বাচকমণ্ডলী বলতে সেই ভোটারদের বোঝায়, যারা রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের নির্বাচন করে।“
R. J. Gettel বলেন, “নির্বাচকমণ্ডলী কার্যত সরকারের একটি স্বতন্ত্র ও অত্যন্ত প্রভাবশালী শাখা। কেননা এর ব্যাপক ক্ষমতা রয়েছে এবং তা সরকারি ব্যবস্থায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রযোজ্য।“
সুতরাং, নির্বাচকমণ্ডলী হলো সেই ভোটাধিকারপ্রাপ্ত নাগরিকদের সমষ্টি, যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রতিনিধি নির্বাচন করে সরকার গঠনে এবং শাসন কার্য পরিচালনায় ভূমিকা পালন করে।
উপসংহারঃ নির্বাচকমণ্ডলী একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন ব্যবস্থা, যা বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে ব্যবহৃত হয়। এটি জনমতের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার পাশাপাশি নির্দিষ্ট কাঠামোর ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ দেয়। তবে এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, যা গণতান্ত্রিক পদ্ধতির কার্যকারিতা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারে।