রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারের বৈশিষ্ট্য লেখ।
ভূমিকা: রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকার (Presidential System) এমন একটি শাসনব্যবস্থা যেখানে রাষ্ট্রপ্রধান এবং সরকারপ্রধান হিসেবে রাষ্ট্রপতি (President) কার্যনির্বাহী ক্ষমতা ভোগ করেন। এই ব্যবস্থা সাধারণত যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া, নাইজেরিয়া এবং অন্যান্য কিছু দেশে বিদ্যমান। রাষ্ট্রপতি জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন এবং নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। গণতন্ত্র ও ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকার কাঠামোবদ্ধভাবে কাজ করে, তবে কখনও কখনও এটি স্বৈরতন্ত্রের ঝুঁকিও সৃষ্টি করতে পারে।
রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারের বৈশিষ্ট্য
১. নির্বাহী বিভাগ পৃথক ও স্বাধীনঃ রাষ্ট্রপতিশাসিত শাসনব্যবস্থায় নির্বাহী বিভাগ আইনসভা (Legislature) থেকে পৃথক এবং স্বাধীনভাবে কাজ করে। রাষ্ট্রপতি সরাসরি জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হন এবং আইনসভার প্রতি দায়বদ্ধ নন।
২. শক্তিশালী রাষ্ট্রপতিঃ রাষ্ট্রপতি সরকারপ্রধান এবং রাষ্ট্রপ্রধান—উভয় ভূমিকায় থাকেন। তিনি মন্ত্রী নিয়োগ ও বরখাস্ত করতে পারেন এবং নীতিনির্ধারণ ও প্রশাসনিক কাজ পরিচালনা করেন।
৩. নির্দিষ্ট মেয়াদঃ রাষ্ট্রপতির নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে (যেমন যুক্তরাষ্ট্রে ৪ বছর, ব্রাজিলে ৪ বছর)। নির্ধারিত সময়ের আগে তাকে সাধারণত অপসারণ করা যায় না, যদি না সংবিধান অনুযায়ী বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় (যেমন ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়া)।
আরো পড়ুনঃ ক্ষমতার পূর্ণ স্বতন্ত্রীকরণ সম্ভব নয়, বাঞ্ছনীয়ও নয়
৪. আইনসভা ও নির্বাহী বিভাগের পৃথক ক্ষমতাঃ এই ব্যবস্থায় আইনসভা (Parliament/Congress) ও নির্বাহী বিভাগ (Executive) একে অপরের কাজে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারে না। তবে উভয় বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য (Checks and Balances) রক্ষা করা হয়।
৫. আইনসভার ওপর রাষ্ট্রপতির নিয়ন্ত্রণ সীমিতঃ রাষ্ট্রপতি আইনসভার অনুমোদন ছাড়াই অনেক নীতি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন, তবে তিনি সরাসরি আইনসভাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না।
৬. মন্ত্রীপরিষদের দায়বদ্ধতা রাষ্ট্রপতির প্রতিঃ রাষ্ট্রপতি তার মন্ত্রীপরিষদের সদস্যদের মনোনীত করেন এবং তারা রাষ্ট্রপতির প্রতি দায়বদ্ধ থাকেন, আইনসভার প্রতি নয়।
৭. দ্বৈত নেতৃত্বের অনুপস্থিতিঃ রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারে রাষ্ট্রপতি এককভাবে সরকার পরিচালনা করেন। পার্লামেন্টারি পদ্ধতির মতো পৃথক রাষ্ট্রপ্রধান (রাষ্ট্রপতি/রাজা) ও সরকারপ্রধান (প্রধানমন্ত্রী) থাকেন না।
৮. আইনসভা ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাঃ আইনসভা ও বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগ থেকে স্বাধীনভাবে কাজ করে। বিচার বিভাগ সংবিধান ও আইন মোতাবেক সিদ্ধান্ত নেয় এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার অপব্যবহার হলে তা প্রতিরোধ করতে পারে।
৯. নীতি প্রণয়নে রাষ্ট্রপতির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাঃ রাষ্ট্রপতি বিভিন্ন নীতি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে নেতৃত্ব দেন। তার প্রশাসন কর সংগ্রহ, বাজেট পরিকল্পনা, পররাষ্ট্রনীতি ও সামরিক কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে।
১০. স্থিতিশীল সরকার ব্যবস্থাঃ রাষ্ট্রপতি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকেন, ফলে সরকার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। সংসদীয় পদ্ধতির মতো বারবার সরকার ভাঙার সম্ভাবনা থাকে না।
আরো পড়ুনঃ ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সার্বভৌম
উপসংহারঃ রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকার এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে রাষ্ট্রপতি সর্বময় নির্বাহী ক্ষমতা ভোগ করেন, তবে আইনসভা ও বিচার বিভাগ তার ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। যদিও এটি শক্তিশালী ও স্থিতিশীল সরকার গঠনে সহায়ক, তবে কোনো রাষ্ট্রপতির স্বেচ্ছাচারিতা বা একনায়কতন্ত্রে ঝুঁকির সম্ভাবনা থাকলে আইনসভার কার্যকর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।