প্রশ্নঃ যুক্তফ্রন্ট কী? ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট গঠনের পটভূমি আলোচনা কর। এর ফলাফল কী হয়েছিল?
ভুমিকাঃ ১৯৫৪ সালে তৎকালীন পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক নির্বাচন বাঙালির রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে পাকিস্তানের অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল মুসলিম লীগের শোচনীয় পরাজয় ঘটে। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র গঠনের পর থেকেই, পূর্ব বাংলার মানুষ পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ, নির্যাতন ভোগ করতে থাকে। ৫৪’ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে শাসকগোষ্ঠীর পরাজয় ছিল বাঙালি কর্তৃক এক নিরব যুদ্ধ। যদিও যুক্তফ্রন্ট সরকার মাত্র ৫৬ দিন স্থায়ী হয়, কিন্তু এটি ছিল পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এক ঐতিহাসিক বিজয়।
যুক্তফ্রন্ট-এর পরিচয়:
যুক্তফ্রন্ট হলো ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে পূর্ববঙ্গ প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে মুসলিম লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্যে আওয়ামী মুসলিম লীগ এবং অন্যান্য বিরোধী দল মিলে গঠিত একটি সমন্বিত রাজনৈতিক মঞ্চ। সহজভাবে বলতে গেলে, যুক্তফ্রন্ট হলো ১৯৫৪ সালের পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দিতা করার জন্য ৪টি বিরোধী দলের সমন্বয়ে গঠিত একটি জোট।
১৯৫৩ সালের ৪ ডিসেম্বর, আওয়ামী লীগ (ভাসানী), কৃষক শ্রমিক পার্টি (এ কে ফজলুল হক), নেজামে ইসলাম পার্টি (মাওলানা আতাহার আলী), বামপন্থী গণতন্ত্রী পার্টি (হাজী মোহাম্মদ দানেশ) ও পাকিস্তান গণতন্ত্রী দল একসাথে মিলে যুক্তফ্রন্ট গঠন করে। এই জোটের মধ্যে একাধারে গণতন্ত্রপন্থী, মধ্যমপন্থী, বামপন্থী ও ইসলামীপন্থী মানসিকতার সমন্বয়ে গঠিত। যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনি প্রতীক ছিল “নৌকা” এবং মুসলিম লীগের নির্বাচনী প্রতীক ছিল “হারিকেন”।
আরো পড়ুনঃ স্বাধীন বাংলাদেশের অভভুদয়ে বাংলা ভাষার অবদান আলোচনা করো
যুক্তফ্রন্টের দলগুলো হলোঃ
- মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে আওয়ামী মুসলিম লীগ;
- শের-ই-বাংলা এ কে ফজলুল হকের নেতৃত্বে কৃষক প্রজা পার্টি;
- মাওলানা আতাহার আলীর নেজামে ইসলামী;
- হাজী মোহাম্মদ দানেশ এবং মাহমুদ আলি সিলেটির নেতৃত্বে বামপন্থী গণতন্ত্রী দল ও
- পাকিস্তান গণতন্ত্রী দল।
১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট গঠনের পটভূমিঃ
ভাষা আন্দোলনের পরবর্তী সময়ে ১৯৫৪ সালে তৎকালীন পাকিস্তানে একটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনের মাধ্যমেই বাঙালি জাতিয়তাবাদের প্রথম বিজয় সূচিত হয়। ১৯৫৪ সালের এই নির্বাচনের মাধ্যমেই পাকিস্তানের তদানীন্তন মুসলিমলীগের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে বাংলার অধিকার সচেতন জনতা যুক্তফ্রন্টের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন গড়ে তোলে এবং বাংলার ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। মূলত অনেকগুলো কারণে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়। নিম্নে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
১. লাহোর প্রস্তাব সংশোধন: মূল লাহোর প্রস্তাবে আঞ্চলিক স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি মুসলিম লীগ যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা ১৯৪৬ সালের মুসলিম লীগের এক সম্মেলনে সংশোধন করা হয়। এ ঘোষণার ফলে বাঙালিদের মধ্যে মারাত্মক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই শাসকগোষ্ঠী পূর্ববাংলার জনগণের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ শুরু করায় জনগণের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দেয় । এটি ছিল ‘যুক্তফ্রন্ট’ গঠনের অন্যতম কারণগুলোর মধ্যে একটি।
২. নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা: প্রচলিত সংবিধান অনুযায়ী পূর্ববাংলার প্রাদেশিক আইনসভার নির্বাচন ১৯৫১ সালেই অনুষ্ঠিত হবার কথা ছিল। কিন্তু ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ সরকার সে বছর নির্বাচন হতে দেয় নি। পূর্ববাংলা আইনসভার মেয়াদ তিন বছর বাড়ানো হয়। ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের নির্বাচন নিয়ে এরূপ টালবাহানার কারণে পূর্ববাংলায় তীব্র আন্দোলন গড়ে উঠে। ফলে ১৯৫৪ সালের মার্চ মাসে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য কয়েকটি দলের সমন্বয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা আলোচনা কর
৩. বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র: পাকিস্তানের জনগোষ্ঠীর মধ্যে পূর্ববাংলাই ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকের ভাষা ছিল বাংলা। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অনীহা প্রকাশ করায় পূর্ববাংলার ছাত্র ও বুদ্ধিজীবী মহলে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। তার উপর উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেওয়ায় পূর্ববাংলার অধিবাসীরা প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠে। প্রতিবাদমুখর জনতার উপর পুলিশ গুলি চালালে বরকত, রফিক ও জব্বার প্রমুখ অনেক সম্ভাবনাময় তরুণ শহীদ হন। এভাবে ভাষা ও সংস্কৃতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার কারণে মুসলিম লীগ পূর্ববাংলার জনগণ হতে ধীরে ধীরে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এই শাসন, শোষণ ও নিপীড়ন এর জবাবে গড়ে ওঠে যুক্তফ্রন্ট।
৪. পূর্ববাংলার স্বার্থরক্ষার ক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতা : পাকিস্তানের মুসলিম লীগ সরকার পূর্ববাংলার জনগণের কোন আশাই মেটাতে পারে নি। পূর্ববাংলার তৎকালীন সরকারি নেতৃবৃন্দ ছিল স্বার্থলোভী ও মর্যাদালোভী। তাদের আচার-আচরণ ও কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে এটা স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, এ দল পূর্ববাংলার জনগণের দাবিদাওয়া পূরণ করতে অক্ষম। ফলে মুসলিম লীগের প্রতি পূর্ববাংলার জনগণ অসন্তুষ্ট হয়ে পড়ে। তাই তৎকালীন পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষায় গড়ে ওঠে যুক্তফ্রন্ট।
আরো পড়ুনঃ পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্যমূলক নীতিসমূহ আলোচনা কর
৫. লবণ সংকট : পূর্ববাংলায় তীব্র লবণ সংকট দেখা দেয় এবং প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী সোনালি আঁশের ক্ষেত্রেও চরম অরাজকতা সৃষ্টি হয়। এসব কার্যকলাপের দরুন জনগণ মুসলিম লীগ সরকারের প্রতি বিরূপ হয়ে উঠে। যুক্তফ্রন্ট ১৯৫৪ সালে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে নির্বাচনে অবতীর্ণ হয়। এ নির্বাচনে জয়লাভ করে বাঙালিরা গণতন্ত্রের ইতিহাসে এক নব অধ্যায়ের সূচনা করে। যুক্তফ্রন্টের এ বিজয়ের ফলে মুসলিম লীগের সুদীর্ঘ সাত বছরের কুশাসন, শোষণ ও অত্যাচারের সমাধি রচিত হয়।
৬. ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলন: পূর্ব-বাংলার জনগণ ১৯৫২ সালের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের ফলে আরো আত্বসচেতন ও ঐক্যবদ্ধ হয়ে উঠে এবং মুসলীম লীগের বিরোধী হয়ে উঠে। স্বভাবতই মুসলিম লীগের বিরোধীতা যুক্তফ্রন্ট গঠনে সহায়তা করে।
৭. পূর্ব-বাংলার প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ: ভারতীয় উপমহাদেশ বিভক্তির পর থেকেই পশ্চিম-পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীরা পূর্ব-বাংলার জনগণের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ শুরু করে। এছাড়া মুসলীমলীগের চাটুকারিতা বাংলার জনগণের মনে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করে। যেটা ছিল ‘যুক্তফ্রন্ট’ গঠনের অন্যতম কারণগুলোর মধ্যে একটি।
৮. কাগজ, লবণ ও পাটশিল্পে অরাজকতা: পূর্ব-পাকিস্তানে উৎপাদিত সব কাগজ পশ্চিম পাকিস্তানে অবাধে পাঁচার হয়ে যেত, ফলে পূর্ব পাকিস্তানে কাগজের দাম অস্বাভাবিক ভাবে বাড়তে থাকে। পূর্ব-পাকিস্তানে তীব্র লবণ সংকট দেখা যায় এবং বাংলার প্রধান অর্থকরী ফসল পাটশিল্পে চরম অরাজকতা সৃষ্টি হয়। এমন এক পরিস্থিতিতে তৎকালীন বিরোধীদলগুলো যেমন: আওয়ামীলীগ, নেজামে ইসলাম, কৃষক-শ্রমিক পার্টি এবং গণতন্ত্রী পার্টি নিয়ে ‘যুক্তফ্রন্ট‘ গঠিত হয়।
৯. অনিয়মিত নির্বাচন: ভারতীয় উপমহাদেশ বিভক্তির পর পাকিস্তানে ১৯৫১ সালে নির্বাচনের কথা থাকলেও কেন্দ্রীয় সরকার পূর্ব-বাংলার আইনসভার মেয়াদ বৃদ্ধি করার ফলে ১৯৫৪ সালের আগে কোনো নির্বাচন সম্ভব হয়নি। এরকম অনিয়মিত নির্বাচন নিয়ে মুসলিম লীগের টালবাহানার বিরুদ্ধে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়।
১০। আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন: পূর্ব-পাকিস্তানের জনগণের কাছ থেকে তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার ক্ষমতা কুক্ষিগত করার নীতিতে বিশ্বাসী ছিল। তাই পূর্ব পাকিস্তানে স্বায়ত্তশাসন বিকশিত হতে পারেনি। অথচ পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলো স্বায়ত্বশাসন প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ ছিল। তাই ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে যুক্তফ্রন্ট প্রতিষ্ঠিত হয়।
১১. পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষার্থে: ১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশ বিভক্তির পর থেকে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীরা পূর্ব-পাকিস্তানকে তাদের একটি উপনিবেশে পরিণত করার জন্য পূর্ব-পাকিস্তান থেকে পশ্চিম-পাকিস্তানে অবাধে সবকিছু পাঁচার করা শুরু করে। এভাবে পূর্ব-পাকিস্তানকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দেওয়ার পরিকল্পনাকে নসাৎ করার জন্য যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়।
যুক্তফ্রন্ট গঠনের ফলাফলঃ
১৯৫৪ সালের ১০ মার্চ যুক্তফ্রন্ট নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়াই করে মুসলমানদের জন্য সংরক্ষিত ২২৭ টি আসনের মধ্যে ২২৩ টি আসন লাভ করেন । এই নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গোপালগন্জ আসনে প্রার্থী হয়ে জয়লাভ করেন । তিনি ১৯৫৪ সালের ৩ এপ্রিল যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রিসভা গঠন করা হলে যুক্তফ্রন্ট সরকারের কৃষি , সমবায় ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন । ১৯৫৪ সালের ৩০ মে মাত্র ৫৬ দিন ক্ষমতায় থাকার পর যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রিসভা ভেঙ্গে দেওয়া হয় । তবে পরবর্তীতে এর সুদূরপ্রসারি ফলাফল পরিলক্ষিত হয়।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা আলোচনা কর
১. ঐক্যবদ্ধ জনমত সৃষ্টিঃ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী পূর্ব বাংলার জনগণের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করে আসছিল। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বিজয় লাভ করার ফলে পূর্ব বাংলার জনগণ কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্য নীতির বিরোধিতা করার সুযোগ পায়।
২. বাঙালী জাতীয়তাবাদের উন্মেষঃ ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পরপরই ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে সর্বপ্রথম বাঙালী জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটে। আর এই পথ ধরেই বাঙালীরা স্বাধীন – সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়।
৩. রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধিঃ পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই রাজনৈতিক ক্ষেত্রে মুসলিম লীগ একচেটিয়া অধিকার ভোগ করে অসছিল। কিন্তু ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয় লাভের পর থেকেই পূর্ব বাংলার জনগণ রাজনীতিতে সক্রিয় হতে শুরু করে।
৪. স্বৈরশাসনের অবসানঃ ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের পূর্বে মুসলিম লীগ নিজেদের খুশিমত অনেকটা স্বৈরাচারীভাবে শাসন চালাত। কিন্তু এই নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের ফলে মুসলিম লীগের শাসনের অবসান ঘটে।
৫. মুসলিম লীগের ভরাডুবিঃ মুসলিম লীগের ভারাডুবির মধ্য দিয়ে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের তাৎপর্য উপলদ্ধি করা যায়। গণপরিষদের মুসলিম লীগ দলীয় বাঙালি সদস্যরা আর তাদের প্রদেশের সত্যিকারের প্রতিনিধি নন বলে প্রমাণিত হয়। এ নির্বাচনের মাধ্যমে এ দলের ভরাডুবি হয়।
৬. প্রাণবন্ত গণপরিষদঃ এ নির্বাচনে বিজয়ের ফলেই যুক্তফ্রন্ট সংবিধান প্রণয়নে অংশগ্রহণ করতে চায়।এছাড়াও পূর্ববর্তী গণপরিষদ ভেঙ্গে নতুনভাবে গণপরিষদ গঠনের দাবি জানায়। এর ভিত্তিতে যুক্তফ্রন্ট সমর্থিত সদস্যরা গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়।
৭. বিরোধী দলের আবির্ভাবঃ ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয় লাভ করার ফলে মুসলিম লীগের একচেটিয়া কর্তৃত্বের অবসান ঘটে এবং তাদের যোগ্য বিরোধী দল হিসাবে আওয়ামী লীগের আবির্ভাব ঘটে।
পূর্ব বাংলা প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের এসব দিক ছাড়াও আরো গুরুত্বপূর্ণ কিছু দিক আছেঃ
- ধর্ম নিরপেক্ষতার উত্থান;
- পূর্ব বাংলার শক্তি বৃদ্ধি;
- অধিকার সচেতনতা সৃষ্টি;
- যোগ্য নেতার আবির্ভাব;
- রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার স্বীকৃতি ইত্যাদি।
উপসংহারঃ ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর থেকেই পূর্ব পাকিস্তানে শোষণ চলতে থাকে। তখন থেকেই বিভিন্ন আন্দোলন চলতে থাকলেও ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টকে বিজয়ী করে জনগণ তার রায় জানিয়ে দেয়। এ জোট গঠনের মূল উদ্দেশ্য ছিল মুসলিম লীগের অগণতান্ত্রিক আচরণের জবাব দেওয়া। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয় ও মুসলিম লীগের পরাজয়ের মাধ্যমে এই উদ্দেশ্য সফল হয় এবং পরবর্তী স্বাধিকার আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। এবং চুড়ান্তভাবে ১৯৭১ সালে সুদীর্ঘ নয়মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের বিনিময়ে একাত্তরের ১৬ই ডিসেম্বর পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীনতা অর্জন করে এবং বাংলাদেশে হিসেবে বিশ্বের বুকে সগৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়।