চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী ও রাজনৈতিক দলের মধ্যে পার্থক্য কি?

প্রশ্নঃ চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী ও রাজনৈতিক দলের মধ্যে পার্থক্য কি?

ভূমিকাঃ চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী এবং রাজনৈতিক দল উভয়ই গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উভয়ি সামাজিক এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। উৎপত্তি, উদ্দেশ্য, কর্মসূচি প্রভৃতির পরিপ্রেক্ষিতে উভয়ের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য দেখা যায়।

রাজনৈতিক দল ও চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর মধ্যে পার্থক্যঃ

চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী এবং রাজনৈতিক দল উভয়ই সরকারের নীতি-নির্ধারণকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে।  নিম্নে রাজনৈতিক দল ও চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর। মধ্যকার পার্থক্যসমূহ আলোচনা করা হলো: 

আরো পড়ুনঃ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বলতে কী বোঝো? বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষার উপায় সমূহ আলোচনা কর।

১. উদ্দেশ্যগত পার্থক্যঃ  চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীগুলির উদ্দেশ্য হল তাদের সদস্যদের স্বার্থ রক্ষা করা। তারা সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে তাদের লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করে। অন্যদিকে, রাজনৈতিক দলগুলির উদ্দেশ্য হল সরকার গঠন করা এবং তাদের রাজনৈতিক মতাদর্শ বাস্তবায়ন করা।  

বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণই হলো রাজনৈতিক দলের লক্ষ্য। রাজনৈতিক দল সংকীর্ণ গোষ্ঠীস্বার্থকে গুরুত্ব দেয় না। দল সর্বাধিক মানুষের সর্বাধিক কল্যাণ সাধন করতে চায়। কিন্তু চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর সামনে বৃহত্তর জাতীয় কল্যাণসাধনের কোন মহান উদ্দেশ্য থাকে না। সংকীর্ণ ও সমজাতীয় বিশেষ গোষ্ঠীগত স্বার্থকে কেন্দ্র করে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর উৎপত্তি হয়।

২. উৎপত্তিগত পার্থক্যঃ সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দল গড়ে উঠে। এ মতাদর্শের পরিপ্রেক্ষিতে দলীয় নীতি ও ব্যাপক কর্মসূচি  গ্রহন এবং তা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করে। পক্ষান্তরে, চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর উৎপত্তির ভিত্তিতে কোন বিশেষ রাজনৈতিক মতাদর্শের অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয় না।

 ৩। সংগঠনঃ চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীগুলি সাধারণত স্বেচ্ছাসেবকদের দ্বারা পরিচালিত হয়।  এ গোষ্ঠী রাজনৈতিক দল অপেক্ষা দুর্বল। তারা নিয়মিত সভা-সমাবেশে মিলিত হয় এবং তাদের সদস্যদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে।  অপরদিকে বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ ও কঠোর দলীয় শৃঙ্খলার ভিত্তিতে দলীয় সংহতি বজায় রাখার ব্যবস্থা থাকায় রাজনৈতিক দল অনেক বেশি সুসংগঠিত।

আরো পড়ুনঃ ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সার্বভৌম উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।

৪। কার্যকলাপঃ চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীগুলি সরকারের সাথে যোগাযোগ করে এবং তাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে। যেমন:লবিং,বিবৃতি প্রকাশ,জনমত গঠন, আইন প্রণয়নে অংশগ্রহণ করে। অন্যদিকে, রাজনৈতিক দলগুলি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এবং সরকার গঠনের জন্য চেষ্টা করে। তারা বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে এবং জনগণের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে।

৫।. নির্বাচনে  অংশগ্রহণঃ  নির্বাচনে  অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে  প্রতিটি রাজনৈতিক দল দলীয় প্রার্থীদের নিয়ে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সরাসরি অবর্তীর্ণ হয়। কিন্তু চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে না। তবে এ গোষ্ঠীগুলো গোষ্ঠীস্বার্থের পরিপ্রেক্ষিতে কোন দল বা প্রার্থীকে সমর্থন এবং তার পক্ষে প্রচার করতে পারে।

৬। সিদ্ধান্ত গ্রহণঃ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে  চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর   যে কোন বিষয়ে সহজেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। অপরদিকে,  রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রে কোন বিষয়ে স্বাভাবিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সহজ  নয়।

৭। সমঝোতাগত পার্থক্য: প্রয়োজনবোধে নির্দিষ্ট স্বার্থের ভিত্তিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে সমঝোতার ঘটনা প্রায়ই ঘটে। কিন্তু চাপ  সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর মধ্যে  এ ধরনের সমঝোতা খুব একটা দেখা যায় না ।

৮। প্রত্যক্ষ ও প্রকাশ্য পার্থক্য: রাজনৈতিক দলের কর্মপদ্ধতি প্রকাশ্য ও প্রত্যক্ষ। কিন্তু চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর ক্রিয়াকলাপ পরোক্ষভাবে ও গোপনে সম্পাদিত হয়।

আরো পড়ুনঃ প্রথা বলতে কী বোঝো? বৃটেনের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় প্রথা কেন মান্য করা হয়?

৯। পেশাগত পার্থক্যঃ  রাজনৈতিক দলে বিভিন্ন পেশার লোকের সমাবেশ ঘটে। অপরদিকে, চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীসমূহ এক একটি পেশার ভিত্তিতে গড়ে উঠে। 

১০। সরকার গঠন সংক্রান্ত পার্থক্যঃ রাজনৈতিক দলের প্রধান লক্ষ্য থাকে নির্বাচনের জন্য প্রার্থী মনোনয়ন ও তাঁদের নির্বাচিত করার চেষ্টা ও নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে সরকার গঠন করা। অপরদিকে, চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী  নিজেদের স্বার্থকে পূরণ করার জন্য  সরকারের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে থাকে। তারা  নিজেদের কর্মসূচি বা স্বার্থকে সরকারি নীতির অন্তর্ভুক্ত বদ্ধপরিকর থাকে।

উপসংহারঃ  পরিশেষে বলা যায় যে,  চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী এবং রাজনৈতিক দল উভয়ই গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে  উভয়  গোষ্ঠীর  উপস্থিতি একান্ত কাম্য। তারা সরকারের নীতি-নির্ধারণকে প্রভাবিত করে এবং জনগণের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করে। তবে, এদের মধ্যে বেশ কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে, যা তাদের লক্ষ্য, সংগঠন, কার্যকলাপ এবং ক্ষমতা নির্ধারণ করে।

Share your love
Shihabur Rahman
Shihabur Rahman

Hey, This is Shihabur Rahaman, B.A (Hons) & M.A in English from National University.

Articles: 927

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *