বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা কি?

প্রশ্নঃ বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা কি?

ভূমিকাঃ বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি সরকারের সকল শাখাকে সংবিধানের শর্তাবলী মেনে চলতে বাধ্য করে। এটি নাগরিকদের অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

ইতিহাসঃ বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার উদ্ভব হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। ১৮০৩ সালে মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের রায়ে মারবেরি বনাম ম্যাডিসন মামলায় এই ক্ষমতা প্রথম স্বীকৃত হয়। এই রায়ে সুপ্রিম কোর্ট ঘোষণা করে যে, সংবিধানের ব্যাখ্যা করার ক্ষমতা আদালতের রয়েছে। এর ফলে আদালত আইন বা সরকারের কর্মকাণ্ডকে সংবিধানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ কিনা তা বিচার করতে সক্ষম হয়।

আরো পড়ুনঃ প্রথা বলতে কী বোঝো? বৃটেনের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় প্রথা কেন মান্য করা হয়?

বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার কিছু সুবিধা হলঃ

  1. এটি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে।
  2. এটি সরকারের সকল শাখাকে সংবিধানের শর্তাবলী মেনে চলতে বাধ্য করে।
  3. এটি নাগরিকদের অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষা করে।

বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার কিছু অসুবিধা হলঃ

  1. এটি সরকারের ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ করে।
  2. এটি আদালতের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  3. এটি রাজনৈতিক ও সামাজিক বিতর্কের জন্ম দিতে পারে।

বাংলাদেশে বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার ক্ষমতা সর্বোচ্চ আদালতের রয়েছে। সংবিধানের ১০৪(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, “সংবিধানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ কিনা তা পরীক্ষা করে আইন বা আইনের বিধান বা বিধি বা উপ-বিধি বা সরকারের কার্যকলাপ বা সিদ্ধান্ত বা নির্দেশনা বা ঘোষণা বা আদেশ বা কর্তৃত্ব বা ক্ষমতার প্রয়োগ বা অপ্রয়োগের বৈধতা সম্পর্কে আদালত মীমাংসা করতে পারবে।”

আরো পড়ুনঃ ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সার্বভৌম উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত বিভিন্ন মামলায় বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার ক্ষমতা প্রয়োগ করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর বাংলাদেশ কোর্টস (অ্যামেন্ডমেন্ট) আইন, ১৯৭২ বাতিল করে সর্বোচ্চ আদালত বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার ক্ষমতা প্রয়োগ করে। ২০০৮ সালের ২১ অক্টোবর ওয়ান ইলেভেন সরকারের অধীনে জারি করা ৩৪টি অধ্যাদেশ বাতিল করে সর্বোচ্চ আদালত বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার ক্ষমতা প্রয়োগ করে।

উপসংহার: বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান যা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে, এটি একটি ভারসাম্যপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। আদালতকে বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত যাতে সরকারের ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ না হয় এবং আদালতের ক্ষমতা বৃদ্ধি না পায়।

Share your love
Shihabur Rahman
Shihabur Rahman

Hey, This is Shihabur Rahaman, B.A (Hons) & M.A in English from National University.

Articles: 927

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *