বাংলাদেশে পল্লী উন্নয়নের প্রতিবন্ধকতাসমূহ পর্যালোচনা কর।

প্রশ্নঃ বাংলাদেশে পল্লী উন্নয়নের প্রতিবন্ধকতাসমূহ পর্যালোচনা কর।

earn money

ভূমিকা: বাংলাদেশ গ্রামপ্রধান দেশ। প্রায় ৮৫ হাজার গ্রাম নিয়ে এদেশ এখনও স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত।পল্লির কৃষি ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে এ দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও প্রশাসনিক কাঠামো প্রতিষ্ঠিত। তবে বাংলাদেশে পল্লিউন্নয়ন কার্যক্রম বেশ সমস্যাবহুল। স্বাধীনতা লাভের পর থেকে এদেশের পল্লি অর্থনৈতিক কাঠামো ক্রমশ প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছে। এই প্রতিবন্ধকতাগুলো নিরসনের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

বাংলাদেশে পল্লি উন্নয়নের সমস্যা: বাংলাদেশের পল্লিউন্নয়ন কর্মকাণ্ড যেসব সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে তা নিয়ে আলোচনা করা হলো :

১. শক্তিশালী স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার অভাব: পল্লি উন্নয়নের সামগ্রিক কার্যক্রম নিরূপণ, তত্ত্বাবধান, পরিবীক্ষণ পরিচালনা প্রভৃতি স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার মাধ্যমে (Local government system) নিয়ন্ত্রণ করা হয়। তাই গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের অভাবে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে যা পল্লি উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হচ্ছে না।

আরো পড়ুনঃ Previous Year Brief Bangladesh Sociology

ইউটিউবে ভিডিও লেকচার দেখুনঃ


২. কার্যকরী সংগঠনের অভাব: পল্লি উন্নয়নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট হলো গ্রাম। গ্রামকে কেন্দ্র করে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা প্রয়োজন। আবার এগুলোর নিয়ন্ত্রণের জন্য ইউনিয়ন পর্যায়ে সংগঠনকে নিয়ন্ত্রণ করবে। কিন্তু বাংলাদেশে গ্রাম ও ইউনিয়ন পর্যায়ে তেমন কার্যকরী সংগঠন নেই, যারা পল্লি উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে।

৩. সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যভিত্তিক সংগঠনের অভাব: পল্লি উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন Terget ভিত্তিক সংগঠন যারা নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে প্রকল্প পরিচালনা ও বাস্তবায়ন করবে। কিন্তু এদেশে এ সংগঠনের কার্যকারিতা তেমন দেখা যায় না।

৪. সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে উদ্যোগের মন্থরতা: পল্লি উন্নয়নে কর্মকাণ্ড পরিচালকবৃন্দ যাদেরকে গ্রামীণ পর্যায়ে কার্যক্রম বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে প্রেরণ করা হয় তাদের মধ্যে কর্মচঞ্চলতা নেই। তারা অত্যন্ত মন্থরগতিতে কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। যেমন- বাংলাদেশে কোনো প্রকল্প নির্দিষ্ট সময়ে বাস্তবায়িত হয় না- এর একমাত্র কারণ কর্মচারীদের কাজের সহয়তা। তাই পল্লিউন্নয়ন কার্যক্রম ক্রমশ ব্যাহত ও ধীরগতিতে হচ্ছে বাংলাদেশে।

৫. সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অভাব: কোনো একটি কার্যক্রম যথার্থরূপে বাস্তবায়ন করতে প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট এবং কার্যকরী পরিকল্পনা। অথচ আমাদের দেশে পল্লিউন্নয়ন কর্মকাণ্ডে যে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় তা অত্যন্ত দুর্বল ও যথার্থ নয়। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ভিত্তিতে এ পরিকল্পনা নেয়া হয় না।

৬. অর্থনৈতিক বরাদ্দের অভাব: বলা হয় “Finance is the heart of an organization.” অথচ আমাদের দেশে সমগ্র উন্নয়ন পরিকল্পনা ও প্রকল্প যথার্থরূপে বাস্তবায়িত না হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে অর্থনৈতিক সমস্যা। কারণ অর্থনৈতিক বরাদ্দ ব্যতীত কোনো কর্মকাণ্ড যথাসময়ে বাস্তবায়ন করা অসম্ভব। আমাদের প্রকল্পের প্রায় ৫৫% অর্থ আসে বৈদেশিক ঋণ থেকে যা সঠিক সময়ে পাওয়া যায় না। ফলে পল্লিউন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে।

৭. দক্ষ জনশক্তির অভাব: দক্ষ জনশক্তি একটি দেশের উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। কারণ দক্ষ জনশক্তি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চালিকাশক্তি। অথচ আমাদের দেশে প্রচুর শ্রমিক থাকা সত্ত্বেও তাদের দক ্ষতার অভাবে সঠিকভাবে এবং যথার্থরূপে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করা সম্ভবপর হচ্ছে না। ফলে এটি একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে যা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত করছে।

আরো পড়ুনঃ Write about the Main Novelists of 20th-Century English Literature and Compare Them with the Victorian Novelists. (বাংলায়)

৮. দুর্নীতি: বলা হচ্ছে “Corruption is the vital eating of everything.” আর এ দুর্নীতিতে বাংলাদেশ পর পর পাঁচ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সর্বস্তরে দুর্নীতি এমনভাবে গ্রাস করেছে যে, সামাজিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। পল্লিউন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে শুরু করে সর্বস্তরে এ দুর্নীতির প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে যা একটি বড় সমস্যা।

৯. প্রাকৃতিক দুর্যোগ: আমাদের দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে অধিকাংশ গ্রামের অবকাঠামো ভেঙে পড়ছে এবং কৃষি ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই প্রাকৃতিক দুর্যোগ পল্লি উন্নয়নের অন্যতম প্রতিবন্ধক।

১১. অসামঞ্জস্য উন্নয়ন পরিকল্পনা: উন্নয়নকে বলা হয় “Development means to change from the

undesirable position to desirable position and this change must be socially acceptable,economically viable & politically desirable.” (Professor Lutful Chowdhury) কিন্তু আমাদের দেশে অধিকাংশ উন্নয়ন পরিকল্পনা এ দৃষ্টিকোণ থেকে করা হয় না। ফলে বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্য না হওয়ায় পরিকল্পনা শুধু পরিকল্পনাই থেকে যায়। তাই পরিকল্পনার পূর্বে পারিপার্শ্বিক অবস্থার সাথে সামঞ্জস্য হওয়ার কথা বিবেচনা করা প্রয়োজন।

১২. সমন্বয়ের অভাব: যে কোনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ড যথার্থরূপে বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় জনগণ ও কর্মকর্তাদের মধ্যে সমন্বয়ের (Co-ordination & Co-operation) প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। যেমন— স্বীয় অঞ্চলের গণ্যমান্য ব্যক্তিত্ব, চেয়ারম্যান প্রমুখদের সাথে সমন্বয় করে গৃহীত কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয় যার অভাব আমাদের দেশে পরিলক্ষিত হচ্ছে।

আরো পড়ুনঃ Previous Year Brief Bangladesh Sociology

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, পল্লিউন্নয়ন জাতীয় উন্নয়নে জন্য অপরিহার্য A policy of rural development is a policy of national development- Juliws Nyrer যথার্থই এ বক্তব্য পেশ করেন। তাই সার্বিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এর বিকল্প নেই। অথচ বাংলাদেশে পল্লিউন্নয়ন কর্মকাণ্ড নানা সমস্যায় জর্জরিত। এহেন সমস্যাগুলোকে যথার্থরূপে চিহ্নিত করা প্রয়োজন। সরকারি ও বেসরকারি মহলকে এ বিষয়ে সচেষ্ট হতে হবে।

Riya Akter
Riya Akter
Hey, This is Riya Akter Setu, B.A (Hons) & M.A in English from National University.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

ফেসবুক পেইজ

কোর্স টপিক