জনমতের মাধ্যমগুলো আলোচনা কর।
ভূমিকা: সাধারণভাবে জনসাধারণের মতমতকেই বলে জনমত। কিন্তু রাষ্ট্রবিজ্ঞানে জনমতকে বিশেষ অর্থে ব্যবহার করা হয়। সমাজের এক বা একাধিক বিষয়ে জনসাধারণের সুস্পষ্ট মতামতকে জনমত বলে। কোনো সরকার বিশেষ করে গণতান্ত্রিক সরকার জনমতকে উপেক্ষা করে শাসনকার্য পরিচালনা করতে পারে না। জনমত গঠন ও প্রকাশের ক্ষেত্রে কতগুলো মাধ্যমের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এসকল মাধ্যম যদি শক্তিশালী হয় তবে সুস্থ জনমত গঠন করা সম্ভব হয়।
জনমত গঠনের মাধ্যমসমূহঃ গণতন্ত্রের সাফল্যের মূলভিত্তি হলো সুস্থ ও সুচিন্তিত জনমত। আর এ জনমত প্রকাশের ক্ষেত্রে কতকগুলো মাধ্যমের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ যা নিম্নরূপঃ
১. পরিবারঃ মানুষের জনমতের প্রথম বাহন হলো পরিবার। পরিবারে মানুষ প্রথম বাবা, মা, ভাই বোনের মতাদর্শ দ্বারা প্রভাবিত হয়। এ প্রভাব ভবিষ্যতে রাজনৈতিক মতামত গঠনের ক্ষেত্রে কার্যকর হয়। প্রকৃত প্রস্তাবে পরিবারের মধ্যেই ব্যক্তি প্রথম বিভিন্ন মূল্যবোধ সম্পর্কে ধারণা লাভ করে।
আরো পড়ুনঃ উত্তম সংবিধানের বৈশিষ্ট্য ও শ্রেণীবিভাগ লিখ
২. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানঃ জনমত গঠনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে মূল আলোচনার পাশাপাশি আরো অনেক বিষয়ে আলোচনা করা হয়, সেসব আলোচনায় দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক বিষয় স্থান পায় এর ফলে ছাত্রদের মাঝে এসব বিষয়ে সাম্যক ধারণা জন্মায়।
৩. সংবাদপত্রঃ বর্তমান যুগে জনমত গঠনে সংবাদপত্রের ভূমিকা অপরিসীম। সংবাদপত্রে দেশের বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। তাছাড়া জনগণের বিভিন্ন ধরনের মতামত এখানে স্থান পায় ফলে জনগণের মতামতগুলো সহজে সরকার জানতে পারে।
৪. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম: ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদি প্ল্যাটফর্মে মানুষ তাৎক্ষণিকভাবে মতামত প্রকাশ ও শেয়ার করতে পারে। এসব মাধ্যমে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা ও বিতর্কের মাধ্যমে জনমত দ্রুত গঠিত হয়।
৫. ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাঃ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা জনমত গঠনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মানুষ তাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে বিষয়ে তাদের মতামত গঠন করে। উদাহরণস্বরূপ, একজন ব্যক্তি যদি একটি নির্দিষ্ট পণ্য ব্যবহার করে এবং সেটি পছন্দ করে, তাহলে সে সেই পণ্য সম্পর্কে ইতিবাচক মতামত তৈরি করতে পারে।
৬. রাজনৈতিক দল: রাজনৈতিক দল ও তাদের নেতারা প্রচারাভিযান, সভা-সমাবেশ ও বক্তৃতার মাধ্যমে জনগণের মতামত প্রভাবিত করে। তাদের নীতিমালা ও কর্মসূচি জনমত গঠনে সহায়ক।
৭. সভা-সমাবেশ: বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক সভা-সমাবেশে আলোচিত বিষয়গুলো জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করে এবং মতামত গঠনে সহায়তা করে।
আরো পড়ুনঃ সংসদীয় সরকার বলতে কী বুঝ
৮. ধর্মীয় সংঘঃ জনমত গঠনে ধর্মীয় সংঘগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কেননা ধর্মীয় সংঘগুলোর আলোচনা ও উপদেশ জনগণকে অনেকটা প্রভাবিত করে থাকে। এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে জনমত গঠন হয়।
উপসংহারঃ আলোচনার শেষ প্রান্তে এসে আমরা বলতে পারি, সুষ্ঠু জনমত গঠনের জন্য জনমতের উপর্যুক্ত মাধ্যমগুলোর কোন বিকল্প নেই। কিন্তু উপর্যুক্ত মাধ্যমগুলো যেন সময় উপযোগী জনমত গড়ে তুলতে পারে সেজন্য তাদের সে পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।