বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান বর্ণনা কর

বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান বর্ণনা কর। 

ভূমিকা: বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক ও কৃষিপ্রধান দেশ, যা দক্ষিণ এশিয়ার একটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে। এর ভৌগোলিক অবস্থান যেমন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি প্রাকৃতিক ও সামাজিক জীবনে এর প্রভাব অপরিসীম। উত্তর, পশ্চিম, ও পূর্ব প্রান্তে ভারত এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের অবস্থানের কারণে এ দেশের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য অনন্য। এই বৈচিত্র্যময় ভৌগোলিক পরিবেশ বাংলাদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি, জলবায়ু এবং জনজীবনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে।

অবস্থান: বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। এটি পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ অঞ্চলের অন্যতম। ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশ ২০°৩৪’ উত্তর অক্ষাংশ থেকে ২৬°৩৮’ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°১’ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ থেকে ৯২°৪১’ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। 

সীমানা: দেশটির উত্তর, পশ্চিম এবং পূর্ব প্রান্তে রয়েছে ভারত, এবং দক্ষিণ-পূর্বে মিয়ানমার। বাংলাদেশের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর বিস্তৃত। এই কারণে দেশটি একদিকে ভূমি এবং অন্যদিকে জলভাগ দ্বারা পরিবেষ্টিত। পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয়, আর পূর্বে ত্রিপুরা ও মিজোরাম রাজ্য রয়েছে।

সমুদ্রসীমা: বঙ্গোপসাগরের উপকূলে অবস্থানের কারণে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক সমুদ্র বাণিজ্যের বিশেষ সুবিধা রয়েছে। বাংলাদেশের ভূখণ্ডের আয়তন ১,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটার, এবং এর সমুদ্রসীমা প্রায় ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত।

নদীমাতৃক দেশ: বাংলাদেশ নদীপ্রবাহপূর্ণ একটি দেশ। এখানে প্রায় ৭০০ টিরও বেশি নদী রয়েছে, যার মধ্যে ৫৭টি আন্তর্জাতিক নদী। এসব নদী এবং উর্বর পলিমাটি দেশের কৃষি অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করেছে। 

জলবায়ু: বাংলাদেশের জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ এবং মৌসুমী বায়ু প্রবাহের কারণে এখানে নিয়মিত বৃষ্টিপাত হয়। দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের অবস্থান এবং উত্তরে হিমালয় পর্বতের উপস্থিতি দেশের আবহাওয়ায় বৈচিত্র্য এনেছে।

পাহাড়ি অঞ্চল: বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চল মূলত দেশের দক্ষিণ-পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব অংশে অবস্থিত। এই পাহাড়ি এলাকা পর্যটন এবং কৃষিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। 

প্রাকৃতিক প্রভাব: ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ প্রাকৃতিক ঝড় ও ঝঞ্ঝায় জর্জড়িত। সুন্দরবনের মতো ম্যানগ্রোভ বন দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করে।

উপসংহার: বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান শুধুমাত্র প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য নয়, এটি দেশের অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা পালন করে। নদী, পাহাড়, এবং সমুদ্রের সংমিশ্রণ এ দেশকে করেছে উর্বর ও প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ। এছাড়া, এর অবস্থান আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং আঞ্চলিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এই কারণেই যুগে যুগে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী এখানে এসে বসতি স্থাপন করেছে এবং আজও এটি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত।

Share your love
Shihabur Rahman
Shihabur Rahman

Hey, This is Shihabur Rahaman, B.A (Hons) & M.A in English from National University.

Articles: 927

3 Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *