এলিট আবর্তন কী?
এলিট আবর্তন হলো সমাজতত্ত্ব ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একটি ধারণা, যা অনুযায়ী একটি সমাজ বা রাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন শ্রেণি বা প্রভাবশালী গোষ্ঠী সময়ের সাথে পাল্টে যায়। এটি বোঝায় যে, সমাজের শীর্ষস্তরে যারা ক্ষমতা ধরে রাখে বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, তাদের জায়গায় নতুন ব্যক্তিরা বা গোষ্ঠী আসে। এই প্রক্রিয়াকে সাধারণত এলিটের পরিবর্তন বা এলিট চক্র হিসেবেও উল্লেখ করা হয়।
ধারণাটির মূল বক্তব্যঃ এই ধারণাটি মূলত সমাজের ক্ষমতাধর শ্রেণির মধ্যে অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন এবং নতুন নেতৃত্বের উদ্ভবকে নির্দেশ করে। এটি প্রমাণ করে যে ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়, বরং সময়ের সাথে সঙ্গে আবর্তিত হয়। এলিট আবর্তনের ধারণাটি প্রথম উত্থাপন করেন সমাজতাত্ত্বিক গেটানো মোসকা এবং ভিলফ্রেডো পারেটো। তাদের মতে, সমাজে সর্বদা একটি প্রভাবশালী শ্রেণি থাকে, এবং এই শ্রেণি ধীরে ধীরে নতুন নেতৃত্বের জন্য পথ তৈরি করে।
এলিট আবর্তনের বৈশিষ্ট্য
- ক্ষমতা পরিবর্তন: ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ হয় এবং সময়ের সাথে নতুন গোষ্ঠী তা গ্রহণ করে।
- সামাজিক গতিশীলতা: সমাজের নিচের স্তরের মানুষও ধীরে ধীরে ক্ষমতাধর গোষ্ঠীর অংশ হতে পারে।
- প্রতিক্রিয়ার প্রভাব: বিদ্যমান এলিটদের কাজকর্ম যদি জনগণের স্বার্থ রক্ষা না করে, তবে তারা প্রতিস্থাপিত হয়।
- নিরবিচ্ছিন্ন চক্র: এলিট পরিবর্তন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া যা সমাজে স্থিতিশীলতা বজায় রাখে।
- নতুন মূল্যবোধের উদ্ভব: নতুন এলিট গোষ্ঠী পুরাতনদের থেকে ভিন্ন মূল্যবোধ বা ধারণা নিয়ে আসে। উদাহরণ
বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিতে এলিট আবর্তনের বিষয়টি লক্ষ করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, এক দল ক্ষমতায় থাকলেও জনগণের চাপ বা সামাজিক পরিবর্তনের ফলে নতুন দল বা নেতৃত্ব ক্ষমতায় আসে।
গুরুত্বঃ এলিট আবর্তন সমাজের স্থিতিশীলতা রক্ষা ও গণতন্ত্রের বিকাশে ভূমিকা রাখে। এটি থেকে বোঝা যায় যে, ক্ষমতাধর শ্রেণি যদি জনগণের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়, তবে পরিবর্তন অপরিহার্য। ফলে ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় থাকে এবং নতুন নেতৃত্ব উদ্ভব হয়।
এলিট আবর্তন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, যা সমাজ ও রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে। এটি ক্ষমতার পরিবর্তন এবং নতুন নেতৃত্বের গুরুত্ব বোঝায়।
