রুশোর সাধারণ ইচ্ছা তত্ত্বটি সংক্ষেপে লিখ

 প্রশ্নঃ রুশোর সাধারণ ইচ্ছা তত্ত্বটি সংক্ষেপে লিখ।

ভুমিকাঃ রুশো তার “সামাজিক চুক্তি” গ্রন্থে “সাধারণ ইচ্ছা”কে “সমাজ বা রাষ্ট্রের সার্বভৌম ইচ্ছা” হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। রুসোর মতে, প্রাকৃতিক অবস্থায় মানুষ স্বাধীন এবং সমান। কিন্তু এই স্বাধীনতা এবং সাম্য প্রকৃতির দ্বারা সুরক্ষিত নয়। তাই মানুষ সামাজিক চুক্তির মাধ্যমে একটি রাষ্ট্র গঠন করে। এই রাষ্ট্রের সার্বভৌম ইচ্ছাই হল সাধারণ ইচ্ছা।

সাধারণ ইচ্ছা কী?

রুসোর মতে, সাধারণ ইচ্ছা হল ব্যক্তির ইচ্ছার সমষ্টি, যা রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতার উৎস। সাধারণ ইচ্ছা হল রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের যৌথ ইচ্ছা, যা ব্যক্তিগত স্বার্থের বিপরীতে রাষ্ট্রের স্বার্থকে প্রতিফলিত করে। সাধারণ ইচ্ছা হল সর্বজনীন মঙ্গলের ইচ্ছা।

সাধারণ ইচ্ছা তত্ত্বের মূল বৈশিষ্ট্য:

১. সাধারণ ইচ্ছা হল সার্বভৌম ক্ষমতার উৎস: রুসো মনে করতেন, রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতার উৎস হল সাধারণ ইচ্ছা। সাধারণ ইচ্ছার বাইরে কোনও ক্ষমতা রাষ্ট্রে বিদ্যমান থাকতে পারে না।

আরো পড়ুনঃ রাজনৈতিক দলের সংজ্ঞা দাও | আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাজনৈতিক দলের গুরুত্ব ও ভূমিকা আলোচনা কর।

২. সাধারণ ইচ্ছা হল সকল নাগরিকের যৌথ ইচ্ছা: সাধারণ ইচ্ছা হল রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের যৌথ ইচ্ছা। সাধারণ ইচ্ছা ব্যক্তিগত স্বার্থের বিপরীতে রাষ্ট্রের স্বার্থকে প্রতিফলিত করে।

৩. সাধারণ ইচ্ছা হল সর্বজনীন মঙ্গলের ইচ্ছা: সাধারণ ইচ্ছা হল সর্বজনীন মঙ্গলের ইচ্ছা। সাধারণ ইচ্ছা সর্বদাই জনগণের মংগলাভিমুখী।

সাধারণ ইচ্ছা তত্ত্বের গুরুত্ব:

  • সাধারণ ইচ্ছা তত্ত্ব রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের ধারণাকে শক্তিশালী করেছে।
  • সাধারণ ইচ্ছা তত্ত্ব জনগণের সার্বভৌমত্বের ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
  • সাধারণ ইচ্ছা তত্ত্ব রাষ্ট্রের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা প্রতিষ্ঠা করেছে।

সাধারণ ইচ্ছা তত্ত্বের সমালোচনা:

  • সাধারণ ইচ্ছা তত্ত্বের সমালোচকরা বলেন, সাধারণ ইচ্ছা একটি আদর্শ ধারণা, যা বাস্তবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।
  • সাধারণ ইচ্ছা তত্ত্বের সমালোচকরা আরও বলেন, সাধারণ ইচ্ছা তত্ত্ব রাষ্ট্রের ক্ষমতার অপব্যবহারের সুযোগ করে দেয়।
  • এটি একটি আদর্শিক তত্ত্ব। বাস্তব জগতে সাধারণ ইচ্ছা সর্বদাই যথার্থ এবং জনগণের মঙ্গলাভিমুখী হয় না।
  • এটি একটি অবাস্তব তত্ত্ব। সামাজিক চুক্তির মাধ্যমে জনগণ তাদের সমস্ত স্বাধীনতা রাষ্ট্রের কাছে ছেড়ে দেয়। কিন্তু বাস্তব জগতে তা সম্ভব নয়।
  • এটি একটি একনায়কতন্ত্রের পথ সুগম করে। সাধারণ ইচ্ছার নামে জনগণের ইচ্ছাকে অগ্রাহ্য করে রাষ্ট্র শাসকরা একনায়কতন্ত্র কায়েম করতে পারে।

আরো পড়ুনঃ স্বাধীনতা বলতে কি বুঝ? আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে স্বাধীনতার রক্ষাকবচগুলো আলোচনা কর।

সাধারণ ইচ্ছা তত্ত্বের প্রভাব: রুশোর সাধারণ ইচ্ছা তত্ত্ব রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও রাজনৈতিক দর্শনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব। এই তত্ত্বটি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব, জনগণের সার্বভৌমত্ব, রাষ্ট্রের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা ইত্যাদি ধারণাগুলোকে ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করতে সহায়তা করেছে। এই তত্ত্বের প্রভাব ফরাসি বিপ্লব, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান প্রণয়ন, এবং অন্যান্য গণতান্ত্রিক আন্দোলনে লক্ষ্য করা যায়।

সাধারণ ইচ্ছা তত্ত্বের বাস্তবায়ন: রুশোর সাধারণ ইচ্ছা তত্ত্ব একটি আদর্শ ধারণা, যা বাস্তবে পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। তবে, এই তত্ত্বের কিছু দিক বাস্তবায়ন করা সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ, রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতা জনগণের হাতে রাখার মাধ্যমে, এবং রাষ্ট্রের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সাধারণ ইচ্ছা তত্ত্বের কিছু দিক বাস্তবায়ন করা সম্ভব।

আরো পড়ুনঃ আইনসভা কি? আইনসভার ক্ষমতা হ্রাসের কারণসমূহ আলোচনা কর

উপসংহারঃ রুসোর মতে, সাধারণ ইচ্ছা সর্বদাই যথার্থ এবং জনগণের মঙ্গলাভিমুখী। তাই এটি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের ভিত্তি। সাধারণ ইচ্ছার প্রধান উদ্দেশ্য হল জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করা। রুশোর সাধারণ ইচ্ছা তত্ত্ব রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব। এটি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে এটি একটি আদর্শিক তত্ত্ব যা বাস্তব জগতে সর্বদা প্রযোজ্য হয় না। 

Share your love
Shihabur Rahman
Shihabur Rahman

Hey, This is Shihabur Rahaman, B.A (Hons) & M.A in English from National University.

Articles: 927

2 Comments

  1. সার্বভৌমিকতার ধারণা আলোচনা করো। এই নোটটা দিলে খুব ভালো হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *