এরিস্টটলের সরকারের শ্রেণিবিভাগ লিখ।
এরিস্টটল ছিলেন প্রাচীন গ্রিসের একজন বিখ্যাত দার্শনিক এবং বিজ্ঞানী। তিনি খ্রিস্টপূর্ব ৩৮৪ সালে স্ট্যাগিরা নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। এরিস্টটল প্লেটোর শিষ্য এবং আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের শিক্ষক ছিলেন। তিনি দর্শন, নীতি, রাজনীতি, বিজ্ঞান, এবং যুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ে অবদান রেখেছেন। তার বিখ্যাত গ্রন্থগুলোর মধ্যে “পলিটিক্স”, “এথিকস”, এবং “মেটাফিজিক্স” উল্লেখযোগ্য। এরিস্টটল পশ্চিমা দর্শনের ভিত্তি স্থাপনকারী অন্যতম ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত।
এরিস্টটল সরকার ব্যবস্থার একটি শ্রেণিবিভাগ প্রদান করেছেন যা তার বিখ্যাত গ্রন্থ “পলিটিক্স”-এ বর্ণিত হয়েছে। তিনি সরকারের শ্রেণিবিভাগ নির্ধারণের ক্ষেত্রে দুটি মূল বিষয় বিবেচনা করেছেন:
- ক্ষমতা কে ধারণ করে (শাসকের সংখ্যা)।
- ক্ষমতার ব্যবহার কীভাবে হয় (জনস্বার্থে নাকি ব্যক্তিগত স্বার্থে)।
এরিস্টটলের মতে, একটি আদর্শ সরকার জনস্বার্থে কাজ করে, আর একটি বিকৃত সরকার ব্যক্তিগত স্বার্থে পরিচালিত হয়। তিনি সরকারকে দুই শ্রেণিতে ভাগ করেছেন এবং প্রতিটির আরও তিনটি উপশ্রেণি উল্লেখ করেছেন।
এরিস্টটলের সরকারের শ্রেণিবিভাগ:
১. আদর্শ সরকার (Ideal Government): এই ধরণের সরকার জনকল্যাণে কাজ করে। এর তিনটি রূপ:
- রাজতন্ত্র (Monarchy): একজন ব্যক্তি শাসন করে এবং জনস্বার্থ রক্ষা করে। এটি সরকারের সর্বোৎকৃষ্ট রূপ।
- অভিজাততন্ত্র (Aristocracy): শাসনক্ষমতা কিছু জ্ঞানী ও সদাচারী মানুষের হাতে থাকে, যারা জনস্বার্থ রক্ষা করে।
- গণতন্ত্র (Polity): সাধারণ জনগণের দ্বারা শাসিত সরকার, যা জনকল্যাণে কাজ করে।
২. বিকৃত সরকার (Perverted Government): এই ধরণের সরকার ব্যক্তিগত স্বার্থে কাজ করে। এর তিনটি রূপ:
- স্বৈরতন্ত্র (Tyranny): একজন ব্যক্তি শাসন করে কিন্তু এটি জনগণের ক্ষতির কারণ হয়। এটি রাজতন্ত্রের বিকৃত রূপ। এখানে জনগণের মতামতের কোন মূল্য থাকেনা এবং বেশিরভাগ সময় তাদের সার্থ রক্ষা হয় না।
- গণতান্ত্রিক স্বার্থবাদ (Oligarchy): ক্ষমতা কিছু ধনী বা প্রভাবশালী ব্যক্তির হাতে থাকে, যারা নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করে। এটি অভিজাততন্ত্রের বিকৃত রূপ।
- জনগণের শাসন বা ভ্রান্ত গণতন্ত্র (Democracy): সাধারণ জনগণ শাসন করে, কিন্তু এটি জনস্বার্থের চেয়ে ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত স্বার্থে পরিচালিত হয়। এটি পোলিটির বিকৃত রূপ।
এরিস্টটলের মতে, সেরা সরকার: এরিস্টটল বিশ্বাস করতেন যে আদর্শ সরকারই উত্তম এবং জনস্বার্থে কাজ করে। তবে, রাজতন্ত্র সর্বোৎকৃষ্ট রূপ, যদি শাসক সদাচারী ও জ্ঞানী হয়। অন্যথায়, পোলিটি বাস্তবতার সঙ্গে অধিক সামঞ্জস্যপূর্ণ।
এরিস্টটলের এই শ্রেণিবিভাগ আজও সরকার ব্যবস্থার বিশ্লেষণে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি দেখিয়েছেন কিভাবে একটি সরকার জনস্বার্থ বা ব্যক্তিগত স্বার্থে পরিচালিত হতে পারে এবং এর প্রভাব সমাজে কেমন হয়।
