বাঙালি নরগোষ্ঠীকে কেন সংকর জনগোষ্ঠী বলা হয়?
ভূমিকা: বাঙালি নরগোষ্ঠী পৃথিবীর অন্যতম বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠী। ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জাতি ও জনগোষ্ঠীর আগমন এবং মিশ্রণের ফলে বাঙালি জাতি গঠিত হয়েছে। এ কারণে বাঙালিকে কোনো স্বতন্ত্র জাতি না বলে সংকর জাতি বলা হয়। নিচে বাঙালিকে সংকর জনগোষ্ঠী বলার কারণগুলো বর্ণনা করা হলো।
অস্ট্রিক বা অস্ট্রালয়েডের প্রভাব: অস্ট্রিক বা অস্ট্রালয়েড নৃগোষ্ঠী বাঙালির আদি বাসিন্দা বলে বিবেচিত। তাদের গায়ের রং কালো, উচ্চতা বেটে, এবং নাক প্রশস্ত। বাঙালির মধ্যে এ নৃগোষ্ঠীর প্রভাব এখনও দৃশ্যমান, যা তাদের দৈহিক বৈশিষ্ট্যে প্রতিফলিত হয়েছে।
নেগ্রিটো জনগোষ্ঠীর আগমন: নেগ্রিটোরা আফ্রিকা থেকে আগত এবং তাদের শরীরের গঠন নিগ্রোদের মতো। তাদের গায়ের রং কালো এবং দেহ খর্বাকৃতির। নৃতাত্ত্বিকদের মতে, নেগ্রিটোদের রক্তপ্রবাহও বাঙালির মধ্যে মিশ্রিত হয়েছে।
দ্রাবিড়দের সংমিশ্রণ: দ্রাবিড়রা ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল থেকে এদেশে আসে। এদের গায়ের রং কালো থেকে বাদামি, এবং তাদের দৈহিক বৈশিষ্ট্য অস্ট্রিকদের সঙ্গে মিল রয়েছে। বাঙালি জাতির গঠনে দ্রাবিড়দেরও বড় ভূমিকা রয়েছে।
মঙ্গোলয়েডের প্রভাব: মঙ্গোলয়েড জনগোষ্ঠী চীন ও পূর্ব এশিয়া থেকে এদেশে আসে। তাদের গায়ের রং পীতাভ বা বাদামি এবং চোখের পাতার বিশেষ আকৃতি তাদের বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশের চাকমা, মারমা, এবং অন্যান্য পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে মঙ্গোলয়েডদের প্রভাব লক্ষ করা যায়।
আর্যদের আগমন: আর্যরা খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকের পূর্বে বাংলায় আসে এবং বৈদিক সভ্যতার বিকাশ ঘটায়। এদের গায়ের রং ফর্সা এবং দৈহিক গঠন লম্বা। বাঙালি সমাজের উচ্চবর্ণের মধ্যে আর্যদের প্রভাব এখনও দেখা যায়।
মধ্য এশিয়া ও পারস্যের জনগোষ্ঠীর প্রভাব: মধ্য এশিয়া, পারস্য ও তুরস্ক থেকে শক, তুর্কি, পাঠান, মুঘল, এবং ইরানি জনগোষ্ঠীর আগমন বাঙালি রক্তে নতুন মিশ্রণ ঘটিয়েছে। এদের আগমন বাঙালির জাতিগত বৈচিত্র্যে বড় প্রভাব ফেলেছে।
ইউরোপীয়দের সংমিশ্রণ: পরবর্তী সময়ে পর্তুগিজ, ইংরেজ এবং ওলন্দাজরা বাংলায় আসে এবং এদের রক্তও বাঙালির মধ্যে মিশ্রিত হয়। এ কারণে বাঙালি জাতি আরো বৈচিত্র্যময় হয়ে ওঠে।
উপসংহার: বাঙালি জাতি বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর সংমিশ্রণে গঠিত হয়েছে। অস্ট্রিক, নেগ্রিটো, দ্রাবিড়, মঙ্গোলয়েড, আর্য, এবং ইউরোপীয়দের প্রভাব বাঙালি জাতির দৈহিক ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যে মিশে আছে। এ কারণে বাঙালি একটি সংকর জাতি হিসেবে পরিচিত।
