প্রশ্নঃ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাকে বলে?
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাঃ দুর্যোগ এমন একটি অবস্থা যা প্রাকৃতিকভাবে বা মনুষ্যসৃষ্ট ক্রিয়াকলাপের দ্বারা সৃষ্ট হয় এবং মানুষ এবং প্রাণীর জীবনে একটি বিশাল বিঘ্ন ঘটায়। এই বিপর্যয়গুলি বন্যা, ভূমিকম্প, সুনামি হতে পারে, বা কিছু কুখ্যাত মানব উপাদানদ্বারা সমাজে বিপর্যয় সৃষ্টি করার জন্য জৈবিক বা রাসায়নিক অস্ত্র হতে পারে। এই দুর্যোগগুলি প্রতিরোধ করার জন্য বা তাদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের তাত্ক্ষণিক ত্রাণ সরবরাহ করার জন্য তৈরি করা হয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা। ক্ষতিগ্রস্ত জীবনকে সাহায্য করার এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্যঃ
সার্বিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বলতে দুর্যোগপূর্ব, দুর্যোগকালীন, ও দুর্যোগ পরবর্তী কার্যক্রমকে বোঝায়।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ৩ টি প্রধান উদ্দেশ্য রয়েছে।
১. দুর্যোগের সময় জীবন, সম্পদ এবং পরিবেশের যে ক্ষতি হয়ে থাকে তা এড়ানো বা হ্রাস করা।
আরো পড়ুনঃ সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞা দাও। এর প্রকৃতি ও স্বরূপ বা পরিধি ও বিষয়বস্তু আলোচনা করো।
২. প্রয়োজন অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে দ্রুত ত্রাণ পৌঁছানো ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করা।
৩. দুর্যোগ পরবর্তী পুনরুদ্ধারের কাজ দ্রুত ও কার্যকর ভাবে সম্পন্ন করা।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা চক্রঃ
দুর্যোগ প্রতিরোধ, দুর্যোগ প্রশমন এবং দুর্যোগের পূর্বপ্রস্তুতি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার মুখ্য উপাদান। সুতরাং দুর্যোগকে কার্যকরভাবে মোকাবিলার লক্ষ্যে দুর্যোগপূর্ব সময়েই ব্যবস্থাপনার বেশি কাজ সম্পন্ন করতে হয়। দুর্যোগ সংঘটনের পরপরই এর ব্যবস্থাপনার অন্যান্য উপাদানের মধ্যে রয়েছে সাড়াদান, পুনরুদ্ধার ও উন্নয়ন।
অতীতে দুর্যোগে সাড়াদানকেই সম্পূর্ণ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বলে ধরে নেয়া হতো। সব মিলিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা চক্রের উপাদান ৬টি।
প্রতিরোধঃ দুর্যোগকে সম্পূর্ণভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব না হলেও ক্ষয়ক্ষতি কমাতে প্রতিরোধ ব্যবস্থা কার্যকর ভূমিকা রাখে। কাঠামো ও অকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, যেমনঃ বেড়িবাঁধ তৈরি, আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, পাকা ও মজবুত ঘরবাড়ি তৈরি, নদী খনন ইত্যাদি। প্রশিক্ষণ, গণসচেতনতা ইত্যাদি অকাঠামোগত প্রতিরোধ।
আরো পড়ুনঃ সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশে অগাস্ট কোঁতের অবদান আলোচনা করো।
প্রশমনঃ দুর্যোগর ক্ষয়ক্ষতি যথাসম্ভব কমিয়ে আনার প্রচেষ্টাই হচ্ছে দুর্যোগ প্রশমন। শক্ত অবকাঠামো নির্মাণ, কম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় লোক স্থানান্তর, শস্য বহুমুখীকরণ ইত্যাদি প্রশমনের অন্তর্ভুক্ত।
পূর্বপ্রস্তুতিঃ দুর্যোগ পূর্বপ্রস্তুতি বলতে দুর্যোগ পূর্ব সময়ে এর ঝুঁকি কমানোর ব্যবস্থাসমূহকে বোঝায়। আগে থেকে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল ও জনগোষ্ঠীকে চিহ্নিতকরণ, দুর্যোগ সংক্রান্ত পরিকল্পনা প্রণয়ন, প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো, জরুরি অবস্থা মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদের ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ ড্রিল বা ভূমিকা অভিনয় এবং রাস্তাঘাট, যানবাহন, বেতার যন্ত্র ইত্যাদি দুর্যোগ পূর্বপ্রস্তুতির অন্তর্ভুক্ত।
সাড়াদানঃ দুর্যোগের পরপরই উপযুক্ত সাড়াদানের প্রয়োজন হয়। রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে দ্রুত সাড়াদান দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতিকে কমিয়ে আনে।
পুনরুদ্ধারঃ পুনরুদ্ধার বলতে নিরাপদ স্থানে অপসারণ, তল্লাশি ও উদ্ধার, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমকে বোঝায়।
আরো পড়ুনঃ শিল্পায়ন কি? বাংলাদেশে শিল্পায়নের কারণ ও প্রভাব আলোচনা করো।
উন্নয়নঃ দুর্যোগে সম্পদ, পরিবেশ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবকাঠামো ইত্যাদির যে ক্ষতি হয়ে থাকে তা পুননির্মাণের মাধ্যমে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনাকেই উন্নয়ন বোঝায়। এক্ষেত্রে সরকারি, বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের সাহায্য ও সহায়তার প্রয়োজন হয়। উন্নয়ন কর্মকান্ড হাতে নেয়ার পূর্বে ভৌগোলিক ও পরিবেশগত বৈশিষ্ট্যের উপর লক্ষ্য রাখতে হবে।
সবকিছু অনেক সুন্দর কিন্তু কফি করা যায় না বের করে নেওয়া যায় না এটা খুবই দুর্ভাগ্যজন।