জেন্ডার কি?

 জেন্ডার কি?

জেন্ডার হলো একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ধারণা যা পুরুষ, নারী এবং অন্যান্য লিঙ্গ পরিচয়ের মধ্যে পার্থক্য বোঝায়। এটি শারীরিক বৈশিষ্ট্য যেমন যৌনাঙ্গের ভিত্তিতে নয়, বরং সমাজের মধ্যে নির্ধারিত ভূমিকা, আচরণ, আশা এবং দায়িত্বের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। জেন্ডার সাধারণত পুরুষ, নারী এবং অন্যান্য লিঙ্গ পরিচয়ের মতো বর্ননা করা হলেও এটি একটি স্পেকট্রাম বা বৈচিত্র্যময় ধারণা হতে পারে, যা প্রতিটি সমাজ ও সংস্কৃতির মধ্যে ভিন্নভাবে প্রতিফলিত হয়।

জেন্ডারের মূল ধারণা:

  1. সামাজিক নির্মাণ: জেন্ডার সামাজিকভাবে তৈরি হয়। এটি মানুষের শারীরিক গঠন ও জীববিজ্ঞানগত পার্থক্য থেকে আলাদা, কারণ এটি নির্ধারিত হয় সমাজের কাঠামো, সংস্কৃতি এবং মূল্যবোধের ভিত্তিতে।
  2. পুরুষ ও নারী: সাধারণত সমাজে পুরুষ ও নারী হিসেবে দুটি প্রধান জেন্ডার পরিচয় থাকে। তবে, অনেক সংস্কৃতিতে এর বাইরেও অন্যান্য জেন্ডার পরিচয় থাকতে পারে, যেমন লিঙ্গবৈচিত্র্যপূর্ণ বা তৃতীয় লিঙ্গ।
  3. জেন্ডার রোলস (Gender Roles): সমাজ পুরুষ ও নারীকে বিশেষ ধরনের আচরণ ও দায়িত্ব দেয়। পুরুষদের সাধারণত শক্তিশালী, কর্মঠ ও নেতৃত্বপূর্ণ হতে বলা হয়, আবার নারীদের কোমল, সংসারী ও সহানুভূতিশীল হতে উৎসাহিত করা হয়। এই ধারণাগুলো শতাব্দী ধরে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, কিন্তু আধুনিক যুগে এগুলো ভাঙার চেষ্টা চলছে।
  4. জেন্ডার সত্তা (Gender Identity): একজন ব্যক্তির নিজস্ব অনুভূতি, চিন্তা এবং অভ্যন্তরীণ জেন্ডার পরিচয়। এটি শরীরের জৈবিক লিঙ্গের সাথে মেল না-ও খেতে পারে। কেউ একজন পুরুষ বা নারী হিসেবে নিজেদের চিন্তা বা অনুভব করতে পারেন, অথবা তারা জেন্ডার নিউট্রাল বা জেন্ডারফ্লুইডও হতে পারেন।

জেন্ডার ও যৌনতা: জেন্ডার এবং যৌনতা একে অপর থেকে আলাদা। যৌনতা বা সেক্স মানুষের শারীরিক বৈশিষ্ট্য বা যৌনাঙ্গের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়, যেমন পুরুষ বা নারী। অপরদিকে, জেন্ডার একটি সমাজিক ও সাংস্কৃতিক গঠন, যা শারীরিক বৈশিষ্ট্য ছাড়াও বিভিন্ন বৈষম্য ও আদর্শের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়।

 প্রকারভেদ: জেন্ডার বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। যেমন; 

১। পুরুষ (Male) এবং নারী (Female): এগুলি সাধারণত পুরুষ ও নারীর প্রথাগত ধারণা এবং রোলগুলি বোঝায়।

২। জেন্ডারফ্লুইড (Gender Fluid): কেউ যদি সময়ের সাথে সাথে বা পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে নিজের জেন্ডার সত্তা পরিবর্তন করেন, তাদেরকে জেন্ডারফ্লুইড বলা হয়।

৩। ট্রান্সজেন্ডার (Transgender): যাদের শারীরিক লিঙ্গ (যেমন পুরুষ বা নারী) এবং জেন্ডার পরিচয় (যেমন পুরুষ বা নারী) একে অপরের সাথে মেলে না, তারা ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে পরিচিত। উদাহরণস্বরূপ, একজন পুরুষ শারীরিকভাবে জন্মগ্রহণ করলেও নারী হিসেবে পরিচিত হতে পারেন, অথবা একজন নারী পুরুষ হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিতে পারেন।

৪। নন-বাইনারি (Non-binary): যারা পুরুষ বা নারী হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিতে চান না, তারা নন-বাইনারি হিসেবে পরিচিত। তাদের জেন্ডার সত্তা পুরুষ বা নারীর বাইরেও থাকতে পারে।

জেন্ডার ও সমাজ: জেন্ডার সমাজে শক্তির সমবণ্টন, সমতা এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সম্পর্কিত। বিভিন্ন সমাজে পুরুষ এবং নারী উভয়ের জন্যই ভিন্ন ভিন্ন দায়িত্ব ও কাজ নির্ধারিত। যদিও বিগত কিছু দশকে নারীর অধিকার ও অবস্থান পরিবর্তিত হয়েছে, এখনও বিশ্বের অনেক জায়গায় নারীরা জেন্ডার ভিত্তিক বৈষম্য, নিপীড়ন ও সহিংসতার শিকার হন।

জেন্ডার সমতা: আজকের দিনে, অনেক দেশ ও সমাজে জেন্ডার সমতা (Gender Equality) প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ চলছে, যেখানে পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্য সমান সুযোগ, অধিকার এবং মর্যাদা নিশ্চিত করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে কর্মক্ষেত্রে সমান বেতন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং রাজনৈতিক অধিকার।

উপসংহারে, জেন্ডার শুধু একটি শারীরিক বা শৈল্পিক বিষয় নয়, এটি একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রক্রিয়া, যা মানুষের জীবনযাত্রার সকল দিককে প্রভাবিত করে। জেন্ডারের বৈচিত্র্যকে সম্মান করা এবং সমতা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজ আরও সমৃদ্ধ এবং ন্যায়সঙ্গত হতে পারে।

Share your love
Shihabur Rahman
Shihabur Rahman

Hey, This is Shihabur Rahaman, B.A (Hons) & M.A in English from National University.

Articles: 927

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *