প্রশ্নঃ যুক্তরাজ্যের আইনসভার গঠন ব্যাখ্যা কর।
ভুমিকা: আইনসভা হল একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। এটি একটি রাষ্ট্র বা অনুরূপ সত্তার জন্য আইন তৈরি করার ক্ষমতা নিয়ে গঠিত একটি বুদ্ধিভিত্তিক সংগঠন। যুক্তরাজ্যের আইনসভাকে পার্লামেন্ট বলা হয়। এটি যুক্তরাজ্যের সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। পার্লামেন্টের প্রধান কাজ হল আইন প্রণয়ন, সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং ন্যায়বিচারের ব্যবস্থা করা।
যুক্তরাজ্যের আইনসভা একটি অত্যন্ত মহত্ত্বপূর্ণ দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট সার্বভৌম সংস্থা, যা দেশটিতে বিবাদমুক্ত এবং ন্যায়নিষ্ঠ কার্যক্রম চালানোর জন্য দায়িত্ব পালন করে। এর রয়েছে দুইটি ভাগ: ক) হাউস অব কমন্স, ২) হাউস অব লর্ডস। এখানে আমরা সংস্থাটির গঠন প্রণালী বর্ণনা করবো:
আরো পড়ুনঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট ও ব্রিটেনের লর্ডসভার তুলনামূলক আলোচনা কর।
হাউস অব কমন্স: হাউস অব কমন্স হল যুক্তরাজ্যের আইনসভার নিম্নকক্ষ। এটি কমনসভা নামেও পরিচিত। এটি ৬৫০ জন সংসদ সদস্য নিয়ে গঠিত, যাদের প্রতিনিধি বলা হয়। প্রতিনিধিরা যুক্তরাজ্যের ৬৫০টি নির্বাচনী এলাকা থেকে নির্বাচিত হন। তাদের মেয়াদ পাঁচ বছর। এই সংস্থার প্রধান কাজ হল আইন প্রণয়ন করা। এটি সরকারের বাজেটও অনুমোদন করে এবং সরকারের কর্মকাণ্ডের উপর সার্বিক নজরদারি অব্যাহত রাখে।
হাউস অব কমন্সের যুক্তরাজ্যের নিম্নকক্ষ। এর ক্ষমতাগুলির মধ্যে রয়েছে:
আইন প্রণয়ন: হাউস অব কমন্সই যুক্তরাজ্যের আইন প্রণয়নের একমাত্র ক্ষমতাপ্রাপ্ত সংস্থা। এখান থেকেই রাষ্ট্র পরিচালনার নিয়ম নীতি প্রণয়ন করা হয়।
সরকার গঠন: হাউস অব কমন্সে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনকারী দল বা জোট সরকার গঠন করে। বর্তমানে কনসারভেটিভ পার্টির নেতা ঋষি শুনাক সংখ্যা গরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সরকার গঠন করেছেন।
আরো পড়ুনঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের গঠন, ক্ষমতা ও কার্যাবলী আলোচনা কর।
সরকারের বাজেট অনুমোদন: হাউস অব কমন্স সরকারের বাজেট অনুমোদন করে। একটি নির্দিষ্ট অর্থবছরে তাদের রাষ্ট্রের অর্থনীতি কিভাবে পরিচালিত হবে তার রূপ রেখা প্রণয়ন করে থাকে তারা।
সরকারের কর্মকাণ্ডের তত্ত্বাবধান: হাউস অব কমন্স সরকারের কর্মকাণ্ডের উপর তত্ত্বাবধান করে এবং সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে পারে। তারা না ভোট দিলে সরকার তাদের কার্যক্রম বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়।
হাউস অব লর্ডস এর গঠন: হাউস অব লর্ডস হল যুক্তরাজ্যের আইনসভার উচ্চকক্ষ। এটি ৭৯৩ জন সদস্য নিয়ে গঠিত, যাদের লর্ড বলা হয়।রাজপরিবারের সদস্য, ধর্মীয় নেতা, এবং রাজকীয় অনুগ্রহে নিযুক্ত বিভিন্ন ব্যাক্তিদের নিয়ে লর্ডসভা সংগঠিত হয়।
হাউস অব লর্ডসের ক্ষমতা: হাউস অব লর্ডসের প্রধান কাজ হল আইন প্রণয়ন করা। এটি হাউস অব কমন্স দ্বারা পাসকৃত আইনগুলির উপর পর্যালোচনা করে এবং প্রয়োজনমতো পরিবর্তন সাধন করে। এর ক্ষমতা নিম্নোক্ত পয়েন্টগুলোতে বর্ণনা করা হলো:
আইন প্রণয়নের উপর পর্যালোচনা: হাউস অব লর্ডস হাউস অব কমন্স দ্বারা পাস হওয়া আইনগুলির উপর পর্যালোচনা করে এবং প্রয়োজনে পরিবর্তন নিয়ে আসে।
স্থগিতাদেশ প্রদান: হাউস অব লর্ডস পর্যালোচনা করে একটি বিলকে দুই বছরের জন্য স্থগিত করতে পারে।
বিলকে নাকচ করা: হাউস অব লর্ডস একটি বিলকে নাকচ করতে পারে। তবে এর পেছনে একটি শর্ত রয়েছে। এই বিলটি অর্থবিল হওয়া যাবে না।
পার্লামেন্টের কার্যপদ্ধতি: পার্লামেন্টের অধিবেশন সাধারণত অক্টোবর থেকে জুলাই পর্যন্ত চলে। পার্লামেন্টের অধিবেশনে নতুন আইন প্রণয়ন, সরকারের নীতি ও কার্যকলাপের উপর আলোচনা, এবং সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবও আনা হতে পারে। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কার্যপদ্ধতিতে কিছু রীতিনীতি ও প্রথা রয়েছে। এই রীতিনীতি ও প্রথাগুলি দীর্ঘকাল ধরে প্রচলিত।
আরো পড়ুনঃ ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সার্বভৌম উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, যুক্তরাজ্যের আইনসভা একটি শক্তিশালী এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এটি যুক্তরাজ্যের সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং এটি দেশের নীতি নির্ধারণে ভূমিকা রাখে।