অধিকারের সংজ্ঞা দাও।

অধিকারের সংজ্ঞা দাও।

অধিকার এমন একটি ধারণা, যা সমাজ ও রাষ্ট্রের কাঠামোতে ব্যক্তির সুযোগ, স্বাধীনতা এবং দাবি স্বীকৃতি প্রদান করে। এটি একটি নৈতিক, সামাজিক, এবং আইনি ব্যবস্থা, যা ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ন্যায্য চাহিদা পূরণের জন্য নির্ধারিত হয়। অধিকারের মাধ্যমে ব্যক্তি তার জীবনযাপন, স্বাধীনতা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা অর্জনের নিশ্চয়তা পায়।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অধিকারের সংজ্ঞা:

  1. রুডলফ ক্রোথ: “অধিকার হলো ব্যক্তির এমন দাবি, যা সমাজ এবং রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত এবং সুরক্ষিত।”
  2. জার্মি বেন্থাম: “অধিকার হলো ব্যক্তি কর্তৃক উপভোগের একটি আইনি সুবিধা, যা রাষ্ট্রের মাধ্যমে প্রণীত হয়।”
  3. জে.এস. মিল: “অধিকার হলো ব্যক্তির জন্য নির্ধারিত স্বাধীনতা, যা অন্যের স্বাধীনতা ব্যাহত না করেই প্রয়োগ করা যায়।”
  4. হল্যান্ড: “অধিকার হলো আইন দ্বারা প্রদত্ত এবং অন্যদের ওপর আরোপিত একটি দায়িত্ব।”

অধিকারের বৈশিষ্ট্য:

  1. আইনি স্বীকৃতি: অধিকার সমাজ এবং রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত এবং আইনের মাধ্যমে সুরক্ষিত।
  2. সামাজিক স্বীকৃতি: অধিকারের ভিত্তি হলো সমাজে একটি নির্ধারিত নৈতিক ও সামাজিক কাঠামো।
  3. উপভোগের সুযোগ: অধিকারের মাধ্যমে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী নির্দিষ্ট সুবিধা ও সুযোগ লাভ করে।
  4. দায়িত্ব ও কর্তব্য: অধিকারের পাশাপাশি দায়িত্ব ও কর্তব্যও অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত।
  5. সুরক্ষা: রাষ্ট্র ও সমাজ অধিকার সুরক্ষার জন্য দায়বদ্ধ।
  6. আন্তঃসম্পর্ক: অধিকারের মাধ্যমে ব্যক্তির সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হয়।

অধিকারের প্রকারভেদ:

  1. প্রাকৃতিক অধিকার: জন্মসূত্রে প্রাপ্ত, যেমন জীবনধারণ, স্বাধীনতা।
  2. আইনগত অধিকার: আইন দ্বারা প্রদত্ত, যেমন সম্পত্তির অধিকার, ভোটাধিকার।
  3. নৈতিক অধিকার: সমাজ ও নৈতিকতার ভিত্তিতে প্রাপ্ত, যেমন অন্যকে সম্মান দেওয়ার অধিকার।
  4. সাংবিধানিক অধিকার: সংবিধানে স্বীকৃত অধিকার, যেমন সমানাধিকারের অধিকার।
  5. মানবাধিকার: বৈশ্বিকভাবে স্বীকৃত অধিকার, যেমন শিক্ষা ও চিকিৎসার অধিকার।

অধিকারের গুরুত্ব:

  1. ব্যক্তিগত স্বাধীনতা: অধিকারের মাধ্যমে ব্যক্তি স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ পায়।
  2. সমাজে শৃঙ্খলা: অধিকার সুরক্ষিত হলে সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় থাকে।
  3. ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণ: অধিকার সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সহায়ক।
  4. ব্যক্তিগত বিকাশ: ব্যক্তি তার মেধা ও দক্ষতা বিকাশের সুযোগ পায়।
  5. সমতার প্রতিষ্ঠা: অধিকারের মাধ্যমে সমাজে বৈষম্য দূর করা যায়।
  6. মানবাধিকার রক্ষা: অধিকারের ভিত্তিতে মৌলিক মানবাধিকার সুরক্ষিত হয়।

অধিকার হলো ব্যক্তি, সমাজ এবং রাষ্ট্রের মধ্যে একটি সংযোগ স্থাপনকারী গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি ব্যক্তি এবং গোষ্ঠীর স্বাধীনতা ও সুযোগ নিশ্চিত করে এবং একটি ন্যায়বিচারপূর্ণ সমাজ গড়ে তুলতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো অধিকারের সুরক্ষা এবং তা বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। অধিকারের যথাযথ চর্চার মাধ্যমে সমাজে শান্তি, শৃঙ্খলা এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠা সম্ভব।

Share your love
Shihabur Rahman
Shihabur Rahman

Hey, This is Shihabur Rahaman, B.A (Hons) & M.A in English from National University.

Articles: 927

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *