প্রশ্নঃ পুঁজিবাদ কি? পুঁজিবাদের বৈশিষ্ট সমূহ আলোচনা করো।
ভুমিকাঃ পুঁজিবাদ হল একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যেখানে সম্পদ এবং উৎপাদনের উপায়গুলি ব্যক্তি বা কোম্পানির ব্যক্তিগত মালিকানাধীন। বিশ্বে জনপ্রিয় দুটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে সমাজতন্ত্র এবং পুঁজিবাদ অন্যতম। পুঁজিবাদকে একটি মুক্ত বাজার অর্থনীতি হিসাবে বিবেচনা করা হয় যেখানে উৎপাদনের উপকরণসমূহ ব্যক্তিগত মালিকানার নিয়ন্ত্রণ থাকে।
পুঁজিবাদঃ পুঁজিবাদ (Capitalism) হল একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যেখানে মুনাফা তৈরির লক্ষ্যে ব্যবসা, কারখানা এবং উৎপাদনের উপকরণসমূহের উপর ব্যক্তিগত মালিকানার নিয়ন্ত্রণ থাকে। সহজভাবে বলতে গেলে, যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় উৎপাদন, বণ্টন, ভোগ প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণের জন্য আলাদা কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষ থাকে না এবং সরবরাহ ও চাহিদার উপর ভিত্তি করে মূল্য নির্ধারণ করা হয়, তাকে পুঁজিবাদ বলে।
পুঁজিবাদের সংজ্ঞাঃ বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী ও তাত্ত্বিক ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে পুঁজিবাদের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিম্নে তাদের প্রদত্ত কয়েকটি সংজ্ঞা উপস্থাপন করা হলোঃ
সিডনি উলফ (Sidney Welf) এর মতে, “পুঁজিবাদ হচ্ছে সমাজ উন্নয়নের একটি স্তর, যেখানে ব্যক্তিমালিকানাধীন উৎপাদন ব্যবস্থা বিদ্যমান এবং শিল্পকারখানা ও শ্রমিকের শ্রম নিয়ন্ত্রণ করে মালিক উৎপাদিত দ্রব্যের একচেটিয়া অধিকার ভোগ করেন। শ্রমিকগণ উৎপাদিত দ্রব্যের মুনাফা থেকে বঞ্চিত হয়।”
আরো পড়ুনঃ সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞা দাও। এর প্রকৃতি ও স্বরূপ বা পরিধি ও বিষয়বস্তু আলোচনা করো।
অধ্যাপক ডি. এম. সি. রাইট (D. M. C. Wright) বলেছেন, “পুঁজিবাদ এমন এক ধরনের ব্যবস্থা যেখানে অর্থনৈতিক কার্যক্রমের অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত উদ্যোগ গৃহীত হয় এবং অবাধ প্রতিযোগিতা ও মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে পরিচালিত হয়।”
আর. টি. শেফার (R. T. Schaefer) এবং আর. পি. ল্যাম (R. P. Lamm) বলেছেন, “পুঁজিবাদ হচ্ছে এমন এক ধরনের অর্থব্যবস্থা, যেখানে উৎপাদনের উপায়ের বৃহৎ অংশ ব্যক্তির হাতে ন্যস্ত থাকে এবং আর্থিক কর্মের মূল উত্তেজক হচ্ছে সঞ্চিতি লাভ” ।
অক্সফোর্ড এডভান্স লার্নারস্ ডিকশনারি অফ কারেন্ট ইংলিশ (Oxford Advanced Learner’s Dictionary of Current English) গ্রন্থে পুঁজিবাদের সংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে এভাবে, “পুঁজিবাদ হলো এমন এক ধরনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যেখানে একটি দেশের ব্যবসায় বাণিজ্য এবং শিল্পকারখানা কোন পুঁজিপতির ছত্রছায়ায় গড়ে উঠে ও নিয়ন্ত্রিত হয় এবং এর প্রধান উপকরণসমূহ হলো প্রতিযোগিতা, মুনাফা, যোগান এবং চাহিদা।
আরো পড়ুনঃ সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশে অগাস্ট কোঁতের অবদান আলোচনা করো।
পুঁজিবাদের ধারণা ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে মহামতি লেনিন কর্তৃক প্রদত্ত সংজ্ঞাই সর্বাধিক প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন: পুঁজিবাদ বলতে এক বিশেষ সমাজব্যবস্থাকে বোঝায়। এই সমাজব্যবস্থায় জমিজমা, শিল্পকারখানা, যন্ত্রপাতি প্রভৃতির মালিকানা কুক্ষিগত থাকে মুষ্টিমেয় জমিজমার মালিক ও পুঁজিপতিদের হাতে। এবং জনসাধারণের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের হাতে কোন সম্পদই থাকে না, বা নামমাত্র কিছু থাকে।
পুঁজিবাদের বৈশিষ্ট্য সমুহঃ পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থার আকৃতি-প্রকৃতি পর্যালোচনা করলে এর আর্থ-সামাজিক ও রাজনীতিক দিকগুলি সহজেই অনুধাবন করা যাবে। তবে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা কালক্রমে বিকশিত ও পরিবর্তিত হয়েছে। পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বিকাশ ও পরিবর্তনশীলতার আলোকে এর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলিকে সংক্ষেপে বর্ণনা করা হল।
১। উদ্দ্যোক্তার স্বাধীনতা: পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় প্রত্যেক ব্যক্তি কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়াই তাদের নিজস্ব অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রাখে। এই অর্থ ব্যবস্থায় সম্পদের ব্যক্তিগত মালিকানা থাকে এবং পূঁজি বিনিয়গের মাধ্যমে যে কেউ উদ্যোক্তা হতে পারে।
২। ব্যক্তিগত মালিকানা: এটি পুঁজিবাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে অন্যতম। এ ব্যবস্থায় কারখানা বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের, যাবতীয় সরঞ্জাম ব্যক্তিগত সম্পত্তি বা কোম্পানির মালিক গণের মালিকানাধীন থাকে।
৩। মুনাফা লাভের উদ্দেশ্য উৎপাদনঃ পুঁজিবাদী সমাজে মুনাফার জন্য পণ্য উৎপাদন করা হয়। মুনাফা অর্জনই হল পুঁজিবাদী উৎপাদনের মূল প্রেরণা। এই ব্যবস্থায়,সর্বাধিক মুনাফা অর্জনে ব্যাক্তি বা উৎপাদক প্রতিস্থান বিভিন্ন ভাবে তার পণ্যকে ক্রেতার কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। পুঁজিপতিরা অধিক মুনাফা অর্জনের ব্যাপারে তাদের উদ্যোগকে অব্যাহত রাখে। মুনাফার পরিমাণ যত বাড়তে থাকে পুঁজিপতিরা উৎপাদন বৃদ্ধির ব্যাপারে তত বেশী উদ্যোগী হয়। মুনাফা অর্জন ও তাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উন্নীত করাই হল পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য।
৪। মূল্য প্রক্রিয়াঃ মূল্য প্রক্রিয়া পুঁজিবাদী অর্থনীতির আরেকটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। এই ব্যবস্থার বাজারে চাহিদা এবং সরবরাহ অনুযায়ী পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করা হয়।
৫। মুক্ত বাণিজ্য অর্থনীতিঃ এই ব্যবস্থায়, কম শুল্ক বিদ্যমান থাকে যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে উৎসাহিত করে।
৬। সরকারি হস্তক্ষেপ মুক্তঃ পুঁজিবাদী অর্থনীতির দৈনন্দিন কার্যক্রমে সরকার কনরকম হস্তক্ষেপ করে না। ভোক্তা এবং উৎপাদক যেকোনো পণ্য বা পরিষেবা সম্পর্কে তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিতে সম্পূর্ণ স্বাধীন থাকে।
৭। মালিকানার স্বাধীনতাঃ এই ব্যবস্থায় একজন ব্যক্তি যে কোনো পরিমাণ সম্পত্তি অর্জন করতে পারে এবং তার ইচ্ছা অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারে। উৎপাদন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ইচ্ছা দ্বারা নির্ধারিত হয়ে থাকে।
৮। উৎপাদন শক্তির উন্নতি: পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থায় উৎপাদন শক্তির দ্রুত উন্নতি ও ব্যাপক বিকাশ ঘটে। শিল্প সংগঠন, প্রযুক্তিবিদ্যা ও উৎপাদনের কলাকৌশলের প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়। পুঁজিপতিরা প্রতিযোগিতার বাজারে উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে গবেষণা খাতে বিপুল অর্থ ব্যয় করে। তার ফলে কারিগরী বিদ্যা ও প্রযুক্তিগত কলাকৌশলের অভাবনীয় অগ্রগতি ঘটে। উৎপাদনের ক্ষেত্রে উৎকৃষ্ট যন্ত্রপাতির বহুল ব্যবহার শুরু হয়। উন্নত মূলধন ব্যবহারের পরিপ্রেক্ষিতে শ্রমিকদের উৎপাদন শক্তি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। পুঁজিপতিরা নিজেদের মুনাফার স্বার্থেই এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা গ্রহণ করে।
৯। ভোক্তার স্বাধীনতাঃ ভোক্তা তার ইচ্ছা, রুচি ও চাহিদা অনুযায়ী দ্রব্যসামগ্রী ভোগ করতে পারে, অর্থাৎ ভোক্তার ভোগের ক্ষেত্রে পূর্ণ স্বাধীনতা থাকে।
১০। শ্রেণিবিভাগঃ এই উৎপাদন ব্যবস্থায় সম্পদের মালিকানার ভিত্তিতে উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্মবিত্ত ইত্যাদি শ্রেণিবিভাগ সৃষ্টি হয়। সমাজে আয় ব্যয় বৈষম্য সৃষ্টি হয়। ধনীরা আরও ধনী হতে থাকে এবং দরিদ্ররা আরও দরিদ্র হতে থাকে।
আরো পড়ুনঃ সামাজিক পরিবর্তন কি? সামাজিক পরিবর্তনের মার্ক্সিয় তত্ত্বটি আলোচনা করো।
১১। অবাধ প্রতিযোগিতাঃ পুঁজিবাদী সমাজে বাজার অর্থনীতির নিয়ম অনুসারে বিভিন্ন উৎপাদক-গোষ্ঠী ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অবাধ প্রতিযোগিতা পরিলক্ষিত হয়। উদ্যোক্তা বা উৎপাদকদের মধ্যে নতুন কলাকৌশল, মুনাফা বৃদ্ধি, কম খরচে উৎপাদন ও কম মূল্যে ভোক্তাদের কাছে দ্রব্য সরবরাহ ইত্যাদি ক্ষেত্রে পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে প্রতিযোগীতা বিদমান।পুঁজিপতি উৎপাদকরা নিজেদের উৎপাদিত পণ্যের জন্য বাজার দখলের উদ্দেশ্যে পরস্পরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে।
১২। এলিটদের প্রাধান্যঃ পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় উৎপাদনের উপাদানসমূহের মালিকানা কেন্দ্রীভূত থাকে পুঁজিপতিদের হাতে। শ্রমিক-শ্রেণী উৎপাদনের সকল প্রকার উপাদানের মালিকানা থেকে বঞ্চিত থাকে। আর্থনীতিক ক্ষেত্রে যারা প্রভাবশালী তাদের প্রাধান্য ও প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই অবস্থায় জনসাধারণ রাজনীতিক ক্ষমতার সুযোগ-সুবিধা থেকে কার্যত বঞ্চিত থাকে।
১৩। স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণঃ পুঁজিবাদী অর্থ ব্যবস্থায় উৎপাদন, বণ্টন নিয়ন্ত্রনের কোন কর্তৃপক্ষ থাকে না। বাজারে কোন দ্রব্যের দাম, চাহিদা ও যোগানের ঘাত-প্রতিঘাত স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়।
১৪। শ্রমিক শোষণ ও শ্রমশক্তি বিক্রয়ঃ পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় আপাতদৃষ্টিতে শ্রমিক-শ্রেণী স্বাধীন ও মুক্ত বলে বিবেচিত হয়। কিন্তু পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থায় মালিক শ্রেণী শ্রমিকদের শ্রমের বিনিময়ে নামমাত্র মজুরি দেয়। ন্যায্য পাওনা থেকে শ্রমিকদের তারা বঞ্চিত ও শোষণ করে। এ ধরনের সমাজব্যবস্থায় শ্রমিকরা উৎপাদনের সকল উপাদান থেকে বঞ্চিত। তারা সহায়-সম্বলহীন। এই অবস্থায় নিজেদের জীবনধারণ এবং পরিবারের ভরণ-পোষণের জন্য তারা পুঁজিপতিদের কাছে তাদের শ্রম শক্তি বিক্রয় করতে বাধ্য হয়।
১৫। পুঁজিপতিদের নিয়ন্ত্রণঃ পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থায় উৎপাদন প্রক্রিয়ার উপর পুঁজিপতি বা তার প্রতিনিধির পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ কায়েম হয়। পণ্য, প্রযুক্তি, কাজের পরিবেশ, শ্রম সময়, শ্রমশক্তি, শ্রমশক্তির মূল্য, উদ্বৃত্ত মূল্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে পুঁজিপতির অবাধ নিয়ন্ত্রণ পরিলক্ষিত হয়।
১৬। টাকার ব্যবহার বৃদ্ধিঃ পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় বিনিময়ের মূল মাধ্যম হিসাবে টাকার ব্যবহার বৃদ্ধি পায়। পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় পুঁজি টাকার রূপ ধারণ করে। তার ফলে পুঁজির সচলতা বৃদ্ধি পায়। এবং পুঁজির পুনর্বিনিয়োগ ও বিস্তারের সুযোগ সম্প্রসারিত হয়। এই অবস্থায় ব্যবসা বাণিজ্যের বিস্তার ঘটে এবং ব্যাঙ্ক ও অন্যান্য আর্থিক সংস্থাসমূহের কাজকর্মের পরিধি প্রসারিত হয়।
১৭। পণ্যোৎপাদনঃ পণ্য উৎপাদনের একাধিপত্য পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হিসাবে বিবেচিত হয়। বিনিময় ও বিক্রয়যোগ্য দ্রব্যের উৎপাদনকে পণ্য উৎপাদন বলে। এই পণ্যোৎপাদনের সর্বোচ্চ ধরন হল এই পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থা। পুঁজিবাদী অর্থনীতির আলোচনায় মার্কস পণ্যোৎপাদন সম্পর্কিত বিষয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থায় ভোগের জন্য নয়, বিক্রির জন্য উৎপাদন পরিচালিত হয়। ব্যবসা ও বিক্রির বাজার সম্প্রসারিত করার জন্য উৎপাদন নিয়ন্ত্রিত হয়।
উপসংহারঃ পুঁজিবাদ আজ বিশ্বের সবচেয়ে প্রচলিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। বর্তমানে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু রয়েছে। এটি বিশ্ব অর্থনীতির প্রায় ৮০% নিয়ন্ত্রণ করে। পুঁজিবাদের মূল ধারণা হল যে ব্যক্তিরা তাদের নিজের স্বার্থে কাজ করলে তা সামগ্রিকভাবে সমাজের জন্য সর্বোত্তম ফলাফল নিয়ে আসবে। সুতারাং নপুঁজিবাদের সুবিধা ও অসুবিধাগুলো বিবেচনা করে এর উন্নতি ও সংস্কার করা জরুরী।