রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে বিজ্ঞান বলার পক্ষে যুক্তি দেখাও।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে বিজ্ঞান বলার পক্ষে যুক্তি দেখাও।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাষ্ট্র, সরকার, সমাজ এবং মানুষের আচরণ নিয়ে গবেষণা করে। এটি রাষ্ট্রের কার্যাবলী, রাজনৈতিক কাঠামো এবং সামাজিক প্রক্রিয়া বিশ্লেষণের জন্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করে। যদিও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে মতানৈক্য রয়েছে, তবুও বেশ কয়েকটি কারণের ভিত্তিতে এটিকে একটি বিজ্ঞান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। 

নিচে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিজ্ঞানসম্মত বৈশিষ্ট্যগুলোর ভিত্তিতে যুক্তি তুলে ধরা হলো:

১. সুশৃঙ্খল ও সুসংবদ্ধ জ্ঞান: রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাষ্ট্র, সরকার এবং নাগরিকদের সম্পর্ক ও আচরণ নিয়ে গবেষণা করে। এটি রাজনৈতিক কাঠামো এবং প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিজ্ঞানসম্মত এবং  সুসংবদ্ধ জ্ঞান প্রদান করে।

২. পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ: রাষ্ট্রবিজ্ঞান পর্যবেক্ষণ এবং অভিজ্ঞতার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে। প্লেটো ও অ্যারিস্টটলের মতো প্রাচীন দার্শনিকেরা রাজনৈতিক ব্যবস্থার পর্যবেক্ষণ করেছিলেন যা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভিত্তি।

৩. পরীক্ষণযোগ্য তত্ত্ব: বিজ্ঞান যেমন পরীক্ষার মাধ্যমে তত্ত্ব প্রমাণ করে, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও রাজনৈতিক ব্যবস্থা, আইন এবং সামাজিক নীতি নিয়ে গবেষণা ও পরীক্ষণ সম্ভব।

৪. সাধারণ নীতিমালা প্রতিষ্ঠা: রাষ্ট্রবিজ্ঞানে সাধারণ নীতিমালা এবং সূত্র তৈরি করা হয় যা বিভিন্ন রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, গণতন্ত্রের কার্যক্রমে বিভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন।

৫. তথ্যনির্ভর বিশ্লেষণ: রাষ্ট্রবিজ্ঞান তত্ত্বের পাশাপাশি তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণে গুরুত্ব দেয়। ইতিহাস ও পরিসংখ্যানের মাধ্যমে এটি সিদ্ধান্ত গ্রহণের উপায় তৈরি করে।

৬. ভবিষ্যদ্বাণী করার ক্ষমতা: গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচনের ফলাফল পূর্বাভাস করা সম্ভব, যা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভবিষ্যদ্বাণীমূলক ক্ষমতা প্রমাণ করে।

৭. মূল্যমান-নিরপেক্ষ আলোচনা: আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা তথ্য ও পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে বিশ্লেষণ করেন যেটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য।

৮. সর্বজনীন বিধি ও নীতি: অ্যারিস্টটল এবং ফাইনারের মতো রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক কাঠামো বিশ্লেষণ করে সাধারণ নীতিমালা প্রণয়ন করেছেন যা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির উদাহরণ। 

৯. মানুষের কল্যাণে ভূমিকা: রাষ্ট্রবিজ্ঞান একটি কল্যাণমুখী জ্ঞান, যা মানুষের সমস্যার সমাধানে এবং জনকল্যাণ নিশ্চিত করতে কাজ করে।

সুতারাং  রাষ্ট্রবিজ্ঞান পদার্থবিদ্যা বা গণিতের মতো বিশুদ্ধ বিজ্ঞান না হলেও এটি সুসংগঠিত সামাজিক বিজ্ঞান। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি, তথ্য বিশ্লেষণ এবং ভবিষ্যদ্বাণী করার ক্ষমতার মাধ্যমে এটি রাষ্ট্র ও সমাজের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে একটি বিজ্ঞান হিসেবে বিবেচনা করা যুক্তিসঙ্গত।

Share your love
Shihabur Rahman
Shihabur Rahman

Hey, This is Shihabur Rahaman, B.A (Hons) & M.A in English from National University.

Articles: 927

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *