জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে ভালো ফলাফল করার টেকনিক (বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে)

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে ভালো ফলাফল করার টেকনিক: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস অত্যন্ত বড় হওয়া শিক্ষার্থীদের কে প্রচন্ড বেশি পড়াশোনা করতে হয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে যেমন শিক্ষকরা যেগুলো ক্লাসে পড়ান সেগুলোই পরীক্ষায় আসে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এমনটা নয়। এখানে নিয়মিত ক্লাস না হবার কারণে সিলেবাসটা তুলনামূলক বড় হয়ে যায়। সবচেয়ে বড় সমস্যা হল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের খাতা গুলো দেখা হয় বোর্ডের আন্ডারে নিয়ে।

বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা এবং মানবিক বিভাগের বিষয়গুলোতে সহজেই সিজিপিএ ৩ পাওয়া গেলেও ইংরেজি বিভাগে খুব কষ্টকর হয়ে পড়ে। এর বাস্তব প্রমাণ পাওয়া যাবে যদি নিজ নিজ কলেজের ইংরেজি বিভাগের ফলাফলের সাথে অন্যান্য বিভাগের ফলাফলের তুলনা করা যায়।

<<<ইংলিশ ডিপার্টমেন্টের সকল সামারি>>>

এমন অনেক সময় দেখা যায় যে অন্যান্য বিভাগ এ ১৫ থেকে ২০ জন প্রথম শ্রেণী পেয়েছে কিন্তু ইংরেজি বিভাগে প্রথম শ্রেণি পেয়েছে দুই থেকে তিনজন।

এর পেছনে অবশ্য অনেক কারণ কাজ করে। ইংরেজি বিভাগে অনেক ভালো ভাবে লিখলেও শিক্ষকরা নাম্বার দিতে চান না। আবার অনেক সময় খাতা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ভেতরে কি লেখা হয়েছে সেটা না পড়েই শুধু গড়পড়তা নাম্বার দিয়ে যাওয়া হয়।

এই লেখাটি অন্যদের কে দেখিয়ে উচিৎ জবাব দিন যারা আপনাকে বলে যে কি করিস যে ৩ পয়েন্ট ই পাস না!!

এতে করে অনেক সময় অনেক শিক্ষার্থীরা ভালো পরীক্ষা দেবার পরেও পরীক্ষার ফলাফল খারাপ করে। আমি নিজেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলাম। আমার নিজের এবং আমার বন্ধুদের ফলাফল বিবেচনায় ভালো ফলাফল করার পেছনে যেটা কাজ করে সেগুলো আজকে তুলে ধরছি।

বাংলায় পান সব কিছুঃ

ইংরেজি বিভাগে ভালো ফলাফল করার টেকনিক

১। অনেক বেশি লেখাঃ বেশি নাম্বার পেতে হলে অবশ্যই অনেক বেশী বেশী লিখতে হবে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটাই সত্য যে বেশিরভাগ শিক্ষকেরা ইংরেজি বিভাগের খাতা মূল্যায়ন করে থাকেন একজন শিক্ষার্থী কত পাতা উত্তর লিখেছে তার ওপরে। যে যত বেশি পাতা উত্তর লিখেছে তার নাম্বার ততবেশি। 

আপনি যদি সঠিক ভাবে উত্তর অল্প পাতার মধ্যে শেষ করে দেন তাহলে যতই ভালো লিখুন না কেন খুব বেশি নাম্বার পাবেন না। কিন্তু হাবিজাবি যায় লিখেন যদি অনেক বেশি লিখে থাকেন তাহলে আপনার বেশি নাম্বার পাওয়ার সম্ভাবনা একটু বেশি। 

আমাদের অনেক বন্ধু বান্ধবীরা বড় প্রশ্ন গুলো ১০ থেকে ১৫ পৃষ্ঠা পর্যন্ত লিখত। যারা এভাবে লিখত তাদের পরীক্ষার ফলাফল তুলনামূলক অনেক ভালো হতো। 

কিন্তু আমি নিজে অনেক বন্ধুদের দেখেছি এবং ছোট ভাইদের ও দেখেছি যারা শুধুমাত্র ভালো ছাত্র হয়েও অল্প লেখার কারণে ফলাফল খারাপ করেছে। 

যে ছেলেটা লিঙ্গুইস্টিকস বা ইএলটি এর কিছুই বোঝেনা সেই ছেলেটাও খাতার পাতা ভরে রেখে এসে বি প্লাস পেয়ে যায়। অথচ সারাবছর ভালোভাবে পড়াশোনা করা ছেলেটা অযথা হাবিজাবি না লিখে সঠিকভাবে উত্তর দিয়ে এসেও শুধু কম লেখার কারণে B- পায়।

তাই ভালো ফলাফল করতে হলে যাই লিখুন না কেন অবশ্যই খাতার পাতা ভরে অনেক বেশি লিখতে হবে। 

২। গ্রামাটিক্যাল ভুল: শিক্ষকরা যদিও খাতা দেখার সময় খুব একটা পড়েন না তবে দুর্ভাগ্যবশত যদি কোন গ্রামাটিক্যাল ভুল শিক্ষকের নজরে পড়ে যায় তাহলে সেই খাতার প্রতি তিনি বিরক্ত বোধ করেন।

মনে মনে ভাবেন যে ইংরেজি সাহিত্যে পড়াশোনা করার পরেও ইংরেজি গ্রামার সম্পর্কে তেমন কোন ধারণা নেই এই ছেলের। একে কিভাবে ভালো মার্ক দেওয়া সম্ভব। 

তাই যথাসম্ভব গ্রামাটিক্যাল ভুলগুলো এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।

৩। মোটামুটি পরিষ্কার লেখা: ভালো লেখা হলে এমনিতেই দেখতে ভালো লাগে এটাই স্বাভাবিক। তাই আপনি যাই লিখুন না কেন আপনার লেখা যদি ভাল হয় তাহলে ভালো ফলাফল করার ক্ষেত্রে সেটা প্লাস পয়েন্ট হিসেবে পরিগণিত হয়।

প্রশ্নের স্ট্রাকচার এবং লেখা যদি ঠিকঠাক মত হয় তাহলে অন্যদের থেকে নাম্বারের দিক দিয়ে আপনি এমনিতেই এগিয়ে থাকবেন। কারণ আগে দর্শনধারী পরে গুণবিচারী। 

৪। রেফারেন্স: রেফারেন্স বা কোটেশান ইংরেজি সাহিত্যের ক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আপনি প্রশ্নগুলোতে যদি দুই থেকে তিনটা করে কোটেশন ব্যবহার করেন তাহলে সেটা আপনাকে অন্যদের থেকে অনেক বেশি এগিয়ে রাখবে।

যদিও এই প্রশ্ন এসে যায় যে কতজন শিক্ষক কোটেশন আসলে হুবহু মুখস্ত রাখতে পারেন, কিন্তু তার পরেও যদি প্রশ্নের উত্তরের ভেতরে খাতার মূল্যায়ন করার সময় কোন শিক্ষক রেফারেন্স কিংবা কোটেশন দেখতে পান তাহলে সেই খাতা সম্পর্কে শিক্ষকের পজেটিভ মনোভাব তৈরি হয়। আর এটা আপনাকে বেশি নাম্বার পেতে অত্যান্ত সহায়তা করবে। 

রেফারেন্সগুলো যদি লাল কালি বাদে অন্যান্য কালি দিয়ে দিতে পারেন তাহলে সেটা আরো ভালো হয়। 

৫। পয়েন্ট আকারে লেখা: কোন প্রশ্ন লেখার ক্ষেত্রে যদি আপনি আউটলাইন ব্যবহার করেন তাহলে প্রশ্নের স্ট্রাকচার বুঝতে সুবিধা হয়। সে ক্ষেত্রে একজন শিক্ষক আপনার শুধু আউটলাইন গুলো দেখেই বুঝে যেতে পারবেন যে প্রশ্নের উত্তরে আপনি কোন বিষয়গুলো আসলে উপস্থাপন করেছেন এবং সেগুলো সম্পর্কিত কি না।

তবে অবশ্যই পয়েন্ট আকারে লিখতে হলে রিলেভেন্ট ইনফরমেশন গুলো ব্যবহার করতে হবে। কারণ পয়েন্ট আকারে লিখলে শিক্ষকরা খুব সহজেই বুঝতে পারেন যে আপনি আসলে কি বোঝাতে চেয়েছেন।

৬। সালের ব্যবহার: প্রশ্ন লেখার সময় যদি বিভিন্ন কবি সাহিত্যিকদের জন্ম মৃত্যু সাল ব্যবহার করেন তাহলে প্রশ্নের মান আরো উন্নত হয়ে থাকে। সেইসাথে প্রশ্নের টপিক এর প্রকাশকাল আপনাকে ভালো নাম্বার পেতে আরো বেশি সহায়তা করতে পারে।

৭। নিয়মিত পড়াশোনা: প্রতিদিন অল্প অল্প করে হলেও নিয়মিত পড়াশোনা করতে হবে। কারণ বেশিরভাগ শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে পরীক্ষার হলে গিয়ে প্রশ্নের উত্তরে আসলে কি লিখবে সেটা ভুলে যায়। ইনফরমেশন গুলো ভাসাভাসা অস্পষ্ট হয়ে যায়। 

এর একমাত্র কারণ হলো নিয়মিত পড়াশোনা করা এবং লেখালেখি না করা। কেউ যদি শুরু থেকেই অল্প অল্প করে নিয়মিত পড়ে এবং লিখে তাহলে পরীক্ষার হলে গিয়ে সে খুব সুন্দর ভাবে প্রশ্নের উত্তর গুলো সাজিয়ে লিখতে পারবে। তাই নিয়মিত পড়াশোনা করা আপনাকে ভালো ফলাফলের ক্ষেত্রে অনেক বেশি সহায়তা করবে।

অনেক পড়েও কেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী রা ভালো ফলাফল করতে পারেনা?

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের বেশিরভাগ খাতা দেখেন যারা আসলে বিসিএস ক্যাডার নয়। কারণ যারা সাধারণ শিক্ষায় ক্যাডার হয়ে থাকেন তারা এমনিতেই ভালো একটা বেতন পান। সে ক্ষেত্রে খুব কম শিক্ষকেরা এই খাতা দেখার ঝামেলা কাঁধে নিয়ে থাকেন। আর যারা দেখেন তারা ও অতোটা মনোযোগ দিয়ে দেখেন না। অনেক সময় দেখা যায় তারা তাদের ছাত্র দের দিয়ে খাতা দেখাচ্ছেন।

এখাতা গুলো দেখার জন্য সবচেয়ে বেশি আগ্রহী হয়ে থাকেন গ্রামের বিভিন্ন কলেজের শিক্ষকরা এবং এমপিওভুক্ত কলেজের শিক্ষকরা। এ সকল কলেজের শিক্ষকদের কিভাবে নিয়োগ দেওয়া হয় সেটা আমরা কমবেশি সকলেই জানি।

খাতা দেখার আগে এই শিক্ষকেরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্টাডি গাইড অনুসরণ করে থাকেন। তারা মনে করেন যে স্টাডি গাইডে যেটা লেখা আছে একমাত্র সেটাই প্রশ্নের উত্তর হতে পারে। আবার অনেক শিক্ষন আছেন যারা আসলে ঠিক মত বোঝেন ই না যে এই প্রশ্নের উত্তর টা ঠিক নাকি ভূল।

এমন অনেক শিক্ষকেরা আছেন যারা আসলে অনেক ছাত্রদের থেকে ইংরেজি সাহিত্যে বা উক্ত প্রশ্ন সম্পর্কে অনেক কম ধারণা রাখেন। যাদের নিজস্ব এবিলিটি থেকে বানিয়ে লেখার অভ্যাস তাদের জন্য এই শিক্ষকেরা অত্যন্ত হুমকিস্বরূপ হয়ে পড়ে। 

কোন শিক্ষক যদি এই পোস্ট পড়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আমার উদ্দেশ্য কোন শিক্ষকের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা নয় বা কাউকে ছোট করা নয়। আমার নিজের শিক্ষকের কাছ থেকে এসকল গল্প শুনে এবং নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে লেখাটা লিখলাম।

আশা করি যারা নতুন ইংরেজি সাহিত্যে অনেক আশা নিয়ে পড়াশোনা করতে আসছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের জন্য কাজে লাগবে। 

যদি আপনার কাছে লেখাটা উপকারী বলে মনে হয় তবে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। 

আমরা চাই সবাই যার যার যোগ্যতা অনুযায়ী সঠিক জায়গায় পৌঁছে যাক। 

Share your love
Ruhul Amin
Ruhul Amin

Hey, This is Ruhul Amin, B.A & M.A in English Literature from National University. I am working on English literature and career planning.

Articles: 84

2 Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *