দা লাইফ অফ কাওলি স্যামুয়েল জনসনের একটি বিখ্যাত সমালোচনা পূর্ণ গদ্য সাহিত্য। এখানে তিনি মেটাফিজিক্যাল কবিদের সমালোচনা করেছেন। আমরা জানি সমালোচনাপূর্ণ সাহিত্যকর্মে ভালো দিকটাও সমালোচনা করা হয় এবং খারাপ দিকটাও সমালোচনা করা হয়। এই সাহিত্যকর্মে জনসন মেটাফিজিক্যাল কবিদেরকে সমালোচনা করেছেন এবং তাদের মধ্যে যে ভালো দিকগুলো ছিল সেগুলো ফুটিয়ে তুলেছেন। জনসন তার এই সাহিত্যে মেটাফিজিক্যাল কবিদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অবজেকশন তুলে ধরেছেন।
সাহিত্যটির লেখার কারণ
জনসন যখন তার সাহিত্যিক জীবনের একদম শেষের দিকে চলে আসে তখন একদিন তার এক বন্ধু তাকে বলে যে, সে কবিদের জীবনী নিয়ে কেন কিছু লিখছে না। তারপর তিনি তার বন্ধুর কোথায় অনুপানিত হয়ে “Lives of the Poets” একটি এই বইটি লিখেন। এই বইটি ১৭৭৯ সাল থেকে ১৭৮১ সাল পর্যন্ত তিন খন্ডে প্রকাশ করেন। এই গ্রন্থটিতে তিনি ৫৬ জন কবির জীবনী লিখেছেন এবং তাদের যে সাহিত্যিক কাজকর্ম সেগুলো নিয়েও লিখেছেন। তাদের সাহিত্যিক কর্মকান্ড গুলো প্রকাশ করতে গিয়ে কখনো তিনি তাদের অনেক সুনাম করেছেন আবার কখনো তিনি তাদেরকে জানিয়েছেন তীব্র নিন্দা। তিনি মূলত বুঝিয়েছেন আসলে কোন সাহিতিক কাজগুলো ঠিক হয়নি বা কোনগুলো কোন ভাবে করলে ভালো হতো এক কথায় তিনি তাদেরকে সমালোচনা করেছেন। জনসন সেই সময়কার বেশ কিছু কবিদের নিয়ে লেখালেখি করেছিলেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মেটাফিজিক্যাল কবি।
কাওলি ছিল সেই সময়ের একজন মেটাফিজিক্যাল কবি। জনসন “The Life of Cowley” এই বইটি লিখার আগে কাওলিকে হয়তো অনেকেই চিনতোই না কিন্তু জনসন যখন কাওলি সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে, বড়সড়ো আকারে একটি বই লেখেন তখন কাওলি সবার নজরে আসে। জনসন কাওলির জীবনী আলোচনা করার মাধ্যমে মেটাফিজিকাল কবিদেরকে তুলে ধরেছেন ।
মেটাফিজিক্যাল কবিদের পরিচয়
জনসন তার গ্রন্থটি শুরু করেছেন মেটাফিজিক্যাল কবিদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে। তিনি তাদেরকে বলেছেন একদল লোক দেখানো কবি। মাটাফিজিক্যাল কবিদের তিনি বেশ সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন মেটাফিজিক্যাল কবি কোন কবি নয়, তারা মূলত তাদের লেখার মাধ্যমে নতুন একটা ধারণা প্রতিস্থাপন করতে চেয়েছে। তারা মূলত ফিজিক্যাল রিলেশন কে হাইলাইট করতে চেয়েছে। জনসন আরো বলেন দুই চারটা কবিতার লাইন ছন্দে মিল করে লিখলেই কবি হওয়া যায় না, মেটাফিজিক্যাল কবিরা কোন কবিই নয় তারা সকল ধারণাকে একসাথে যুক্ত করে ফেলেছেন।। তিনি বলেন, “ The most heterogeneous ideas are yoked by violence together;”
তবে জনসন যতই সমালোচনা করুক না কেন মেটাফিজিক্যাল কবিরা একটা নতুন ধারণার উদ্ভাবন করেছিলেন। তারা ভালোবাসাটাকে ফিজিক্যালি না দেখিয়ে Soul to Soul অর্থাৎ এক আত্মা থেকে আরেক আত্মায় ভালোবাসাটাকে দেখিয়েছেন। তারা যে ধারণাটার উদ্ভাবন করেছিলেন সেই ধারণাটি একটি নতুন ধরনের কবিতার জন্ম দিয়েছিলেন।
কবিতাকে সমালোচনা
জনসন কবিতাকে অনুকরণীয় এবং বাস্তববাদী (mimetic and pragmatic) এই দুই ভাগে ভাগ করেছেন। তিনি মেটাফিজিক্যাল কবিতার ওপর আঘাত করেন এই দুটি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে। জনসনের মতে মেটাফিজিক্যাল কবিদের প্রথম ব্যর্থতা হল অ্যারিস্টটলের দেয়া সত্যিকার কাব্যর প্রথম বৈশিষ্ট্যটি অর্থাৎ “কাব্য কে হতে হবে জীবন্ত ও প্রকৃতি থেকে অনুকরণ করা শিল্প” যা একেবারেই তাদের সাহিত্যে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তারা কাব্য চর্চার ক্ষেত্রে না জীবনকে অনুকরণ করেছে, না প্রকৃতিকে অনুকরণ করেছে। ফলে তাদের কাব্য ছিল জীবনের সত্য থেকে অনেক দূরে ।
জনসন তাদের ব্যর্থতার দ্বিতীয় দিক নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন তাদের কাব্য পাঠকদের মনে সেই ভাবে নাড়া দিত না যেভাবে সত্যিকার কাব্য নাড়া দিত। জনসন তাদের সাহিত্য কর্মকে প্রশংসা করেন, কিন্তু জনসন প্রমাণ করার চেষ্টা করেন যে, একটি সুরের ঐক্যবিশিষ্ট, সমন্বিত, ও সুন্দর সত্যিকারের সাহিত্যকর্ম যেভাবে পাঠককে সন্তুষ্ট করে, পাঠকের হৃদয়ের প্রশান্তি প্রদান করেন সেভাবে মেটাফিজিক্যাল কবিতা গুলো প্রশান্তি প্রদান করতে পারেনা। জনসন তার এই ধারণাটাকে প্রমাণ করার জন্য সে মেটাফিজিক্যাল কবিতার মূল উপজীব্য বিষয় “Wit” অর্থাৎ তারা তাদের কবিতাতে যে ধরনের রস রসিকতা তুলে ধরেছেন সেগুলো নিয়ে প্রশ্ন তুলেন।
Wit এর ব্যবহারের জন্য মেটাফিজিক্যাল কবিদের সমালোচনা
জনসন প্রথমেই প্রকাশ করেন যে মেটাফিজিক্যাল কবিদের সত্যিকারের কাব্যর মূল্য তাদের বুদ্ধিদীপ্ত রস রসিকতার ভিতরেই লুকায়িত রয়েছে। এই বিষয়টাকে আরো সুন্দরভাবে দেখানোর জন্য জনসন সর্বপ্রথমেই জন ড্রাইডেনের উদাহরণ টেনে আনেন যিনি স্বীকার করেছেন যে তিনি জন ডান ও তাদের সমসাময়িক কবিদের কাব্যর দিক দিয়ে ছাড়িয়ে গেলেও “Wit” অর্থাৎ রস ও রসিকতার ক্ষেত্রে অনেক নিচে ছিলেন। তাদের কাব্যর মূল উপজীব্য বিষয় ছিল “wit”। জনসন তাদেরকে সমালোচনা করার জন্য “wit”কে দুইটি আলাদা সংখ্যায় উপস্থাপন করেন।
আলেকজেন্ডার পোপ এর মতে, “wit” হল তা যা নিয়ে চিন্তা করা হয়েছিল কিন্তু সেটিকে সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করা হয়নি। এই সংজ্ঞার ওপর ভিত্তি করে জনসন বলেন মেটাফিজিক্যাল কবিরা একেবারেই ব্যর্থ। কারণ তারা তাদের একক চিন্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে আর কাব্যে শব্দ চয়নের ক্ষেত্রে ছিলেন একেবারেই অসতর্ক। তারা কবিতায় নিজেদের ব্যক্তিগত চিন্তা ভাবনা ব্যবহার করেছেন। এরপর জনসন “wit” এর আরও একটি সংজ্ঞা ব্যাখ্যা করেছেন। “wit” হল যা প্রাকৃতিক এবং যা নতুন। এই সংজ্ঞা দেয়ার পর জনসন বলেন মেটাফিজিক্যাল চিন্তাচেতনা একেবারেই নতুন কিন্তু এটা মোটেও প্রাকৃতিক না। আর তাদের এই অস্বাভাবিক চিন্তা চেতনার কারণেই পাঠকের মনে এই কবিতাগুলো একটি বিরক্তির বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জনসন এই দুইটি সঙ্গার ব্যাখ্যা দেবার পরে বলেন “wit” এর সাথে মেটাফিজিক্যাল কবিতার কোন মিল নাই অর্থাৎ মেটাফিজিক্যাল কবিতার ক্ষেত্রে “wit” কোনোভাবেই কাজে আসে না। জনসনের এই যুক্তির কারণে জনসন আরো একবার মেটাফিজিক্যাল কবিদের সমালোচনায় সফল হন। জনসন মেটাফিজিক্যাল কবিতাগুলোকে এক ধরনের Discordia Concors এর উদাহরণ হিসেবে দেখিয়েছেন। Discordia Concors বলতে বুঝানো হয়েছে দুইটি আলাদা ধরনের চিত্রকল্পের মিলন ঘটানো অর্থাৎ এমন জিনিসের মাঝে অতি লৌকিক মিল খুঁজে বের করা যেগুলো আপাত দৃষ্টিতে আলাদা মনে হয়। জনসন মেটাফিজিক্যাল কবিদের আরো সমালোচনা করে বলেন মেটাফিজিক্যাল কবিরা তাদের কবিতায় শালীনতা লংঘন করেছেন আর তারা প্রয়োজনের চেয়ে তাদের কবিতাগুলোতে “wit” এর বেশি ব্যবহার করেছেন।
মেটাফিজিক্যাল কবিদের কবিতায় Conceits এর ব্যবহার
জনসন মেটাফিজিক্যাল কবিদেরকে সমালোচনা করে বলেন মেটাফিজিক্যাল কবিরা তাদের কবিতায় Conceits এর ব্যবহার করেছেন। Conceits হল দূরবর্তী দুইটি জিনিসের মধ্যে তুলনা। এখানে অভিযোগ হচ্ছে মেটাফিজিক্যাল কবিরা তাদের কবিতাতে তাদের মনগড়া Conceits ব্যবহার করেছেন। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে মেটাফিজিক্যাল কবিরা যে Conceit গুলো ব্যবহার করেছেন সেগুলো পরবর্তীতে মানুষের মধ্যে সারা জাগিয়েছে এবং এই Conceits ব্যবহারের কারণে আজও সবার মাঝে মেটাফিজিক্যাল কবিরা স্মরণীয় হয়ে আছেন।
আব্রাহাম কাওলির মাধ্যমে মেটাফিজিক্যাল কবিদের প্রকাশ
জনসন মেটাফিজিক্যাল কবিদের ভুল দিকগুলো প্রথমত তুলে ধরেছেন এবং ভালো দিকগুলো খুবই সামান্য পরিমাণে তুলে ধরেছেন। আব্রাহাম কাওলির জীবন কাহিনী ব্যাখ্যার মাধ্যমে জনসন দেখিয়েছেন মেটাফিজিক্যাল কবিরা তাদের সকল চিন্তা চেতনাকে একত্রে করে একসাথে প্রকাশ করেছেন যেটাকে স্বাভাবিক দৃষ্টিতে ভালো দেখায় না। জনসন কাওলি কে বলেছেন যতগুলো মেটাফিজিক্যাল কবি রয়েছে তাদের মধ্যে কাওলিও একজন ভালো মাপের কবি।
যাইহোক জনসন তার এই সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে মেটাফিজিক্যাল কবিদের যেভাবে সমালোচনা করেছিলেন তার জবাব হিসেবে T.S. Eliot “Metaphysical Poets” নামে একটি সাহিতিক সমালোচনা রচনা করে জনসনের সবগুলো প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন এবং মেটাফিজিক্যাল কবিদেরকে জিরো থেকে হিরো বানিয়েছেন। আর তারপর থেকে আজ পর্যন্ত কোন সাহিত্যিক মেটাফিজিক্যাল কবিদেরকে সমালোচনা করার সাহস পায়নি। আসলেই মেটাফিজিক্যাল কবিরা ছিল জিনিয়াস।
Thanks a million!
Thank you
It’s absolutely amazing I have ever seen 😍
Awesome