প্রশ্নঃ উগ্র জাতীয়তাবাদ কী?
ভুমিকাঃ জাতীয়তাবাদ নিজের জাতির সাথে ঐক্য প্রকাশ করে, জাতীয় গর্ব এবং ঐক্যের অনুভূতি জাগিয়ে তোলে। পক্ষান্তরে, উগ্র জাতীয়তাবাদ হল জাতীয়তাবাদের একটি রূপ যা একটি নির্দিষ্ট জাতির শ্রেষ্ঠত্ব এবং অন্য জাতির প্রতি বিদ্বেষ বা ঘৃণা প্রকাশ করে। উগ্র জাতীয়তাবাদীরা বিশ্বাস করে যে তাদের জাতি অন্য সব জাতির তুলনায় শ্রেষ্ঠ এবং তাদের জাতির স্বার্থ অন্য সব জাতির স্বার্থের উপর প্রাধান্য পাওয়া উচিত। তারা প্রায়ই সহিংসতা এবং বর্বরতার মাধ্যমে তাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রস্তুত থাকে।
উগ্রজাতীয়তা বাদ: উগ্রজাতীয়তা বাদ হল জাতীয়তাবাদের বিকৃত রুপ। জাতীয়তাবাদ বিশ্ব সভ্যতাকে সমৃদ্ধ করেছে এবং নিজ নিজ সত্তা ও ব্যাক্তিত্ব বিকাশে সহায়তা করে। জাতিয়তাবাদে উদবুদ্ধ হয়ে কোনো জাতি নিজেদেরকে অন্য জাতি থেকে শ্রেষ্ট বলে বিশ্বাস করে এবং মিথ্যা প্ররোচনায় উদবুদ্ধ হয়ে নিজেদের শ্রেষ্টত্ব প্রমান করার লক্ষে আগ্র্রাসনমূলক কর্মকান্ডে লিপ্ত হতেও দ্বিধাবোধ করে না তখন তাকে উগ্র জাতীয়তাবাদ বলে।
উগ্র জাতীয়তাবাদের কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ
- জাতীয়তাবাদের তীব্র আবেগ
- অন্য জাতির প্রতি বিদ্বেষ বা ঘৃণা
- জাতীয় স্বার্থের উপর প্রাধান্য
- সহিংসতা বা বর্বরতার মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জনের প্রবণতা
উগ্র জাতীয়তাবাদের ইতিহাসেঃ উগ্র জাতীয়তাবাদের ইতিহাসে অনেক উদাহরণ রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি জার্মানিতে উগ্র জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটে। নাৎসিরা ইহুদিদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও বৈষম্য চালায় এবং শেষ পর্যন্ত তাদের গণহত্যা করে। আজও বিশ্বের অনেক দেশে উগ্র জাতীয়তাবাদের উত্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, ভারতের বিজেপি সরকারকে উগ্র জাতীয়তাবাদী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়। বিজেপি সরকারের নীতির ফলে ভারতের মুসলমানদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও বৈষম্য বেড়েছে। নিম্নে উগ্র জাতীয়তাবাদের কতিপয় নেতিবাচক দিক আলোচনা করা হলঃ
আরো পড়ুনঃ আইনসভা কি? আইনসভার ক্ষমতা হ্রাসের কারণসমূহ আলোচনা কর
সহিংসতা ও বৈষম্য: উগ্র জাতীয়তাবাদীরা প্রায়ই সহিংসতা ও বৈষম্যের মাধ্যমে তাদের লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করে। তারা সংখ্যালঘু গোষ্ঠী বা ভিন্ন জাতির লোকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা চালাতে দ্বিধা বোধ করে না
অস্থিতিশীলতা ও যুদ্ধ: উগ্র জাতীয়তাবাদ দেশ ও জাতিকে অস্থিতিশীলতা ও যুদ্ধের দিকে নিয়ে যেতে পারে। উগ্র জাতীয়তাবাদীরা প্রায়ই অন্য জাতি বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য প্ররোচিত করে।
গণতন্ত্রের বিপন্নতা: উগ্র জাতীয়তাবাদ গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ। উগ্র জাতীয়তাবাদীরা প্রায়ই কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থার পক্ষে থাকে এবং গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাকে ব্যাহত করে।
যুদ্ধের সূত্রপাতঃ উগ্র জাতীয়তাবাদ একটি হুমকিস্বরূপ কারণ এটি সহিংসতা, বৈষম্য সৃষ্টির পাশাপাশি যুদ্ধের যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটাতে পারে।
বিদ্বেষ এবং ঘৃণার প্রকাশঃ উগ্র জাতীয়তাবাদ একটি নির্দিষ্ট জাতির শ্রেষ্ঠত্ব এবং অন্য জাতির প্রতি বিদ্বেষ বা ঘৃণা প্রকাশ করে। উগ্র জাতীয়তাবাদীরা বিশ্বাস করে যে তাদের জাতি অন্য সব জাতির তুলনায় শ্রেষ্ঠ এবং তাদের জাতির স্বার্থ অন্য সব জাতির স্বার্থের উপর প্রাধান্য পাওয়া উচিত। তারা প্রায়ই সহিংসতা এবং বর্বরতার মাধ্যমে তাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রস্তুত থাকে।
উগ্র জাতীয়তাবাদ সীমিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপঃ উগ্র জাতীয়তাবাদ আকেবারে নির্মূল করা কঠিন ও সময় সাপেক্ষ বিষয়। শুপরিকল্পিত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে উগ্র জাতীয়তাবাদ অনেকাংশ কমিয়ে আনা সম্ভভ। নিম্নে এ বিষয়ে আলকপাত করা হলঃ
সুশিক্ষাঃ শিক্ষা উগ্র জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। সুশিক্ষা মানুষকে সহনশীলতা, বোঝাপড়া ও বৈচিত্র্যের মূল্যবোধ সম্পর্কে সচেতন করে।
আরো পড়ুনঃ ম্যাকিয়াভেলীবাদ কি? ম্যাকিয়াভেলীকে আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক বলা হয় কেন?
গণমাধ্যমঃ গণমাধ্যম উগ্র জাতীয়তাবাদের বিস্তার রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। গণমাধ্যমকে উগ্র জাতীয়তাবাদের প্রচারণা এবং বিভ্রান্তি ছড়ানোর বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীঃ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে উগ্র জাতীয়তাবাদী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে হবে। উগ্র জাতীয়তাবাদী সহিংসতা ও বৈষম্যকে প্রশ্রয় দেওয়া উচিত নয়।
ধর্মীয় অনুশসানঃ পৃথিবীর কোন ধর্মই উগ্র জাতীয়তাবাদ সমর্থন করে না।ধর্ম মানুষকে সহনশীল, পরমত সহিষ্ণু এবং একে অপরকে ভালবাসতে অনুপ্রাণিত করে। যথাযতভাবে ধর্মীয় অনুসশাসন পালন নিশ্চিত হলে উগ্র জাতীয়তাবাদ সহ সমাজে প্রচলিত সকল নেতিবাচক বিষয় গুলো চির তরে মুছে ফেলা সম্ভব।
উপসংহারঃ উগ্র জাতীয়তাবাদ একটি বিপজ্জনক মতাদর্শ। এটি বিশ্বের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ। উগ্র জাতীয়তাবাদের বিস্তার রোধে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা এর বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং এর বিপদ সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
hey,This is Batchu Sarkar,B.S.S (Hons) from National University