প্রশ্নঃ গণতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় কর।
ভুমিকা: রাজনৈতিক বিশ্বে গণতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্র হলো দুটি ভিন্ন ধরনের শাসনব্যবস্থা। গণতন্ত্রে জনগণই রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। অন্যদিকে, একনায়কতন্ত্রে একজন ব্যক্তি বা দল রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। পৃথিবীর সিংহভাগ দেশে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা বিদ্যমান রয়েছে। এই লেখায় আমরা গণতন্ত্র ও একনায়কতন্ত্রের মধ্যে কিছু পার্থক্য বিশ্লেষণ করবো।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত এর মতো শক্তিশালী দেশগুলোতে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা রয়েছে। আবার রাশিয়া, চীন, উত্তর কোরিয়ার মতো শক্তিশালী রাষ্ট্র গুলোতে চরম একনায়কতন্ত্র বিদ্যমান। এখানে এই দুই শাসন ব্যবস্থার মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য পার্থক্য দেওয়া হলো:
ক্ষমতার উৎস: গণতন্ত্রে ক্ষমতার উৎস জনগণ। এখানে জনমতের ভিত্তিতেই রাষ্ট্রীয় প্রশাসক নির্ধারণ করা হয়। অপরদিকে, একনায়কতন্ত্রে ক্ষমতার উৎস একজন ব্যক্তি বা দল। তারা জনগণের কথাকে উপেক্ষা করে নিজেদের মতামত বাস্তবায়ন করে।
আরো পড়ুনঃ ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সার্বভৌম উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।
ক্ষমতার বিস্তার: গণতন্ত্রে ক্ষমতা সমগ্র রাষ্ট্র জুড়ে জনগণের মধ্যে বিস্তৃত। একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাদ্ধমে তারা ভোট প্রদান করে সরকার গঠন করে। একনায়কতন্ত্রে ক্ষমতা একজন ব্যক্তি বা দলের মধ্যে কেন্দ্রীভূত। অনেকসময় অপশক্তি প্রয়োগ করে তারা নিজেদের স্বাধীনচেতা মনোভাব জনগণের মধ্যে জোরপূর্বক চাপিয়ে দেয়।
ক্ষমতার হস্তান্তর: গণতান্ত্রিক শাসনবাবস্থায় ক্ষমতার হস্তান্তর সুষ্ঠু ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে সম্পন্ন হয়। নির্ধারিত সময় অন্তর অন্তর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং ক্ষমতার পালাবদল ঘটে। কিন্তু, একনায়কতন্ত্রে ক্ষমতার হস্তান্তর অনিয়মতান্ত্রিক বা অপ্রত্যাশিতভাবে ঘটতে পারে। সেনা অভ্যুথানের মতো সংকটময় মুহূর্তও তৈরী হয় অনেক সময়। ১/১১ তার একটি উদাহরণ।
জনগণের ভূমিকা: একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনগণ রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। তারা এতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে। সরকার তাদের কোনো বাধা প্রদান করে না। প্রক্ষান্তরে, একনায়কতন্ত্রে জনগণ রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থায় নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করে। তাদের মতামত কে উপেক্ষা করেই রাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থা পরিচালিত হয়। উদাহরণ হিসেবে আমরা উত্তর কোরিয়ার কথা উল্লেখ করতে পারি।
আরো পড়ুনঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের গঠন, ক্ষমতা ও কার্যাবলী আলোচনা কর।
শাসনব্যবস্থা: গণতন্ত্রে শাসনব্যবস্থা জনগণের প্রতিনিধিদের দ্বারা পরিচালিত হয়। জনগণ তাদের প্রতিনিধিদের নির্বাচন করে এবং তারা জনগণের পক্ষ থেকে শাসনকার্য পরিচালনা করে। অন্যদিকে, একনায়কতন্ত্রে একজন একক ব্যক্তি শাসনকার্য পরিচালনা করে। তিনি জনগণের প্রতিনিধি নন এবং তিনি জনগণের মতামতকে প্রাধান্য দেন না।
সাংবিধানিক রীতিনীতি: গণতন্ত্রে সাংবিধানিক রীতিনীতি সুপ্রতিষ্ঠিত থাকে। কেউ চাইলেই এটি ইচ্ছামতো পরিবর্তন করতে পারে না। একনায়কতন্ত্রে সাংবিধানিক রীতিনীতি লঙ্ঘিত হয়। শাসক গণ নিজেদের সুবিধার্তে সাংবিধানিক রীতিনীতি লঙ্ঘন করে। এর কারণ জনগণের নিকটে তাদের কোনো জবাবদিহি করতে হয় না।
মানবাধিকার: গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় মানবাধিকার এর প্রতি শ্রদ্ধা বজায় থাকে। জনগণের মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা রক্ষা করা হয়। কিন্তু, স্বৈরতন্ত্রে মানবাধিকার লংঘিত হয়।
সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন: গণতন্ত্রে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়। জনগণের ভোটে ক্ষমতা দখল করতে হয়, বিধায় প্রশাসকগণ তাদের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করতে বাধ্য থাকে। একনায়কতন্ত্রে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যাহত হয়। কেননা, এখানে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যারা থাকেন তারা নিজেদের খেয়ালখুশিমতো রাষ্ট্র পরিচালনা করেন।
সামগ্রিক বিচার: গণতন্ত্র হলো একটি মুক্ত, ন্যায়ভিত্তিক ও সমতাভিত্তিক শাসনব্যবস্থা। অন্যদিকে, একনায়কতন্ত্র একটি স্বৈরাচারী, অবিচারী ও বৈষম্যমূলক শাসনব্যবস্থা। গণতন্ত্র সভ্যতার গান গায়। একনায়কতন্ত্র মানুষকে সচেচাচারি করে তোলে।
আরো পড়ুনঃ প্রথা বলতে কী বোঝো? বৃটেনের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় প্রথা কেন মান্য করা হয়?
উপসংহার: পরিশেষে, মানব জাতির কল্যাণ সাধনে গণতন্ত্রই একটি গ্রহণযোগ্য শাসনব্যবস্থা। আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশের সংবিধানে গণতন্ত্রের মূলনীতিসমূহ সুপ্রতিষ্ঠিত রয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ নিয়মিত নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের সরকার গঠন করে।