প্রশ্নঃ স্থানীয় সরকার ও আমলাতন্ত্র কী?
ভূমিকা: আধুনিককালের প্রশাসনিক ব্যবস্থা পর্যালোচনা করলে একটি বিষয় সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, দিন দিন স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থার গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়ে চলছে। তাই কেননা আঞ্চলিক বা স্থানীয় সমস্যা স্থায়ীভাবে সমাধানকল্পে স্থানীয় সংস্থাসমূহকে যথেষ্ট স্বাধীনতা প্রদান করা হয়েছে। অনেক দেশের সংবিধানে এ স্বায়ত্তশাসনের অধিকার স্বীকৃতি পেয়েছে। দেশের ভৌগোলিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণে স্থানীয় সরকারের গুরুত্ব এবং তাৎপর্য দিন দিন বেড়ে চলেছে।
স্থানীয় সরকার: স্থানীয় সরকার বলতে বুঝায় স্থানীয় পর্যায়ে সরকার ব্যবস্থা অর্থাৎ, কর্পোরেশন, পৌরসভা, জেলা, থানা, ইউনিয়ন ও পঞ্চায়েত এবং অপরাপর সংস্থার কর্মতৎপরতা। এসব কর্মতৎপরতা সাধারণত কোনো নির্দিষ্ট প্রতি এলাকা বা স্থানের জনগণের কল্যাণার্থে গ্রহণ করা হয়। এরা কখনো সমগ্র দেশের কল্যাণে নিয়োজিত থাকে, আবার কখনো দেশের কোনো একটি বিশেষ এলাকার উন্নতি বিধানে শাসনকার্য পরিচালনা করে থাকে।
আরো পড়ুনঃ সমকালীন বাংলাদেশের সমাজ ও সংস্কৃতির উপর নগরায়নের প্রভাব আলোচনা কর।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা: অধ্যাপক আর. এম. জ্যাকসন (Prof. R.M. Jackson) বলেছেন, স্থানীন সরকার মূলত সম্প্রদায়ের কল্যাণে বিভিন্ন সেবামূলক কাজ পরিচালনা করার এক পদ্ধতি বিশেষ।
হেনরি ম্যাডিক (Henry Maddick) এর মতে, এটি একটি জনসংগঠন যা কেন্দ্রিয় অথবা প্রাদেশিক সরকারের কোনো একটি ক্ষুদ্র এলাকায় সীমিত পরিমাণে দায়িত্ব পালন করে।
অধ্যাপক রবসন (Robson) এর মতে, “Local government is a form of evict’ self-expression per experience.”
জি. ডি. এইচ. কোল (G. D. H. Cole) বলেছেন, স্থানীয় সরকার বলতে আমরা বুঝি যে সরকার ক্ষুদ্র এলাকায় অবস্থান করে এবং কিছু অর্পিত ক্ষমতা প্রয়োগ করে।
আমলাতন্ত্র: সাধারণত রাষ্ট্রের প্রশাসনিক কাজে নিয়োজিত কর্মচারীরা আমলা নামে পরিচিত এবং এদের দ্বারা পরিচালিত প্রশাসনিক ব্যবস্থাই হলো আমলাতন্ত্র। অন্যভাবে বলা যায়, আমলাতন্ত্র এক বিশেষ ধরনের প্রশাসনিক ব্যবস্থা যা নিয়মকানুনের ভিত্তিতে সংগঠিত হয় এবং এর মধ্যে বর্তমান থাকে বিভিন্ন বিভাগ ও দপ্তর। এছাড়া এ ব্যবস্থায় ক্ষমতা, কর্তৃত্ব ও পদমর্যাদার ক্রমোচ্চ শ্রেণিবিন্যাস থাকে।
ব্যুৎপত্তিগত অর্থ: ইংরেজি ‘Bureaucracy’ শব্দটি ফরাসি শব্দ ‘Bureau’ এবং গ্রিক শব্দ ‘Kratein’ এ দুটি শব্দ হতে উদ্ভূত হয়েছে। ‘Bureau’ অর্থ দফতর এবং ‘Kratein’ অর্থ ‘শাসনব্যবস্থা’। সুতরাং ‘Bureaucracy’ বলতে দফতরনির্ভর শাসনব্যবস্থাকে বুঝায়। অর্থাৎ আমলাতন্ত্র বলতে নিযুক্ত কর্মচারীগণের এক বৃহদায়তন সংগঠনকে বুঝায়, যারা সরকারের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য সুব্যবস্থিতভাবে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত থেকে কাজ করে
আরো পড়ুনঃ ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনের প্রভাব আলোচনা কর
প্রামাণ্য সংজ্ঞা: অধ্যাপক ফিফানার ও প্রেসথাস ( Prof. Pfiffner & Presthus) এর মতে, “আমলাতন্ত্র হচ্ছে বিভিন্ন ব্যক্তি ও তাদের কর্মকাণ্ডকে এমন এক পদ্ধতিতে সংগঠিত করা, যা সুসংহতভাবে গোষ্ঠী শ্রমের উদ্দেশ্য অর্জনে সক্ষম হয়।”
অধ্যাপক হারম্যান ফাইনার (Prof. Herman Finer) এর মতে, “The civil service is a body of officials
permanent, paid and skilled.”
কার্ল মার্কস (Karl Marx) এর মতে, “আমলাতন্ত্র হচ্ছে একটি বিশেষ ধরনের সংগঠন এবং সরকারি প্রশাসন পরিচালনার ক্ষেত্রে এটা একটি সাধারণ পদ্ধতি।”
অধ্যাপক গার্নার (Prof. Garner) বলেছেন, “এককথায় সরকারের সিদ্ধান্ত ও নীতিমালা নির্ধারণে এবং সাধারণভাবে সরকার পরিচালনায় নিয়োজিত কর্মচারীগণই আমলা নামে অভিহিত।”
আরো পড়ুনঃ সামাজিকীকরণ বলতে কি বুঝ? সামাজিকীকরণে পরিবার ও ধর্মের ভূমিকা আলোচনা কর।
অধ্যাপক ফাইনার (Prof. Finer) এর মতে, “আমলাতন্ত্র হচ্ছে একটি স্থায়ী বেতনভুক্ত এবং দক্ষ চাকরিজীবী শ্রেণি ।”
আমলাতন্ত্রের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা প্রদান করেছেন সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স ওয়েবার (Max Weber)। তিনি বলেন, “আমলাতন্ত্র এমন একটি সংগঠন যার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম রয়েছে, যার কার্যাবলি নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে সমাধান হয় এবং যেখানে ক্ষমতা ব্যবহারের নির্দিষ্ট পর্যায়ক্রমে বিশিষ্ট একটি কাঠামো আছে। যার অধীনস্থ কর্মরত সকল কর্মচারীই স্থায়ীভাবে যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত এবং প্রত্যেকেই নির্দিষ্ট দায়িত্ব এবং কর্তব্য পালনে ব্যস্ত থাকে।”
উপর্যুক্ত সংজ্ঞার আলোকে বলা যায় যে, আমলাতন্ত্র বলতে সরকারি স্থায়ী বেতনভুক্ত কর্মচারীর সমষ্টিকে বুঝায়, যারা উন্মুক্ত প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে নিযুক্ত এবং তারা নীতিনির্ধারণ থেকে শুরু করে নীতিগুলোকে বাস্তবে কার্যকরী করে থাকে।