একটা কথা তেতো হলেও সত্য যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা অনেকটা কম করে বললেই চলে। এর পেছনে অবশ্য কিছু কারণ রয়েছে। বেশিরভাগ কলেজগুলোতে নিয়মিত ক্লাস করার সুযোগ হয় না। আবার বিভিন্ন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণী থেকে উঠে আসা শিক্ষার্থীরা নিজের জীবনের জীবিকা নির্বাহ করতেই সময় গুলো পার করে ফেলে।পরীক্ষার কয়েক মাস আগে থেকে মূলত তারা উপলব্ধি করতে শুরু করে যে পড়াশোনা করতে হবে কারণ সামনে পরীক্ষা। এটা অবশ্য তাদের দোষ দেওয়া যায় না কারণ বাস্তবতার শিকার হয়েই এমনটা করতে হয়।
আরেকটা সমস্যা হচ্ছে বিশাল অংকের শিক্ষার্থীরা একই সাথে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার ফলে পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের সময় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যতটা সময় নিয়ে খাতা মূল্যায়ন করতে পারেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা চাইলেও সেই সময় দিয়ে খাতা মূল্যায়ন করতে পারেন না। এছাড়াও ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা মূলত গণিত কিংবা পদার্থ রসায়নের মত না হওয়ায় পরীক্ষা দেওয়ার পরে তারা কেমন ফলাফল করবেন সে সম্পর্কে নিশ্চিত থাকতে পারেন না।
খাতা মূল্যায়ন করার সময় দেখা গেল কোন খাতার হাতের লেখা যদি শিক্ষকের পছন্দ হয় তাহলে শিক্ষক তাকে ভালো মার্ক দিচ্ছেন। কারণ এখানে ভুল সঠিক বলে তেমন কিছু ম্যাটার করে না গ্রামারটিক্যাল ভুল বা ব্যসিক ভুল ছাড়া। আবার কেউ ভালো লিখলেও হাতের লেখা একটু খারাপ বলে মার্ক খারাপ পেয়ে যাচ্ছেন।
অনেক সময় দেখা যায় যে ভালো পরীক্ষা দেওয়ার পরেও আশানুরূপ ফলাফল করা সম্ভব হয় না। এই সব কিছুকে সামনে রেখে কিছু টেকনিক অবলম্বন করলেই আপনারা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক ভালো ফলাফল করতে পারবেন। লেখাগুলো অভিজ্ঞ কিছু শিক্ষার্থীদের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে নিয়ে আপনাদের সাথে শেয়ার করা হচ্ছে।
- প্রথমত আপনাকে সাইকোলজি বুঝতে হবে। বিশাল অংকের শিক্ষার্থীদের খাতা দেখার সময় শিক্ষকরা খুব কম সময় দিতে পারেন এটা শুরুতেই বলা হয়েছে। সুতরাং দেখা যায় যে তারা খাতা গুলোতে শুধু ওভারভিউ করে মার্ক দিয়ে চলে যান। এতে করে আসলে খাতার ভেতরে কি লেখা হয়েছে এইটা পড়ে দেখার মত সময় হয় না বললেই চলে।এখন এই অবস্থায় আপনি যদি আপনার পরীক্ষার খাতার অ্যাপিয়ারেন্স সঠিকভাবে শিক্ষকের সামনে তুলে ধরতে পারেন তবে সহজেই শিক্ষককে কনভেন্স করতে পারবেন। এখন কথা হল কিভাবে লিখলে এক দেখাতেই শিক্ষক এর মনে একটা পজিটিভ ধারণা তৈরি হবে আপনার খাতার প্রতি? এটা জানতে নিচের নির্দেশনা গুলো অনুসরণ করুন।
- সকলের হাতের লেখা সুন্দর হবে না এটাই স্বাভাবিক। তবে চেষ্টা করুন হাতের লেখাগুলো যেন পরিষ্কার হয় এবং প্যারাগ্রাফ গুলোর মাঝখানে যেন প্রয়োজনমতো ফাঁকা থাকে। তবে অতিরিক্ত গ্যাপ না দেওয়াই উত্তম।
- ইংরেজি সাহিত্য গণিত কিংবা পদার্থ নয় যে সঠিক হলেই আপনি সম্পূর্ণ নাম্বার পাবেন। আবার যেহেতু শিক্ষকরা পড়ে দেখার সুযোগ খুব কম পান তাই শিক্ষককে বোঝাতে হবে যে আপনার লেখার ভেতরে কিছু রয়েছে। এজন্য প্রশ্নের উত্তরগুলো পয়েন্ট আকারে লিখুন।
- পয়েন্ট আকারে লিখলে আপনার পয়েন্টের নাম দেখেই শিক্ষক বুঝে যাবেন যে এখানে আপনি কি আলোচনা করেছেন। সুতরাং অল্পসময়েও আপনার লেখাটা উনি পড়ে ফেললেন।
- প্রত্যেকটি প্রশ্নের উত্তরে দুই থেকে পাঁচটি কোটেশন ব্যবহার করুন। কোটেশন ব্যবহার করলে শিক্ষক মনে করেন যে আপনি নিশ্চয়ই ভালো পড়াশোনা করেছেন তাছাড়া কোটেশন এত সহজে লিখতে পারতেন না। কারণ কোটেশন মনে রাখা তুলনামূলক অনেকটা কঠিন।
- শর্ট প্রশ্নগুলোর উত্তর দুই থেকে পাঁচ পৃষ্ঠার মধ্যে লিখুন এবং ব্রড প্রশ্নগুলোর উত্তর ৫ থেকে ৮ পৃষ্ঠার মধ্যে লিখুন। এক্ষেত্রে অনেকেই বলতে পারেন যে বেশি লিখলেই বেশি নাম্বার পাওয়া যায় বিষয়টা এমন নয়। তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের ক্ষেত্রে বিষয়টা অনেকটা এমনই।
- এখন বেশি লিখার কথা যখন আসবে তখন অনেকেই হয়তো লেখার ভেতরে উল্টাপাল্টা লিখে আসতে পারেন যা একেবারেই কাম্য নয়।
- অনেকেই ব্রিফ নিয়ে টেনশন শুরু করেন। ব্রিফ যথাসম্ভব সবগুলো উত্তর করার চেষ্টা করুন। কিন্তু কোনক্রমে যদি সম্ভব না হয় তাহলে টেনশনের কিছু নাই। কারণ এই দশটা প্রশ্নের উত্তরের ওপরে আপনার পুরো খাতার ফলাফল কখনোই নির্ভর করে না।
- উত্তর লেখার সময় যখন কোটেশন দেবেন এবং পয়েন্ট লিখবেন তখন চেষ্টা করুন সেগুলো নীল কালিতে লেখার। যদিও এতে আপনার একটু সময় ব্যয় হবে তবে আপনার খাতার সৌন্দর্য অসম্ভব বেড়ে যাবে। লেখার মধ্যে কোটেশন, পয়েন্ট, সালের ব্যবহার, গ্রাফিক্যাল ইলিমেন্ট বেশি নাম্বার পেতে সহায়তা করে। খাতায় কখনো লাল কালি ব্যবহার করবেন না।
- কখনো শিক্ষকদেরকে বোকা বানাতে যাবেন না কারণ আপনি যে বিষয়ে এক বছর ধরে পড়ছেন শিক্ষকরা সেই বিষয়ে বছরের পর বছর ধরে আপনাদের মত শিক্ষার্থীদের কে পড়াচ্ছেন।
- পরীক্ষার হলে কোনভাবেই কোন প্রশ্ন ছেড়ে আসবেন না। আপনার যদি প্রশ্ন কমন নাও আসে তারপরেও আপনার কনসেপ্ট থেকে যথাসম্ভব লিখে আসার চেষ্টা করবেন।
- প্রতিটি প্রশ্নের অল্টারনেটিভ প্রশ্ন অর্থাৎ OR দিয়ে যেগুলো থাকে সেগুলো বুঝতে হবে। এতে করে প্রশ্ন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আসলেও উত্তর করা সম্ভব হবে।
- প্রশ্ন কমন না আসার সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আমাদের বাংলা সামারি বইটি আপনাকে অনেক বেশি সাহায্য করবে। কারণ আমাদের এই সামারি বইতে একটা টপিকের বেসিক ইনফরমেশন গুলো থেকে শুরু করে ভাগ ভাগ করে সহজ ভাষায় সামারি দেওয়া আছে। পরীক্ষার কক্ষে আপনার প্রশ্ন যদি কমন না আসে তবুও আমাদের এই সামারি যদি ভালোভাবে আয়ত্ত করতে পারেন তাহলে সহজেই লিখতে পারবেন।
- নিজের মতো করে প্রশ্নের উত্তর লেখার চেষ্টা করুন। কখনো কোথাও থেকে প্রশ্নের উত্তর সরাসরি মুখস্থ করার চেষ্টা করবেন না।
আমাদের হ্যান্ডনোটে আমরা পয়েন্ট আকারে প্রশ্নের উত্তর বাংলা অনুবাদ সহ আপনাদেরকে দিয়ে থাকি। চেষ্টা করুন প্রত্যেকটি প্রশ্নের উত্তরের পয়েন্ট গুলো মুখস্ত করতে এবং পয়েন্ট এর ব্যাখ্যা গুলো ভালোভাবে বুঝতে। এতে করে পরীক্ষার খাতায় ঠান্ডা মাথায় ভালোভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে লিখতে পারবেন।
এই টেকনিকগুলো অবলম্বন করলে আশা করি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে অন্তত আপনাকে কখনো পাশ করা নিয়ে টেনশন করতে হবে না। বরং এগুলো যথাযথভাবে পরীক্ষার খাতায় প্রতিফলন ঘটাতে পারলে আপনার ফলাফল ফার্স্ট ক্লাস থাকবে বলে আমরা আশা করি।
আপনাদের জন্য আমরা বিনামূল্যে অনলাইনে অনার্স প্রথম বর্ষ থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত অনলাইনে ক্লাস নিয়ে থাকি, আপনাদের মেসেঞ্জার গ্রুপ রয়েছে প্রত্যেক বর্ষের জন্য যেখানে ডেডিকেটেড সাপোর্ট দেয়া হয় এবং আপনাদের এই নোটগুলো আমাদের ওয়েবসাইটে ও ফেসবুক গ্রুপে ফ্রিতে পাবেন। সেই সাথে আপনাদের অসাধারণ বাংলা সামারি গুলোও পাবেন আমাদের ওয়েবসাইটে ও আমাদের ফেসবুক গ্রুপে একদম বিনামূল্যে।পরিশেষে সবাইকে ধন্যবাদ জানাই এবং সকলের জন্য শুভকামনা। আমাদের লেখায় যদি কেউ কষ্ট পেয়ে থাকেন কিংবা কোন কিছু ভুল মনে হলে আমাদের জানানোর অনুরোধ রইল। আমরা নির্দ্বিধায় তা যাচাই করে সংশোধন করে নেব ইনশাআল্লাহ। কারণ মানুষ মাত্রই ভুল হয়।
THANK YOU,SIR.