মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট ও ব্রিটেনের লর্ডসভার তুলনামূলক আলোচনা কর

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট ও ব্রিটেনের লর্ডসভার তুলনামূলক আলোচনা কর।

ভূমিকাঃ ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা অনুসরণ করে, যেখানে আইনসভা দুই কক্ষবিশিষ্ট (Bicameral Legislature)। ব্রিটেনে আইনসভার উচ্চকক্ষ হলো লর্ডসভা (House of Lords) এবং যুক্তরাষ্ট্রে এটি সিনেট (Senate) নামে পরিচিত। যদিও উভয় কক্ষই গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রণয়ন ও নীতি নির্ধারণে ভূমিকা রাখে, তবে তাদের গঠন, ক্ষমতা, সদস্য মনোনয়ন পদ্ধতি ও কার্যাবলী একে অপরের থেকে ভিন্ন। নিচে তুলনামূলক বিশ্লেষণ উপস্থাপন করা হলো।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট ও ব্রিটেনের লর্ডসভার মধ্যে বেশ কিছু সাদৃশ্য বিদ্যমান। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলঃ

  • উভয় কক্ষই আইনসভার উচ্চকক্ষ।
  • উভয় কক্ষের সদস্যদের মেয়াদকাল দীর্ঘ।
  • উভয় কক্ষের সদস্যদের নির্বাচন পদ্ধতিতে কিছুটা ভিন্নতা থাকলেও, উভয় কক্ষেই সদস্যদের নির্বাচিত হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট যোগ্যতা ও শর্তাবলী পূরণ করতে হয়।
  • উভয় কক্ষের সদস্যদের আইন প্রণয়ন, বিধিবদ্ধকরণ, রাজস্ব বরাদ্দ, বিচার বিভাগের মনোনয়ন প্রক্রিয়া ও আন্তর্জাতিক চুক্তির অনুমোদন প্রদানের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা রয়েছে।
  • উভয় কক্ষই তাদের নিজস্ব নিয়মকানুন ও প্রথার অধীনে কাজ করে।
  • উভয় কক্ষেই সদস্যদের জন্য বিশেষ অধিকার ও সুবিধা রয়েছে।
  • উভয় কক্ষই আইনসভার অন্যান্য কক্ষের তুলনায় বেশি মর্যাদাপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়।

আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের গারো উপজাতির আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনধারা সম্পর্কে আলোচনা কর।

মার্কিন সিনেট ও ব্রিটেনের লর্ডসভার তুলনামূলক বিশ্লেষণ

বিষয়মার্কিন সিনেট (Senate)ব্রিটেনের লর্ডসভা (House of Lords)
গঠনমার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ, যেখানে ১০০ জন সদস্য রয়েছেন।ব্রিটিশ পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ, যেখানে প্রায় ৭০০-৮০০ সদস্য রয়েছেন।
সদস্য সংখ্যাপ্রতিটি অঙ্গরাজ্য থেকে দুইজন করে মোট ১০০ জন।সংখ্যা নির্দিষ্ট নয়, এটি পরিবর্তনশীল এবং প্রধানমন্ত্রী নতুন সদস্য মনোনীত করতে পারেন।
সদস্য নির্বাচনের পদ্ধতিজনগণের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হন।মনোনীত সদস্য, উত্তরাধিকারসূত্রে আসা পিয়ার, এবং ধর্মীয় প্রতিনিধি দ্বারা গঠিত।
সদস্যের মেয়াদছয় বছর, প্রতি দুই বছরে এক-তৃতীয়াংশ সিনেট পুনর্নির্বাচিত হয়।আজীবন (যদি না কেউ পদত্যাগ করে বা বহিষ্কৃত হয়)।
ক্ষমতার পরিধিআইন প্রণয়ন, বাজেট অনুমোদন, প্রেসিডেন্টের মনোনয়ন যাচাই, এবং আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুমোদন করার ক্ষমতা আছে।বিল পর্যালোচনা ও সংশোধনের ক্ষমতা আছে, তবে আইন পাশের চূড়ান্ত ক্ষমতা নেই।
কার্যাবলীআইন প্রণয়ন, যুদ্ধ ঘোষণা, রাষ্ট্রপতির ইমপিচমেন্ট বিচার, এবং পররাষ্ট্রনীতি সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ।বিল পুনর্বিবেচনা, আইনের সংশোধনী প্রস্তাব, এবং নৈতিক-নৈতিকতা সংক্রান্ত পরামর্শ প্রদান।
নির্বাহী শাখার সাথে সম্পর্কপ্রেসিডেন্ট সিনেটের অনুমোদন ছাড়া কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।লর্ডসভা সরাসরি নির্বাহী শাখার অংশ নয়।
আইন প্রণয়নের ভূমিকাপ্রতিনিধি পরিষদের সাথে সমান ক্ষমতা, সিনেট বিল সংশোধন বা বাতিল করতে পারে।আইন পাশ করতে পারে না, তবে বিল বিলম্বিত বা সংশোধনের সুপারিশ করতে পারে।
আর্থিক বিল অনুমোদনবাজেট ও কর সংক্রান্ত আইন পাশের ক্ষমতা রয়েছে।লর্ডসভা আর্থিক বিল সংশোধন বা বাতিল করতে পারে না, শুধু পর্যালোচনা করতে পারে।
বিচারিক ক্ষমতাসিনেট রাষ্ট্রপতির ইমপিচমেন্ট বিচার করতে পারে।বিচারিক ক্ষমতা সীমিত, আগে লর্ডসভা আপিল কোর্ট হিসেবে কাজ করত, কিন্তু এখন এটি সুপ্রিম কোর্টের দায়িত্ব।
রাজনৈতিক ভারসাম্যদ্বিদলীয় শাসনব্যবস্থার আওতায় কাজ করে (ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান পার্টি)।কোনও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল দ্বারা প্রভাবিত নয়, বরং পরামর্শমূলক প্রতিষ্ঠান।
আন্তর্জাতিক চুক্তির অনুমোদনবিদেশ নীতি ও আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুমোদনের ক্ষমতা রয়েছে।সরাসরি আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুমোদন করতে পারে না।
ঐতিহাসিক বৈশিষ্ট্যমার্কিন সংবিধানের অংশ হিসেবে ১৭৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।১৩৪১ সাল থেকে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের অংশ হিসেবে কাজ করছে।

উপসংহারঃ উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, মার্কিন সিনেট ও ব্রিটেনের লর্ডসভা উভয়ই আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে, সিনেট জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হয়ে কার্যকর রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে কাজ করে, যেখানে লর্ডসভা পরামর্শমূলক ভূমিকা পালন করে। সিনেট গণতন্ত্রের মূল্যবোধকে বেশি গুরুত্ব দেয়, আর লর্ডসভা ব্রিটিশ ঐতিহ্য ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রতিফলন।

Share your love
Shihabur Rahman
Shihabur Rahman

Hey, This is Shihabur Rahaman, B.A (Hons) & M.A in English from National University.

Articles: 927

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *