fbpx

 বাংলাদেশের গারো উপজাতির আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনধারা সম্পর্কে আলোচনা কর।

 প্রশ্নঃ বাংলাদেশের গারো উপজাতির আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনধারা সম্পর্কে আলোচনা কর।

ভূমিকাঃ গারো উপজাতি বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান উপজাতিগোষ্ঠী। তাদের নিজস্ব ভাষা, রীতিনীতি, আচার-আচরণ এবং সংস্কৃতি রয়েছে। গারোদের আর্থসামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনধারা বেশ অনন্য এবং আকর্ষণীয়। ।

গারো উপজাতিদের আর্থসামাজিক অবস্থাঃ  বাংলাদেশে প্রায় ২০টি উপজাতি বসবাস করে, এই উপজাতিগুলো বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করে। এর মধ্যে গারো উপজাতিগুলো ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল জেলায় বসবাস করে। তাছাড়া ঢাকা জেলার উত্তর পূর্বাঞ্চলে এবং সিলেটের চা বাগান অঞ্চলে বেশ কিছু গারো দেখা যায়।

আরো পড়ুনঃশ্রেণী ও জাতি বর্ণের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করো? 

(১) গারো নামকরণঃ  গারোদের নামকরণ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তবে অধিকাংশ নৃবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী গারো জনগোষ্ঠীর নামানুসারেই গারো পাহাড়ের নাম বলে মত প্রকাশ করেন। তবে কেউ কেউ বলেন, গারো পাহাড়ের নাম অনুসারে গারো নামকরণ হয়েছে।

ইউটিউবে ভিডিও লেকচার দেখুনঃ


(২) ভৌগোলিক অবস্থানঃ গারোরা বাংলাদেশের ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল জেলায় বসবাস করে। এছাড়া ঢাকা জেলার উত্তরে এবং রংপুর জেলার উত্তর পূর্বাঞ্চলে এবং সিলেট জেলার চা বাগান অঞ্চলে বেশকিছু গারো দেখা যায় ।

(৩) ভাষাঃ গারো ভাষার স্থানীয় নাম মান্দিকা। তবে ভাষাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, গারোরা যে ভাষায় কথা বলে তা মূলত সিনো-টিবেটান ভাষার অন্তর্গত। গারোদের কোনো লিপি বা অক্ষর নেই ।

(৪) জনসংখ্যাঃ  বাংলাদেশে মোট গারো উপজাতির সংখ্যা ৮০,০০০ এর মত। এর মধ্যে ময়মনসিংহে ৫০,০০০ এবং টাঙ্গাইল মধুপুর গড়ে ২০,০০০ গারো বাস করে। ঢাকা, রংপুর এবং সিলেট অঞ্চল মিলে প্রায় ১০,০০০ গারো বাস করে।

(৫) নরগোষ্ঠীগত পরিচয়ঃ  গারোরা মূলত মঙ্গোলয়েড নরোগোষ্ঠীর অন্তর্গত। মুখাকৃতি গোলাকার ও চেপ্টা, নাক প্রশস্ত, কপাল ক্ষুদ্রাকৃতির, কান বড় এবং ঠোঁট মোটা, চুল কালো ও কোকড়ানো, উচ্চতা ৫ ফুট এর মত।

(৬) ধর্মঃ  গারোদের ধর্মের নাম সংসারেক। বাংলাদেশের ৯০% গারোই খ্রিস্টান। গারোরা হিন্দুদের মত পূজা করে। এরা “ওয়াংলা” পূজার প্রাধান্য বেশি দিয়ে থাকে। তারাপুনর্জন্মে বিশ্বাসী|

আরো পড়ুনঃইসলামী সংস্কৃতি কী? ইসলাম ধর্মের পাঁচটি স্তম্ভ লেখ

google news

(৭)  সামাজিক সংগঠনঃ  গারো সমাজ প্রধানত মাতৃসূত্রীয়। তাদের বৃহৎ মাতৃসূত্রীয় গোত্রের নাম চাটচী। চাটচী গোত্র আবার ক্ষুদ্র গোত্র “মাচং” এ বিভক্ত। “মাচং” এর অধীনে “মাহারী” নামক ক্ষুদ্র গোষ্ঠী রয়েছে।

(৮) শ্রেণি ও গোত্র বিভাগঃ  গারোরা দু’টি শ্রেণিতে বিভক্ত ক. আচ্ছিক খ. লামাদানী । আচ্ছিক গারোদের তিনটি গোত্র রয়েছে; যথা :

ক. অয় খ. আচেং গ. দোয়াল লামাদানী গোত্রের তিনটি বিভাগ রয়েছে; যথা :ক. সমীন খ. সাবাক গ. সারগমা।

(৯)  শিক্ষাঃ  বাংলাদেশের গারোরা খ্রিস্টান মিশনারীতে শিক্ষা লাভ করছে। বাংলাদেশি গারোরা বাংলা হরফে গারো ভাষা শিখছে। বর্তমানে ২৯% গারো শিক্ষিত।

(১০)  পরিবারঃ গারো পরিবার মাতৃসূত্রীয়। সম্পত্তি ও বংশ নাম মাতৃধারায়। মাতা থেকে মেয়েতে বর্তায়। বিবাহের পর দম্পতি স্ত্রীর বাবার গৃহে বসবাস করে। ইদানিং কিছু শিক্ষিত দম্পতি স্বামীর পিতার গৃহে বাস করে। পরিবারের সম্পত্তির মালিক স্ত্রী, তবে ব্যবস্থাপনার মালিক স্বামী।

(১১) বিবাহঃ গারো সমাজে যুগল বিবাহ রীতিই বেশি লক্ষ করা যায়। তবে বহু স্ত্রী বিবাহ একেবারে অজানা নয়। গারো বিবাহে কন্যাকে কোনো পণ দিতে হয় না এবং স্বামীও যৌতুক পায় না, বিবাহ বিচ্ছেদ কম।

(১২) খাদ্যঃ  গারোরা হাঁস, মুরগি, গরু, ছাগল, শূকর প্রভৃতি খায়। মদ তাদের অপরিহার্য পানীয়।

(১৩) অর্থনীতিঃ  সরকারি কারণে ১৯৫০ সালের পর থেকে গারোরা জুম চাষ ত্যাগ করে হাল কৃষির সাহায্যে ধান, নানা জাতের সবজি ও আনারস উৎপাদন করছে। এর পূর্বে জুম চাষই ছিল গারোদের প্রধান অর্থনৈতিক ভিত্তি।

(১৪) পোশাকঃ  পোশাকপরিচ্ছদে গারোদের বিশেষ বাহুল্য নেই। পুরুষেরা ধুতি, মেয়েরা ব্লাউজের মত বুকে কাপড় ও লুঙ্গির মত করে টুকরো কাপড় পরিধান করে।

(১৫)  অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াঃ  গারোদের মতে আত্মা অমর, মৃত্যুর পর আত্মা চিকমাং নামক স্থানে চলে যায়। চিকমাং হলো মৃত্যুর দেশ। তাদের বিশ্বাস গারো পাহাড়ের দক্ষিণপূর্বে পাহাড়ের চূড়ায় চিকমাং অবস্থিত।

(১৬)  নেতৃত্ব ও রাজনীতিঃ  যদিও গারো গ্রাম সমাজে গ্রাম প্রধানের অস্তিত্ব বরাবরই ছিল, তথাপি চাকমাদের মতো গারো উপজাতি প্রধান বলতে কিছু নেই ।

(১৭) সমাজ পরিবর্তনঃ  গারো সমাজ নানা কারণে পরিবর্তিত হচ্ছে। কৃষিতে নতুন পদ্ধতি গ্রহণ, বাজার অর্থনীতিতে প্রবেশ, প্রতিবেশী বাঙালি সমাজের সঙ্গে যোগাযোগ, খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণের ফলে গারো সমাজে পরিবর্তন প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।

(১৮) জীবিকাঃ গারোদের প্রধান জীবিকা কৃষি। ধান, পাট, আখ, সরিষা, শাকসবজি ইত্যাদি তাদের প্রধান ফসল। এছাড়াও তারা গবাদি পশু পালন করে এবং বনজ সম্পদ সংগ্রহ করে।

আরো পড়ুনঃচিরস্থায়ী বন্দোবস্তের বৈশিষ্ট্যগুলো লেখ

(১৯) সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যঃ  গারোদের নিজস্ব ভাষা, সাহিত্য, সঙ্গীত, নৃত্য এবং পোশাক রয়েছে। ‘ওয়ানগালা’ তাদের প্রধান উৎসব। এছাড়াও তারা ‘ডামরা’, ‘মাসাং’ ইত্যাদি উৎসব পালন করে।

উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়,আধুনিকতার ছোঁয়া গারোদের জীবনেও এসে পৌঁছেছে। শিক্ষার হার বৃদ্ধি,  আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায়   প্রতিনিয়ত তাদের জীবনধারা পরিবর্তিত হচ্ছে ।

উপসনহারঃ  চাকমা ও গারো, বাংলাদেশের দুটি গুরুত্বপূর্ণ এথনিক গোষ্ঠী। তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য, রীতিনীতি ও সংস্কৃতি রয়েছে। তাদের জীবনধারা সমাজের বৈচিত্র্যকে সমৃদ্ধ করে।

Riya Akter
Riya Akter
Hey, This is Riya Akter Setu, B.A (Hons) & M.A in English from National University.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

ফেসবুক পেইজ

কোর্স টপিক