The Hairy Ape
সংক্ষিপ্ত জীবনী: ইউজিন ও’নিল (Eugene O’Neill)
ইউজিন গ্ল্যাডস্টোন ও’নিল (Eugene Gladstone O’Neill) জন্মগ্রহণ করেন ১৮৮৮ সালের ১৬ অক্টোবর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক সিটির এক হোটেল রুমে। তার পিতা জেমস ও’নিল ছিলেন একজন জনপ্রিয় মঞ্চ অভিনেতা, আর মাতা এল্লা কুইনলান ও’নিল ছিলেন গৃহিণী। ছোটবেলা থেকেই ইউজিন পারিবারিক অশান্তি ও ব্যক্তিগত কষ্টে বেড়ে ওঠেন। তার জীবনে দুঃখ, মাতৃ-অভ্যাস (morphine addiction), পিতার কঠোরতা ও নিজের অসুস্থতা গভীর প্রভাব ফেলে। তিনি সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছিলেন, কিন্তু পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি। পরে তিনি সমুদ্রযাত্রা করেন এবং নানা অস্থায়ী কাজ করেন। সমুদ্রজীবনের অভিজ্ঞতা তার নাটকের বিষয়বস্তুতে বিশেষভাবে ফুটে ওঠে। ও’নিল মার্কিন সাহিত্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ নাট্যকার হিসেবে পরিচিত। তিনি আমেরিকান নাটককে ইউরোপীয় বাস্তববাদ, প্রতীকবাদ এবং মনস্তত্ত্বের গভীরতায় উন্নীত করেন। তার রচনায় মানুষের একাকিত্ব, দুঃখ, ভাগ্য, পরিবারিক দ্বন্দ্ব ও জীবনের অর্থহীনতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তার প্রধান রচনাগুলো হলো,
- The Hairy Ape (১৯২২): শিল্পায়িত সমাজে শ্রমিক শ্রেণির নিঃসঙ্গতা ও মানুষের পরিচয় সংকট নিয়ে লেখা এক্সপ্রেশনিস্ট নাটক।
- Beyond the Horizon (১৯১৮): প্রথম পূর্ণাঙ্গ নাটক, যা তাকে প্রথম Pulitzer Prize এনে দেয়।
- The Emperor Jones (১৯২০): ক্ষমতা, ভয় ও মানব প্রকৃতির প্রতীকী নাটক।
- Anna Christie (১৯২১): সমুদ্র-জীবনের সাথে জড়িত একটি মেয়ের কাহিনি; Pulitzer Prize প্রাপ্ত।
- Desire Under the Elms (১৯২৪): গ্রিক ট্র্যাজেডির প্রভাবিত পরিবারিক নাটক।
- Strange Interlude (১৯২৮): নাটক যেখানে চরিত্ররা মনের কথা প্রকাশ করে; Pulitzer Prize প্রাপ্ত।
- Mourning Becomes Electra (১৯৩১): গ্রিক নাটক Oresteia–র আধুনিক রূপ।
- The Iceman Cometh (১৯৪৬): স্বপ্ন, ভ্রান্তি ও হতাশার গভীর নাটক।
- Long Day’s Journey into Night (১৯৫৬): আত্মজীবনীমূলক নাটক, যা ১৯৫৭ সালে Pulitzer Prize জেতে।
তিনি চারবার Pulitzer Prize অর্জন করেন। ১৯৩৬ সালে পান Nobel Prize in Literature। তিনিই প্রথম আমেরিকান নাট্যকার যিনি নোবেল পান। ও’নিল জীবনের শেষ দিকে নানা শারীরিক অসুখে ভুগেছিলেন। ১৯৫৩ সালের ২৭ নভেম্বর বোস্টনের একটি হোটেলে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর সময় তিনি বলেছিলেন, “Born in a hotel room and died in a hotel room.” (একটি হোটেল রুমে জন্ম, আর একটি হোটেল রুমেই মৃত্যু)। তাকে “Father of Modern American Drama” হিসেবে সমাদৃত করা হয়।
আরো পড়ুনঃ Morning Song Bangla summary
Key Facts – The Hairy Ape
- Full Title: The Hairy Ape: A Comedy of Ancient and Modern Life in Eight Scenes
- Author: Eugene Gladstone O’Neill (1888–1953)
- Title of the Author: American Playwright; Father of Modern American Drama; Nobel Laureate in Literature (1936)
- Source: Inspired by industrial age struggles in America: class conflict, mechanization, and human alienation. O’Neill drew from expressionism and his own experiences at sea.
- Written Time: 1921–1922
- First Published: 1922
- First Performance: March 9, 1922, at the Provincetown Players, New York City
- Publisher: Boni and Liveright (New York, 1922)
- Genre: Expressionist Drama / Social Commentary / Modern Tragedy
- Form: Play in 8 scenes; expressionistic style with symbolic characters and stage directions.
- Structure: Episodic structure, Yank’s confidence (exposition), insult by Mildred (rising conflict), search for belonging in different classes (climax in failure), and tragic death in the zoo (resolution).
- Tone: Harsh, pessimistic, ironic, critical of modern industrial society.
- Point of View: Dramatic third-person (stage play with focus on Yank’s psychology).
- Significance: Landmark of American expressionism; critiques class division, dehumanization in the machine age, and the modern worker’s alienation.
- Language: Originally written in English, with colloquial working-class dialects.
- Famous Line: “I’m de end! I’m de start! I start somep’n and de woild moves!”
- Setting:
- Time Setting: Early 20th century (Industrial Age, post–World War I era).
- Place Setting: Begins in the stokehole of a transatlantic ocean liner; shifts to Fifth Avenue (New York), a jail, and ends in a zoo (gorilla’s cage).
Key Notes – The Hairy Ape
- Expressionism (এক্সপ্রেশনিজম প্রভাব): নাটকটি এক্সপ্রেশনিস্ট শৈলীতে লেখা। এখানে বাস্তবতার বদলে চরিত্রের ভেতরের মানসিক সংকট ও অনুভূতিকে বেশি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। স্টেজ নির্দেশনা, সংলাপ এবং দৃশ্য সবই প্রতীকীভাবে শ্রমিক শ্রেণির বিচ্ছিন্নতা প্রকাশ করে।
- Yank – নাম ও প্রতীক: প্রধান চরিত্রের নাম Yank। এটি “Yankee” শব্দ থেকে নেওয়া, যা আমেরিকান সাধারণ শ্রমিককে বোঝায়। Yank আধুনিক যুগের শক্তিশালী কিন্তু দিশেহারা মানুষের প্রতীক। সে মনে করে জাহাজের ইঞ্জিন রুমে কাজ করেই সে বিশ্বকে চালাচ্ছে। কিন্তু উচ্চবিত্ত সমাজ তাকে “পশু” মনে করে, আর এই অপমান থেকেই তার পরিচয় সংকট শুরু হয়।
- Industrial Society (শিল্পায়িত সমাজ): নাটকের মূল প্রেক্ষাপট হলো শিল্পযুগের যান্ত্রিক সভ্যতা। ইঞ্জিন রুম, ধোঁয়া, যান্ত্রিক শব্দ, সবই দেখায় শ্রমিকরা কেবল যন্ত্রের অংশ হয়ে গেছে। তাদের কোনো মানবিক মর্যাদা নেই। সমাজে তারা শুধু শক্তির প্রতীক, কিন্তু কোনো সম্মান বা পরিচয় পায় না।
- Class Conflict (শ্রেণি দ্বন্দ্ব): নাটক জুড়ে শ্রমিক শ্রেণি বনাম ধনী শ্রেণির দ্বন্দ্ব ফুটে ওঠে। Mildred Douglas, ধনী শ্রেণির মেয়ে, Yank-কে “পশু” বলে অপমান করে। এতে প্রকাশ পায় কিভাবে অভিজাত শ্রেণি শ্রমিকদের ঘৃণা করে। Yank ধনী সমাজে মানিয়ে নিতে চায়, কিন্তু কোথাও গ্রহণযোগ্যতা পায় না।
Alienation (বিচ্ছিন্নতা): Yank ধীরে ধীরে বুঝতে পারে যে সে কোথাও মানায় না, না শ্রমিক সমাজে, না ধনী সমাজে। সে রাজনৈতিক আন্দোলন (I.W.W.)-এ যোগ দিতে চায়, কিন্তু সেখানেও তাকে গ্রহণ করা হয় না। শেষমেশ সে চিড়িয়াখানার গরিলার সঙ্গে নিজেকে এক মনে করে, যা তার চরম নিঃসঙ্গতা ও আত্মধ্বংসের প্রতীক।
Background: The Hairy Ape
ইউজিন ও’নিল ১৯২২ সালে The Hairy Ape নাটকটি প্রকাশ করেছিলেন। এটি রচিত হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পায়িত সমাজকে ঘিরে, যখন আধুনিক যন্ত্রসভ্যতা মানুষের জীবনে গভীর পরিবর্তন আনছিল। ও’নিল নিজে সমুদ্রযাত্রা করেছেন এবং শ্রমিক জীবনের কঠিন বাস্তবতা কাছ থেকে দেখেছেন। সেই অভিজ্ঞতা নাটকটির ভিত্তি গড়ে দেয়। নাটকটি আমেরিকান এক্সপ্রেশনিজম ধারার অন্যতম শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। এখানে বাস্তবতার চাইতে মানুষের মনের দুঃখ, হতাশা, ও বিচ্ছিন্নতাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রধান চরিত্র Yank হলো এক স্টোকার, যে ইঞ্জিন রুমে কয়লা ঢালে। তার মাধ্যমে ও’নিল দেখিয়েছেন, কিভাবে শিল্পযন্ত্রের যুগে সাধারণ শ্রমিক সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন ও অচেনা হয়ে পড়ে।
ও’নিল বিশ্বাস করতেন যে আধুনিক সভ্যতা শ্রমিক শ্রেণিকে সম্মান দেয় না। বরং তাদের মানুষ নয়, যন্ত্রের অংশে পরিণত করে। এজন্যই Yank ধীরে ধীরে নিজের পরিচয় সংকটে পড়ে এবং শেষে গরিলার সঙ্গে নিজের সত্তাকে মিলিয়ে দেখে। The Hairy Ape প্রথম মঞ্চস্থ হলে দর্শকরা এর প্রতীকী ও নাটকীয় ভঙ্গিতে চমকে যায়। এটি শুধু একটি নাটক নয়, বরং শিল্পায়িত সমাজে মানুষের হারানো মর্যাদা ও আত্মপরিচয়ের সংকটের প্রতিচ্ছবি। ও’নিল তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, সমাজবাস্তবতা এবং আধুনিকতার সংকটকে মিলিয়ে নাটকটিকে তৈরি করেছিলেন। এজন্য এটি আধা-বাস্তববাদী, আধা-প্রতীকী কাহিনি।
চরিত্রসমূহ – The Hairy Ape
প্রধান চরিত্র (Major Characters)
- Yank – ইয়াঙ্ক (নায়ক): নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র। সে জাহাজের ইঞ্জিন রুমে কাজ করা এক স্টোকার, যে কয়লা ঢালে। শুরুতে মনে করে সে-ই বিশ্বকে চালাচ্ছে। কিন্তু Mildred তাকে “পশু” বলে অপমান করার পর থেকে তার আত্মবিশ্বাস ভেঙে পড়ে। সে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং নিজের পরিচয় খুঁজতে থাকে। শেষে চিড়িয়াখানায় গরিলার সঙ্গে নিজেকে মিলিয়ে দেখে এবং করুণ পরিণতির শিকার হয়। আধুনিক শিল্পসমাজে শ্রমিকের বিচ্ছিন্নতা ও পরিচয় সংকটের প্রতীক।
- Mildred Douglas – মিলড্রেড ডগলাস: ধনী শ্রেণির তরুণী, এক স্টিল ম্যাগনেটের মেয়ে। সে জাহাজে আসে “মানুষকে কাছ থেকে দেখার” নামে। কিন্তু ইঞ্জিন রুমে ইয়াঙ্ককে দেখে ভয়ে চিৎকার করে ওঠে এবং তাকে “পশু” বলে অপমান করে। এই ঘটনাই ইয়াঙ্ককে তার পরিচয় সংকট ও নিঃসঙ্গতার পথে ঠেলে দেয়। মিলড্রেড অভিজাত শ্রেণির অহংকার, বিচ্ছিন্নতা ও শ্রমিক-বিদ্বেষের প্রতীক।
গৌণ চরিত্র (Minor Characters)
- Paddy – প্যাডি: বৃদ্ধ আইরিশ নাবিক। অতীতের পালতোলা জাহাজের দিনগুলোকে স্মরণ করে। সে আধুনিক যান্ত্রিক জাহাজ ও শ্রমিক জীবনের কষ্টে অসন্তুষ্ট। তার চরিত্র শিল্পায়নের আগে মানবিক শ্রমজীবনের প্রতীক।
- Long – লং: একজন ইংরেজ শ্রমিক, যে রাজনৈতিকভাবে সচেতন। সে ধনী শ্রেণির ভণ্ডামি ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলে। তবে ইয়াঙ্কের মতো শক্তিশালী নয়। শ্রমিক আন্দোলন ও শ্রেণিসংগ্রামের প্রতীক।
- Second Engineer – দ্বিতীয় ইঞ্জিনিয়ার: জাহাজের উচ্চপদস্থ অফিসার, শ্রমিকদের তত্ত্বাবধান করে। তার মাধ্যমে শ্রমিক ও কর্তৃপক্ষের দূরত্ব বোঝানো হয়।
- The I.W.W. (Industrial Workers of the World) সদস্যরা: একটি বিপ্লবী শ্রমিক সংগঠন। ইয়াঙ্ক তাদের কাছে যোগ দিতে চায়। কিন্তু তারা তাকে বিশ্বাস করে না এবং প্রত্যাখ্যান করে। এটি দেখায় যে সমাজের কোনো জায়গাতেই ইয়াঙ্কের গ্রহণযোগ্যতা নেই।
- The Gorilla – গরিলা: চিড়িয়াখানার প্রাণী। নাটকের শেষ দৃশ্যে ইয়াঙ্ক তাকে আলিঙ্গন করে এবং করুণভাবে মারা যায়। গরিলা মানুষ থেকে পশুতে নেমে আসার প্রতীক, আধুনিক সমাজে মানবিক মর্যাদা হারানো বোঝায়।
- Firemen and Stokers (অন্য ফায়ারম্যান/স্টোকার শ্রমিকরা): ইয়াঙ্কের সহকর্মীরা, যারা ইঞ্জিন রুমে তার সঙ্গে কাজ করে। তারা ইয়াঙ্ককে নেতা হিসেবে মানে, কিন্তু পরে যখন তার মানসিক সংকট শুরু হয়, তখন তারা তাকে অদ্ভুত ভাবতে শুরু করে।
- Ladies on Fifth Avenue (ফিফথ এভিনিউর ধনী মহিলারা): সংক্ষিপ্তভাবে উপস্থিত হয়। তারা ইয়াঙ্ককে এড়িয়ে চলে এবং ধনী সমাজের ভণ্ডামি, অহংকার ও শ্রমিক-বিদ্বেষকে প্রকাশ করে।
- Men in the Jail (কারাবন্দীরা): কারাগারে ইয়াঙ্ক অন্যান্য কয়েদির সঙ্গে কথা বলে। তারা তাকে উপহাস করে এবং তার রাগ ও অসহায়তাকে উসকে দেয়। এটি সমাজ থেকে তার সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্নতাকে বোঝায়।
- I.W.W. Secretary (আই.ডব্লিউ.ডব্লিউ. সংগঠনের সেক্রেটারি): যখন ইয়াঙ্ক শ্রমিক আন্দোলনে যোগ দিতে চায়, তখন সংগঠনের নেতা বা সেক্রেটারি তাকে প্রত্যাখ্যান করে। তারা মনে করে ইয়াঙ্ক শুধু আবেগপ্রবণ, কোনো বাস্তব রাজনৈতিক সচেতনতা নেই।
আরো পড়ুনঃ The Waste Land Bangla Summary
দম্পতি ও সম্পর্ক (Couple and Relationship)
- Yank ও Mildred: তাদের সম্পর্ক শত্রুতার। মিলড্রেড ইয়াঙ্ককে “পশু” বলে অপমান করে। ইয়াঙ্ক চায় সমাজে নিজের মর্যাদা প্রমাণ করতে। কিন্তু শেষমেশ সে কোথাও জায়গা পায় না। সম্পর্কটি ধনী শ্রেণি ও শ্রমিক শ্রেণির গভীর দ্বন্দ্বের প্রতীক।
সমাজ ও সম্প্রদায় (Community and Society)
- Stokehole (ইঞ্জিন রুম): চরিত্র নয়, কিন্তু প্রতীকী স্থান। এখানে শ্রমিকরা কয়লার মতো অন্ধকারে, ঘামে ও ধোঁয়ায় ভরা পরিবেশে কাজ করে। এটি শিল্পযন্ত্রে শ্রমিকের বন্দিত্বের প্রতীক।
- Fifth Avenue (নিউইয়র্ক): মঞ্চের অন্যতম স্থান। ধনী সমাজের অহংকার, বিলাসিতা ও শ্রমিকের প্রতি অবহেলার প্রতীক।
- The Prison (কারাগার): ইয়াঙ্কের আত্মসংকটের স্থান। এটি সমাজে শ্রমিকের অক্ষমতা ও নিঃসঙ্গতার প্রতীক।
- The Zoo (চিড়িয়াখানা): নাটকের শেষ দৃশ্যের স্থান। এখানে গরিলা ও ইয়াঙ্কের মিলন হয়। এটি প্রতীক মানুষ ও পশুর সীমারেখা মুছে যাওয়ার।
বাংলা সামারি
Scene 1- শক্তি, রাজনীতি ও স্মৃতির সংঘাত
প্রথম দৃশ্য শুরু জাহাজের ফায়ারম্যানদের ঘরে। এই ঘরকে বলে forecastle। জাহাজটি নিউইয়র্ক থেকে ছেড়ে গেছে। এখন অ্যাটলান্টিক মহাসাগরের পথে। এখানে কয়লা ফেলার শ্রমিকরা বিশ্রাম নেয়। দৃশ্য শুরু হয় যখন তারা কাজ শেষে ঘরে এসেছে। ঘরটি শব্দে ভরা। শ্রমিকরা সবাই ক্লান্ত। কিন্তু মদ খেয়ে হাসাহাসি করছে। কেউ গান গাইছে। কেউ আবার ঝগড়া করছে। কারও মুখে গালি। তাদের হাতে বোতল ঘুরছে। সবাই আধা মাতাল। এই ঘর যেন পশুর আস্তানা। মানুষের বদলে এরা সবাই যেন বানর বা বন্য প্রাণী। লোকদের পোশাকও ময়লা। কেও আছে খালি গায়ে। কারও গায়ে পুরোনো জামা। মোটা শরীর, লোমশ বুক, পেশি ভরা হাত। তাদের চোখে ঘৃণা। মুখে রুক্ষ ভাব। দেখতে তারা যেন আধা-মানুষ, আধা-পশু। ও’নিল এখানে শ্রমিক শ্রেণির কঠোর জীবন আর পশুর মতো অবস্থাকে দেখিয়েছেন।
এই ভিড়ের মধ্যে আছে ইয়াঙ্ক। ইয়াঙ্ক সবার নেতা। সে সবচেয়ে শক্তিশালী। বুক চওড়া, বলশালী হাত। তার মধ্যে ভয় নেই। তার কণ্ঠস্বর জোরালো। অন্যরা তার দিকে তাকায়। কেউ তার সাথে ঝগড়া করার সাহস পায় না। সবাই ভাবে ইয়াঙ্ক-ই তাদের আসল নেতা। ইয়াঙ্ক মাতাল শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণ করে। যখন ঝগড়া শুরু হয়, ইয়াঙ্ক চেঁচিয়ে ওঠে। তার গলায় আদেশ। সবাই থেমে যায়। ইয়াঙ্ক বলে, “বিয়ার মেয়েদের জন্য। আমাদের লাগবে শক্ত মদ।” এই বাক্যে তার গর্ব প্রকাশ পায়। সে ভাবে সে আলাদা। তার শক্তি দিয়ে জাহাজ চলে। ঘরে আছে লং। লং একজন ইংরেজ শ্রমিক। সে সবসময় সমাজতন্ত্র আর রাজনীতি নিয়ে কথা বলে। বলে, ধনী লোকেরা শ্রমিকদের শোষণ করছে। সবাই মিলে লড়াই করতে হবে। কিন্তু মাতাল লোকেরা তার কথা শোনে না। তারা হাসে। ইয়াঙ্ক লংকে অবজ্ঞা করে। সে মনে করে লং দুর্বল।
আরও আছে প্যাডি। প্যাডি একজন বৃদ্ধ আইরিশ নাবিক। সে পুরোনো দিনের কথা বলে। তখন ছিল পালতোলা জাহাজ। খোলা আকাশ, হাওয়া আর সমুদ্র। তার চোখে সে সময়ে ছিল স্বাধীনতা আর সৌন্দর্য। কিন্তু এখন সব যন্ত্র। ধোঁয়া, কয়লা আর অন্ধকার। সে বর্তমানকে ঘৃণা করে। ইয়াঙ্ক প্যাডির কথায় হাসে। সে বলে, “এইসব ফালতু কথা। জাহাজ চলে আমার শক্তিতে। আমি কয়লা দিই। আমি এই দুনিয়াকে চালাই।” ইয়াঙ্ক মনে করে সে-ই আসল মানুষ। তার শরীর, তার শক্তি, তার কাজ–এসব দিয়ে সভ্যতা টিকে আছে। তার অহংকার এখানে স্পষ্ট। এই দৃশ্যের শেষে শ্রমিকরা আবার গান ধরে। মাতাল হাসি আর শব্দে ঘর ভরে যায়। প্যাডি বসে থাকে নীরব। লং চেষ্টা করে কথা বলতে। কিন্তু ইয়াঙ্কের কণ্ঠই সবার উপরে। সে যেন ঘোষণা করে, আধুনিক দুনিয়ার নায়ক সে-ই। তার শক্তি ছাড়া কিছুর চলবে না। এই দৃশ্য পুরো নাটকের ভিত্তি তৈরি করে। এখানে তিনটি শক্তি দেখা যায়। ইয়াঙ্কের শক্তি ও অহংকার। লংয়ের রাজনৈতিক চিন্তা। প্যাডির নস্টালজিয়া। তিনজন তিন রকম দুনিয়া বোঝায়। আর বাকিরা পশুর মতো ভিড় করে। এইসব মিলিয়ে সমাজ, শ্রেণি আর মানুষের আসল পরিচয় নিয়ে নাটক শুরু হয়।
Scene 2- অভিজাতের কৌতূহল আর শ্রেণি-বিভাজন
দ্বিতীয় দৃশ্য শুরু হয় জাহাজের উপরের ডেকে। সকালবেলা সূর্যের আলো ডেক ভরে রেখেছে। ডেকে বসে আছে মিলড্রেড ডগলাস। সে একজন ধনী শিল্পপতির মেয়ে। তার সাথে আছে তার ফুপু। তারা দুজনেই রোদ পোহাচ্ছে আর গল্প করছে। মিলড্রেডকে দেখতে শান্ত এবং সরল। তার পোশাক সাদা এবং অভিজাত পরিবারের মেয়ের মতো। তার ফুপু বয়সে প্রবীণ, ধনী পরিবারের গর্ব আর অহংকারে ভরা। দুজনের কথাবার্তায় ধনী সমাজের জীবনধারা স্পষ্ট হয়। আলোচনা শুরু হয় মিলড্রেডের ইচ্ছে নিয়ে। সে দরিদ্র মানুষদের কাছে যেতে চায়। সে মনে করে তাদের কষ্ট বুঝতে হবে। সে মনে করে গরিবদের জীবনকে জানলে সমাজে ভালো কিছু করা যাবে। কিন্তু ফুপু একেবারেই সন্তুষ্ট নয়। সে মনে করে মিলড্রেডের জায়গা শুধু অভিজাত শ্রেণিতে। তার মতে গরিব মানুষের কাছে যাওয়া মানে পরিবারের মান নষ্ট করা। সে ভীত যে সমাজ এ জন্য তাদের নিয়ে হাসাহাসি করবে।
মিলড্রেড তার চিন্তায় দৃঢ় থাকে। সে জানায় যে সে গরিব মানুষের জীবন সত্যিকারভাবে দেখতে চায়। তার বাবার কারখানায় যারা কাজ করে, তাদের মতো মানুষদের সাথে বসে তাদের জীবনের কষ্ট জানতে চায়। ফুপু বারবার তাকে বোঝানোর চেষ্টা করে। সে মনে করায় ধনী পরিবারে জন্মানো মেয়ের আসল কাজ হলো আরাম আর সম্মান বজায় রাখা। সে গরিবদের সাথে মিশে কিছুই বুঝবে না, বরং নিজেই কষ্ট পাবে। মিলড্রেড ফুপুর কথায় ভ্রূকুটি করে। সে চুপচাপ বসে থাকে। কিন্তু ভেতরে সিদ্ধান্ত স্পষ্ট। সে যে করেই হোক জাহাজের নিচের তলায় যাবে। সেখানে কয়লা ফেলার ঘর আছে। সেই শ্রমিকদের জীবন সে নিজ চোখে দেখতে চায়। এই সময় দুইজন অফিসার ডেকে আসে। তারা ফরমাল পোশাক পরা। তারা জানায় যে মিলড্রেডের নামার সময় হয়ে গেছে। তারা তাকে নিচে নিয়ে যাবে। মিলড্রেড উঠে দাঁড়ায়।
ফুপু শেষবার তাকে থামাতে চেষ্টা করে। সে বলে নিচে ধোঁয়া, কয়লা আর গরম ভরা অন্ধকার কক্ষ। সেখানে গেলে শরীর খারাপ হবে। সেখানে যাওয়া মানে নিজের অপমান ডেকে আনা। মিলড্রেড কিছুই ভাবে না। সে তার সিদ্ধান্তে স্থির থাকে। সে জানায় সে নামবেই। সে যান্ত্রিক ঘরে গিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে দেখা করবে। অফিসাররা তাকে নিয়ে নিচে চলে যায়। ফুপু বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে থাকে। তার মুখে অস্বস্তি আর অবিশ্বাস। সে বুঝতেই পারে না কেন ধনী পরিবারের মেয়ে এমন ইচ্ছা করছে। এই দৃশ্যের শেষে দেখা যায় ধনী আর গরিব শ্রেণির ফারাক। ফুপু ধনী সমাজের অহংকার আর অসহিষ্ণুতার প্রতীক। মিলড্রেড সরল সহানুভূতি আর কৌতূহলের প্রতীক। তবে তার সহানুভূতি বাস্তব অভিজ্ঞতা ছাড়া। এই দৃশ্য আসন্ন সংঘর্ষের ভিত্তি গড়ে তোলে। মিলড্রেড নামবে ইঞ্জিন রুমে। সেখানে সে ইয়াঙ্কের মুখোমুখি হবে। সেই সাক্ষাৎ হবে ইয়াঙ্কের জীবনের সবচেয়ে বড় আঘাত। এখান থেকেই নাটকের ট্র্যাজেডি শুরু হবে।
Scene 3- অপমানের আঘাত ও আত্মপরিচয়ের সংকট
তৃতীয় দৃশ্যের স্থান হলো স্টোকহোল বা ইঞ্জিন রুম। এখানে কয়লা ফেলার শ্রমিকরা কাজ করছে। ঘর ভরা ধোঁয়া আর গরমে। সবাই ক্লান্ত হলেও গর্বের সাথে কাজ করছে। তাদের কাছে এই কাজই শক্তি আর জীবনের প্রতীক। ইয়াঙ্ক এখানে সবচেয়ে বড়। সে মনে করে এই কাজের জন্যই দুনিয়া চলছে। তার শরীর শক্তিতে ভরা। তার কণ্ঠ জোরালো। সে কয়লা ছুঁড়ে দিচ্ছে। অন্যরা তাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়। সবাই ভাবে ইয়াঙ্ক-ই আসল নেতা। ইয়াঙ্কের মনে অহংকার। সে ভাবে তার শরীর, তার হাত, আর তার পরিশ্রমেই জাহাজ এগোয়। সে ইঞ্জিনকে নিজের শক্তি দিয়ে চালায়। তার কণ্ঠে গর্ব, তার কাজে তেজ। এই সময় উপরে থেকে ইঞ্জিনিয়ার চিৎকার দেয়। সে শ্রমিকদের দ্রুত কাজ করতে বলে। কিন্তু ইয়াঙ্ক রেগে ওঠে। সে গর্জে ওঠে। সে অদৃশ্য ইঞ্জিনিয়ারকে গালি দেয়। সে বলে কাজ কেবল তার আদেশে হয় না। সে-ই আসল শক্তি। ইঞ্জিনিয়ার কেবল বসে বসে বলে, আর তারাই সব করে।
অন্য শ্রমিকরা কাজ চালিয়ে যায়। তারা ইয়াঙ্কের শক্তি আর কথায় ভরসা রাখে। সবাই মনে করে তারা মিলেমিশে জাহাজের আসল চালক। এই অবস্থায় হঠাৎ ঘরে প্রবেশ করে মিলড্রেড ডগলাস। তার সাথে অফিসাররাও আছে। ধনী শ্রেণির মেয়ে এই গরম আর ধোঁয়ায় ভরা অন্ধকারে নেমেছে। শ্রমিকরা কাজ থামিয়ে তাকিয়ে থাকে। ইয়াঙ্ক প্রথমে কিছুই বুঝতে পারে না। সে খেয়ালই করে না মিলড্রেড এসেছে। সে শুধু ইঞ্জিনিয়ারের দিকে চেঁচাচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ সে দেখে অন্যরা কাজ থামিয়েছে। সে অবাক হয়। সে ঘুরে তাকায়। তখনই তার চোখে পড়ে মিলড্রেড। মিলড্রেড তাকে দেখে স্তব্ধ হয়ে যায়। তার মুখ ভয়ে সাদা হয়ে যায়। ইয়াঙ্কের শক্ত শরীর, কয়লায় ভরা মুখ, ঘামে ভেজা গা তাকে ভীষণ ভীত করে।
মিলড্রেডের চোখে ইয়াঙ্ক কোনো মানুষ নয়। সে যেন পশু। তার গর্জন, তার রুক্ষ চেহারা তাকে ভেঙে দেয়। হঠাৎ মিলড্রেড বলে ফেলে যে ইয়াঙ্ক নোংরা জন্তু। তার কণ্ঠে ভয় আর ঘৃণা। এই শব্দ ইয়াঙ্কের আত্মায় গভীর আঘাত করে। কথা বলেই মিলড্রেড অজ্ঞান হয়ে যায়। অফিসাররা তাকে ধরে বাইরে নিয়ে যায়। দৃশ্য শেষ হয় ইয়াঙ্কের হতবাক অবস্থায়। সে দাঁড়িয়ে থাকে। তার মুখে বিভ্রান্তি। সে কিছু বুঝতে পারে না। কেন তাকে জন্তু বলা হলো, কেন তাকে মানুষ হিসেবে দেখা হলো না। এই মুহূর্ত থেকেই শুরু হয় ইয়াঙ্কের আত্মপরিচয়ের সংকট।
Scene 4- অপমান থেকে প্রতিশোধের উন্মাদনা
চতুর্থ দৃশ্য আবার ঘটে ফায়ারম্যানদের ঘরে। আগের মতো খাট, বেঞ্চ আর মদের পরিবেশ। তবে এবার ঘরের ভেতর হাসি নেই, গান নেই। পরিবেশ গম্ভীর। কারণ ইয়াঙ্কের মুখে কালো রাগ জমে আছে। ইয়াঙ্ক বসে আছে চুপচাপ। কিন্তু তার ভেতরে আগুন জ্বলছে। তার মাথায় বারবার ভাসছে মিলড্রেডের কথা। ধনী মেয়েটি তাকে নোংরা পশু বলেছিল। সেই মুহূর্ত তার মনে বিষ ঢেলে দিয়েছে। অন্য শ্রমিকরা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। তারা আগে কখনো ইয়াঙ্ককে এমন চুপচাপ আর চিন্তায় ডুবে থাকতে দেখেনি। কেউ একজন জিজ্ঞেস করে, কী হয়েছে? কেউ ভাবে ইয়াঙ্ক হয়তো প্রেমে পড়েছে। তারা বলে হয়তো ধনী মেয়েটিকে ভালোবেসে ফেলেছে। তার জন্যই এত রাগ। কিন্তু ইয়াঙ্ক গর্জে ওঠে। সে বলে ভালোবাসার কিছু নেই। তার ভেতরে আছে শুধু ঘৃণা।
ইয়াঙ্কের মুখ লাল হয়ে যায়। সে দাঁত চেপে রাগে কাঁপতে থাকে। সে মিলড্রেডের কথা মনে করে। সে ভাবে, ধনী মেয়েটি কীভাবে সাহস পেল তাকে পশু বলতে? সে চেঁচিয়ে বলে, সে কোনো পশু নয়। সে-ই আসল শক্তি। সে কয়লা ফেলে, ইঞ্জিন চালায়। সে-ই পৃথিবীকে চালায়। ধনী মেয়েটির কিছুই করার নেই। তবু সে তাকে অপমান করল। ইয়াঙ্কের কণ্ঠে প্রতিশোধের আগুন। সে বলে তাকে খুঁজে বের করবে। সে মিলড্রেডকে মাটিতে টেনে নামাবে। তাকে দেখিয়ে দেবে আসল শক্তি কী। সে হঠাৎ দরজার দিকে যায়। তার চোখে আগুন, তার দেহে পাগলামি। মনে হয় সে এখনই ছুটে যাবে মিলড্রেডকে আক্রমণ করতে।
কিন্তু তার সাথীরা ভয় পায়। তারা সবাই মিলে ইয়াঙ্ককে ধরে ফেলে। তার হাত চেপে ধরে, শরীর মাটিতে ফেলে দেয়। ইয়াঙ্ক লড়াই করে। কিন্তু অনেক জন মিলে তাকে চেপে রাখে। ঘর ভরে যায় হট্টগোলে। ইয়াঙ্ক চেঁচাতে থাকে। সে প্রতিশোধ চায়। সে মিলড্রেডকে শেষ করে দিতে চায়। শেষে ইয়াঙ্ক মাটিতে শুয়ে হাঁপাতে থাকে। তার শরীর কাঁপে, চোখে ক্রোধ। তার সঙ্গীরা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে। তারা আগে কখনো তাকে এত ভয়ঙ্কর অবস্থায় দেখেনি। এই দৃশ্য দেখায় ইয়াঙ্কের মানসিক পরিবর্তন। আগে সে গর্ব করত নিজের শক্তিতে। এখন তার আত্মসম্মান ভেঙে গেছে। একটি শব্দ তাকে অস্থির করে তুলেছে। ধনী সমাজ তাকে পশুর স্তরে নামিয়েছে। আর এখান থেকেই তার জীবনে নতুন সংকট শুরু হয়।
Scene 5- শক্তির প্রদর্শন থেকে বন্দিত্বে পতন
পঞ্চম দৃশ্যের স্থান নিউ ইয়র্ক সিটি। সময় তিন সপ্তাহ পরে। জাহাজ তার ভ্রমণ শেষে ফিরে এসেছে। এখন ইয়াঙ্ক আর লং শহরের ফিফথ এভিনিউতে হাঁটছে। রাস্তা চকচকে। চারপাশ পরিষ্কার। ধনী সমাজের কেন্দ্র। সবকিছু গুছানো, ঝকঝকে, বিলাসী। ইয়াঙ্ক এই জায়গায় দাঁড়িয়ে অবাক হয়। তার মনে হয় এই শহর ধনীদের দুনিয়া, যেখানে গরিবদের কোনো স্থান নেই। লং চারপাশ দেখে বলে ধনীদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে বুদ্ধি দিয়ে। সে সমাজতান্ত্রিক চিন্তার কথা বলে। সে বোঝায় কেবল শক্তি দিয়ে নয়, রাজনৈতিক পথে লড়তে হবে। কিন্তু ইয়াঙ্ক কিছু শোনে না। তার চোখে আছে শুধু প্রতিশোধ। ইয়াঙ্কের মনে এখনও মিলড্রেডের কথা বাজছে। সে তাকে জন্তু বলেছিল। সেই অপমান তাকে পাগল করে তুলেছে। সে ধনী শ্রেণির সবাইকে নিজের শত্রু ভাবে। তার চোখে ফিফথ এভিনিউর ভিড় মানে মিলড্রেডের মতো লোক।
রাস্তা দিয়ে আসছে গির্জা থেকে ফেরা ভদ্রলোক আর ভদ্রমহিলা। তারা শান্তভাবে হাঁটছে। তাদের মুখে ভক্তি, পোশাকে আভিজাত্য। কিন্তু ইয়াঙ্কের মনে তা অপমানের প্রতীক। সে হঠাৎ তাদের সামনে দাঁড়িয়ে যায়। অশোভনভাবে বাধা দেয়। রুক্ষ কণ্ঠে ধনীদের গালি দেয়। তারা ভয়ে সরে যায়। তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। লং ভয়ে পিছিয়ে যায়। সে ভাবে ইয়াঙ্কের কাজ বোকামি। পুলিশ আসবে। তাই সে সরে গিয়ে ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে যায়। ইয়াঙ্ক এখন একা। ইয়াঙ্ক দাঁড়িয়ে থাকে। তার চোখ রাগে লাল। সে ভাবে এই রাস্তার প্রতিটি মানুষ তার শত্রু। সে বলে শক্তি দেখাতে হবে।
হঠাৎ এক ভদ্রলোক তার সামনে আসে। ভালো পোশাক পরা। গির্জা থেকে বেরিয়েছে। ইয়াঙ্ক কোনো কথা না বলে তাকে ঘুষি মারে। ভদ্রলোক মাটিতে পড়ে যায়। চারপাশে হৈচৈ শুরু হয়। ভিড় চিৎকার করে। কেউ পুলিশ ডাকতে ছুটে যায়। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই পুলিশ এসে যায়। তারা ইয়াঙ্ককে ঘিরে ফেলে। ইয়াঙ্ক লড়াই করে। কিন্তু সংখ্যায় বেশি পুলিশ তাকে ধরে ফেলে। ইয়াঙ্কের হাতে হাতকড়া পড়ে যায়। সে রাস্তায় দাঁড়িয়ে রাগে গর্জে ওঠে। তার মাথায় প্রতিশোধ আর হতাশা। কিন্তু তার শরীর আর কিছু করতে পারে না। পুলিশ তাকে টেনে নিয়ে যায়। এই দৃশ্যের মাধ্যমে বোঝা যায় ইয়াঙ্কের ভেতরের সংকট আরও গভীর হচ্ছে। ধনী সমাজের বিরুদ্ধে তার শক্তি কাজে লাগছে না। সে শুধু বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। আর শেষমেশ সে আইনের হাতে বন্দি হয়ে পড়ে।
Scene 6- জেলখানার ভেতর শক্তি আর হতাশার বিস্ফোরণ
ষষ্ঠ দৃশ্যের স্থান কারাগার। জায়গা হলো ব্ল্যাকওয়েল দ্বীপের জেলখানা। সময় আগের ঘটনার পরের রাত। ইয়াঙ্ক এখন ৩০ দিনের সাজা খাটছে। সে কারাগারের ভেতর বসে আছে। চারপাশে লোহার খাঁচা, দেয়াল আর অন্ধকার। তার চোখে মনে হয় এই জেলখানা আসলে একটা চিড়িয়াখানা। মানুষ এখানে পশুর মতো বন্দি। প্রতিটি কয়েদি যেন খাঁচায় আটকানো প্রাণী। ইয়াঙ্ক নিজের গল্প বলতে শুরু করে। সে পাশের কয়েদিদের জানায় কিভাবে সে এখানে এলো। সে বলে ধনীদের রাস্তা, ফিফথ এভিনিউতে সে ঝগড়া করেছিল। কিভাবে সে এক ভদ্রলোককে ঘুষি মেরেছিল। আর সেই জন্য পুলিশ তাকে ধরে এনেছে। কয়েদিরা তার গল্প শোনে। তারা হাসে। কেউ অবাক হয়। তাদের কাছে ইয়াঙ্ক অদ্ভুত এক মানুষ।
এদের মধ্যে একজন কয়েদি তাকে নতুন কিছু বলে। সে জানায় একটি সংগঠনের কথা। নাম Industrial Workers of the World বা আই.ডব্লিউ.ডব্লিউ। এই সংগঠন শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করে। তারা ধনীদের বিরুদ্ধে লড়াই করে। সে ইয়াঙ্ককে পরামর্শ দেয় এই সংগঠনে যোগ দিতে। ইয়াঙ্ক কিছুক্ষণ চুপ থাকে। তার মাথায় আবার ভেসে ওঠে মিলড্রেডের মুখ। সেই ধনী মেয়ে যে তাকে পশু বলেছিল। তার বাবার বিশাল স্টিল ব্যবসা। এইসব চিন্তা ইয়াঙ্ককে আবার রাগিয়ে তোলে। তার শরীর কাঁপতে থাকে। সে দাঁড়িয়ে যায়। তার চোখ লাল। সে ভাবে ধনী শ্রেণি তাকে মানুষ ভাবে না। সে শুধু পশু। এই ভাবনা তাকে পাগল করে দেয়।
হঠাৎ ইয়াঙ্ক খাঁচার লোহার বার ধরে টানতে শুরু করে। তার বিশাল শক্তি দিয়ে সে বার বাঁকানোর চেষ্টা করে। ধাতু কেঁপে ওঠে। কয়েদিরা অবাক হয়ে তাকায়। ইয়াঙ্ক যেন সত্যিই এক জন্তু হয়ে গেছে। কিন্তু তখনই আসে প্রহরীরা। তারা ইয়াঙ্ককে দেখে ভয় পায়। তবে দ্রুত লাঠি আর বন্দুক নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ইয়াঙ্ককে আঘাত করে। তাকে মাটিতে ফেলে দেয়। তার শক্তি দমন করে। শেষে ইয়াঙ্ক পড়ে থাকে হাঁপাতে হাঁপাতে। তার শরীর ব্যথায় ভরা। সে বুঝতে পারে জেলের দেয়াল ভাঙা সম্ভব নয়। তার শক্তি যথেষ্ট হলেও সমাজের যন্ত্র আর আইনের হাত তাকে বন্দি করে রাখবে। এই দৃশ্য দেখায় ইয়াঙ্কের হতাশা আরও বেড়ে গেছে। সে নিজেকে পশু ভাবতে শুরু করেছে। ধনী সমাজ আর আইনের হাতে সে দুর্বল হয়ে গেছে। তার ভেতরের প্রতিশোধ আগুন হয়ে জ্বললেও মুক্তির পথ খুঁজে পায় না।
Scene 7- সমাজ থেকে নির্বাসিত একা মানুষ
সপ্তম দৃশ্যের সময় এক মাস পরে। ইয়াঙ্ক তখন জেল থেকে বের হয়েছে। তার চোখে এখনও রাগ, মনে প্রতিশোধ। সে এবার নতুন পথ খুঁজে নেয়। সে যায় শ্রমিক সংগঠন আই.ডব্লিউ.ডব্লিউ (Industrial Workers of the World)–এর অফিসে। অফিস ঘরটি ছোট। দেয়ালে স্লোগান। কয়েকজন শ্রমিক বসে আছে। তারা ইয়াঙ্ককে দেখে খুশি হয়। কারণ জাহাজের ফায়ারম্যানরা সচরাচর সংগঠনে যোগ দেয় না। তাই ইয়াঙ্কের আসা তাদের কাছে ভালো লাগে। ইয়াঙ্ক গর্বের সাথে দাঁড়ায়। সে বলে সে যোগ দিতে এসেছে। সে ধনীদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে চায়। সংগঠনের সদস্যরা তাকে দলে নেয়। প্রথমে তারা তাকে স্বাগত জানায়।
কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই ইয়াঙ্ক নিজের ভেতরের আগুন প্রকাশ করে। সে বলে স্টিল ট্রাস্টকে ধ্বংস করতে হবে। সে চায় পুরো স্টিল ব্যবসা উড়িয়ে দিতে। তার চোখে মিলড্রেডের বাবার স্টিল সাম্রাজ্য (Nazareth Steel) শত্রুর প্রতীক। সংগঠনের সদস্যরা চমকে যায়। তারা ভাবে ইয়াঙ্ক অতিরিক্ত বলছে। এত রাগ মানে সে হয়তো আসল সদস্য নয়। তারা সন্দেহ করে সে হয়তো সরকারের লোক। হয়তো গুপ্তচর হয়ে এসেছে, তাদের ফাঁদে ফেলতে। শুরু হয় গুঞ্জন। সবাই একে অপরের দিকে তাকায়। শেষে তারা সিদ্ধান্ত নেয় ইয়াঙ্ককে বের করে দিতে হবে। তারা তাকে ধাক্কা দিয়ে বাইরে ফেলে দেয়।
ইয়াঙ্ক রাস্তার ধুলোয় পড়ে যায়। তার মনে আবার শূন্যতা। সে বুঝতে পারে শ্রমিক সমাজেও তার কোনো স্থান নেই। সে আবার একা হয়ে গেল। রাস্তার ভিড়ে সে দাঁড়ায়। তার চোখে হতাশা। তখন এক পুলিশ এসে তার সামনে দাঁড়ায়। ইয়াঙ্ক ভাবে এবার হয়তো আবার গ্রেপ্তার হবে। সে ভাবে অন্তত কারাগারেই একটা জায়গা আছে। কিন্তু পুলিশ তাকে কিছু করে না। সে শুধু বলে সরে দাঁড়াতে। যেন ইয়াঙ্ক তার চোখে গুরুত্বহীন। মানুষও নয়, সে কেবল রাস্তার ভিড়ের একজন। ইয়াঙ্ক দাঁড়িয়ে থাকে স্তব্ধ হয়ে। ধনী সমাজ তাকে মানুষ মানেনি। শ্রমিক সংগঠনও তাকে মানল না। এবার পুলিশও তার দিকে তাকাল না। সে বুঝতে পারে সে কারও অংশ নয়। সে না ধনী শ্রেণির, না শ্রমিক শ্রেণির, না আইনের চোখে মানুষ। এই দৃশ্যের শেষে ইয়াঙ্ক আরও ভাঙা মানুষ হয়ে ওঠে। তার ভেতরে রাগ এখনও আছে। কিন্তু সে আর জানে না কাকে শত্রু মানবে, কোথায় যাবে। সমাজ তাকে সম্পূর্ণ অচেনা করে ফেলেছে।
Scene 8- গরিলার খাঁচায় চূড়ান্ত পতন
অষ্টম দৃশ্যের স্থান হলো চিড়িয়াখানা। সময় আগের দিনের পরের সন্ধ্যা। ইয়াঙ্ক একা ঘুরতে ঘুরতে এখানে এসেছে। তার চোখে সমাজ আর মানুষ সব দূরে সরে গেছে। তার মনে হয় পৃথিবীতে তার আর কোনো স্থান নেই। সে দাঁড়িয়ে থাকে গরিলার খাঁচার সামনে। বড়, শক্তিশালী, লোমে ঢাকা গরিলা খাঁচায় বসে আছে। ইয়াঙ্ক তাকিয়ে থাকে। তার মনে হয় গরিলা আর সে এক। দুজনেই শক্তিশালী। দুজনেই খাঁচায় বন্দি। একজন লোহার খাঁচায়, অন্যজন সমাজের খাঁচায়। ইয়াঙ্ক গভীরভাবে ভাবে। সে নিজেকে মনুষ্য সমাজের বাইরে মনে করে। তার মনে হয় ধনী সমাজ তাকে মানুষ ভাবেনি। শ্রমিক সংগঠনও তাকে নেয়নি। পুলিশও তাকে গুরুত্ব দেয়নি। সে শুধু পশু। তাই গরিলাই তার প্রকৃত সঙ্গী।
সে গরিলার দিকে এগিয়ে যায়। তার চোখে অদ্ভুত মায়া। সে ভাবে গরিলা তার বন্ধু হবে। সে হাত বাড়িয়ে নিজের পরিচয় দিতে চায়। মনে মনে ভাবে দুজনের মধ্যে কোনো ফারাক নেই। ইয়াঙ্ক খাঁচার তালা খুলে ফেলে। গরিলা মুক্তি পায়। সে মনে করে এখন গরিলা তাকে আলিঙ্গন করবে। তারা একসাথে থাকবে। সে ভাবে এই বন্ধুত্বে সে মুক্তি পাবে। কিন্তু মুহূর্তেই সব পাল্টে যায়। গরিলা হিংস্র হয়ে ওঠে। সে ইয়াঙ্ককে শক্ত বাহুতে ধরে ফেলে। হঠাৎ প্রচণ্ড চাপে ইয়াঙ্কের পাঁজর ভেঙে যায়। তার বুক চূর্ণ হয়ে যায়। ইয়াঙ্ক যন্ত্রণায় কাঁপতে থাকে। তার মুখে বিস্ময়। সে বুঝতে পারে গরিলা তার বন্ধু নয়। সে শুধু হিংস্র জন্তু।
আরো পড়ুনঃ Poem in October Bangla Summary
গরিলা ইয়াঙ্ককে খাঁচার ভেতরে ছুড়ে ফেলে দেয়। ইয়াঙ্ক পড়ে যায় মাটিতে। তার শরীর ভাঙা, তার শ্বাস শেষ হয়ে আসছে। সে শুয়ে থাকে নিথর দেহ নিয়ে। তার ঠোঁট থেকে শেষ শব্দ বের হয়। সে বলে এখন সে জায়গা পেয়েছে। সত্যিই সে পশু হয়ে গেছে। দৃশ্য শেষ হয় তার মৃত্যুর মাধ্যমে। খাঁচার ভেতরে পড়ে থাকে ইয়াঙ্কের দেহ। চারপাশে নীরবতা। গরিলা আবার শান্ত হয়ে বসে থাকে। এই সমাপ্তি প্রতীকী। ইয়াঙ্ক চেয়েছিল মানুষের সমাজে স্থান খুঁজে পেতে। কিন্তু ধনী সমাজ, শ্রমিক সমাজ, আইন–কেউ তাকে নিল না। শেষে সে পশুর কাছে আশ্রয় খুঁজল। কিন্তু সেখানেও মৃত্যু ছাড়া কিছু পেল না। নাটক এখানেই শেষ হয়। ইয়াঙ্কের মৃত্যু আধুনিক শিল্পসমাজে মানুষের হারানো পরিচয় আর নিঃসঙ্গতার প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়।
থিমসমূহ
Existentialism (অস্তিত্ববাদ): The Hairy Ape নাটকটি মূলত মানুষের পরিচয় সংকটের কাহিনি। ইয়াঙ্ক প্রথমে ভাবে সে-ই সভ্যতার কেন্দ্র। তার শক্তি আর শ্রমেই জাহাজ চলে, দুনিয়া এগোয়। কিন্তু মিলড্রেড যখন তাকে জন্তু বলে অপমান করে, তখন তার ভেতরটা ভেঙে পড়ে। সে প্রশ্ন করতে থাকে, সে আসলে কে? ধনী সমাজ তাকে চেনে না, শ্রমিক সংগঠনও তাকে বিশ্বাস করে না। এমনকি পুলিশও তাকে গুরুত্বহীন ভাবে। এই প্রত্যাখ্যান ইয়াঙ্ককে এক অস্তিত্ববাদী শূন্যতায় ফেলে দেয়। সে ভাবে সমাজে তার কোনো স্থান নেই। তার শক্তি, তার অহংকার সবই অর্থহীন। শেষমেশ সে গরিলার সঙ্গে নিজের মিল খুঁজে নেয়। মানুষের সমাজ তাকে নেয়নি, তাই সে পশুর সঙ্গে এক হতে চায়। কিন্তু গরিলাও তাকে ধ্বংস করে। এতে বোঝা যায়, মানুষ যখন নিজের পরিচয় হারায়, তখন সে কোথাও আশ্রয় পায় না। এই নাটক অস্তিত্ববাদের মূল প্রশ্ন তোলে, মানুষ কে, তার আসল স্থান কোথায়।
Masculinity (পুরুষত্ব ও শক্তি): নাটকে ইয়াঙ্ক পুরুষত্বের প্রতীক। তার বুক চওড়া, হাত পেশল, শরীর ভরা শক্তি। সে কয়লা ফেলে ইঞ্জিন চালায়। সে ভাবে এই শক্তিই তাকে সবার উপরে রেখেছে। অন্য শ্রমিকরা তাকে নেতা মানে। কিন্তু মিলড্রেডের এক কথায় তার পুরুষত্ব ভেঙে পড়ে। তাকে পশু বলা হয়। ধনী সমাজে তার শক্তির কোনো মূল্য নেই। শ্রমিক সংগঠনও ভাবে, শুধু শক্তি দিয়ে চলবে না। সেখানে বুদ্ধি, কৌশল আর রাজনীতি দরকার। ইয়াঙ্ক এইসব কিছু বোঝে না। সে শুধু শারীরিক শক্তিতে বিশ্বাস করে। ফলে ধীরে ধীরে সে সমাজ থেকে আলাদা হয়ে পড়ে। শেষ দৃশ্যে গরিলার সঙ্গে তার মিল খোঁজা দেখায়, সে কেবল প্রাণীর শক্তিতে নেমে এসেছে। ও’নিল এখানে দেখান, অন্ধ শক্তি দিয়ে মানুষের মর্যাদা পাওয়া যায় না। পুরুষত্ব যদি কেবল পেশীর জোরে দাঁড়ায়, তবে তা টিকে থাকে না। ইয়াঙ্কের পতন এই শক্তি নির্ভর পুরুষত্বের ভঙ্গুরতা স্পষ্ট করে।
Racial Degeneration (জাতিগত অবক্ষয়): ও’নিল নাটকে শ্রমিকদের চিত্র আঁকেন আধা-মানুষ, আধা-পশু রূপে। স্টোকহোলের ভেতরে তাদের হাসি, ঝগড়া, গান সব পশুর আস্তানার মতো। তাদের শরীর ঘামে ভেজা, পোশাক নোংরা। এই বর্ণনা মানুষকে সভ্য থেকে পশুর স্তরে নামিয়ে আনে। ইয়াঙ্কও ধীরে ধীরে একই অবস্থায় পড়ে। মিলড্রেড তাকে নোংরা জন্তু বলার পর সে সেই কথাই সত্যি বলে মনে করতে শুরু করে। কারাগারে খাঁচার লোহার বার বাঁকানোর চেষ্টা করে সে। তখন তাকে সত্যিকারের পশুর মতো মনে হয়। শেষে গরিলার সঙ্গে মিশে যেতে চাওয়া, এমনকি গরিলার হাতে মৃত্যু, এসব নাটকে জাতিগত অবক্ষয়ের প্রতীক। শিল্পায়ন আর সামাজিক বিভাজন শ্রমিক শ্রেণিকে মানুষ থেকে আলাদা করে পশুর স্তরে নামিয়ে দিয়েছে। এখানে দেখা যায় আধুনিক সমাজে শ্রমিকদের অবস্থা ক্রমে অবমানবিক হয়ে উঠছে। তারা আর মানুষের মর্যাদা পাচ্ছে না, বরং সভ্যতার চোখে অবমূল্যায়িত প্রাণীতে পরিণত হচ্ছে।
Social Recession by Industrialization (শিল্পায়নের ফলে সামাজিক অধঃপতন): নাটকে শিল্পায়নের প্রভাব প্রবলভাবে উঠে আসে। প্যাডি পুরোনো দিনের কথা বলে, যখন জাহাজ পাল আর হাওয়ায় চলত। তখন ছিল স্বাধীনতা, সৌন্দর্য, প্রকৃতির সঙ্গে মিল। কিন্তু এখন সব জায়গায় কয়লা, ধোঁয়া আর যন্ত্র। শ্রমিকরা স্টোকহোলে বন্দি পশুর মতো জীবন কাটায়। শিল্পায়ন শ্রমিকদের খাঁচায় বন্দি করেছে। তারা আর স্বাধীন নয়, যন্ত্রের দাস হয়ে গেছে। ইয়াঙ্ক প্রথমে ভাবে এই যন্ত্র চালানোই তার শক্তি, কিন্তু পরে বুঝতে পারে যন্ত্র তাকে মানুষ থেকে আলাদা করে দিয়েছে। সমাজও শ্রমিক শ্রেণিকে নিচু চোখে দেখে। ধনী শ্রেণি ভোগ বিলাসে ডুবে থাকে, শ্রমিকদের ত্যাগ ভুলে যায়। এতে সামাজিক অধঃপতন ঘটে। মানবিক সম্পর্ক ভেঙে যায়। নাটক দেখায় কিভাবে শিল্পায়ন মানুষের শক্তিকে কাজে লাগায়, কিন্তু তাদের মানুষ হিসেবে গ্রহণ করে না। এই দ্বন্দ্ব আধুনিক শিল্পসমাজের সংকটের প্রতীক।
Isolation and Alienation (বিচ্ছিন্নতা ও একাকীত্ব): পুরো নাটকজুড়ে ইয়াঙ্ক বিচ্ছিন্নতার প্রতীক হয়ে ওঠে। প্রথমে সে শ্রমিক সমাজে নেতা। কিন্তু মিলড্রেড তাকে পশু বলার পর সে মানসিকভাবে ভেঙে যায়। এরপর সে কোথাও জায়গা খুঁজে পায় না। ধনী সমাজ তাকে অবজ্ঞা করে। শ্রমিক সংগঠন আই.ডব্লিউ.ডব্লিউ তাকে গুপ্তচর ভেবে বের করে দেয়। পুলিশও তাকে তুচ্ছ করে সরিয়ে দেয়। এই প্রত্যাখ্যান তাকে একা করে ফেলে। সে বোঝে সমাজের কোনো শ্রেণিই তাকে নিজের অংশ মানে না। একসময় সে ভাবে পশুর সঙ্গে তার মিল আছে। গরিলার খাঁচায় গিয়ে সে বন্ধুত্ব খুঁজে। কিন্তু সেখানে সে মৃত্যু পায়। এই একাকীত্ব দেখায় আধুনিক সমাজে মানুষ কিভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। শ্রেণি বিভাজন, শিল্পায়ন আর শক্তির অহংকার মিলিয়ে মানুষ তার পরিচয় হারায়। ইয়াঙ্কের মৃত্যু আসলে সেই হারানো পরিচয় আর গভীর নিঃসঙ্গতার প্রতীক।
Quotes
- “I’m part of de engines!” – (The Hairy Ape, Yank, Scene 1)
“আমি ইঞ্জিনেরই অংশ, আমার শক্তিতেই ইঞ্জিন চলে।”
Explanation (English): Yank proudly says that he is part of the ship’s engines. He feels his muscles are the real power that runs the world. This shows his false pride and his wrong identity.
ব্যাখ্যা (বাংলা): ইয়াঙ্ক গর্ব করে বলে যে সে জাহাজের ইঞ্জিনের অংশ। সে মনে করে তার শক্তিই দুনিয়াকে চালায়। এটি তার মিথ্যা অহংকার এবং ভ্রান্ত পরিচয়ের প্রতীক।
- “Oh, the filthy beast!” – (The Hairy Ape, Yank, Scene 3)
“আহ, নোংরা পশু!”
Explanation (English): Mildred Douglas insults Yank when she sees him in the stokehole. This one word destroys his confidence. It shows how the rich look at workers as animals.
ব্যাখ্যা (বাংলা): মিলড্রেড ডগলাস ইয়াঙ্ককে অপমান করে যখন সে স্টোকহোলে তাকে দেখে। এই এক শব্দেই ইয়াঙ্কের আত্মবিশ্বাস ভেঙে পড়ে। এটি বোঝায় ধনী সমাজ শ্রমিকদের পশু মনে করে।
- “Yank—Say, where do I go from here?
Policeman—Go to hell.” – (The Hairy Ape, Scene 7)
“ইয়াঙ্ক- এখন আমি কোথায় যাব?
পুলিশ- নরকে যা।”
Explanation (English): This dialogue shows Yank’s rejection by society. He looks for a place, but the police insult him. It proves that neither law nor society accepts him.
ব্যাখ্যা (বাংলা): এই সংলাপ ইয়াঙ্কের সামাজিক প্রত্যাখ্যান দেখায়। সে জায়গা খুঁজে পেতে চায়, কিন্তু পুলিশ তাকে অপমান করে। এটি প্রমাণ করে সমাজ বা আইন কেউই তাকে গ্রহণ করে না।
- “Christ, where do I get off at? Where do I fit in?” – (The Hairy Ape, Yank, Scene 8)
“হে খ্রিস্ট, আমি কোথায় যাবো? আমি কোথায় মানাবো?”
Explanation (English): These are Yank’s last words before dying in the gorilla’s cage. They show his final loss of identity and place in the world. His tragedy ends in total isolation.
ব্যাখ্যা (বাংলা): এগুলো ইয়াঙ্কের শেষ কথা, গরিলার খাঁচায় মৃত্যুর আগে। এগুলো তার পরিচয় ও জায়গা হারানোর চূড়ান্ত মুহূর্তকে বোঝায়। তার ট্র্যাজেডি শেষ হয় সম্পূর্ণ নিঃসঙ্গতায়।
- “I’m de end! I’m de start! I start somep’n and de woild moves!” – (The Hairy Ape, Yank, Scene 1)
“আমি শেষও, আমি শুরু– আমি কিছু শুরু করলে দুনিয়া নড়ে ওঠে।”
Explanation (English): Yank shouts with pride in the stokehole. He believes his strength controls the whole world. This shows his false pride and illusion of power.
ব্যাখ্যা (বাংলা): ইয়াঙ্ক স্টোকহোলে দাঁড়িয়ে গর্বের সাথে বলে। সে ভাবে তার শক্তিতেই পুরো দুনিয়া চলে। এটি তার মিথ্যা অহংকার আর ভ্রান্ত শক্তির বিশ্বাস প্রকাশ করে।
- “All men is born free and ekal.” – (The Hairy Ape, Scene 1, Long’s dialogue)
“সব মানুষ জন্মায় মুক্ত আর সমান।”
Explanation (English): Long speaks of political equality and socialism. He believes workers and rich should be equal. His words show the dream of social justice.
ব্যাখ্যা (বাংলা): লং রাজনৈতিক সমতা আর সমাজতন্ত্রের কথা বলে। সে বিশ্বাস করে শ্রমিক আর ধনী সবার সমান হওয়া উচিত। তার কথা সামাজিক ন্যায়ের স্বপ্ন প্রকাশ করে।
- “I belong and he don’t.” – (The Hairy Ape, Scene 1, Yank’s dialogue)
“আমি মানাই, কিন্তু সে মানে না।”
Explanation (English): Yank says this about himself and Paddy. He feels he belongs to the modern machine world, while Paddy belongs to the past. This shows his false confidence.
ব্যাখ্যা (বাংলা): ইয়াঙ্ক এই কথা বলে নিজেকে আর প্যাডিকে নিয়ে। সে ভাবে সে আধুনিক যন্ত্র-জগতের অংশ, আর প্যাডি শুধু অতীতের। এটি তার ভুল আত্মবিশ্বাস প্রকাশ করে।
- “Even him didn’t tink I belonged.” – (The Hairy Ape, Scene 8, Yank in Gorilla’s Cage)
“এমনকি সেও ভাবল না আমি মানাই।”
Explanation (English): Yank cries this line in prison. He feels rejected even by other prisoners. It shows his deep isolation and broken identity.
ব্যাখ্যা (বাংলা): ইয়াঙ্ক কারাগারে এই লাইন বলে। সে ভাবে এমনকি কয়েদিরাও তাকে মানেনি। এটি তার গভীর নিঃসঙ্গতা আর ভাঙা পরিচয় প্রকাশ করে।
- “You’re a brainless ape.” – (The Hairy Ape, Scene 7, I.W.W. secretary)
“তুমি এক মগজহীন বানর।”
Explanation (English): The I.W.W. secretary insults Yank. It shows rejection even from his own class. They see him only as muscle without brain. This breaks him further.
ব্যাখ্যা (বাংলা): আই.ডব্লিউ.ডব্লিউ. সেক্রেটারি ইয়াঙ্ককে অপমান করে। এতে বোঝা যায় নিজের শ্রেণিও তাকে প্রত্যাখ্যান করে। তারা তাকে শুধু পেশীবলে শক্তিশালি, কিন্তু মগজহীন মনে করে। এতে সে আরও ভেঙে পড়ে।
আরো পড়ুনঃ The Second Coming Bangla Summary
ভাষার অলংকার
- Metaphor (রূপক): সংজ্ঞা: যখন একটি জিনিসকে অন্য কিছুর সঙ্গে সরাসরি তুলনা করা হয়, কিন্তু like বা as ব্যবহার করা হয় না উদাহরণ: ইয়াঙ্ককে বারবার Hairy Ape বা লোমশ জন্তু বলা হয়। ব্যাখ্যা: ইয়াঙ্ক আসলে মানুষ, কিন্তু তাকে রূপকের মাধ্যমে পশু বলা হয়। এখানে বোঝানো হয়, শিল্পায়িত সমাজ শ্রমিক শ্রেণিকে মানুষ থেকে পশুতে নামিয়ে এনেছে। ইয়াঙ্কের শক্তি, শরীর, আর কাজ সভ্যতার ভিত্তি হলেও তাকে মানুষ হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয় না। এই রূপক আধুনিক সমাজে শ্রমিক শ্রেণির অমানবিক অবস্থার প্রতীক।
- Irony (বিদ্রূপ): সংজ্ঞা: প্রত্যাশিত ঘটনার উল্টো কিছু ঘটলে বিদ্রূপ তৈরি হয়। উদাহরণ: ইয়াঙ্ক ভাবে সে-ই আসল শক্তি, সে-ই সভ্যতাকে চালায়। কিন্তু শেষে গরিলার হাতে মারা যায়। ব্যাখ্যা: বিদ্রূপ হলো, যে মানুষ মনে করে তার শক্তিতে দুনিয়া চলে, সে-ই এক পশুর হাতে ধ্বংস হয়। আবার সমাজের কাছে সে মানুষ না, পশু। অথচ তার শক্তি ছাড়া সভ্যতার যন্ত্র চলে না। এভাবে বিদ্রূপ দেখায় শ্রমিক শ্রেণির শোষণ আর পরিচয়হীনতা।
- Symbolism (প্রতীকবাদ): সংজ্ঞা: কোনো বস্তু, চরিত্র বা স্থান যখন গভীর অর্থ বা ধারণা প্রকাশ করে।
- স্টোকহোল (Stokehole): খাঁচা, দাসত্ব আর শিল্পায়নের অমানবিকতার প্রতীক। কয়লা ফেলার ঘর যেন কারাগার, যেখানে শ্রমিকরা বন্দি পশুর মতো থাকে।
- ফিফথ এভিনিউ (Fifth Avenue): ধনী সমাজের ভোগ-বিলাসের প্রতীক। এটি প্রকাশ করে অহংকার আর সাধারণ মানুষ থেকে বিচ্ছিন্নতা।
- কারাগার (Prison): সমাজের দমন আর অমানবিক আইনের প্রতীক। এখানে ইয়াঙ্ক নিজেকে খাঁচার পশুর মতো ভাবে।
- গরিলা (The Gorilla): অন্ধ শক্তি, হিংস্রতা, আর মানুষের পশুত্বের প্রতীক। ইয়াঙ্ক মনে করে গরিলাই তার সঙ্গী। কিন্তু গরিলা তাকে মেরে ফেলে। এতে বোঝানো হয় অন্ধ শক্তি কেবল ধ্বংস ডেকে আনে।
- ইয়াঙ্ক চরিত্র: শ্রমিক শ্রেণির প্রতীক। সে শক্তিশালী হলেও সমাজে তার স্থান নেই।
- মিলড্রেড চরিত্র: প্রতীক ধনী সমাজের ভণ্ড সহানুভূতি। সে শ্রমিককে সাহায্য করতে চাইলেও শেষে ঘৃণা করে।
- প্যাডি চরিত্র: পুরোনো দিনের স্বাধীনতা আর মানবিক মূল্যবোধের প্রতীক।
- লং চরিত্র: রাজনৈতিক আন্দোলন আর শ্রমিক ঐক্যের স্বপ্নের প্রতীক।
