A Passage to India Bangla Summary

A Passage to India

সংক্ষিপ্ত জীবনী: ই. এম. ফস্টার (E. M. Forster)

এডওয়ার্ড মরগান ফস্টার ১৮৭৯ সালের ১ জানুয়ারি লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন। তার পুরো নাম ছিল Edward Morgan Forster। তিনি ছিলেন একজন খ্যাতনামা ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, ছোটগল্পকার এবং সমালোচক। অল্প বয়সেই তিনি পিতৃহারা হন এবং মায়ের তত্ত্বাবধানে বড় হন। শৈশবে তিনি সাহিত্য ও সঙ্গীতের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। পরবর্তীতে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিংস কলেজে পড়াশোনা করেন, যেখানে তিনি “Bloomsbury Group” নামক প্রগতিশীল সাহিত্যিক ও দার্শনিকদের সঙ্গে যুক্ত হন। ফস্টার তার উপন্যাসে ইংরেজ মধ্যবিত্ত সমাজ, শ্রেণি বৈষম্য, সাম্রাজ্যবাদ, ঔপনিবেশিকতা, যৌনতা ও মানবসম্পর্কের টানাপোড়েনকে ফুটিয়ে তুলেছেন। তার বিখ্যাত উপন্যাসগুলোর মধ্যে রয়েছে,

  • A Room with a View (1908)
  • Howards End (1910)
  • A Passage to India (1924) 

আরো পড়ুনঃ Heart of Darkness Bangla Summary

A Passage to India  তার শ্রেষ্ঠ রচনা হিসেবে বিবেচিত হয়, যেখানে ভারতীয় উপনিবেশে ব্রিটিশ শাসন, জাতিগত বৈষম্য ও সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি আরও অনেক ছোটগল্প, প্রবন্ধ এবং ভ্রমণবিষয়ক লেখা রচনা করেছেন। তার সাহিত্যকর্মে মানবিক সহমর্মিতা, স্বাধীনচেতা মনোভাব এবং “Only connect” এর মতো সহজ অথচ গভীর মানবতাবাদী দর্শন প্রকাশ পেয়েছে। ফস্টার ১৯৪৬ সালে “Order of Merit” উপাধিতে ভূষিত হন। জীবদ্দশায় তিনি সমকামী ছিলেন, তবে তা প্রকাশ্যে স্বীকার করেননি; মৃত্যুর পর তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে তা প্রকাশ পায়। সাহিত্য সমালোচকরা তাকে আধুনিকতাবাদী হলেও মানবিকতা-ভিত্তিক একজন অনন্য ঔপন্যাসিক হিসেবে গণ্য করেন। ১৯৭০ সালের ৭ জুন তিনি কভেন্ট্রিতে মৃত্যুবরণ করেন। আজও তাকে ইংরেজি সাহিত্যের বিশিষ্ট উপন্যাসিক হিসেবে স্মরণ করা হয়, যিনি মানুষের ভেতরের টানাপোড়েন ও সমাজের জটিলতাকে সূক্ষ্মভাবে তুলে ধরতে পেরেছিলেন।

Key Facts

  • Full Title: A Passage to India
  • Original Title: A Passage to India
  • Author: Edward Morgan Forster (1879–1970)
  • Title of the Author: Humanist Novelist and Critic of Empire
  • Prize: James Tait Black Memorial Prize (1924)
  • Source: Inspired by Forster’s travels to India (1912 and 1921) and his close observations of British colonial rule, Indian society, religion, and cultural divisions
  • Written Time: Early 1920s (after World War I and during the rise of Indian independence movements)
  • First Published: 1924 (by Edward Arnold, London)
  • Publisher: Edward Arnold (UK); Harcourt, Brace and Company (US)
  • Genre: Political Novel / Colonial Novel / Social and Psychological Realism
  • Form: Prose novel (single continuous narrative, divided into three parts: Mosque, Caves, Temple, and total 37 chapters)
  • Structure: Tripartite structure with symbolic sections, combining realism, symbolism, and philosophical exploration
  • Tone: Critical, ironic, tragic, and reflective; blending skepticism with humanism
  • Point of View: Third-person omniscient narrator (shifting focus across Indian, British, and Anglo-Indian perspectives)
  • Significance: A landmark in English literature and colonial discourse. It critiques British imperialism, explores racial prejudice, friendship, spirituality, and the possibility (or impossibility) of connection across cultural divides.
  • Language: English
  • Famous Line: “‘No, not yet,’ and the sky said, ‘No, not there.’” (Final lines, symbolizing the impossibility of true union between East and West under colonial rule)
  • Setting:
  • Time Setting: Early 20th century (British Raj, before Indian independence)
  • Place Setting: Colonial India. Fictional city of Chandrapore (based on real Indian provincial towns), the Marabar (Barabar) Caves, and the surrounding landscape.

Key Notes – বাংলা

  • The Title “A Passage to India”:
  • ভৌগোলিক অর্থে (Geographical Sense): শিরোনামের “Passage” মানে হলো যাত্রা বা অগ্রসর হওয়া। ইউরোপ থেকে ভারতে আসা ব্রিটিশদের ভৌগোলিক যাত্রা বোঝানো হয়েছে। আবার ভারতবর্ষের অন্তঃস্থলে প্রবেশ, বিশেষ করে মারাবার গুহায় যাত্রা, প্রতীকী অর্থ বহন করে।
  • ঔপনিবেশিক অর্থে (Colonial Sense): শিরোনামটি ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শাসন ও ভারতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ককে ইঙ্গিত করে। এই “Passage” আসলে সাম্রাজ্যবাদী শাসনের কঠিন অভিজ্ঞতা, ব্রিটিশ শাসক ও ভারতীয় অধিবাসীদের মধ্যে ভাঙন, অবিশ্বাস ও দ্বন্দ্বকে প্রকাশ করে।
  • সাংস্কৃতিক অর্থে (Cultural Sense): ভারতবর্ষে প্রবেশ মানে শুধু ভৌগোলিক প্রবেশ নয়, বরং ভিন্ন সংস্কৃতি, ধর্ম ও জাতিগত বিভেদের মধ্যে প্রবেশ। এখানে ব্রিটিশ ও ভারতীয় চরিত্ররা বন্ধুত্ব স্থাপন করার চেষ্টা করলেও, শেষ পর্যন্ত সাংস্কৃতিক দূরত্ব মিটে না।
  • আধ্যাত্মিক অর্থে (Spiritual Sense): শিরোনামটি মানব আত্মার যাত্রাকেও বোঝায়। ভারতবর্ষ ফস্টারের কাছে আধ্যাত্মিক অনুসন্ধান ও জীবনের গভীর অর্থ খোঁজার স্থান। কিন্তু ঔপনিবেশিক বাস্তবতা সেই আধ্যাত্মিক মিলনকে অসম্ভব করে তোলে।
  • Tripartite Structure (ত্রি-অংশের গঠন): উপন্যাসটি তিনটি অংশে বিভক্ত- Mosque, Caves, Temple। প্রতিটি অংশ প্রতীকী:
  • Mosque = সৌহার্দ্য, বন্ধুত্ব ও প্রাথমিক সংযোগ (ফিল্ডিং ও আজিজের বন্ধুত্ব)।
  • Caves = ভয়, বিভ্রম ও সাংস্কৃতিক সংঘাত (মারাবার গুহার রহস্য ও অভিযুক্ত আজিজের বিচার)।
  • Temple = আধ্যাত্মিকতা, মিলন ও অমীমাংসিত প্রশ্ন (শেষ অধ্যায়ে পুনর্মিলনের চেষ্টা, কিন্তু অসম্পূর্ণ)।
  • Marabar Caves (মারাবার গুহা): উপন্যাসের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতীক। গুহার ভেতরে প্রতিধ্বনি সব শব্দকে বিকৃত করে এক ধরনের “বিভীষিকা” তৈরি করে। এটি জীবনের শূন্যতা, যোগাযোগের অক্ষমতা, এবং পূর্ব-পশ্চিমের মধ্যে বোঝাপড়ার অসম্ভবতাকে প্রকাশ করে।

A Passage to India – Background (বাংলায়): ই. এম. ফস্টার ১৯২০–এর দশকের শুরুতে A Passage to India লিখেছিলেন। শিরোনামটি এসেছে ওয়াল্ট হুইটম্যানের কবিতা Passage to India থেকে। উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় ১৯২৪ সালে। তখন ভারত ছিল ব্রিটিশ উপনিবেশ, এবং স্বাধীনতার আন্দোলন ক্রমশ জোরদার হচ্ছিল। ফস্টার প্রথমে ১৯১২ সালে ভারতে ভ্রমণ করেন এবং পরে ১৯২১ সালে আবার ভারত সফর করেন। তিনি মহারাজা অফ দেওলীর প্রাইভেট সেক্রেটারি হিসেবেও কাজ করেছিলেন। এই অভিজ্ঞতাগুলো তাকে ভারতীয় সমাজ, সংস্কৃতি ও ঔপনিবেশিক শাসনের বাস্তবতা গভীরভাবে অনুধাবন করতে সাহায্য করে।

উপন্যাসে ফস্টার তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, পর্যবেক্ষণ ও মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি ফুটিয়ে তুলেছেন। তিনি দেখেছিলেন কিভাবে ব্রিটিশ শাসক ও ভারতীয় জনগণের মধ্যে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক বিভাজন তৈরি হয়েছিল। উপন্যাসের চরিত্র আজিজ, ফিল্ডিং, মিসেস মুর বা আদেলা কুয়েস্টেড আসলে সেই জটিল সম্পর্ক, সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব ও মানসিক সংকটের প্রতীক। বিশেষ করে Marabar Caves বা বারাবার গুহার ঘটনা উপন্যাসের কেন্দ্রীয় প্রতীক। এটি মানুষের যোগাযোগের অক্ষমতা, বিভ্রান্তি এবং পূর্ব–পশ্চিমের মিলনের অসম্ভবতাকে প্রতিফলিত করে।

প্রকাশের পরপরই উপন্যাসটি বিপুল আলোচনা সৃষ্টি করে। কেউ এটিকে ভারতীয় উপনিবেশে ব্রিটিশদের আধিপত্য ও বর্ণবৈষম্যের নগ্ন চিত্র হিসেবে দেখেছে, আবার কেউ বলেছেন এটি মানব আত্মার আধ্যাত্মিক অনুসন্ধানকে প্রতিফলিত করেছে। পরবর্তীতে এটি ২০শ শতাব্দীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপন্যাস হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ফস্টার যদিও পরবর্তীতে আর কোনো পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস লেখেননি, তবে A Passage to India তার শ্রেষ্ঠ রচনা হিসেবে ধরা হয়। এটি আজও ঔপনিবেশিক শাসনের সমালোচনা, সাংস্কৃতিক সংঘাত এবং মানবিক সম্পর্কের জটিলতা নিয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে এক অনন্য গ্রন্থ।

চরিত্রসমূহ – বাংলায়

প্রধান চরিত্র (Major Characters)

  • Dr. Aziz (ড. আজিজ): উপন্যাসের অন্যতম মুখ্য চরিত্র। তিনি একজন তরুণ ভারতীয় ডাক্তার, যিনি ব্রিটিশ শাসনের অধীনে বসবাস করেন। উদার ও বন্ধুত্বপূর্ণ স্বভাবের হলেও ঔপনিবেশিক অবিচারের কারণে তাঁর মধ্যে ক্ষোভ জমে আছে। অ্যাডেলা কুয়েস্টেড এর সঙ্গে মারাবার গুহার ঘটনায় তিনি মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত হন। আজিজ ভারতীয় জাতীয়তাবাদের প্রতীক, যিনি ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেন।
  • Cyril Fielding (সাইরিল ফিল্ডিং): ব্রিটিশ সরকারি কলেজের প্রধান শিক্ষক। তিনি মুক্তচেতা, উদারমনস্ক এবং ভারতীয়দের সঙ্গে আন্তরিকভাবে বন্ধুত্ব স্থাপন করতে চান। আজিজের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক উপন্যাসের কেন্দ্রবিন্দু হলেও শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশ–ভারতীয় বিভাজনের কারণে তাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়।
  • Mrs. Moore (মিসেস মুর): বয়স্ক ব্রিটিশ মহিলা, যিনি ভারতে এসে ভারতীয় সংস্কৃতি ও ধর্মের প্রতি গভীর সহমর্মিতা প্রকাশ করেন। মারাবার গুহার প্রতিধ্বনিতে তিনি ভেঙে পড়েন এবং মানব জীবনের অসারতা অনুভব করেন। তিনি আধ্যাত্মিক সহমর্মিতা ও পূর্ব–পশ্চিমের সংযোগের প্রতীক।
  • Adela Quested (অ্যাডেলা কুয়েস্টেড): এক তরুণ ব্রিটিশ মহিলা, যিনি ভারতে এসে “Real India” দেখতে চান। মারাবার গুহায় বিভ্রান্তির শিকার হয়ে তিনি আজিজকে আক্রমণের মিথ্যা অভিযোগ তোলেন। পরে সত্য উপলব্ধি করে অভিযোগ প্রত্যাহার করেন। তিনি সাংস্কৃতিক ভুল বোঝাবুঝি ও ঔপনিবেশিক বিভাজনের প্রতীক।
  • Ronny Heaslop (রনি হিসলপ): চন্দ্রপুরের ব্রিটিশ ম্যাজিস্ট্রেট এবং আদেলার বাগদত্ত। তিনি ঔপনিবেশিক প্রশাসনের অহংকার ও ভারতীয়দের প্রতি অবজ্ঞার প্রতীক।

গৌণ চরিত্র (Minor Characters)

  • Professor Godbole (প্রফেসর গডবোল): হিন্দু অধ্যাপক, যিনি আধ্যাত্মিকতা ও ধর্মীয় রহস্যময়তার প্রতীক। তাঁর চরিত্রে ভারতীয় সংস্কৃতির গভীর ঐতিহ্য ফুটে ওঠে।
  • Mr. Turton (টারটন): জেলা কালেক্টর, যিনি উপনিবেশিক শাসনের প্রতিনিধিত্ব করেন। ভারতীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাইলেও প্রকৃতপক্ষে তিনি শাসক–শাসিতের ভেদ মানসিকতা বহন করেন।
  • Mrs. Turton (মিসেস টারটন): কালেক্টরের স্ত্রী। ব্রিজ পার্টিতে ভারতীয় নারীদের স্বাগত জানানোর বদলে তাঁদের অপমান করেন। তিনি ভারতীয়দের নিচু জাতির বলে মনে করেন। তাঁর চরিত্রে জাতিগত অহংকার ও শ্রেষ্ঠত্ববোধ স্পষ্ট।
  • Major Callendar (মেজর ক্যালেন্ডার): ঔপনিবেশিক ডাক্তার, যিনি আজিজের প্রতিদ্বন্দ্বী। তিনি ঔপনিবেশিক দম্ভ ও অসহিষ্ণুতার প্রতীক।
  • The Nawab Bahadur (নবাব বাহাদুর): এক ধনী মুসলিম অভিজাত। ব্রিটিশদের প্রতি আনুগত্যশীল হলেও তাঁর চরিত্রে ভারতীয় সমাজের দ্বিধা প্রতিফলিত হয়।
  • Hamidullah (হামিদুল্লাহ): ডাঃ আজিজের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং একজন আইনজীবী। তিনি প্রায়ই আলোচনা করেন ইংরেজদের সঙ্গে সত্যিকারের বন্ধুত্ব সম্ভব কি না। তাঁর চরিত্রে ভারতীয় মুসলমানদের জাতীয়তাবোধ ও অসন্তোষ ফুটে ওঠে।
  • Mahmoud Ali (মাহমুদ আলি): একজন উকিল এবং আজিজের বন্ধু। তিনি ইংরেজদের প্রতি সন্দেহপ্রবণ এবং সবসময় তাঁদের ভণ্ডামি ও অন্যায় প্রকাশ্যে সমালোচনা করেন। আদালতে আজিজের পক্ষে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন।
  • Mohammed Latif (মোহাম্মদ লতিফ): আজিজের দুর্বল ও নির্ভরশীল আত্মীয়। তিনি আজিজের সঙ্গে মাউ-তে জন্মাষ্টমী উৎসব ও নৌকাভ্রমণের সময় যোগ দেন।
  • Nawab Bahadur (নবাব বাহাদুর): প্রভাবশালী জমিদার ও সমাজনেতা। ইংরেজরা তাঁকে সম্মান দেখালেও তাঁকে সমান মর্যাদা দেয় না। পরে তাঁর গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটলে সেটি গুজব ও ভয়ের প্রতীকে পরিণত হয়।
  • Major Callendar (মেজর ক্যালেন্ডার): চন্দ্রপুরের সিভিল সার্জন। তিনি ভারতীয়দের প্রতি রূঢ় ও অপমানজনক আচরণ করেন। আজিজকে তুচ্ছভাবে ব্যবহার করা এবং তাঁর গাড়ি দখল করা তাঁর ঔপনিবেশিক অহংকারের পরিচয়।
  • Mrs. Callendar (মিসেস ক্যালেন্ডার): মেজর ক্যালেন্ডারের স্ত্রী। তিনি ভারতীয়দের হেয় করেন এবং আজিজের টোঙ্গা অনুমতি ছাড়াই ব্যবহার করে অপমান করেন। তাঁর চরিত্রে ইংরেজ মহিলাদের ঔদ্ধত্য ফুটে ওঠে।
  • Ralph Moore (রালফ মুর): মিসেস মুরের ছোট ছেলে। সংবেদনশীল ও কোমল স্বভাবের। উপন্যাসের শেষে মাউ-তে আসে। আজিজ তাকে পছন্দ করে, কারণ সে তাকে মিসেস মুরের সততা ও আন্তরিকতার কথা মনে করিয়ে দেয়।
  • Stella Moore (স্টেলা মুর): মিসেস মুরের কন্যা। তিনি ফিল্ডিংকে বিয়ে করেন। মাউ-তে উপস্থিত হন এবং মিসেস মুরের আত্মার ধারাবাহিকতার প্রতীক হয়ে ওঠেন।
  • Mrs. Lesley (মিসেস লেসলি): চন্দ্রপুরের এক ইংরেজ মহিলা। তিনি মিসেস ক্যালেন্ডারের সঙ্গী হন এবং আজিজের টোঙ্গা দখল করে তাঁকেও অপমান করেন।
  • The Viceroy’s Officials / Anglo-Indian Club Members (ভাইসরয়ের দপ্তরের সদস্য / অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান ক্লাব সদস্যরা): এরা আলাদা আলাদা করে গুরুত্বপূর্ণ নয়, তবে একসঙ্গে ঔপনিবেশিক ক্ষমতা ও অহংকারের প্রতীক হিসেবে উপস্থিত।

আরো পড়ুনঃ To The Lighthouse Bangla Summary

প্রতীকী সম্পর্ক (Symbolic Relationships)

  • Aziz ও Fielding: তাদের বন্ধুত্ব পূর্ব–পশ্চিমের মিলনের আশা জাগায়। কিন্তু ঔপনিবেশিক বাস্তবতায় সেই বন্ধুত্ব টিকতে পারে না।
  • Aziz ও Adela: তাদের সম্পর্ক ভুল বোঝাবুঝি ও সাংস্কৃতিক সংঘাতের প্রতীক। গুহার ঘটনায় এই সম্পর্ক ভেঙে যায়।
  • Mrs. Moore ও Marabar Caves: গুহার প্রতিধ্বনি তাঁর মানসিক ভাঙন ঘটায়। এটি মানব জীবনের শূন্যতা ও অসারতার প্রতীক।
  • India ও Britain: উপন্যাসে ভারত হলো বহুমুখী সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিকতার দেশ, আর ব্রিটেন হলো ক্ষমতা, শাসন ও ঔপনিবেশিক বিভেদের প্রতীক।

বাংলা সামারি

চন্দ্রপুর শহরের বর্ণনা: উপন্যাসের শুরুতে চন্দ্রপুর শহরের বর্ণনা দেওয়া হয়। এটি ভারতের একটি সাধারণ শহর হলেও সেখানে উপনিবেশিক বিভাজন স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। শহরের ভেতরে ইউরোপীয়দের জন্য আলাদা কলোনি ও ক্লাব গড়ে তোলা হয়েছে। ইংরেজরা নিজেদের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য আলাদা করে থাকে এবং ভারতীয়দের কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রাখে। শহরের জীবনযাত্রা দুই ভাগে বিভক্ত। একদিকে ব্রিটিশদের বিলাসী ও আধিপত্যমূলক সমাজ, অন্যদিকে ভারতীয়দের সাধারণ জীবন। খাওয়া-দাওয়া, সামাজিকতা, আড্ডা, সবক্ষেত্রেই পার্থক্য চোখে পড়ে। দুই সম্প্রদায় প্রায় কখনোই আন্তরিকভাবে মিলেমিশে থাকে না। এই বৈষম্যমূলক পরিবেশ থেকেই প্রথম প্রশ্ন জাগে, ভারতীয়দের সঙ্গে ইংরেজদের কি কখনো প্রকৃত বন্ধুত্ব সম্ভব?

আজিজ ও তাঁর বন্ধুদের আলোচনা: ড. আজিজ, চন্দ্রপুরের এক তরুণ মুসলিম ডাক্তার। তিনি প্রাণবন্ত, হাসিখুশি ও মিশুক স্বভাবের মানুষ। কিন্তু ইংরেজদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে মনে দ্বিধা আছে। ইংরেজদের অনেক ভালো দিক তিনি মানেন, কিন্তু তাদের অহংকার, উদাসীনতা ও উপনিবেশবাদী মনোভাব তাঁকে আঘাত করে। এই বিষয়টি নিয়ে আজিজ প্রায়ই তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করেন। বন্ধুদের মধ্যে প্রধান হচ্ছেন,

  • হামিদুল্লাহ: আজিজের আত্মীয় ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তিনি একজন আইনজীবী। তাঁর মতে, ইংরেজদের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে বন্ধুত্ব করা যায়, তবে শাসক-শাসিত সম্পর্কের কারণে তা টিকে থাকে না।
  • মাহমুদ আলি: একজন ব্যারিস্টার। তিনি ইংরেজদের প্রতি অত্যন্ত সমালোচনামূলক। তিনি মনে করেন, ইংরেজরা কখনো ভারতীয়দের সমানভাবে গ্রহণ করবে না।
  • মহম্মদ লতিফ: খানিকটা নিষ্ক্রিয় স্বভাবের বন্ধু, আলোচনায় উপস্থিত থাকলেও তাঁর মতামত ততটা প্রভাবশালী নয়।
  • সিরাজুদ্দিন আহমেদ (ও আরও কিছু পরিচিত মুসলিম বন্ধু): ছোটখাটো চরিত্র, তবে আলোচনায় অংশ নেন।

তাদের মধ্যে তর্ক ওঠে, ভারতীয় ও ইংরেজদের মধ্যে প্রকৃত বন্ধুত্ব কি সম্ভব? কেউ বলেন, আগে হয়তো কিছুটা সম্ভব ছিল, কিন্তু এখন সম্পর্ক ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। আবার কেউ বিশ্বাস করেন, বন্ধুত্বের আশা আসলে এক ভ্রম, কারণ দুই জাতির মধ্যে অদৃশ্য প্রাচীর সবসময় দাঁড়িয়ে থাকে। 

ইংল্যান্ড থেকে আগমন: এদিকে ইংল্যান্ড থেকে ভারতে আসেন দুই ভদ্রমহিলা, অ্যাডেলা কুয়েস্টেড ও মিসেস মুর। 

  • মিসেস মুর: মিসেস মুর একজন বয়স্কা, শান্ত-স্বভাবের ইংরেজ মহিলা। তিনি ভারতে এসেছেন তাঁর ছেলে রনি হিসলপ-এর সঙ্গে দেখা করতে। রনি চন্দ্রপুরের ম্যাজিস্ট্রেট এবং ব্রিটিশ প্রশাসনের কঠোর প্রতিনিধি। তাঁর চরিত্রে ঔপনিবেশিক দম্ভ ও ভারতীয়দের প্রতি অবজ্ঞা স্পষ্ট।
  • অ্যাডেলা কুয়েস্টেড: অ্যাডেলা কুয়েস্টেড হচ্ছেন রনির বাগদত্তা। তিনি তরুণী, কৌতূহলী এবং বাস্তব অভিজ্ঞতার প্রতি আগ্রহী। ইংরেজ সমাজের সীমাবদ্ধ গণ্ডি পেরিয়ে তিনি সত্যিকারের ভারতকে দেখতে চান। তাঁর ইচ্ছে হলো “Real India” চেনা, অর্থাৎ ভারতীয়দের আসল জীবন, সংস্কৃতি ও মনোভাব বোঝা।

ব্রিটিশ ক্লাবের অভিজ্ঞতা: ভারতে পৌঁছে অ্যাডেলা কুয়েস্টেড ও মিসেস মুর প্রথমেই যান ব্রিটিশ ক্লাবে। এই ক্লাব ছিল চন্দ্রপুরে ইংরেজদের সামাজিক কেন্দ্র। এখানে ভারতীয়দের প্রবেশাধিকার প্রায় নেই বললেই চলে। ক্লাবের পরিবেশে ঔপনিবেশিক দম্ভ ও অবজ্ঞা স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে। ইংরেজরা ভারতীয়দের সঙ্গে মিশতে চায় না। তারা ভারতীয়দের নিচু চোখে দেখে এবং সর্বদা নিজেদের শ্রেষ্ঠ মনে করে। ভারতীয়দের জন্য সামাজিক ও সাংস্কৃতিকভাবে এখানে কোনো জায়গা নেই। এই দৃশ্য দেখে অ্যাডেলা হতাশ হয়ে পড়েন। তাঁর কাছে মনে হয়, শুধু ইংরেজদের আড্ডা আর আলাদা জগৎ তাঁকে ভারতের আসল চিত্র দিতে পারবে না। তিনি স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেন, তিনি কেবল ইংরেজ সমাজে সীমাবদ্ধ থাকতে চান না। তিনি দেখতে চান “Real India”, আসল ভারতীয় সমাজ, তাদের সংস্কৃতি, তাদের দৈনন্দিন জীবন ও অনুভূতি।

মসজিদে প্রথম সাক্ষাৎ: সেই একই রাতে হঠাৎ মসজিদে দেখা হয় মিসেস মুর ও ড. আজিজের। ড. আজিজ সেদিন রাতে তিনি নিজের বন্ধুদের সঙ্গে আলাপের পর কিছুটা মনখারাপ নিয়ে ফিরছিলেন। ইংরেজদের আচরণ নিয়ে তাঁর মনে ক্ষোভ ছিল। পথে হঠাৎ তিনি মসজিদে ঢোকেন। একা বসে ভাবতে থাকেন, প্রার্থনা করেন, এবং শান্তি খুঁজছিলেন। মিসেস মুর তিনি সেদিন সন্ধ্যায় থিয়েটারে গিয়েছিলেন, যেখানে ভারতীয়দের প্রতি ইংরেজদের অবজ্ঞা তিনি সরাসরি দেখেছিলেন। সেটি তাঁর মনে খারাপ প্রভাব ফেলে। থিয়েটার শেষে রাতের বেলায় হাঁটতে হাঁটতে তিনি মসজিদের কাছে চলে আসেন। কৌতূহলবশত ভেতরে প্রবেশ করেন, তবে ভেতরে ঢোকার সময় তিনি যথাযথ সম্মান দেখিয়ে জুতো খুলে ফেলেন। এইভাবে হঠাৎ করেই তাঁদের দেখা হয়ে যায়।

অনেক ইংরেজ যেখানে ভারতীয় ধর্মীয় স্থানকে অসম্মান করে, সেখানে মিসেস মুর আচরণে ছিল বিনয় ও শ্রদ্ধা। প্রথমে আজিজ সন্দেহ করেছিলেন, একজন ইংরেজ মহিলা মসজিদে এসেছেন কেন? কিন্তু খুব দ্রুতই বুঝতে পারেন, মিসেস মুর আন্তরিক এবং ধর্মীয় স্থানের প্রতি যথাযথ সম্মান দেখাচ্ছেন। তিনি জুতো খুলে প্রবেশ করেন এবং নীরব ভক্তিভরে চারপাশ দেখছিলেন। এই আচরণ আজিজকে গভীরভাবে স্পর্শ করে। তাঁদের মধ্যে আলাপ শুরু হয়। কথোপকথনের মাধ্যমে দুজনের মধ্যে মুহূর্তেই আস্থা, শ্রদ্ধা ও সহমর্মিতার সম্পর্ক তৈরি হয়। এই ছোট অথচ তাৎপর্যপূর্ণ সাক্ষাৎ উপন্যাসে এক নতুন সম্পর্কের সূচনা করে। আজিজ মনে করেন, হয়তো সত্যিই ইংরেজদের সঙ্গে বন্ধুত্ব সম্ভব। অন্যদিকে মিসেস মুর উপলব্ধি করেন, ভারতকে বোঝার জন্য শুধু শাসন বা নিয়ন্ত্রণ নয়, দরকার সহমর্মিতা ও মানবিকতা।

মি. টার্টন-এর আমন্ত্রণ ও পার্টি: চন্দ্রপুরের কালেক্টর মি. টার্টন ইংরেজ ক্লাবে একটি পার্টির আয়োজন করেন। উদ্দেশ্য ছিল নতুন আসা ভদ্রমহিলা, অ্যাডেলা কুয়েস্টেড ও মিসেস মুর-কে স্বাগত জানানো। কিন্তু পার্টির পরিবেশ ছিল অত্যন্ত অস্বস্তিকর। ইংরেজ অতিথিরা ভারতীয়দের অবজ্ঞা করেন এবং তাঁদের সঙ্গে মিশতে চান না। ভারতীয়দের শুধু আনুষ্ঠানিকভাবে ডাকা হয়েছিল, যেন কর্তব্যসিদ্ধ করা হয়, কিন্তু প্রকৃত সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। ইংরেজদের মুখে ঔপনিবেশিক দম্ভ, আর ভারতীয়দের মনে ছিল অপমান ও অস্বস্তি।

এই পার্টিতেই উপস্থিত ছিলেন সাইরিল ফিল্ডিং। তিনি চন্দ্রপুর সরকারি কলেজের প্রিন্সিপাল। ফিল্ডিং ছিলেন মুক্তচিন্তার মানুষ। ভারতীয়দের প্রতি তাঁর ছিল আন্তরিক সহানুভূতি। তিনি বিশ্বাস করতেন, পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে বোঝাপড়া সম্ভব, যদি ভেদাভেদ ভুলে সমানভাবে আচরণ করা হয়। ফিল্ডিং অ্যাডেলার আচরণ লক্ষ্য করেন। অ্যাডেলা ছিলেন সরল, কৌতূহলী ও বন্ধুসুলভ। ভারতীয়দের প্রতি তাঁর আন্তরিক আগ্রহ দেখে ফিল্ডিং মুগ্ধ হন। তাঁর কাছে মনে হয়, অ্যাডেলা হয়তো সত্যিই “Real India” দেখতে চান।

ফিল্ডিং-এর টি-পার্টি- পূর্ব ও পশ্চিমের প্রথম সেতুবন্ধন: চন্দ্রপুরে ইংরেজ সমাজ ও ভারতীয় সমাজের মধ্যে যে অদৃশ্য দেয়াল ছিল। তার ভেতর দিয়ে প্রথমবারের মতো এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা তৈরি হয় সাইরিল ফিল্ডিং-এর বাসার ছোট্ট টি-পার্টিতে। কিছুদিন পর ফিল্ডিং তাঁর বাড়িতে এই আয়োজন করেন। তিনি প্রথমে আমন্ত্রণ জানান মিসেস মুর ও অ্যাডেলা কুয়েস্টেড-কে। কিন্তু অ্যাডেলা প্রস্তাব করেন, অন্তত একজন ভারতীয়ও যেন সেখানে থাকেন। তাঁর কথায় সম্মতি দিয়ে ফিল্ডিং আমন্ত্রণ জানান ড. আজিজ-কে। পাশাপাশি যোগ দেন প্রফেসর গডবোল, যিনি হিন্দু সমাজ ও ধর্মীয় চিন্তার প্রতিনিধি।

এইভাবে টেবিলে বসেন তিন ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষ, ইংরেজ, মুসলিম ও হিন্দু। তাঁরা একসঙ্গে চা পান করেন, আড্ডা দেন, হাসি-আনন্দ ভাগ করে নেন। পরিবেশে ছিল আন্তরিকতা, উষ্ণতা আর খোলামেলা ভাব। যেন এক মুহূর্তের জন্য জাতি, ধর্ম, ভাষার সমস্ত ভেদাভেদ মুছে গিয়েছিল। এই আড্ডায় ড. আজিজ ও ফিল্ডিং-এর সম্পর্ক বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। আজিজ অনুভব করেন, সব ইংরেজ ঔপনিবেশিক দম্ভে ভরা নয়। ফিল্ডিং সত্যিকারের মানবিক দৃষ্টিতে ভারতীয়দের দেখতে চান। অন্যদিকে ফিল্ডিংও বুঝতে পারেন, আজিজ কেবল একজন মিশুক ডাক্তার নন, বরং ভারতীয় জাতীয়তাবাদ ও সংবেদনশীলতার প্রতিনিধি।

মিসেস মুর তাঁর স্বাভাবিক সহানুভূতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ভারতীয়দের সঙ্গে সহজে মিশে যান। অ্যাডেলা কুয়েস্টেড এখানেই আরও দৃঢ়ভাবে উপলব্ধি করেন যে তিনি কেবল ইংরেজ সমাজে সীমাবদ্ধ থাকতে চান না। তিনি দেখতে চান “Real India”। প্রফেসর গডবোল-র উপস্থিতি আড্ডাকে আরও বৈচিত্র্যময় করে তোলে, যেখানে আধ্যাত্মিকতা, দর্শন ও হাস্যরস মিলেমিশে এক অনন্য পরিবেশ তৈরি হয়। এই টি-পার্টিই উপন্যাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়। এখানে প্রথমবারের মতো ইংরেজ ও ভারতীয় চরিত্ররা একসঙ্গে বসে মানবিক সম্পর্কের সম্ভাবনা উপলব্ধি করেন। বিশেষ করে আজিজ ও ফিল্ডিং-এর মধ্যে যে আন্তরিক বন্ধুত্বের বীজ রোপিত হয়, সেটিই পরবর্তী কাহিনির কেন্দ্রীয় সম্পর্ক হয়ে দাঁড়ায়।

সৌহার্দ্যের ভাঙন: ফিল্ডিং-এর বাসার টি-পার্টিতে তৈরি হওয়া আন্তরিক পরিবেশ বেশিক্ষণ টিকল না। হঠাৎ সেখানে এসে হাজির হন রনি হিসলপ, চন্দ্রপুরের ব্রিটিশ ম্যাজিস্ট্রেট। তিনি ছিলেন অহংকারী, শাসক শ্রেণির প্রতিনিধি। ভারতীয়দের উপস্থিতি তাঁর মোটেও পছন্দ হয়নি। রনি ঠান্ডা ভাষায় এবং অপ্রত্যক্ষ তুচ্ছতাচ্ছিল্যের মাধ্যমে ড. আজিজ ও প্রফেসর গডবোল-কে হেয় করেন। তাঁর কথাবার্তায় স্পষ্ট হয়ে ওঠে ঔপনিবেশিক দম্ভ ও ভারতীয়দের প্রতি অবজ্ঞা। যে উষ্ণতা ও খোলামেলা পরিবেশ একটু আগে পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল, রনির আগমনে তা মুহূর্তেই ভেঙে যায়।

এই দৃশ্যের সাক্ষী ছিলেন অ্যাডেলা কুয়েস্টেড। ভারত দেখতে আসা এই তরুণী ব্রিটিশ মহিলার কাছে ঘটনাটি ছিল এক চমকপ্রদ অভিজ্ঞতা। তিনি খোলাখুলিভাবে বুঝতে পারেন, রনির মনোভাব ভারতীয়দের প্রতি একেবারেই বন্ধুত্বপূর্ণ নয়। ভারতীয়দের প্রতি রনির এই অবজ্ঞা অ্যাডেলাকে গভীরভাবে হতাশ করে। তাঁর মনে প্রশ্ন জাগে, তিনি কি সত্যিই রনিকে বিয়ে করবেন? যে মানুষ ভারতীয়দের সঙ্গে এমন অবজ্ঞাপূর্ণ আচরণ করে, তার সঙ্গে জীবনের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া কি সঠিক হবে? এই মুহূর্ত থেকেই অ্যাডেলার মনে রনি সম্পর্কিত সন্দেহ ও দ্বিধা দৃঢ় হয়, যা পরবর্তী কাহিনিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

মারাবার গুহা ভ্রমণ: অ্যাডেলা কুয়েস্টেড চন্দ্রপুরে এসে বারবার বলছিলেন, তিনি শুধু ইংরেজ ক্লাব বা সরকারি মহল নয়, ভারতের আসল চিত্র দেখতে চান। তিনি জানতে চান, সাধারণ ভারতীয়রা কেমন জীবন যাপন করে। তাঁর এই “Real India” দেখার ইচ্ছা পূরণ করতে উদ্যোগ নেন ড. আজিজ। আজিজ অত্যন্ত আন্তরিকভাবে একটি ভ্রমণের পরিকল্পনা করেন। গন্তব্য বেছে নেন মারাবার গুহা, যা চন্দ্রপুর শহর থেকে কিছু দূরে অবস্থিত। গুহাগুলো রহস্যময়, প্রাচীন, আর প্রকৃতির ভেতরে লুকিয়ে আছে। আজিজ বিশ্বাস করেন, এই সফর ইংরেজ অতিথিদের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা হবে। তিনি সফরের প্রতিটি বিষয় খুব যত্নের সঙ্গে আয়োজন করেন,

  • খাবারের ব্যবস্থা,
  • যাতায়াতের জন্য পরিবহন,
  • এমনকি বিনোদনের প্রস্তুতিও রাখেন।

টি-পার্টিতে যাঁরা একসঙ্গে হয়েছিলেন, আজিজ, সাইরিল ফিল্ডিং, প্রফেসর গডবোল, অ্যাডেলা ও মিসেস মুর, সবার জন্যই নিমন্ত্রণ পাঠানো হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ভ্রমণকারীরা সবাই সকালে ট্রেনে রওনা হওয়ার কথা ছিল। গন্তব্য ছিল এক রহস্যময় স্থান, যা শিগগিরই উপন্যাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় পরিণত হবে।

মারাবার গুহায় যাত্রা ও প্রাথমিক অভিজ্ঞতা: ভোরবেলা পরিকল্পনা অনুযায়ী রওনা দেন ড. আজিজ, মিসেস মুর এবং অ্যাডেলা কুয়েস্টেড। তারা ট্রেনে ওঠেন এবং আনন্দ-উচ্ছ্বাসের সঙ্গে গন্তব্যের দিকে যাত্রা শুরু করেন। অন্যদিকে সাইরিল ফিল্ডিং এবং প্রফেসর গডবোল সময়মতো পৌঁছাতে পারেননি। ফলে তারা ট্রেন মিস করেন। পরে তারা ভিন্ন পথে যাত্রা শুরু করেন। তাঁদের ভ্রমণ ছিল রোমাঞ্চকর। তারা হাতির পিঠে চড়ে পাহাড়-জঙ্গল পেরিয়ে গুহার দিকে এগিয়ে যান। গন্তব্যে পৌঁছে আজিজ আয়োজক হিসেবে দারুণভাবে সবার যত্ন নেন। তিনি খাবারের ব্যবস্থা করেন, বিশ্রামের জায়গা তৈরি করেন, এবং একরকম পিকনিকের আবহ গড়ে তোলেন। চারপাশে ছিল পাহাড়, ঘন জঙ্গল আর অদ্ভুত রহস্যময় গুহার সারি। প্রকৃতির এই অপরূপ দৃশ্য প্রথমে ভ্রমণকারীদের আনন্দে ভরিয়ে তোলে।

কিন্তু গুহার অভ্যন্তরে প্রবেশ করার পর পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। মিসেস মুর দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়েন। প্রচণ্ড গরম, ভিড়, আর গুহার ভেতরের অদ্ভুত প্রতিধ্বনি তাঁকে অস্বস্তিতে ফেলে। সেই প্রতিধ্বনি যেন প্রতিটি শব্দকে বিকৃত করে অর্থহীন করে দিচ্ছিল। এতে তিনি ভয় পেয়ে এক জায়গায় বসে বিশ্রাম নেন। অন্যদিকে আজিজ ও অ্যাডেলা স্থানীয় এক গাইডকে সঙ্গে নিয়ে গুহার ভেতরে ঘুরতে থাকেন। শুরুতে পরিবেশ ছিল প্রাণবন্ত ও আনন্দময়। কিন্তু ধীরে ধীরে এক অস্বস্তিকর ও রহস্যময় আবহ তৈরি হতে থাকে, যা খুব দ্রুত উপন্যাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় রূপ নেবে।

মারাবার গুহার ঘটনা ও অ্যাডেলার বিভ্রান্তি: মারাবার গুহা ভ্রমণের শুরুটা ছিল আনন্দময়। ড. আজিজ, অ্যাডেলা কুয়েস্টেড এবং স্থানীয় গাইড একসঙ্গে গুহা থেকে গুহায় ঘুরছিলেন। প্রথমে তাঁদের মনে ছিল কৌতূহল আর উৎসাহ। কিন্তু গুহার ভেতরে প্রবেশ করার পর অদ্ভুত এক অভিজ্ঞতা তাঁদের মানসিক অবস্থায় প্রভাব ফেলতে শুরু করে। গুহার ভেতরের প্রতিধ্বনি ছিল অস্বাভাবিক। প্রতিটি শব্দ ভেতরে ঢুকে বিকৃত হয়ে ফিরে আসত, যেন সব শব্দ মিশে গিয়ে একটাই শূন্য ধ্বনি হয়ে দাঁড়ায়। এই শব্দ মানুষের মনে অস্বস্তি, বিভ্রান্তি আর ভয়ের জন্ম দেয়।

এই সময় অ্যাডেলা হাঁটতে হাঁটতে নিজের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে ভাবতে থাকেন। তিনি উপলব্ধি করেন, তাঁর বাগদত্ত রনি হিসলপ-কে তিনি সত্যিই ভালোবাসেন না। তাঁদের সম্পর্ক আসলে আবেগহীন, শূন্য ও অর্থহীন। এই উপলব্ধি তাঁকে মানসিকভাবে আরও অস্থির ও অসহায় করে তোলে। প্রতিধ্বনির বিভ্রান্তিকর প্রভাব এবং নিজের ভেতরের দ্বন্দ্ব মিলেমিশে অ্যাডেলার মনে আতঙ্ক তৈরি করে। তিনি হঠাৎই এক অজানা ভয়ের কবলে পড়েন। তাঁর চারপাশের বাস্তবতা যেন ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছিল। এই মানসিক বিপর্যয়ই তাঁকে এমন এক অবস্থায় নিয়ে যায়, যা পরবর্তী কাহিনিতে সবচেয়ে বড় সংকটের জন্ম দেয়।

অ্যাডেলার প্রশ্ন ও হঠাৎ উধাও হয়ে যাওয়া: গুহা ভ্রমণের সময় এক পর্যায়ে অ্যাডেলা কুয়েস্টেড ড. আজিজকে একটি ব্যক্তিগত প্রশ্ন করেন। তিনি জানতে চান, আজিজ কেন আবার বিয়ে করেননি? ড. আজিজের স্ত্রী মারা গিয়েছিলেন উপন্যাস শুরুর আগেই। এই প্রশ্নে আজিজ হকচকিয়ে যান। ব্যক্তিগত জীবনের প্রসঙ্গ তাঁকে অস্বস্তিতে ফেলে। তিনি তাঁর স্ত্রীর মৃত্যুর পরের একাকীত্ব নিয়ে কিছু বলতে চান না। তাই সরাসরি উত্তর না দিয়ে বিষয়টা এড়িয়ে যান। বরং তিনি আবার গুহার দিকে মনোযোগ দেন এবং অ্যাডেলাকে আরও কিছু গুহা দেখাতে থাকেন।

এক পর্যায়ে আজিজ নিজেই একটি গুহার ভেতরে ঢোকেন। ভেতরের অদ্ভুত প্রতিধ্বনি তাঁকে ঘিরে ধরে, কিন্তু তিনি দ্রুত বাইরে চলে আসেন। বাইরে এসে হঠাৎই বুঝতে পারেন, অ্যাডেলা নেই। চারপাশে খুঁজেও তাঁর কোনো খোঁজ পান না। রহস্যময় নীরবতা আর গুহার প্রতিধ্বনি তাঁকে ভয় ধরিয়ে দেয়। মুহূর্তেই আজিজের মনে আতঙ্ক জন্মায়, কোথায় গেলেন অ্যাডেলা? তিনি কি হারিয়ে গেছেন, না কি কোনো অঘটন ঘটেছে? ভীত ও দিশেহারা অবস্থায় আজিজ দ্রুত দৌড়ে পিকনিকের স্থানে ফিরে আসেন। তাঁর মনে তখন অজানা আশঙ্কা, আর কাহিনির মোড় ঘুরতে শুরু করে এক ভয়াবহ ঘটনার দিকে।

অ্যাডেলার বিভ্রান্তি ও আজিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ: পিকনিকের জায়গায় তখন সাইরিল ফিল্ডিং উপস্থিত ছিলেন। আতঙ্কিত আজিজ তাঁকে পুরো ঘটনাটা খুলে বলেন, কীভাবে তিনি গুহা থেকে বের হয়ে দেখেছেন, অ্যাডেলা হঠাৎ উধাও হয়ে গেছেন। ফিল্ডিং তাঁকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। কিছুক্ষণ পরই দেখা যায়, অ্যাডেলা কুয়েস্টেড ফিরে এসেছেন। কিন্তু তাঁর অবস্থা ভয়াবহ। চেহারা ফ্যাকাশে, চোখে আতঙ্ক, শরীরে ক্লান্তি। তাঁর মুখে বিভ্রান্তি ও মানসিক ভাঙনের ছাপ স্পষ্ট। তিনি কারও সঙ্গে কথা না বলে সোজা কালেক্টরের স্ত্রীর গাড়িতে উঠে বসেন। মুহূর্তের মধ্যেই গাড়িটি দ্রুত চন্দ্রপুরের দিকে রওনা হয়।

ড. আজিজ কিছুই বুঝতে পারেন না। তাঁর মনে হয়, হয়তো অ্যাডেলা অসুস্থ বোধ করছেন কিংবা গরমে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই সবাই অবাক হয়ে খবর পান, অ্যাডেলা অভিযোগ করেছেন যে, মারাবার গুহায় আজিজ তাঁকে আক্রমণ করেছেন। এই অভিযোগের সঙ্গে সঙ্গেই ভ্রমণের আনন্দ মুহূর্তে দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়। আজিজ হতবাক হয়ে যান, আর ইংরেজ সম্প্রদায় ক্ষোভে ফেটে পড়ে। তাঁদের কাছে এটাই হয়ে ওঠে উপনিবেশিক দম্ভ ও ভারতীয়দের ‘অপরাধী’ প্রমাণ করার সুযোগ।

আজিজের গ্রেপ্তার ও চন্দ্রপুরে উত্তেজনা: অ্যাডেলার অভিযোগ ছড়িয়ে পড়তেই চন্দ্রপুরের ব্রিটিশ সমাজ উত্তেজিত হয়ে ওঠে। ইংরেজরা এই ঘটনাকে ভারতীয়দের অবিশ্বস্ততা ও বর্বরতার প্রমাণ হিসেবে ধরে নেয়। তাঁদের চোখে এটা শুধু ব্যক্তিগত অপরাধ নয়, বরং ব্রিটিশ শাসনের প্রতি এক চ্যালেঞ্জ। পুলিশ আর সময় নষ্ট করে না। তারা কোনো তদন্ত ছাড়াই সরাসরি ড. আজিজকে গ্রেফতার করে। মুহূর্তের মধ্যেই আনন্দময় ভ্রমণ এক ভয়াবহ সংকটে পরিণত হয়। 

আজিজের জীবনে শুরু হয় অপমান, লাঞ্ছনা এবং দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ার দুঃস্বপ্ন। যাঁরা কিছুক্ষণ আগেই তাঁর সঙ্গে বসে চা খাচ্ছিলেন, গল্প করছিলেন, তাঁদের অনেকেই হঠাৎ তাঁর বিপক্ষে দাঁড়ান। চন্দ্রপুরের ইংরেজ সমাজ তখন একজোট হয়ে ভারতীয়দের অবমাননা করতে থাকে। তাঁরা এটিকে জাতিগত বিভাজন আরও গভীর করার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেন। আর এভাবেই মারাবার গুহার সেই রহস্যময় প্রতিধ্বনি এক দুঃসহ বাস্তব সংকটে পরিণত হয়।

অভিযোগের পর চন্দ্রপুরের প্রতিক্রিয়া: অ্যাডেলা কুয়েস্টেডের অভিযোগ চন্দ্রপুর শহরে বজ্রপাতের মতো নেমে আসে। ব্রিটিশ সমাজ মুহূর্তেই একজোট হয়ে যায়। তাঁদের কাছে আজিজের দোষ প্রমাণিত হওয়া যেন আগে থেকেই নিশ্চিত ছিল। কারও কাছে তদন্ত বা সত্য যাচাইয়ের প্রয়োজনীয়তা ছিল না। ইংরেজরা মনে করল, এই ঘটনাই প্রমাণ করে ভারতীয়রা অবিশ্বস্ত এবং বিপজ্জনক। ঔপনিবেশিক অহংকার তাঁদের চোখ অন্ধ করে দেয়। ফলে তারা কেবল আজিজকেই নয়, পুরো ভারতীয় সমাজকেই সন্দেহের চোখে দেখতে থাকে।

আরো পড়ুনঃ The Grass is Singing Bangla Summary

কিন্তু এই ভিড় থেকে আলাদা হয়ে দাঁড়ালেন সাইরিল ফিল্ডিং। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন, আজিজ নির্দোষ। তাঁর কাছে পরিষ্কার ছিল, আজিজ চরিত্রবান ও সম্মানিত মানুষ। ইংরেজরা যেভাবে হঠাৎ রায় দিয়ে ফেলল, তা তিনি মেনে নিতে পারলেন না। ফিল্ডিং প্রকাশ্যে আজিজের পক্ষে কথা বলেন। এতে অন্যান্য ইংরেজরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তাঁরা মনে করল, ফিল্ডিং জাতিগত স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়ে নিজের সম্প্রদায়কে বিশ্বাসঘাতকতা করছেন। কিন্তু ফিল্ডিংও সমানভাবে ক্ষুব্ধ ছিলেন। তিনি দেখলেন, ইংরেজরা ন্যায়বিচারের কথা বলছে না, কেবল নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব ও ঔপনিবেশিক স্বার্থ রক্ষা করতে চাইছে। এই অবস্থান তাঁকে অন্য ইংরেজদের থেকে আলাদা করে দেয় এবং আজিজের সবচেয়ে বড় সমর্থক হিসেবে দাঁড় করায়।

মিসেস মুর ও তাঁর করুণ পরিণতি: মারাবার গুহার অভিজ্ঞতা মিসেস মুরের মনকে ভেঙে দেয়। গুহার সেই অদ্ভুত প্রতিধ্বনি যেন তাঁকে ছেড়ে যায় না। তিনি অনুভব করেন, প্রতিটি শব্দ অর্থহীন হয়ে যাচ্ছে, প্রতিটি সত্য ভেঙে পড়ছে। তাঁর কাছে মনে হয়, জীবনের সবকিছুই মুছে গিয়ে শূন্যতার ভেতর ডুবে যাচ্ছে। এই মানসিক আঘাত থেকে তিনি আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি। অ্যাডেলাও একই প্রতিধ্বনির দ্বারা বিভ্রান্ত হন। তাঁর মনে ভয়, অস্থিরতা ও সন্দেহ জমে ওঠে। যুক্তি ও বাস্তবতা সব যেন এলোমেলো হয়ে যায়।

অন্যদিকে রনি হিসলপ তাঁর মায়ের এই পরিবর্তনকে বিরক্তিকর মনে করেন। তিনি মনে করেন, মিসেস মুর আর কোনো কাজে লাগবেন না, বিশেষ করে আসন্ন বিচার প্রক্রিয়ায়। তাই রনি সিদ্ধান্ত নেন, তাঁকে ইংল্যান্ডে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তিনি একটি রিটার্ন টিকিট কাটেন এবং মাকে জোর করে দেশে ফেরার জন্য প্রস্তুত করেন।

মিসেস মুর চন্দ্রপুর থেকে প্রথমে ট্রেনে ওঠেন, তারপর জাহাজে করে ইংল্যান্ড ফেরার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। কিন্তু ইংল্যান্ডে পৌঁছাতে পারেননি। সমুদ্রযাত্রার মাঝেই তাঁর মৃত্যু ঘটে। তাঁর মৃত্যু উপন্যাসে এক গভীর শূন্যতার সৃষ্টি করে। ইংরেজ সমাজ এটি খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি, কিন্তু ভারতীয়রা তাঁকে সহানুভূতির প্রতীক ও সত্যিকারের বন্ধুরূপে স্মরণ করে। তাঁদের কাছে মিসেস মুর এমন একজন ইংরেজ, যিনি ভারতীয়দের সত্যিই বুঝতে চেয়েছিলেন। ফলে তাঁর মৃত্যু ভারতীয় চরিত্রদের মনে গভীর দুঃখ ও শ্রদ্ধার জন্ম দেয়। ভারতীয়রা তাঁকে “Esmiss Esmoor” নামে স্মরণ করে। “Esmiss Esmoor” হলো Mrs. Moore নামের ভারতীয় বিকৃত উচ্চারণ।

আজিজের বিচার ও অ্যাডেলার স্বীকারোক্তি: ড. আজিজের বিচারদিবস ছিল চন্দ্রপুরের ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব ঘটনা। আদালতের ভেতরে আর বাইরে বিশাল ভিড় জমে। ইংরেজরা একপাশে দাঁড়িয়ে ছিল, আর ভারতীয়রা অন্যপাশে। দু’পক্ষের মধ্যে যেন নীরব যুদ্ধ চলছিল। আদালতের বাতাস ছিল উত্তেজনায় ভরপুর, সবার চোখ স্থির হয়ে ছিল সেই এক ব্যক্তির দিকে, অ্যাডেলা কুয়েস্টেড। আদালতে যখন তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, পরিস্থিতি আরও টানটান হয়ে ওঠে। শুরুতে অ্যাডেলা বিভ্রান্ত দেখাচ্ছিলেন। তাঁর চোখেমুখে দ্বিধা ও মানসিক অস্থিরতা স্পষ্ট ছিল। সবাই শ্বাসরোধ করে তাঁর উত্তর শোনার অপেক্ষায় ছিল।

ঠিক সেই মুহূর্তে অ্যাডেলার মনে ভেসে ওঠে মারাবার গুহার অভিজ্ঞতা, সেই প্রতিধ্বনি, সেই শূন্যতা, সেই বিভ্রান্তি। কিন্তু এবার তিনি ভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া জানান। তাঁর অন্তরে এক সাহস জন্ম নেয়। তিনি উপলব্ধি করেন, সত্যকে এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। অবশেষে অ্যাডেলা স্পষ্ট ও দৃঢ় কণ্ঠে আদালতকে জানান। ড. আজিজ তাঁকে কখনো হয়রানি করেননি। গুহায় তাঁর প্রতি কোনো আক্রমণ ঘটেনি। এই স্বীকারোক্তি আদালতের ভেতরে বোমার মতো বিস্ফোরণ ঘটায়। ইংরেজরা স্তব্ধ হয়ে যায়, ভারতীয়রা উল্লাসে ফেটে পড়ে। কয়েক মুহূর্ত আগেও যে মানুষটি অভিযুক্ত ছিলেন, হঠাৎই তিনি পরিণত হন নির্দোষের প্রতীকে। এই এক মুহূর্তে পরিস্থিতির মোড় ঘুরে যায়। ভারতীয়দের মনে মুক্তির আনন্দ, আর ইংরেজদের মনে পরাজয়ের তীব্র আঘাত তৈরি হয়।

আজিজের মুক্তি ও অ্যাডেলার বিদায়: অ্যাডেলার সাহসী স্বীকারোক্তির পর আদালত মুহূর্তেই স্তব্ধ হয়ে যায়। ইংরেজরা ক্ষুব্ধ ও অপমানিত বোধ করে, কারণ তাঁদের জন্য এটি ছিল জাতিগত মর্যাদার প্রশ্ন। অপরদিকে ভারতীয়রা উল্লাসে ফেটে পড়ে। আদালতের ভেতরে আর বাইরে আনন্দধ্বনি ওঠে। ড. আজিজ অবিলম্বে মুক্তি পান। সেদিনটি ভারতীয়দের কাছে উৎসবের দিনের মতো হয়ে ওঠে। তারা রাস্তায় নেমে আনন্দ প্রকাশ করে, পতাকা নাড়ায়, স্লোগান দেয়। যেন এই মুক্তি কেবল আজিজের নয়, পুরো ভারতের জন্য এক বিজয়ের প্রতীক।

এই ঘটনার পর সাইরিল ফিল্ডিং অ্যাডেলাকে রক্ষা করার দায়িত্ব নেন। কারণ ইংরেজ সমাজ তখন তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছিল। ফিল্ডিং তাঁকে নিজের বাসায় আশ্রয় দেন। অ্যাডেলা কয়েকদিন সেখানে থাকেন। ফিল্ডিং বারবার তাঁর সাহসিকতার প্রশংসা করেন। তিনি বুঝেছিলেন, সত্যের পক্ষে দাঁড়ানো সহজ ছিল না, কারণ এতে অ্যাডেলা তাঁর নিজের জাতি ও সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে চলে গিয়েছিলেন। তবু তিনি সত্য বলেছিলেন, আর ফিল্ডিং এটাকে অসাধারণ সাহসের কাজ হিসেবে দেখেন।

অন্যদিকে রনি হিসলপ অ্যাডেলার এই আচরণে ভীষণ অপমানিত হন। তাঁর কাছে মনে হয়, অ্যাডেলা ইংরেজ সম্প্রদায়ের সম্মান নষ্ট করেছেন। ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি সম্পর্ক ছিন্ন করেন। তাঁদের বাগদান চিরতরে ভেঙে যায়। অবশেষে অ্যাডেলা সিদ্ধান্ত নেন ইংল্যান্ডে ফিরে যাওয়ার। তিনি চন্দ্রপুর ছেড়ে চলে যান। এদিকে আজিজও ধীরে ধীরে তাঁর জীবনের নতুন পথে পা বাড়ান। এমন একটি পথে, যেখানে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা ও জাতীয়তাবোধ আরও দৃঢ় হয়।

ফিল্ডিং-এর বিদায় ও আজিজের ভুল বোঝাবুঝি: বিচারের কয়েকদিন পর সাইরিল ফিল্ডিং আকস্মিকভাবে ইংল্যান্ডে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর এই যাত্রা ড. আজিজের মনে গভীর কষ্টের সৃষ্টি করে। ফিল্ডিং ছিলেন তাঁর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ইংরেজ বন্ধু, যিনি অন্য সবার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তাঁকে সমর্থন করেছিলেন। তাই হঠাৎ করে তাঁর চলে যাওয়া আজিজকে ভীষণ আঘাত দেয়। চন্দ্রপুরে তখন নানা গুজব ছড়িয়ে পড়ে। শোনা যাচ্ছিল, ফিল্ডিং নাকি অ্যাডেলা কুয়েস্টেডকে বিয়ে করেছেন। এই গুজব আজিজের কানে পৌঁছায়, আর তিনি তা বিশ্বাসও করেন। তাঁর কাছে মনে হয়, ফিল্ডিং তাঁকে ধোকা দিয়েছেন, বন্ধুত্ব ছিল কেবল ভান। এতে আজিজের মনে ক্ষোভ জমতে থাকে, যা তাঁর হৃদয়ের গভীরে দীর্ঘদিন ধরে আঘাত করে।

সময় গড়িয়ে যায়। প্রায় দুই বছর পর আজিজ চন্দ্রপুর ছেড়ে নতুন জীবন শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি চলে যান মাউ’তে, যেখানে পরিবেশ ছিল শান্ত, সুন্দর ও কম জটিল। সেখানে তিনি একজন চিকিৎসক হিসেবে কাজ শুরু করেন। স্থানীয় মানুষদের চিকিৎসা দেন, সমাজের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন, এবং ধীরে ধীরে তাঁর ভাঙা মনকে সামলে নিতে থাকেন। মাউ’তে আজিজের জীবন ছিল অপেক্ষাকৃত শান্ত ও স্থির। তবে অন্তরে ফিল্ডিং-এর প্রতি ভুল বোঝাবুঝি ও ক্ষোভ রয়ে গিয়েছিল।

ফিল্ডিং-এর প্রত্যাবর্তন ও ভুল বোঝাবুঝির অবসান: দুই বছর পর, যখন ড. আজিজ নতুন জীবনে মাউ’তে স্থির হতে শুরু করেছেন, ঠিক সেই সময় আবার ফিরে আসেন সাইরিল ফিল্ডিং। তিনি আসেন তাঁর স্ত্রী ও শ্যালককে নিয়ে। ফিল্ডিং-এর ফিরে আসার খবর শুনে আজিজের মনে আবার সন্দেহ জাগে। তাঁর মনে তখনও বিশ্বাস ছিল যে ফিল্ডিং তাঁকে ধোকা দিয়ে অ্যাডেলা কুয়েস্টেডকে বিয়ে করেছেন। কিন্তু খুব দ্রুতই সত্য প্রকাশিত হয়। ফিল্ডিং অ্যাডেলাকে নয়, বরং স্টেলা মুরকে বিয়ে করেছেন। স্টেলা মিসেস মুরের কন্যা। স্টেলা শান্ত, সংযত ও আধ্যাত্মিক চরিত্রের অধিকারী। তাঁর উপস্থিতি গল্পে নতুন মাত্রা যোগ করে।

এই সত্য জানার পর আজিজ গভীরভাবে বিস্মিত হন। তাঁর মনে জমে থাকা ভুল বোঝাবুঝি মুহূর্তে দূর হয়ে যায়। তিনি উপলব্ধি করেন, ফিল্ডিং আসলে তাঁর প্রতি কখনো বিশ্বাসঘাতকতা করেননি। বরং তাঁদের বন্ধুত্ব ছিল আন্তরিক ও সত্য। ধীরে ধীরে আজিজ ও ফিল্ডিং-এর সম্পর্ক আবার স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। তাঁদের মধ্যে পূর্বের মতই আস্থা ও আন্তরিকতার পরিবেশ তৈরি হয়। উপন্যাসের শেষে এই পুনর্মিলন পূর্ব ও পশ্চিমের সম্পর্ক নিয়ে নতুন আশা জাগায়, যদিও বাস্তবে ঔপনিবেশিক বিভাজন তখনও থেকে যায়।

বন্ধুত্ব ও অসম্পূর্ণ মিলন: শেষ অধ্যায়ে ড. আজিজ স্পষ্ট করে ঘোষণা করেন, তিনি ও সাইরিল ফিল্ডিং এখন সত্যিকারের বন্ধু। দীর্ঘ ভুল বোঝাবুঝি ও দ্বন্দ্ব কাটিয়ে তাঁদের মধ্যে আস্থা ফিরে আসে। আজিজের কথায় বোঝা যায়, একজন ইংরেজ ও একজন ভারতীয়ের মধ্যে প্রকৃত বন্ধুত্ব গড়ে ওঠা অসম্ভব নয়। মানবিক সম্পর্ক জাতি ও শাসনের ভেদরেখা অতিক্রম করতে পারে। কিন্তু উপন্যাসের শেষ দৃশ্যে প্রকৃতি যেন ভিন্ন সুর তোলে। পাহাড়, নদী, আকাশ, ঘোড়ার দৌড়, সব মিলিয়ে প্রকৃতি যেন চিৎকার করে। তারা যেন বলছে, বন্ধুত্বের বীজ রোপিত হয়েছে ঠিকই, কিন্তু ইংরেজ ও ভারতীয়দের মধ্যে সম্পূর্ণ মিলন বা প্রকৃত বন্ধুত্বের সময় এখনো আসেনি। অর্থাৎ ঔপনিবেশিক ভারতের মাটিতে সেই পূর্ণ ঐক্য সম্ভব নয়। (“No, not yet,”………“No, not there.”)

ঔপনিবেশিক বাস্তবতার ভেতর পূর্ব ও পশ্চিমের পূর্ণ মিলন তখনও সম্ভব হয়নি। এই দ্বৈত সমাপ্তিই উপন্যাসের গভীরতা বাড়ায়। একদিকে আজিজ ও ফিল্ডিং-এর ব্যক্তিগত বন্ধুত্ব আশা জাগায়, অন্যদিকে প্রকৃতির প্রতীকী প্রতিবাদ জানিয়ে দেয় যে বৃহত্তর ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় সেই মিলন এখনো অসম্পূর্ণ। তবুও উপন্যাস শেষ হয় আশার আলো নিয়ে, মানবিক সহমর্মিতা হয়তো একদিন সব ভেদরেখা অতিক্রম করবে। আর সেই সম্ভাবনাই উপন্যাসটিকে চিরকালীন প্রাসঙ্গিক করে তোলে।

থিমসমূহ:

ঔপনিবেশিকতা (Colonialism): ঔপনিবেশিকতা এই উপন্যাসের সবচেয়ে শক্তিশালী থিম। ব্রিটিশরা ভারতে আসে শাসন করতে, বন্ধুত্ব করতে নয়। তারা আলাদা ক্লাব ও কলোনিতে বসবাস করে। ভারতীয়দের সেখানে প্রবেশাধিকার নেই। কালেক্টর মি. টার্টন পার্টি দেন, কিন্তু ভারতীয়দের কেবল দেখানোর জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়, প্রকৃত বন্ধুত্বের জন্য নয়। ম্যাজিস্ট্রেট রনি হিসলপ সবসময় নিজেকে শ্রেষ্ঠ মনে করেন। তিনি আজিজ ও গডবোলের মতো ভারতীয়দের অপমান করেন।

ড. আজিজের বিচার ঔপনিবেশিক শাসনের সবচেয়ে ভয়ংকর দিক প্রকাশ করে। অ্যাডেলা ভুলভাবে মনে করেন যে আজিজ মারাবার গুহায় তাঁকে আক্রমণ করেছেন। ব্রিটিশরা সাথে সাথে ধরে নেয় আজিজ দোষী। তারা কোনো প্রমাণের জন্য অপেক্ষা করে না। তাদের কাছে ভারতীয়রা সবসময়ই “সন্দেহভাজন।” কেবল ফিল্ডিং বিশ্বাস করেন আজিজ নির্দোষ। কিন্তু অন্য ইংরেজরা তাঁকে বিশ্বাসঘাতক বলে অভিযুক্ত করে।

মিসেস মুর ছিলেন ভিন্নরকম। তিনি ভারতীয় স্থান ও মানুষকে সম্মান করতেন। তিনি মসজিদে প্রবেশের সময় জুতো খুলে ফেলেন। এজন্য ভারতীয়রা তাঁকে ভালোবাসে এবং পরে তাঁকে “Esmiss Esmoor” নামে স্মরণ করে। কিন্তু তিনি আজিজকে সাহায্য করার আগেই মারা যান। উপন্যাসটি দেখায় যে ঔপনিবেশিকতা ঘৃণা সৃষ্টি করে। এটি ইংরেজ ও ভারতীয়দের মাঝে বিশ্বাস ভেঙে দেয়। এমনকি আজিজ ও ফিল্ডিং বন্ধুত্ব করতে চাইলেও, ঔপনিবেশিক ব্যবস্থা তাদের আলাদা করে দেয়। ফস্টার দেখিয়েছেন যে সত্যিকারের বোঝাপড়া ঔপনিবেশিক শাসনের ভেতরে সম্ভব নয়।

“জটিলতা” ও রহস্য (Muddles and Mysteries): উপন্যাসটি ভরা বিভ্রান্তি, ভুল বোঝাবুঝি আর রহস্যে। ফস্টার এগুলোকে বলেছেন “মাডলস” বা জটিলতা। সবচেয়ে বড় জটিলতা ঘটে মারাবার গুহায়। অ্যাডেলা আর আজিজ একজন গাইডকে নিয়ে সেখানে যান। গুহার ভেতরে শব্দ প্রতিধ্বনিত হতে থাকে বারবার। এই প্রতিধ্বনি সব অর্থ ধ্বংস করে দেয়। প্রতিটি শব্দ হয়ে যায় কেবল “বুম।”

মিসেস মুর প্রথমে এই প্রতিধ্বনি শুনেছিলেন। তিনি অনুভব করেন, জীবন অর্থহীন। তিনি দুর্বল হয়ে পড়েন এবং ভারত ছেড়ে যেতে চান। পরে অ্যাডেলাও একইভাবে বিভ্রান্ত হন। তিনি বুঝতে পারেন, তিনি রনিকে ভালোবাসেন না। তিনি ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে থাকেন। হঠাৎ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে কল্পনা করেন, আজিজ তাঁকে আক্রমণ করেছেন। কিন্তু কিছুই পরিষ্কার নয়। তিনি দৌড়ে পালিয়ে যান। এই বিভ্রান্তি প্রায় আজিজের জীবন ধ্বংস করে দেয়।

প্রতিধ্বনিটিও এক রহস্য। কেন এর এত শক্তি? কেন এটি মানুষকে শূন্যতা অনুভব করায়? এর কোনো স্পষ্ট উত্তর নেই। পাঠকরাও নিশ্চিত হতে পারেন না, আসলে গুহায় কী ঘটেছিল। এই থিম দেখায়, জীবন ভরা ভুল আর অনিশ্চয়তায়। পূর্ব ও পশ্চিম, ইংরেজ আর ভারতীয়রা সবসময় একে অপরকে বুঝতে পারে না। এই “জটিলতা” উপনিবেশিক ভারতের জীবনেরই অংশ। তবে কখনও কখনও এই জটিলতার ভেতর থেকেই সত্য বেরিয়ে আসে। অ্যাডেলা শেষমেশ আদালতে স্বীকার করেন যে আজিজ নির্দোষ। এভাবেই সবচেয়ে বড় জটিলতা দূর হয়।

Friendship (বন্ধুত্ব): বন্ধুত্ব উপন্যাসের একটি কেন্দ্রীয় থিম। ফস্টার প্রশ্ন করেন, একজন ইংরেজ আর একজন ভারতীয় কি সত্যিই বন্ধু হতে পারে? উপন্যাস এর উত্তর দেয় কখনো “হ্যাঁ,” আবার কখনো “না।” আজিজ প্রাণবন্ত, আবেগপ্রবণ মানুষ। ফিল্ডিং মুক্তমনা আর সৎ। ফিল্ডিং-এর টি-পার্টিতে তাঁদের প্রথম দেখা হয়। তখনই দুজন একে অপরকে পছন্দ করেন। আজিজ ফিল্ডিং-কে মারাবার ভ্রমণে আমন্ত্রণ জানান। তাঁদের সম্পর্ক তখন দৃঢ় মনে হয়। আজিজ মিসেস মুরের সঙ্গেও বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন। তিনি ভারতীয় ধর্মকে সম্মান করেন এবং সহানুভূতি দেখান। এসব মুহূর্ত আশা জাগায় যে ইংরেজ-ভারতীয় বন্ধুত্ব সম্ভব।

কিন্তু সমাজ এই বন্ধুত্বকে পরীক্ষা করে। যখন অ্যাডেলা আজিজকে অভিযুক্ত করেন, বেশিরভাগ ইংরেজ তাঁর কথা বিশ্বাস করে। কেবল ফিল্ডিং আজিজের পাশে দাঁড়ান। এতে ইংরেজরা তাঁকে বিশ্বাসঘাতক ভাবে। ভারতীয়রা তাঁকে সম্মান করে, কিন্তু আজিজও পরে সন্দেহ করতে থাকেন। শোনা যায় ফিল্ডিং নাকি অ্যাডেলাকে বিয়ে করেছেন। আজিজ প্রতারিত বোধ করেন, যদিও তা সত্য নয়।

শেষে সত্য প্রকাশিত হলে আজিজ আর ফিল্ডিং একে অপরকে ক্ষমা করেন। তাঁরা আবার বন্ধু হন। তবু প্রকৃতি যেন বলে ওঠে, “এখনও নয়।” এর মানে, ব্যক্তিগত বন্ধুত্ব সম্ভব হলেও উপনিবেশিক রাজনীতির কারণে সত্যিকারের ঐক্য হয় না। উপন্যাস দেখায়, বন্ধুত্ব শক্তিশালী, কিন্তু সাম্রাজ্যবাদের নিচে তা নাজুক।

Race and Culture (জাতি ও সংস্কৃতি): জাতি ও সংস্কৃতি উপন্যাসের প্রতিটি চরিত্রকে আলাদা করে রাখে। ইংরেজরা নিজেদের শ্রেষ্ঠ মনে করে। তারা ভারতীয়দের অলস, অসৎ বা নোংরা বলে ডাকে। ইংরেজ ক্লাবে ভারতীয়রা কখনো সমানভাবে গ্রহণযোগ্য হয় না। ব্রিজ পার্টি ব্যর্থ হয়, কারণ ইংরেজরা সত্যিকারের মিশতে চায় না। রনি হিসলপ আজিজ আর গডবোলকে অপমান করে। সে মনে করে ভারতীয়দের “নিজেদের জায়গায়” থাকতে হবে। টার্টন আর মিসেস টার্টন ভারতীয় অতিথিদের ছোট করে কথা বলে। তাদের কাছে সংস্কৃতি মানে আলাদা থাকা।

তবে সব ইংরেজ একই রকম নয়। মিসেস মুর আর ফিল্ডিং সম্মান দেখান। মিসেস মুর মসজিদে আজিজের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেন। তিনি প্রমাণ করেন সংস্কৃতির দেয়াল ভাঙা যায়। ফিল্ডিং-ও বিশ্বাস করেন, সবাইকে মানুষ হিসেবে দেখা উচিত। ভারতীয়দের মধ্যেও সংস্কৃতি জটিল। আজিজ মুসলিম, গডবোল হিন্দু। তাঁদের মধ্যে মাঝেমধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়। ফস্টার দেখান, ভারত নিজেই জাতি ও ধর্মে বিভক্ত, ব্রিটিশদের আগেই।

মারাবার গুহা সাংস্কৃতিক সংঘর্ষের প্রতীক হয়ে ওঠে। অ্যাডেলার জন্য প্রতিধ্বনি তাঁকে দুই জগতের মাঝে হারিয়ে দেয়। মিসেস মুরের শান্তি নষ্ট করে। আজিজের জন্য এটি ট্র্যাজেডি আনে। উপন্যাস শেখায়, জাতি আর সংস্কৃতি দেয়াল তোলে। তবু সম্মান আর মানবিকতা মাঝে মাঝে সেই দেয়াল ভেঙে দিতে পারে।

আরো পড়ুনঃ Sons and Lovers Bangla Summary

Quotes

  1. “God is here.” – (Mosque Scene – Mrs. Moore, Part I- Chapter II)

Explanation: Mrs. Moore respects Indian faith inside the mosque. This line shows spiritual unity and mutual respect.

বাংলা: “ঈশ্বর এখানে আছেন।”

ব্যাখ্যা: মসজিদে ভারতীয়দের ধর্মকে সম্মান করে মিসেস মুরের উক্তি। পূর্ব–পশ্চিমের আধ্যাত্মিক মিলনের প্রতীক।

  1. “The echo in a Marabar cave is entirely devoid of distinction… all produce ‘boum’.” – (Marabar Caves – Narrator, Part II- Chapter XIV)

Explanation: The echo makes every sound meaningless. It symbolizes confusion, emptiness, and failure of communication.

বাংলা: “মারাবার গুহার প্রতিধ্বনিতে কোনো ভেদাভেদ নেই… সবই ‘বুম’ শব্দে ফিরে আসে।”

ব্যাখ্যা: প্রতিধ্বনি সব শব্দকে অর্থহীন করে তোলে। এটি বিভ্রান্তি, শূন্যতা এবং পূর্ব–পশ্চিমের যোগাযোগ ব্যর্থতার প্রতীক।

  1. “Sinking themselves in their community.” – (Trial Scene – Narrator, Part II- Chapter XVII)

Explanation: The Anglo-Indians forget personal judgment. They unite only to protect race and power.

বাংলা: “তারা নিজেদের সম্প্রদায়ে নিমজ্জিত হচ্ছিল।”

ব্যাখ্যা: ইংরেজরা ব্যক্তিগত বিচার হারিয়ে শুধু নিজেদের জাতিগত স্বার্থ রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হয়। ঔপনিবেশিক পক্ষপাতের প্রতীক।

  1. “No, not yet… No, not there.” – (Ending in Mau – Narrator/Nature, Part III- Chapter XXXVII)

Explanation: Nature itself refuses unity between Aziz and Fielding. It shows true friendship must wait until India is free.

বাংলা: “না, এখনো নয়… না, এখানে নয়।”

ব্যাখ্যা: প্রকৃতি নিজেই আজিজ ও ফিল্ডিংয়ের ঐক্যকে অস্বীকার করে। বোঝায় যে প্রকৃত বন্ধুত্ব স্বাধীনতার পরেই সম্ভব।

  1. “You’re superior to them, anyway. Don’t forget that.” – (Bridge Party – Mrs. Turton, Part I- Chapter V)

Explanation: This shows Anglo-Indian arrogance. Mrs. Turton reminds Adela to think of herself as superior to Indians.

বাংলা: “তুমি তাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। এটা ভুলে যেয়ো না।”

ব্যাখ্যা: ব্রিজ পার্টিতে মিসেস টারটনের উক্তি। ইংরেজদের জাতিগত অহংকার ও ভারতীয়দের প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ পায়।

  1. “The educated Indians will be no good to us if there’s a row… they don’t matter.” – (Bridge Party – Ronny Heaslop, Part I- Chapter V)

Explanation: Ronny mocks Indians. He shows how the rulers saw educated Indians as useless in crisis.

বাংলা: “যদি কোনো গোলমাল হয়, তখন শিক্ষিত ভারতীয়রা আমাদের কোনো উপকারে আসবে না… তাদের কোনো গুরুত্বই নেই।”

ব্যাখ্যা: রনি হিসলপের মন্তব্য। ইংরেজদের প্রশাসনিক অহংকার ও ভারতীয়দের প্রতি হীনদৃষ্টি প্রকাশিত হয়।

  1. “My heart is for my own people henceforward.” – (Aziz in Mau, Part III- Chapter XXXV)

Explanation: Aziz finally rejects British friendship. He chooses Indian nationalism over colonial loyalty.

বাংলা: “আমার হৃদয় এখন থেকে শুধু আমার নিজের মানুষের জন্য।”

ব্যাখ্যা: আজিজের উক্তি। ব্রিটিশদের প্রতি তাঁর বিশ্বাসভঙ্গ এবং স্বাধীন ভারতের প্রতি তাঁর জাতীয়তাবোধ প্রকাশ করে।

  1. “Adventures do occur, but not punctually.” – (Adela Quested, Part I- Chapter III)

Explanation: Adela wants to see the “real India.” She expects adventure, but real life is uncertain.

বাংলা: “অ্যাডভেঞ্চার ঘটে, কিন্তু সময়মতো নয়।”

ব্যাখ্যা: অ্যাডেলার উক্তি। তিনি ভারতের বাস্তবতা জানতে চান। এটি জীবনের অপ্রত্যাশিত ও অনিয়মিত স্বভাবকে দেখায়।

  1. “Life never gives us what we want at the moment that we consider appropriate.” – (Narrator, Part I- Chapter III)

Explanation: This shows the gap between human desire and reality. Life is not controlled by human wishes.

বাংলা: “জীবন কখনোই আমাদের ইচ্ছেমতো সময়ে যা চাই তা দেয় না।”

ব্যাখ্যা: জীবনের বাস্তবতা নিয়ে মন্তব্য। মানুষ যা চায়, জীবন তা নিজের নিয়মে দেয়, মানুষের সময়মতো নয়।

  1. “I believe in teaching people to be individuals, and to understand other individuals.” – (Cyril Fielding, Part I- Chapter XI)

Explanation: Fielding values freedom and individuality. He respects Indians as people, not as inferiors.

বাংলা: “আমি বিশ্বাস করি মানুষকে স্বতন্ত্র হতে শেখানো উচিত এবং অন্য স্বতন্ত্র মানুষকে বোঝা উচিত।”

ব্যাখ্যা: ফিল্ডিং-এর কথা। তিনি ভারতীয়দের সমান মানুষ হিসেবে মূল্য দেন। স্বাধীনতা ও মানবিক বোঝাপড়ার প্রতীক।

  1. “Man can learn everything if he will but try.” – (Narrator/Forster’s voice, Part I- Chapter VIII)

Explanation: This reflects Forster’s humanist belief. Effort and openness can overcome barriers of culture and race.

বাংলা: “মানুষ যদি চেষ্টা করে তবে সব কিছু শিখতে পারে।”

ব্যাখ্যা: ফস্টারের মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি। চেষ্টা ও উদার মনোভাব মানুষকে সংস্কৃতি ও জাতিগত বিভাজন অতিক্রম করতে সাহায্য করে।

ভাষার অলংকার

  • বিদ্রূপ (Irony): বিদ্রূপ তখন ঘটে যখন আসল পরিস্থিতি কথিত পরিস্থিতির একেবারে বিপরীত হয়। উদাহরণ: ইংরেজরা ব্রিজ পার্টিকে বলে ইংরেজ ও ভারতীয়দের মধ্যে “সেতুবন্ধন” তৈরির উপায়। কিন্তু বাস্তবে পার্টি কেবল দূরত্ব বাড়ায়। ইংরেজরা আলাদা দাঁড়িয়ে থাকে, আর ভারতীয়রা অপমানিত বোধ করে। প্রভাব: এই বিদ্রূপ ঔপনিবেশিক “সদিচ্ছা”-র ব্যর্থতা প্রকাশ করে। এটি সাম্রাজ্যবাদী বন্ধুত্বের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি উন্মোচন করে।
  • মানবায়ন (Personification): মানবায়ন হলো যখন প্রকৃতি বা কোনো বস্তুকে মানবীয় গুণ দেওয়া হয়। উদাহরণ: উপন্যাসের শেষে প্রকৃতি যেন কথা বলে: “এখনো নয়… এখানে নয়।” আকাশ, পাথর, ঘোড়া, সবাই যেন আজিজ ও ফিল্ডিং-এর মিলনকে প্রত্যাখ্যান করে। প্রভাব: প্রকৃতি নিজেই যেন এক চরিত্র হয়ে ওঠে। এটি দেখায়, ঔপনিবেশিক ভারতে ইংরেজ ও ভারতীয়দের পূর্ণ বন্ধুত্বের সময় এখনো আসেনি।
  • প্রতীকবাদ (Symbolism): প্রতীকবাদ তখন ঘটে যখন কোনো বস্তু বা স্থান গভীর অর্থ বহন করে। উদাহরণ: মারাবার গুহা শূন্যতা ও বিভ্রান্তির প্রতীক। গুহার ভেতরে প্রতিটি শব্দ একই অর্থহীন প্রতিধ্বনিতে পরিণত হয়, “বুম।” প্রভাব: গুহাগুলো ভারতের রহস্য ও পূর্ব-পশ্চিমের যোগাযোগের ব্যর্থতার প্রতীক। এগুলো দেখায় কীভাবে ঔপনিবেশিক পৃথিবীতে অর্থ ও সত্য ভেঙে পড়ে।
  • মারাবার গুহা: শূন্যতা ও রহস্যের প্রতীক। এই গুহাগুলো উপন্যাসের কেন্দ্রীয় প্রতীক। ভেতরের অদ্ভুত প্রতিধ্বনি প্রতিটি শব্দকে অর্থহীন “বুম”-এ পরিণত করে। এগুলো ভারতের রহস্য, অর্থের পতন এবং মানুষের বোঝাপড়ার সীমা প্রকাশ করে। অ্যাডেলার জন্য গুহা বিভ্রান্তি আনে। মিসেস মুরের জন্য আনে হতাশা। আর আজিজের জন্য আনে ট্র্যাজেডি।
  • প্রতিধ্বনি: অর্থহীনতার প্রতীক। গুহার প্রতিধ্বনি সব শব্দ, সব ভিন্নতা ধ্বংস করে দেয়। সব কণ্ঠকে একই রকম শোনায়। এটি পূর্ব ও পশ্চিমের যোগাযোগের ব্যর্থতা এবং উপনিবেশিক জীবনের অন্তরের শূন্যতার প্রতীক।
  • মসজিদ: শ্রদ্ধা ও সম্প্রীতির প্রতীক। যখন মিসেস মুর মসজিদে আজিজের সঙ্গে দেখা করেন, তিনি সম্মানের নিদর্শন হিসেবে জুতো খুলে ফেলেন। এর ফলে তাদের মধ্যে আস্থা তৈরি হয়। মসজিদ প্রতীকী করে দেখায় যে বিনয় ও শ্রদ্ধা থাকলে সংস্কৃতির ভেদরেখা অতিক্রম করে সত্যিকারের বন্ধুত্ব সম্ভব।
  • ক্লাব: বিভাজন ও ঔপনিবেশিক শক্তির প্রতীক। চন্দ্রপুরের ইংরেজ ক্লাবকে বলা হয় “ইংল্যান্ডের এক খণ্ড।” এটি জাতিগত বিভাজন ও উপনিবেশিক ঔদ্ধত্যকে প্রতীকী করে। ভারতীয়দের এখানে সমানভাবে স্বাগত জানানো হয় না। এটি শাসক ও শাসিতের মাঝে প্রাচীরের প্রতীক।
  • মিসেস মুর (“ইসমিস এসমুর”): সহানুভূতি ও আধ্যাত্মিক সত্যের প্রতীক। মৃত্যুর পর ভারতীয়রা মিসেস মুরকে মনে রাখে এবং “ইসমিস এসমুর” বলে ডাকতে থাকে। তিনি সহমর্মিতা ও বোঝাপড়ার প্রতীক। যদিও তিনি বিচারে সরাসরি কিছু করতে পারেন না, তাঁর উপস্থিতি ন্যায়বিচারের জন্য আধ্যাত্মিক শক্তি হয়ে বেঁচে থাকে।
  • ব্রিজ পার্টি: ব্যর্থ সংযোগের প্রতীক। ব্রিজ পার্টির উদ্দেশ্য ছিল ভারতীয় ও ইংরেজদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করা। কিন্তু বাস্তবে এটি কেবল বিভাজনকে আরও স্পষ্ট করে তোলে। ইংরেজরা আলাদা দাঁড়িয়ে থাকে এবং ভারতীয়দের তুচ্ছজ্ঞান করে। তাই “ব্রিজ” প্রতীক হয়ে ওঠে ব্যর্থতার।
  • শেষের প্রকৃতি: অসম্পূর্ণ মিলনের প্রতীক। শেষ দৃশ্যে আজিজ ও ফিল্ডিং বন্ধু হতে চান, কিন্তু প্রকৃতি নিজেই বাধা দেয়। আকাশ, মাটি, ঘোড়া বলে ওঠে, “এখনো নয়… এখানে নয়।” এটি প্রতীকী করে দেখায়, উপনিবেশিক শাসনের ভেতর পূর্ব-পশ্চিমের সত্যিকারের বন্ধুত্ব তখনও সম্ভব নয়।

Moral Lessons from A Passage to India:

  • Colonial arrogance destroys trust and humanity.
  • True friendship needs respect, not power.

Share your love
Mr. Abdullah
Mr. Abdullah

This is Mr. Abdullah, a passionate lover and researcher of English Literature.

Articles: 65

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *