১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী ছিল?

প্রশ্নঃ ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী ছিল?

earn money

ভূমিকা: ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান ছিল পাকিস্তানের ২৩ বছরের ইতিহাসে অন্যতম উল্লেখযোগ্য ঘটনা; ছাত্র সমাজের ১১ দফা এবং আওয়ামী লীগের ৬-দফার ভিত্তিতে শিক্ষা সুযোগ- সুবিধা বৃদ্ধি সংসদীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন জরুরি আইন প্রত্যাহার প্রভৃতির দাবিতে ছাত্র জনতার আন্দোলন শুরু হয়, কিন্তু তৎকালীন- পাকিস্তান সরকার ছাত্র সমাজের ১১ দফা এবং জনতার ৬-দফা দাবিকে রাষ্ট্রবিরোধী দাবি বলে ঘোষণা করে এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা সাজিয়ে অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তার করে । এর ফলে সমগ্র পূর্ব বাংলার ছাত্র জনতা আন্দোলনে ফেটে পড়ে এবং ধীরে ধীরে এ আন্দোলন গণ-অভ্যুত্থানে পরিণত হয়।

৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য: ‘৬৯ এর গণ- অভ্যুত্থানের পিছনে রয়েছে ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের নিরাপত্তার প্রশ্ন, এর সাথে যুক্ত হয়েছে ঐতিহাসিক ছয়-দফা আন্দোলন (১৯৬৬) এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা (১৯৬৮)। ১৯৬৯ সালে ছাত্রদের ১১ দফা দাবি প্রভৃতি। ন্যায় সঙ্গত দাবি, ন্যায্য অধিকার যখন উপেক্ষেত হয় তখন জনমনে তৈরি হয় ক্ষোভ। তৈরি হয় বঞ্চনা থেকে সৃষ্ট সচেতনতা, সোচ্চার হয় প্রতিবাদী কণ্ঠ জেগে উঠে জনগণ। ‘৬৯ এর গণ- অভ্যুত্থান তারই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এর মাধ্যমে আইয়ুব খান এর ষড়যন্ত্রে ধূলিসাৎ হয়। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে এ আন্দোলন বা অভ্যুত্থানে নিম্নেক্ত লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য কাজ করেছে-

১. গণতন্ত্রের আদর্শকে বাস্তবায়ন করা,

২. প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন অর্জন করা,

ইউটিউবে ভিডিও লেকচার দেখুনঃ


৩. সকল প্রকার বৈষম্যের অবসান ঘটানো,

আরো পড়ুনঃ ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের কারণ ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর

৪. গণবিরোধী আশুভ শক্তির মূল উৎপাটন করা। 

৫. সামরিক কর্তৃত্বে সমতা আনোয়ন ।

৬. আর্থসামাজিক উন্নয়নে সমতা রক্ষা।

৭. প্রাদেশিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

৮. অর্থনৈতিক কল্যাণের দায়িত্ব কেন্দ্রের সাথে ভাগাভাগি করে নেয়া, 

৯. সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ ও সংস্কৃতি সংরক্ষণ,

আরো পড়ুনঃ

১০. প্রকৃত যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার গঠন করা,

১১. শিল্পি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা, 

১২. ষড়যন্ত্রের পথ পরিহার ও আটকদের মুক্তি প্রভূতি। 

ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের কাছে আইয়ুব-মোনেম চক্রের সকল ষড়যন্ত্র বাতালে মিলিয়ে গেল। পাকিস্তান সরকার সাধারণ নির্বাচনের কথা চিন্তা করতে লাগলো, … মন্ত্রিপরিষদ গঠন, সংবিধান রচনা ও সংশোধন, প্রধানমন্ত্রী শাসিত সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন, যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন, পূর্ব পাকিস্তানের দাবিদাওয়া মেনে নেয়া প্রভৃতি উদ্যোগ গ্রহণ করা হলো। এভাবে বিদায় হয় আইয়ুবের শাসনকাল ।

আরো পড়ুনঃ যুদ্ধ-বিদ্ধস্ত দেশ পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধু সরকারের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ বর্ণনা কর

উপসংহার: আলোচ্য আলোচনা শেষে বলা যায় যে, সংগ্রামী জনতার উত্তাল তরঙ্গের আঘাতের ক্ষমতাসীন সরকারের ভিত কেঁপে উঠে। আইয়ুব খানের শাসনামলে যারা অনুকম্পা লাভ করেছিল এবং যাদের কায়েমি স্বার্থ সমগ্র সমাজের ওপর জগদ্দল পাথরের ন্যায় চেপে বসেছিল তাদের জানমালের নিরাপত্তা সম্পূর্ণরূপে বিপর্যস্ত হলো। ছাত্র জনতা কারো কারো ঘরবাড়ি ঘেরাও ও তাতে অগ্নিসংযোগ করল। রাজপথে তাজা রক্তের বন্যা বইতে থাকল। | অবস্থাদৃষ্টে পুলিশ ও ইপিআর বাহিনী ঝাঁপিয়ে উঠল। ক্রমে তারা নিষ্ক্রিয় হতে থাকল, সরকার সেনাবাহিনীকে লেলিয়ে দিলেন। কিন্তু ক্ষুব্ধ জনতা তাদের লক্ষ্য পূরণে অনঢ় থাকলেন।

Shihabur Rahman
Shihabur Rahman
Hey, This is Shihabur Rahaman, B.A (Hons) & M.A in English from National University.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

ফেসবুক পেইজ

কোর্স টপিক