রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাথে সমাজবিজ্ঞান এর সম্পর্ক আলোচনা কর

 প্রশ্নঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাথে সমাজবিজ্ঞান/অর্থনীতি-এর সম্পর্ক আলোচনা কর। 

earn money

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাথে সমাজবিজ্ঞানের সম্পর্ক

ভূমিকাঃ মানুষ সামাজে বসবাস করে ও পারস্পরিক নির্ভরশীলতার কারণে সমাজের কতগুলো নিয়ম মেনে চলে। এসব নিয়ম-কানুনের উন্নত প্রকাশ হলো রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা। তাই যে শাস্ত্র রাষ্ট্রের বিভিন্ন কার্যাবলী নিয়ে আলোচনা করে, তাকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বলে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাথে সমাজবিজ্ঞানের সম্পর্কঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাথে সমাজবিজ্ঞানের অত্যন্ত নিবিড় ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। নিম্নে উভয়ের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করা হলো –

(১) ভিত্তিঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান হলো সামাজিক বিজ্ঞানের দু’টি শাখা মাত্র। উভয় বিজ্ঞানের ভিত্তি মূলত এক। আধুনিক যুগে More specialisation বা অধিকতর বিশেষায়নের ফলে উভয়ে দু’টি ভিন্ন ও স্বতন্ত্র শাখা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।

ইউটিউবে ভিডিও লেকচার দেখুনঃ


(২) বিষয়বস্তুঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাষ্ট্র ও রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করে। সমাজের মানুষ ও রাজনৈতিক সমাজের সদস্য হিসাবে রাষ্ট্রবিজ্ঞান মানুষের কার্যাবলী আলোচনা করে। আর সমাজবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক জীবন প্রভৃতির উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ।

(৩) পরিপূরকঃ সমাজবিজ্ঞান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান পরস্পর পরিপূরক। রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাষ্ট্রের অঙ্গ-সংগঠন ও সংস্থাসমূহ সম্পর্কে সমাজবিজ্ঞানকে অবহিত করে। আর সমাজবিজ্ঞান সমাজের মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক, সংগঠন ও সামাজিক কার্যক্রম সম্পর্কে রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে অবহিত করে। সুতরাং সমাজবিজ্ঞান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান পরস্পর পরিপূরক।

আরো পড়ুনঃ সার্বভৌমত্ব কাকে বলে? সার্বভৌমত্বের বহুত্ববাদী ধারণাটি লিখ

(৪) একই উদ্দেশ্যঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান উভয়ের উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন। উভয়ই সমাজ ও রাষ্ট্রের তাত্ত্বিক ও বাস্তব বিষয়গুলো গভীর পর্যবেক্ষণ এবং অধ্যয়নের মাধ্যমে সচেতন নাগরিক তৈরির প্রচেষ্টা চালায়। উদ্দেশ্যর অভিন্নতা উভয়ের সম্পর্ককে আরাে গভীর করেছে।

(৫) অভিন্ন সত্তাঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান উভয়ই এক ও অভিন্ন সত্তা ছিল। বর্তমান যুগে অধিকতর বিশেষায়নের ফলে উভয়ের পরিধি ও বিষয়বস্তু আরাে বিস্তৃত হয়েছে মাত্র। তবে এর বিস্তৃতির মাধ্যমে উভয়ের অধ্যয়নের প্রয়োজনীয়তা আরাে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেছে।

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায়, কিছু কিছু পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও সমাজবিজ্ঞান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মধ্যে অত্যন্ত গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। বিভিন্ন ক্ষেত্রে একটি আরেকটির ওপর নির্ভরশীল। উভয় বিজ্ঞানের মাঝে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই, বরং আছে সুগভীর এক সেতুবন্ধন।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাথে অর্থনীতির সম্পর্ক

ভূমিকাঃ মানুষ সামাজিক জীব। মানুষের ব্যাক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় জীবনে অর্থনীতির গুরুত্ব অপরিসীম। সমাজকে সুষ্ঠু, সুন্দর ও সামঞ্জস্যশীল উপায়ে পরিচালনার মাধ্যমে শান্তি-শৃঙ্খলা, ঐক্য, সংরক্ষণ ও বিকাশধারা প্রবর্তনের জন্য গঠন করা হয় রাষ্ট্র। কিন্তু অর্থনৈতিক সক্ষমতা ছাড়া কোন রাষ্ট্র চলতে পারে না।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতির মধ্যকার সম্পর্কঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতি সমাজবিজ্ঞানের দু’টি শাখা। রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতির মধ্যে রয়েছে সুগভীর সম্পর্ক। নিম্নে উভয়ের সম্পর্কের কিছু দিক নিয়ে আলোচনা করা হলো- 

(১) তাত্ত্বিকঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতির মধ্যে তাত্ত্বিক সম্পর্ক রয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনার একটি অন্যতম বিষয় হচ্ছে অর্থনীতি। অর্থনৈতিক তত্ত্বের গবেষণা ও বিশ্লেষণের জন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাহায্য নিতে হয়। আবার রাজনৈতিক বিশ্লেষণ ও অধ্যয়ণের জন্য অর্থনৈতিক নানা তত্ত্বের সাহায্য নিতে হয়।

আরো পড়ুনঃ রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যকার সম্পর্ক উল্লেখ কর

(২) একই পরিবারভুক্তঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতি উভয়ই সমাজবিজ্ঞানের দু’টি শাখা। অর্থনীতি ছাড়া রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিপূর্ণতা কল্পনা করা যায় না। মােটকথা অর্থনীতি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান উভয়ই একে অপরের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করে। 

(৩) একে অপরের পরিপূরকঃ রাষ্ট্রের যাবতীয় সমস্যা সমাধান, উন্নতি ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতি একে অপরের পরিপূরক। রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাষ্ট্রের রাজনৈতিক বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করে আর অর্থনীতি আলোচনা করে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সমস্যা ও সমাধান নিয়ে। 

(৪) রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনৈতিক উন্নয়নঃ অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রথমে প্রয়ােজন জনসচেতনতা, কর্তব্যপরায়ণতা, নিষ্ঠা ও সততা। আর রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনা থেকে এসব বাইরে নয়। একটি রাষ্ট্রের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নতি সাধনে রাষ্ট্রযন্ত্রের অপরিহার্য।

আরো পড়ুনঃ Political Theory Suggestion Exam 2023

(৫) উভয়ের সহাবস্থানঃ কল্যাণকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতি সহাবস্থানে থেকে কাজ করে যাচ্ছে। যেমন- পররাষ্ট্রনীতি, শিল্পনীতি, বাণিজ্যনীতি ইত্যাদি রাষ্ট্রীয় আইনের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়।

উপসংহারঃ পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতির মাঝে কিছু পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতির মধ্যে সুগভীর সম্পর্ক বিদ্যমান এবং এরা একে অপরের পরিপূরক। উভয়ের আলোচ্য বিষয় জনগণ, রাষ্ট্র ও উন্নয়ন।

Shihabur Rahman
Shihabur Rahman
Hey, This is Shihabur Rahaman, B.A (Hons) & M.A in English from National University.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

ফেসবুক পেইজ

কোর্স টপিক