রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যকার সম্পর্ক উল্লেখ কর

 প্রশ্নঃ রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যকার সম্পর্ক উল্লেখ কর।

ভূমিকাঃ আমাদের এই পৃথিবী প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। পরিবর্তনশীল পৃথিবীর আবর্তনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সভ্যতার উষালগ্ন হতেই মানুষ সুশৃংখল ও শান্তিপূর্ণ জীবনযাপনে আগ্রহী। আর এ লক্ষ্যে মানুষ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করেছে। রাষ্ট্র তেমনি একটি প্রতিষ্ঠান। বর্তমান সভ্য জগতে রাষ্ট্র একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সংগঠন। রাষ্ট্র নামক সংগঠন বহু পর্যায় অতিক্রম করে বর্তমান অবস্থায় এসে উপনীত হয়েছে।

রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে সম্পর্কঃ নিম্নে রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে বিদ্যমান বা বিরাজমান সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা লিপিবদ্ধ করা হলো-

(১) উদ্দেশ্যগত সম্পর্কঃ রাষ্ট্র ও সমাজ মানুষের প্রয়ােজনে সহজাতভাবেই গড়ে ওঠেছে। আধুনিক রাষ্ট্র মানুষের কল্যাণময় জীবন প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এ উদ্দেশ্যে রাষ্ট্র আইনের মাধ্যমে ব্যক্তিজীবনকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। একই উদ্দেশ্য পরিলক্ষিত হয় সমাজের ক্ষেত্রেও। কার্যত দেখা যায়, সমাজেরও উদ্দেশ্য হলো মানবজীবনকে সুন্দর ও পরিপাটি করে গড়ে তোলা। এ লক্ষ্যে রাষ্ট্রের ন্যায় সমাজও মানুষের আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে নানারকম বিধি-নিষেধ আরোপ করে থাকে।

(২) মানবকল্যাণ সাধনঃ মানবকল্যাণ তথা মানুষের কল্যাণসাধন ইস্যুতেও সমাজ ও রাষ্ট্রের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক লক্ষ্য করা যায়। সমাজ ও রাষ্ট্র উভয় প্রতিষ্ঠানেরই প্রধান লক্ষ্য হলো নিজের আওতাধীন মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করা। উভয় প্রতিষ্ঠান মানবকল্যাণ নিশ্চিতকরণে বহুমুখী ও বহুবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে।

আরো পড়ুনঃ আইনসভা কি? আইনসভার ক্ষমতা হ্রাসের কারণসমূহ আলোচনা কর

(৩) সমাজ ও রাষ্ট্র পরস্পরের নিয়ন্ত্রকঃ মানুষ তার জীবনকে সুশৃংখল ও শান্তিপূর্ণ করে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে। এ সকল প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রাষ্ট্রই একমাত্র প্রতিষ্ঠান, যার সার্বভৌম ক্ষমতা আছে। মানব সৃষ্ট অন্যকোনো সামাজিক প্রতিষ্ঠান এই সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী নয়। রাষ্ট্র নানা বিধি-নিষেধ আরােপের মাধ্যমে সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

(৪) মানবসমাজের নিয়ন্ত্রকঃ সমাজ ও রাষ্ট্র উভয় প্রতিষ্ঠানই মানবসৃষ্ট। কিন্তু উভয় প্রতিষ্ঠানই আবার মানবসমাজকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। রাষ্ট্র যেমন নানাবিধ নিষেধ, আইন-কানুনের মাধ্যমে মানবসমাজকে নিয়ন্ত্রণে রাখে, তেমনি সমাজে প্রচলিত সামাজিক রীতিনীতি-প্রথাকে ব্যক্তি অগ্রাহ্য করে বা উপেক্ষা করে চলতে পারে না।

(৫) সমাজ রাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রণ করেঃ সমাজজীবনের কতকগুলো মূলনীতি রয়েছে। যেমন- মৌলিক প্রথা, রীতিনীতি ইত্যাদি। এ সব মূলনীতিকে রাষ্ট্র শ্রদ্ধা করে। এগুলোকে উপেক্ষা করলে রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিপন্ন হবার সম্ভাবনা থাকে। এ ভাবে সমাজও রাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রণ করে। সুতরাং উভয়ের পারস্পরিক সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ।

আরো পড়ুনঃ স্বাধীনতা বলতে কি বুঝ? আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে স্বাধীনতার রক্ষাকবচগুলো আলোচনা কর।

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, সমাজ ও রাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে উপযুক্ত আলোচনার সমাপ্তিতে বলা যায় যে সমাজ ও রাষ্ট্র পথক প্রতিষ্ঠান হলেও সমাজের ওপর ভিত্তি করেই রাষ্ট্র গড়ে ওঠে এবং সমাজের প্রকৃতিই রাষ্ট্রের প্রকৃতি নির্ধারণ করে দেয়। রাষ্ট্রের মধ্যে সমাজের সঠিক রূপ প্রতিফলিত না হলেও রাষ্ট্রের মাধ্যমেই সামাজিক শক্তির প্রতিফলন ঘটে।

Share your love
Shihabur Rahman
Shihabur Rahman

Hey, This is Shihabur Rahaman, B.A (Hons) & M.A in English from National University.

Articles: 927

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *