প্রশ্নঃ দারিদ্রের কারণ ও তা দূরীকরণের উপায় উল্লেখ করো।
ভূমিকাঃ দারিদ্র্য বলতে এমন একটি অবস্থাকে বোঝায় যেখানে বেঁচে থাকার জন্য আবশ্যকীয় প্রয়োজন মেটানোর জন্য অধীনস্থ সম্পদ বা আয়ের পর্যাপ্ততা থাকে না। এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। তাই আমাদের দেশেও এর ব্যাপক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। দারিদ্র্যের পেছনে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণ থাকে। এটি দুই ধরণের হয়: চরম দারিদ্র্য এবং আপেক্ষিক দারিদ্র্য। দারিদ্র্যের কারণে মানুষের জীবনযাত্রার মান ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়। দারিদ্র্যের ফলে মানুষ নিম্নলিখিত সমস্যার সম্মুখীন হয়:
অর্থনৈতিক বৈষম্য: বাংলাদেশে একটি তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশ যেখানে ধনী-গরীব এর মধ্যে বৈষম্য ব্যাপক। ধনীদের সম্পদের পরিমাণ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে, অন্যদিকে দরিদ্রদের আয়ের পরিমাণ তেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে না। এতে করে দারিদ্রের ব্যবধান ক্রমশ বাড়ছে।
আরো পড়ুনঃ গ্রামীণ সমাজসেবা কি? বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজসেবা কার্যক্রম গুলোর বর্ণনা দাও।
অশিক্ষা ও কর্মসংস্থানের অভাব: শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের অভাব দারিদ্রের অন্যতম কারণ হিসেবে কাজ করে। এদেশে শিক্ষিত ও দক্ষ জনশক্তির অভাবে উৎপাদনশীলতা বাড়ছে না। যার ফলে দারিদ্র দূরীকরণে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ: ভৌগোলিক কারণে বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রাদুর্ভাব ব্যাপক। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা, ভূমিকম্প ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব দুর্যোগে দারিদ্রের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
জনসংখ্যা বৃদ্ধি: বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার উর্ধমুখী। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে সম্পদের উপর চাপ বৃদ্ধি পায় এবং দারিদ্রের মাত্রা বাড়ে।
বাংলাদেশে দারিদ্র দূরীকরণের জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে:
অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস: এদেশে দারিদ্র দূরীকরণের প্রধান ও প্রথম কাজ হলো অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস। আর এটি করার জন্য ধনী-গরীব বৈষম্য কমাতে হবে। এই বৈষম্য নিরসনের জন্য ধনী কর আরোপ, দরিদ্রদের জন্য প্রণোদনা প্রদান, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী সম্প্রসারণ ইত্যাদি পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে।
আরো পড়ুনঃ বেকারত্ব কি? বাংলাদেশের বেকারত্ব দূরীকরণের উপায় সমূহ বর্ণনা কর।
শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি: যে জাতি যত শিক্ষিত সে জাতি তাতো উন্নত। শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে হবে। এজন্য শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে শিল্পায়ন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ইত্যাদি পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা: প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য পূর্বাভাস ও সতর্কতা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। এছাড়াও, দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সর্বোপরি, সকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাকেও এগিয়ে আসতে হবে.
জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ: জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধি, পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি সম্প্রসারণ ইত্যাদি পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। যার ফলে দরিদ্রতার হার কমে আসবে।
আরো পড়ুনঃ কিশোর অপরাধ কি? কিশোর অপরাধের কারণ গুলো আলোচনা কর।
উপসংহারঃ দরিদ্রতার ফলে মানুষের মেধা ও মনোশীলতার স্বাভাবিক বিকাশ বাধা গ্রস্থ হয়. এই সমস্যার সমাধান করতে না পারলে একটি জাতি কখনোই উন্নত হতে পারবে না. তাই বিশ্বের দরবারে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসাবে নিজেদেরকে দাঁড় করতে দরিদ্রতার কবল থেকে মানুষকে রক্ষা করতে হবে.