প্রশ্নঃ আলীগড় আন্দোলনের উদ্দেশ্যসমূহ লেখ। অথবা, আলীগড় আন্দোলনের লক্ষ্যসমূহ কী কী?
ভূমিকা: আলীগড় আন্দোলন ছিল ব্রিটিশ শাসিত ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম নবজাগরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন। স্যার সৈয়দ আহমদ খান (১৮১৭-১৮৯৮) ছিলেন এই আন্দোলনের সূচনাকারী। আলীগড় আন্দোলনকে সফল করতে তিনি ব্যাপক তৎপরতা চালান। এই আন্দোলন করতে গিয়ে তিনি অনেক বাধার সম্মুখীন হন। কিন্তু তার নিষ্ঠা এবং অটল মনোভাব তাকে তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম করেছিল।
আলীগড় আন্দোলনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য: আলিগড় আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য হল অনগ্রসর ও নিম্নমুখী মুসলিম জাতির পুনরুদ্ধার করা এবং তাদের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা ও বিকাশ করা। মুসলমানদের পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত করার লক্ষ্যে এই আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল, কিন্তু পরবর্তীতে বহুমুখী লক্ষ্য অর্জনের লক্ষ্যে এটি পরিচালিত হয়েছিল। মুসলমানদের প্রতি ব্রিটিশ শাসকদের বিশ্বাস ও বৈরিতা দূর করা উভয়ের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপন করা। উদ্দেশ্যগুলো নিম্নরূপ:
আরো পড়ুনঃ কিশোর অপরাধ কি? কিশোর অপরাধের কারণ গুলো আলোচনা কর।
- কুসংস্কার দূর: ধর্মীয় গোঁড়ামি, কুসংস্কার, অশিক্ষা, অজ্ঞতা এবং অধঃপতনের হাত থেকে মুসলমানদের রক্ষা করা।
- আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি: মুসলমানদের মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গিতে আধুনিক ও যুগোপযোগী পরিবর্তন আনয়ন করা।
- সমতাবিধান: শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি আর্থিক দিক দিয়ে মুসলমানদের হিন্দুদের সমকক্ষ করে গড়ে তোলা।
- শোষণ হতে রক্ষা: সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শোষণ থেকে মুসলমানদের মুক্ত করা।
- সামঞ্জস্য বিধান: মুসলমানদের ব্রিটিশ প্রশাসনের সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধানের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা।
- সম অংশগ্রহণ: মুসলমানদের ইংরেজি ও পাশ্চাত্য দর্শন গ্রহণে উৎসাহিত করা। এছাড়া প্রশাসনসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে মুসলমানদের অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করা। আলীগড় আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল মুসলিম সমাজে বিদ্যমান কুসংস্কার, অজ্ঞতা ও রক্ষণশীল মনোভাব দূর করা এবং অবক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করা।
আরো পড়ুনঃ বেকারত্ব কি? বাংলাদেশের বেকারত্ব দূরীকরণের উপায় সমূহ বর্ণনা কর।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, আলীগড় আন্দোলনের মাধ্যমেই মুসলমান সমাজ অতীত চেতানা ও ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার করার সুযোগ পেয়েছে যেমন-তেমনি শক্তিশালী জাতি হিসেবে নিজেদেরকে পরিচিত করার সুযোগও পেয়েছে। এই কাজের জন্যই মোহামেডান অ্যাংলো ওরিয়েন্টাল স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয় যা পরবর্তীকালে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিতি লাভ করে।