fbpx

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সম্পর্কে টীকা লেখ

প্রশ্নঃ বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সম্পর্কে টীকা লেখ।

ভূমিকা: ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখনও ছিলেন পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি। এমতাবস্থায় ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের কয়েকদিনের মধ্যেই মুজিবনগর প্রশাসনে সিনিয়র আমলাবৃন্দ ঢাকায় এসে প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণভার গ্রহণ করেন। ২২ ডিসেম্বর মুজিবনগর সরকারের সদস্যবৃন্দ ঢাকায় আসেন। ঢাকায় পৌঁছে তাজউদ্দিন আহমদ তার অবস্থান সুদৃঢ় করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। প্রথম প্রচেষ্টা হিসেবে তিনি খন্দকার মোশতাক আহমদকে স্থলাভিষিক্ত করেন। এমনি প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধু ৮ জানুয়ারি পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্তি পান এবং লন্ডন ও দিল্লি হয়ে ১০ জানুয়ারি ঢাকা পৌঁছেন ।

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন: ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান আত্মসমর্পণ করার পর জাতীয় এবং আন্ত জাতিক চাপ কিংবা নিজস্ব সিদ্ধান্ত যে কারণেই হোক জুলফিকার আলী ভুট্টো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কারাগার থেকে মুক্তি দিয়ে রাওয়ালপিন্ডির একটি বাসায় অন্ত রীণ করেন এবং ১৯৭২ সালের ৩ জানুয়ারি করাচিতে অনুষ্ঠিত এক জনসভায় ঘোষণা করেন যে, শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দেওয়া হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সম্ভাব্য মুক্তিদানের সংবাদ সাড়ে সাত কোটি বাঙালির মনে এক পরম স্বস্তি নিয়ে আসে। অতঃপর ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি পাকিস্তানি সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি প্রদান করে এবং তার ইচ্ছা অনুযায়ী গন্তব্যে যাওয়ার জন্য পি.আই.এ-এর একটি জেট বিমানে করে পাকিস্তান ত্যাগ করার ব্যবস্থা করে দেন। 

আরো পড়ুনঃ ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের কারণ ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর

বঙ্গবন্ধু ঐদিনই বিকালে লন্ডন বিমান বন্দরে অবতরণ করেন। ব্রিটিশ সরকার বাংলাদেশকে তখন পর্যন্ত স্বীকৃতি না দিলেও বঙ্গবন্ধু সেখানে একটি সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন। লন্ডনে একদিন অবস্থান করার পর ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত রাজকীয় বিমানের ‘কমেট’ বিমানযোগে তার প্রাণপ্রিয় স্বদেশের পথে রওনা হন। ফেরার পথে তিনি ভারত সরকার কর্তৃক দিল্লিতে আয়োজিত সংবর্ধনা উপলক্ষে সকাল ৮.৩০ মিনিটে পালাম বিমান বন্দরে অবতরণ করেন। 

ইউটিউবে ভিডিও লেকচার দেখুনঃ


পালাম বিমান বন্দরেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও প্রেসিডেন্ট ভি.ভি. গিরি তাঁকে বিপুলভাবে অভিনন্দিত করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভারতের জনগণের প্রতি তার আন্তরিক অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানান। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাথে মত বিনিময়ের পর দুপুর ১.৪২ মিনিটে ব্রিটিশ রাজকীয় বিমান বাহিনীর ‘কমেট’ বিমানযোগেই বঙ্গবন্ধু সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেন।  অবশ্য বঙ্গবন্ধু ভারত সরকার কর্তৃক ভাড়াকৃত রেডক্রসের বিমানে কেন আরোহণ করেননি এবং তিনি লন্ডন হয়ে কেন বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করলেন তা আজও জানা যায়নি। প্রাণপ্রিয় নেতার প্রতি বাঙালির অকৃত্রিম ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার নিদর্শনস্বরূপ প্রাণঢালা সংবর্ধনা জানানোর জন্য তেজগাঁও বিমান বন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দান পর্যন্ত দীর্ঘপথ লোকে লোকারণ্য হয়। 

আরো পড়ুনঃ যুদ্ধ-বিদ্ধস্ত দেশ পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধু সরকারের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ বর্ণনা কর

প্রবীণ নেতা অলি আহম্মদ লিখেছেন, “তেজগাঁও বিমান বন্দর থেকে ঢাকা রেসকোর্স ময়দান পর্যন্ত মাত্র ৪ মাইল পথ ট্রাকযোগে অতিক্রম করতে ২ ঘণ্টারও অধিক সময় লাগে। স্বচক্ষে অবলোকন না করলে জনগণের এ স্বতঃস্ফূর্ত অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ভক্তি ও ভালোবাসার গভীরতা অনুধাবন করা অসম্ভব। এ দৃশ্য অভূতপূর্ব ছিল আবেগপ্রসূত, এ দৃশ্য অবিস্মরণীয় ও ঐতিহাসিক।” ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব দেশের মাটিতে ফিরে আসলে জনমনে শক্তি ও সাহসের সঞ্চার হয়।

আরো পড়ুনঃ ১৯৭০ সালের নির্বাচনের ফলাফল ও গুরুত্ব বর্ণনা কর

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি মাইলফলক। দীর্ঘ নয়মাস বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারগারে বন্দি থাকার পর ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। তবে এ দীর্ঘ পরিক্রমায় বিশ্বজনমত মুজিবের মুক্তি প্রদানের জন্য চাপ দিতে থাকে। এমনকি জাতিসংঘ ও মার্কিন সরকার শেখ মুজিবকে মুক্তির জন্য চাপ প্রয়োগ করে। এর ফলশ্রুতিতে ৮ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি প্রদান করা হয় এবং তিনি ১০ জানুয়ারি স্বদেশে প্রত্যাবর্তন  করেন ।

Shihabur Rahman
Shihabur Rahman
Hey, This is Shihabur Rahaman, B.A (Hons) & M.A in English from National University.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

ফেসবুক পেইজ

কোর্স টপিক