fbpx

মহানগরীতে বস্তি বৃদ্ধির কারণ সমূহ আলোচনা করো। 

প্রশ্নঃ মহানগরীতে বস্তি বৃদ্ধির কারণ সমূহ আলোচনা করো। 

ভূমিকা: বস্তি শহর এলাকার অন্যতম প্রধান সামাজিক সমস্যা। দেশের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটেই মূলতঃ বস্তি গড়ে ওঠে। সুনির্দিষ্ট কর্ম- সংস্থানের অভাব ও আর্থিক অসঙ্গতির নগর পরিকল্পনাবিদদের অব্যবস্থাপনা, দারিদ্র্য, অধিক বেকার সংখ্যা, অপরিকল্পিত অর্থনীতি, রাজনীতি ইত্যাদি কারণে শহরের কেন্দ্রস্থলে সরকারি খালি জমি, ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে অসংখ্য অবৈধ বস্তি গড়ে ওঠে। মহানগরীতে  বস্তি গড়ে ওঠার পিছনে নানাবিধ কারণ সমূহ আলোচনা করা হলো:

বস্তির পরিচয়ঃ শহর ব্যবস্থার একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো বস্তি। বর্তমানে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক চতুর্থাংশই গৃহহীন। বাংলাদেশের মোট নগরীয় জনসংখ্যার ৫৫% বস্তিতে বসবাস করছে। ব্যাপক শহরায়ন ও নগরায়নের ফলে বস্তির সৃষ্টি। বস্তি বিশ্বব্যাপী একটি সামাজিক সমস্যা। শব্দগত দিক থেকে Slum কে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়:

S = Stands for sombre. L= Stands for life. U = Stands for underpriviledged people. M = Stands for man kind.

অর্থাৎ, Slum stands for sombre life of underpriviledged mankind. (অর্থাৎ স্বল্প সুবিধা প্রাপ্ত জনগণের নিরানন্দ জীবন ব্যবস্থা হলো বস্তি)।

ইউটিউবে ভিডিও লেকচার দেখুনঃ


আরো পড়ুনঃ সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞা দাও। এর প্রকৃতি ও স্বরূপ বা পরিধি ও বিষয়বস্তু আলোচনা করো।

সাধারণভাবে অর্থে বস্তি হলো এলোমেলোভাবে অধিকৃত শৃঙ্খলাহীনভাবে গড়ে উঠা এবং সাধারণভাবে অবহেলিত এমন একটি এলাকা, যেখানে জনস্ফীতি আছে এবং সেখানকার বাসগৃহ দুর্বল ও ভঙ্গুর।

মহানগরীতে বস্তি বৃদ্ধির কারণ সমূহ

১। জনসংখ্যা বৃদ্ধি: মহানগরীতে বস্তি বৃদ্ধির প্রধান কারণ অধিক জনসংখ্যা বৃদ্ধি।  জনসংখ্যা যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে নগরে বসবাসের স্থান ও জীবন ধারণের আবশ্যকীয় বিষয়াবলি সে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে না। বর্তমানে সমগ্র বিশ্বে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২.৬% হলেও  উন্নয়নশীল দেশে এই হার প্রায় ৩.৮ শতাংশ। এই ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধি মহানগরীতে বস্তি সৃষ্টির ক্ষেত্রে চাপ সৃষ্টি করছে। ফলে অপেক্ষাকৃত কম আয়ের লোকদের বেচে নিতে হচ্ছে বস্তি জীবন।

২। বেকারত্ব: বেকারত্ব বস্তি বৃদ্ধির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। বেকারত্বের কারণে মানুষ আয়ের উৎস হারায় এবং স্বল্প আয় বা আয় বঞ্চিত মানুষেরা জীবনধারণের জন্য বস্তি এলাকায় বসবাস করতে বাধ্য হয়।

৩। গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তর:  গ্রাম থেকে শহরে অতিরিক্ত স্থানান্তর বস্তি গড়ে ওঠার পেছনে আরেকটি কারণ। গ্রামীণ সুবিধাবঞ্চিত লোকগুলো শহরে ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য শহরে পাড়ি জমায়। মূলতঃ ব্যাপক জনগোষ্ঠীর গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তরের ফলেই দিন দিন বস্তির সংখ্যা বেড়ে চলছে।  

google news

৪। শিল্পায়ন ও শহরায়নের প্রভাব: শিল্প বিপ্লবের পর অপরিকল্পিত শহরায়ন ও শিল্পায়ন গড়ে উঠেছে। যার ফলশ্রুতিতে বিভিন্ন বড় বড় শিল্প কারখানা ও নগরের গড়ে উঠছে । এর ফলে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ- সৃষ্টি হওয়ায় গ্রাম থেকে অনেক মানুষ শহরমুখী হচ্ছে যার কারনে নতুন নতুন বসতি সৃষ্টি হয়েছে।

আরো পড়ুনঃ সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশে অগাস্ট কোঁতের অবদান আলোচনা করো।

৫। সুযোগ-সুবিধার অভাব: গ্রামে যে হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে সে হারে কৃষি জমি বা কৃষিনির্ভর শিল্প ও স্থাপিত হয়নি। ফলে গ্রামীণ জনগোষ্ঠী আত্মকর্মসংস্থানের জন্য শহরের যেতে বাধ্য হচ্ছে । অধিক মজুরির আকাঙ্ক্ষায় শহরে আগমনের প্রেক্ষিতে শহরের জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে মারাত্মক আবাসন সংকট হচ্ছে যা বস্তি সৃষ্টিতে সহায়ক ভুমিকা পালন করছে।

৬। ভূমির অপরিকল্পিত ও অবৈধ ব্যবহার: সব শহরেই কম বেশী সরকারি-বেসরকারি মালিকানাধীন ভূমি দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত ও অসংরক্ষিত থাকে। ফলে এসব এলাকা সহজেই অবৈধ দখলে চলে যায় এবং বস্তি গড়ে ওঠে। 

৭। সুনির্দিষ্ট নীতিমালা অভাবঃ ভূমি ব্যবহারের কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালার অভাবে অনেক ক্ষেত্রে মহানগরীতে অসংখ্য অগণিত বস্তি গড়ে উঠছে প্রতিনিয়ত।

৮। প্রাকৃতিক দুর্যোগ: প্রাকৃতিক দুর্যোগ মহানগরীতে বস্তি সৃষ্টির অন্যতম কারণ। বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, নদীভাঙ্গন প্রভৃতি নানাবিধ প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়ে প্রতিবছর হাজার হাজার পরিবার গৃহহীন, ভূমিহীন ও কর্মহীন হয়ে পড়ছে। ফলে তারা বেঁচে থাকার তাগিদে শহরে পাড়ি জমায়। সহায় সম্বলহীন এসব মানুষ শহরে এলোমেলোভাবে বসবাস শুরু করে এবং এর ফলে বস্তি গড়ে ওঠে।

৯। অধিক কর্মসংস্থানের সুযোগঃ গ্রামের তুলনায় মহানগরে অধিক কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকে তাই দেশের প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ সম্ভবতই অধিক কর্মসংস্থানের আশায় শহরে ভিড় জমায় এবং তারা বস্তিতে বসবাস শুরু করার ফলে দিন দিন মহানগরে বস্তির সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।

১০। শরণার্থীর আগমনঃ অন্যান্য দেশ বা পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে অনেক সময় সামাজিক রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ধর্মীয় বিভিন্ন কারণে অনেক শরণার্থী আগমন করে থাকে। উদাহরণ স্বরূপ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে ভারত হতে ব্যাপক সংখ্যক শরণার্থী বাংলাদেশে আগমন করে। এসকল শরণার্থীগণ তাদের বসবাসের জন্য বস্তির জীবনকে উপযুক্ত মনে করে যার ফলশ্রুতিতে মহানগরীতে  বস্তী বৃদ্ধি পায়।

১১। অপর্যাপ্ত গৃহায়ন সুবিধাঃ অপর্যাপ্ত গৃহায়ন সুবিধা, মহানগরে বুঝতে সৃষ্টির জন্য অন্যতম কারণ কেননা যে সকল শহরে অপেক্ষাকৃত সুবিধাবঞ্চিত ব্যক্তিদের থাকা খাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা অভাব রয়েছে এ সকল জায়গায় স্বাভাবিকভাবেই বুঝতে গড়ে ওঠে।

১২। সুশিক্ষার অভাবঃ সুশিক্ষার অভাবে গ্রামীন এলাকার যুবক সম্প্রদায় তারা তাদের মেধা বিকাশের পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা পায় না যার ফলশ্রুতিতে তারা শহরে বসবাসের সিদ্ধান্ত নেয় এবং শহরেই স্থায়ী ভাবে বসবাসস শুরিু করে যার কারণে দিন দিন মহানগরে বস্তির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আরো পড়ুনঃ শিল্পায়ন কি? বাংলাদেশে শিল্পায়নের কারণ ও প্রভাব আলোচনা করো। 

১৩। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা: রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে মানুষ বসতি এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায় এবং বস্তি এলাকায় বসবাস করতে বাধ্য হয়।

১৪। বস্তি সমস্যার কারণ: উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশেরও প্রাধান সামাজিক সমস্যার মধ্যে বস্তি শিল্পায়ন ও শহরায়নের ফল। ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়, বস্তির উদ্ভব ও প্রসারের ক্ষেত্রে ৪৭ সালের দেশ ভাগ, র আগমনকে চিহ্নিত করা হয়। সর্বোপরি গ্রামীণ অর্থনৈতিক অবকাঠামো, ব্যাপক বেকারত্ব, নদীভাঙ্গন, বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ, শহরকেন্দ্রিক অধিক শিল্প স্থাপন ও কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা প্রভৃতি কারণে বস্তি ব্যাপকভাবে গড়ে উঠেছে

১৫। পুঁজিবাদঃ পুঁজিবাদি সমাজ বাবস্তাহ্য মূলত ধনীরা আরো ধনী হায় এবং গরিবরা আরো গরিব হয়। এর ফলশ্রুতিতে শহরে স্বনামধন্য পুঁজিবাদি  ব্যক্তিবর্গ করা সামান্য অর্থ দিয়ে সমাজের সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের শ্রম কিনে নেয় আর সেই সামান্য অর্থ দিয়ে সুবিধা বঞ্চিত মানুষ তাদের চাহিদা পূরণ করতে পারেনা  তাই বস্তির জীবনে বসবাস করা ছাড়া তাদের সামনে আর কোন উপায় থাকে না ফলশ্রুতিতে দিন দিন বস্তী বিদ্ধি পাচ্ছে।

১৬। অপরিকল্পিত নগরায়নঃ অপরিকল্পিত নগরায়ন মহানগরে অধিক বস্তির জন্য দায়ী।কেননা পরিকল্পিতভাবে শহর কাঠামো গড়ে তুললে সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষ তাদের নিজস্ব স্থানে বসবাস করার সুযোগ পায়। যার ফলে শহরের প্রতিটি পরিবার নির্দিষ্ট স্থানে বসবাসের ফলে বস্তির সৃষ্টি কম হবে তাই পরিকল্পিত নগরায়ন বস্তি সমস্যা সমাধানে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে।

ছাড়াও শিল্প কারখানা বৃদ্ধি, রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা, নগর দারিদ্র্য, অসম ভূমি মালিকানা, বস্তি নির্মাণে যথাযথ পরিকল্পনা ও কর্মসূচির অভাব, সরকারি নীতিমালা ও কর্মসূচির অপর্যাপ্ততা, পরিকল্পিত নগর ও নাগরিক সুবিধার অভাবে মহানগরে  দিন দিন বস্তি গড়ে উঠছে।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, নগর বসতির বিকাশে নানাবিধ কারণ বিদ্যমান। নগর উন্নয়নের ক্ষেত্রে বস্তি সমস্যা কখনো অনুকূলে নয় বরং সর্বদাই প্রতিকূলে কাজ করে। তাই আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে মহানগরের বস্তি সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসা উচিত।

Shihabur Rahman
Shihabur Rahman
Hey, This is Shihabur Rahaman, B.A (Hons) & M.A in English from National University.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

ফেসবুক পেইজ

কোর্স টপিক