জলবায়ু পরিবর্তন বলতে কি বুঝ?

প্রশ্নঃ জলবায়ু পরিবর্তন বলতে কি বুঝ?

জলবায়ু পরিবর্তনঃ কোনও একটি স্থানের বছরের পর বছর ধরে আবহাওয়ার যে গড়-পড়তা ধরন, তাকেই বলা হয় সেই স্থানের জলবায়ু। আবহাওয়ার সেই চেনাজানা ধরন বদলে যাওয়াকেই বলা হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন। পৃথিবী জলবায়ু গরম হয়ে পড়ছে, যেটিকে আমরা বলি গ্লোবাল ওয়ার্মিং। এর ফলে দ্রুত বদলে যাচ্ছে আবহাওয়ার বহুদিনের চেনাজানা আচরণ।

জলবায়ু পরিবর্তন, তথা উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ার ফলে পৃথিবীর দুই মেরুতে জমে থাকা বরফ গলে যাচ্ছে। ফলে উত্তর মেরুর শ্বেত-ভাল্লুক এবং দক্ষিণ মেরুর পেঙ্গুইন সহ নানা প্রাণি বিলুপ্তির সঙ্কায় রয়েছে। এছাড়া বরফগলা পানি সমুদ্র-পৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়িয়ে দিচ্ছে; ফলে বাংলাদেশের একাংশ সহ পৃথিবীর নিচু ভূমিগুলো প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

আরো পড়ুনঃ সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞা দাও। এর প্রকৃতি ও স্বরূপ বা পরিধি ও বিষয়বস্তু আলোচনা করো।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণঃ

প্রাকৃতিক কারণে জলবায়ুতে স্বাভাবিকভাবেই কিছু পরিবর্তন হয়। কিন্তু যে মাত্রায় এখন তাপমাত্রা বাড়ছে তার মানুষের কর্মকাণ্ডেই প্রধানত দায়ী।

মূলত বায়ুমন্ডলে ছড়িয়ে পড়া কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস পৃথিবীর তাপমাত্রাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে, তথা জলবায়ু পরিবর্তনে মূক্ষ ভূমিকা রাখছে। এ ধরণের গ্যাসকে বলা হয় গ্রিনহাউজ গ্যাস। অতিরিক্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধি, কল-কারখানা ও যানবাহন থেকে নিঃসারিত বিষাক্ত কালো ধোঁয়া, বনাঞ্চল ধংস ইত্যাদি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ।

আরো পড়ুনঃ সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশে অগাস্ট কোঁতের অবদান আলোচনা করো।

মানুষ যখন থেকে কল-কারখানা এবং যানবাহন চালাতে বা শীতে ঘর গরম রাখতে তেল, গ্যাস এবং কয়লা পোড়াতে শুরু করলো সেই সময়ের তুলনায় পৃথিবীর তাপমাত্রা এখন ১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে। বায়ুমণ্ডলে অন্যতম একটি গ্রিন হাউজ গ্যাস কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ উনবিংশ শতকের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে। গত দুই দশকে বেড়েছে ১২ শতাংশ।

বনাঞ্চল ধ্বংসের কারণেও বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউজ গ্যাসের নির্গমন বাড়ছে। গাছপালা কার্বন ধরে রাখে। ফলে, সেই গাছ যখন কাটা হয় বা পোড়ানো হয়, সঞ্চিত সেই কার্বন বায়ুমণ্ডলে নিঃসরিত হয়।

জলবায়ু পরিবর্তনের পরিণতিঃ

১. মানুষঃ প্রথমে মানুষ অর্থাৎ আমাদের জন্য এই পরিবর্তনের অর্থ কী? বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ুর এই পরিবর্তনে বদলে যাবে আমাদের জীবন যাপন। পানির সঙ্কট তৈরি হবে। খাদ্য উৎপাদন কঠিন হয়ে পড়বে। কোনো কোনো অঞ্চল বিপজ্জনক মাত্রায় গরম হয়ে পড়বে, এবং সেই সাথে সমুদ্রের পানি বেড়ে বহু এলাকা প্লাবিত হবে। ফলে সে সব জায়গা বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে।

আরো পড়ুনঃ শিল্পায়ন কি? বাংলাদেশে শিল্পায়নের কারণ ও প্রভাব আলোচনা করো। 

২. চরম ভাবাপন্ন আবহাওয়াঃ অতিরিক্ত গরমের পাশাপাশি ভারি বৃষ্টি এবং ঝড়ের প্রকোপ অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকবে। ফলে জীবন এবং জীবিকা হুমকিতে পড়বে। গরীব দেশগুলোতে এসব বিপদ মোকাবেলার সক্ষমতা কম বলে তাদের ওপর এই চরম আবহাওয়ার ধাক্কা পড়বে সবচেয়ে বেশি।

৩. পরিবেশঃ তাপমাত্রা বাড়ায় উত্তর মেরুর জমাট বাধা বরফ এবং হিমবাহগুলো দ্রুত গলে যাচ্ছে। ফলে সাগরের উচ্চতা বেড়ে উপকুলের নিচু এলাকাগুলো ডুবে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে।

এছাড়া সাইবেরিয়ার মত অঞ্চলে মাটিতে জমে থাকা বরফ গলতে থাকায় বরফের নিচে আটকে থাকা মিথেন গ্যাস বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়বে। ফলে, মিথেনের মত আরেকটি গ্রিনহাউজ গ্যাস জলবায়ু পরিবর্তনের মাত্রা বাড়িয়ে দেবে। পৃথিবীর উষ্ণতা তাতে আরো বাড়বে, এবং বন-জঙ্গলে আগুন লাগার ঝুঁকি বাড়বে।

৪. বিলুপ্তিঃ চির চেনা বসতির আবহাওয়া বদলের জেরে অনেক প্রাণী নতুন জায়গায় চলে যাবে বা যাওয়ার চেষ্টা করবে। কিন্তু জলবায়ুর এই পরিবর্তন এত দ্রুত হারে এখন ঘটছে যে অনেক প্রজাতি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। যেমন, বরফ গলতে থাকায় পোলার বিয়ার বা উত্তর মেরুর শ্বেত ভালুকের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ছে। পাশাপাশি, আটলান্টিক মহাসাগরের স্যামন মাছ বিপন্ন হবে, কারণ যেসব নদীতে ঢুকে তারা ডিম পেড়ে বাচ্চার জন্ম দেয়, সেগুলোর পানি গরম হয়ে যাচ্ছে।

আরো পড়ুনঃ নারীর ক্ষমতায়ন বলতে কি বুঝ? নারীর ক্ষমতায়নে বাধা এবং করণীয় সমূহ আলোচনা করো। 

ট্রপিক্যাল অঞ্চলের কোরাল রিফ বা প্রবাল-প্রাচীর উধাও হয়ে যেতে পারে, কারণ বায়ুমণ্ডলের অতিরিক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড সাগরের পানিতে মিশে পানির অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে।

Share your love
Shihabur Rahman
Shihabur Rahman

Hey, This is Shihabur Rahaman, B.A (Hons) & M.A in English from National University.

Articles: 927

One comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *