fbpx

ম্যাকিয়াভেলিবাদ কী? ম্যাকিয়াভেলী বর্ণিত “নৈতিকতার দ্বৈত মানদন্ড” কী?

প্রশ্নঃ ম্যাকিয়াভেলিবাদ কী? ম্যাকিয়াভেলী বর্ণিত “নৈতিকতার দ্বৈত মানদন্ড” কী?

ভূমিকাঃ ম্যাকিয়াভেলি (১৪৬৯-১৫২৭) ছিলেন আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক। ম্যাকিয়াভেলিবাদ হল তাঁর রচিত রাজনৈতিক মতবাদ। ম্যাকিয়াভেলি তাঁর বিখ্যাত “The Prince” গ্রন্থে রাজপুত্রের কর্তব্য, মানুষের চরিত্র, রাষ্ট্রের প্রশাসন ও ম্যাকিয়াভেলিবাদের মন্ত্র দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি শাসকদের নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য নৈতিক-অনৈতিক সব কিছু করার পরামর্শ দিয়েছেন। মুলত দ্বিচারিতা ও আত্মস্বার্থে ভরা তার নীতিকেই ‘ম্যাকিয়াভিলিবাদ’বলা হয়। 

অর্থঃ ম্যাকিয়াভেলিবাদ শব্দের অর্থ হচ্ছে  প্রতারণা, শঠতা, কপটতা, ধোঁকা ও দ্বিমুখী নীতি। 

সংজ্ঞাঃ ম্যাকিয়াভেলি শাসককে ভালোবাসা, প্রেম-প্রীতি, দয়া-দাক্ষিণ্য সব কিছু জুলাঞ্জলি দিয়ে প্রতারণা, কপটতা ও নিষ্ঠুরতার মাধ্যমে মানুষের অন্তরে ভীতির উদ্রেক করার যে নীতি শিক্ষা দিয়েছেন তাই ইতিহাসে ম্যাকিয়াভেলিবাদ নামে পরিচিত।

ম্যাকিয়াভেলিবাদের বৈশিষ্ট্যঃ

ইউটিউবে ভিডিও লেকচার দেখুনঃ


উদ্দেশ্য পবিত্রঃ ম্যাকিয়াভেলি বিশ্বাস করতেন যে রাজনীতিতে উদ্দেশ্য পবিত্র। অর্থাৎ, রাজনীতিবিদদের অবশ্যই তাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য যেকোনো উপায় অবলম্বন করতে হবে, এমনকি যদি তা নৈতিকতার বিরুদ্ধেও হয়।

আরো পড়ুনঃ স্বাধীনতা বলতে কি বুঝ? আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে স্বাধীনতার রক্ষাকবচগুলো আলোচনা কর।

শক্তিই সর্বোচ্চ আইনঃ ম্যাকিয়াভেলি বিশ্বাস করতেন যে শক্তিই সর্বোচ্চ আইন। অর্থাৎ, রাজনীতিতে শক্তিই সবকিছু নির্ধারণ করে।

জনগণের প্রতারণাঃ ম্যাকিয়াভেলি বিশ্বাস করতেন যে জনগণকে প্রতারণা করা প্রায়ই প্রয়োজনীয়। অর্থাৎ, রাজনীতিবিদদের অবশ্যই জনগণকে তাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজনে প্রতারণা করতে হবে।

ম্যাকিয়াভেলিবাদের প্রভাব বিশ্বের ইতিহাসে ব্যাপক। অনেক রাজনীতিবিদ এবং সরকার ম্যাকিয়াভেলির ধারণাগুলিকে অনুসরণ করেছেন, যার ফলে অনেক ক্ষেত্রে সহিংসতা, অস্থিতিশীলতা এবং যুদ্ধের পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

ম্যাকিয়াভেলিবাদের সমালোচনাঃ

google news

নৈতিকতা বিরোধীঃ ম্যাকিয়াভেলিবাদ নৈতিকতার বিরোধী বলে অনেকে মনে করেন। তারা যুক্তি দেন যে ম্যাকিয়াভেলিবাদী রাজনীতিবিদরা প্রায়ই জনগণের স্বার্থের পরিবর্তে তাদের নিজস্ব স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়।

অবাস্তবঃ অনেকে মনে করেন যে ম্যাকিয়াভেলিবাদ অবাস্তব। তারা যুক্তি দেন যে ম্যাকিয়াভেলিবাদী রাজনীতিবিদরা প্রায়ই বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে এবং তাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য অসম্ভব কৌশল অবলম্বন করে।

আরো পড়ুনঃ সেন্ট অগাস্টিনের রাষ্ট্রদর্শন ও ন্যায়তত্ত্ব সম্পর্কে আলোচনা কর

সুতরাং ম্যাকিয়াভেলিবাদ একটি জটিল এবং বিতর্কিত মতাদর্শ। এটি রাজনীতির প্রকৃতি এবং রাজনীতিবিদদের ভূমিকা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করে। ইতিহাসে এটি একটি ঘৃণিত ও কুখ্যাত মতবাদ হিসেবে স্বীকৃত হলেও বর্তমান বিশ্বের আন্তর্জাতিক কূটনীতির এটিই হচ্ছে মূলভিত্তি।

নৈতিকতার দ্বৈত দন্ডের ধারণাঃ

নিকোলো ম্যাকিয়াভেলি তার “দ্য প্রিন্স” (1513) গ্রন্থে “নৈতিকতার দ্বৈত মানদন্ড” নামে একটি ধারণা প্রস্তাব করেন। এই ধারণা অনুসারে, রাজনীতিবিদদের ব্যক্তিগত জীবনে এবং রাজনীতিতে ভিন্ন নৈতিক মানদণ্ড অনুসরণ করা উচিত।

ব্যক্তিগত জীবন বনাম রাজনৈতিক জীবনঃ ম্যাকিয়াভেলি বিশ্বাস করতেন যে মানুষকে নৈতিকতার উচ্চ মানদণ্ড অনুসরণ করা উচিত। ব্যক্তিগত জীবনে মানুষকে সৎ, ন্যায়পরায়ণ এবং সহানুভূতিশীল হওয়া উচিত। তবে রাজনৈতিক জীবনে রাজনীতিবিদদের প্রয়োজনে নৈতিকতার বাইরে যেতে হবে। তাদের অবশ্যই তাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য যেকোনো উপায় অবলম্বন করতে হবে, এমনকি যদি তা নৈতিকতার বিরুদ্ধেও হয়।


ম্যাকিয়াভেলির “নৈতিকতার দ্বৈত মানদন্ড” ধারণার সমালোচনাঃ

নৈতিকতাবিরোধীঃ অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন যে ম্যাকিয়াভেলির ধারণাটি নৈতিকতাবিরোধী। তাদের মতে রাজনীতিবিদদের অবশ্যই সর্বদা নৈতিকতার উচ্চ মানদণ্ড অনুসরণ করা উচিত, এমনকি যদি তা কঠিন হয়। 

অবাস্তবঃ রাজনীতিবিদরা প্রায়ই বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে এবং তাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য অসম্ভব কৌশল অবলম্বন করে তাই ম্যাকিয়াভেলির ধারণাটি অবাস্তব।।

আরো পড়ুনঃ রুশোর সাধারণ ইচ্ছা মতবাদটি ব্যাখ্যা কর

কিছু সমালোচনা থাকলেও ম্যাকিয়াভেলির ধারণাটি অনেকের কাছেও আকর্ষণীয়। তারা যুক্তি দেন যে ম্যাকিয়াভেলির ধারণাটি রাজনীতিবিদদের্ল কার্যকর এবং কৌশলী হতে সাহায্য করে। ম্যাকিয়াভেলির “নৈতিকতার দ্বৈত মানদন্ড” ধারণাটি একটি জটিল ধারণা যাকে সহজভাবে সমালোচনা বা সমর্থন করা যায় না।

উপসংহার: ম্যাকিয়াভেলির “নৈতিকতার দ্বৈত মানদন্ড” ধারণাটি একটি জটিল এবং বিতর্কিত ধারণা। এটি রাজনীতির প্রকৃতি এবং রাজনীতিবিদদের ভূমিকা আলোচনা  করে। একটি সুস্থ গণতন্ত্রের জন্য, রাজনীতিবিদদের অবশ্যই নৈতিকতার উচ্চ মানদণ্ড অনুসরণ করা উচিত। তবে,বাস্তবতাকেও মেনে নিতে হবে এবং প্রয়োজনে নৈতিকতার বাইরে যেতেও হতে পারে। রাজনীতিবিদদের অবশ্যই তাদের সিদ্ধান্তের গুরুত্বের ওপর চিন্তাভাবনা করতে হবে এবং তাদের সিদ্ধান্তের সম্ভাব্য পরিণতি  বিবেচনা করতে হবে।

Shihabur Rahman
Shihabur Rahman
Hey, This is Shihabur Rahaman, B.A (Hons) & M.A in English from National University.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

ফেসবুক পেইজ

কোর্স টপিক