২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন কি? সমালোচনা সহ এই আইনের গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলো বর্ণনা কর। 

প্রশ্নঃ ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন কি? সমালোচনা সহ এই আইনের গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলো বর্ণনা কর। 

ভূমিকাঃ মানব সভ্যতা গতিশীল ও পরিবর্তনশীল। গতিশীল হওয়ার কারণে পরিবর্তনশীলতার বিভিন্ন পর্যায়ে অতিক্রম করে মানব সমাজ বর্তমান পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে মানুষ বিভিন্ন ক্ষতিকর ও অনভিপ্রেত অবস্থার অ সম্মুখীন হয়। ফলে শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হয়। এজন্যই মানুষের অন্যায় কার্যাবলি ও আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন সামাজিক আইন।

১৯৮৩ সালের নারী নির্যাতন আইনের ধারাসমূহ নিম্নরূপঃ 

১. কোনো নারীকে (যে কেউ যে কোনো বয়সের) হরন বা বলপূর্বক অপহরণ করে পতিতাবৃত্তিতে নিয়োগ বা নৈতিকতাহীন কাজে ব্যবহার, স্ত্রীলোককে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক বিবাহ দেয়া, অবৈধ যৌন সঙ্গমে বল প্রয়োগ বা প্রলুব্ধ করা শাস্তি যোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হবে।

২. যে কেউ যে কোনো বয়সের নারীকে বেশ্যাবৃত্তি নিষিদ্ধ, যৌন সহবাস বা নীতিবিবর্জিত উদ্দেশ্যে নিয়োগ অথবা ব্যবহারের উদ্দেশ্যে আমাদানি বা রফতানি, ক্রয় বা বিক্রয় ভাড়ায় অথবা অন্যভাবে কজা করলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হবে।

৩. এ আইনের নিয়ম অনুযায়ী কোনো নারীর স্বামী অথবা স্বামীর পিতামাতা, অভিভাবক বা আত্মীয় যে কেউ যৌতুকের জন্য যদি মৃত্যু ঘটায়। সংঘটনের প্রচেষ্টা চালায় বা গুরুতর জখম করে তবে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হবে।

আরো পড়ুনঃ বেকারত্ব কি? বাংলাদেশের বেকারত্ব দূরীকরণের উপায় সমূহ বর্ণনা কর।

৪. যে কেউ ধর্ষণ বা ধর্ষণের প্রয়াসে কোনো নারীর মৃত্যু ঘটানোর প্রচেষ্টা করলে বা তাকে গুরুতর জখম করলে এ আইনের নিয়ম অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হবে।

৫. যে কেউ ধর্ষণ বা ধর্ষণের প্রচেষ্টায় কোনো নারীর মৃত্যু ঘটলে অথবা ধর্ষণের পর কোনো নারীকে হত্যা করলে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে এবং তৎসহ জরিমানাযোগ্য হবে।

৬. উপরোক্ত শাস্তিযোগ্য যে-কোনো অপরাধে সহায়তা করলে এবং সহায়তার পরিনামে অপরাধ সংঘটিত হলে সহায়তাকারীকেও অপরাধী হিসেবে গণ্য করা হবে।

এ অধ্যাদেশের অবদানঃ বাংলাদেশে নারী নির্যাতন নিরোধকল্পে প্রণীত প্রথম আইনগত ব্যবস্থা হিসেবে ১৯৮৩ সালের নারী নির্যাতন অধ্যাদেশের গুরুত্ব অপরিসীম। নারী সমাজের নিরাপত্তা ও কল্যাণ বিধানে নিশ্চয়তা দানের ক্ষেত্রে এটি একটি বাস্তবমুখী পদক্ষেপ।

১৯৮৯ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশের ধারাসমূহ আলোচনা করা হলো

বাংলাদেশে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও মাদকাসক্তদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনকল্পে ১৯৮৯ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ জারি করা হয়। এ অধ্যাদেশে যেসব ধারা আছে সেগুলো নিম্নরূপ:

আরো পড়ুনঃ কল্যাণ রাষ্ট্র কি? কল্যাণ রাষ্ট্রের কার্যাবলী আলোচনা কর।

১. আইনের উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্যার্জনের জন্য জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বোর্ড প্রতিষ্ঠা। বোর্ডের দায়িত্ব হলো 

  • মাদকদ্রব্যের নিযন্ত্রণ এবং এর ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া রোধ; 
  • মাদকদ্রব্য সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের জন্য গবেষণা ও জরিপ মরিচালনা; 
  • উৎপাদন সরবরাহ ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ; 
  • মাদকাসত্তদের চিকিৎসা এবং পুনর্বাসন সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করা। 

মাদকদ্রব্যের কুফল সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও প্রচারমূলক কার্যক্রম গ্রহণও বোর্ডের দায়িত্ব।

২. জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা এবং সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর স্থাপন করা।

৩. এ আইনের অধীনে প্রদত্ত লাইসেন্স ব্যতিরেকে যে-কোনো ধরনের মাদকদ্রব্য উৎপাদন প্রক্রিয়াজাতকরণ, পরিবহন, আমদানি, রপ্তানি, প্রদর্শন, গুদামজাতকরণ, ব্যবহার ইত্যাদি নিষিদ্ধ করা হয়।

৪. এ আইনের অধীনে প্রদত্ত পারমিট ব্যতীত কেহ এ্যালকোহল পান করতে পারবে না।

৫. সিভিল সার্জন বা মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপকের লিখিত ব্যবস্থাপত্র ব্যতীত কোনো সলমানকে এ্যালকোহল পান করার অনুমতি দেয়া যাবে না।

৬. অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নিকট হতে লিখিত অনুমোদন ব্যতীত কোনো চিকিৎসক মাদকদ্রব্য ওষুধ হিসেবে অবস্থাপত্র দিতে পারবে না। ব্যবস্থাপত্রের মাধ্যমে একবারের অশি মাদকদ্রব্য ক্রয় করা যাবে না।

৭. আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে যে-কোনো বৈধ মাদকদ্রব্যের দোকান জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা পুলিশ কমিশনার সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিতে পারেন।

আরো পড়ুনঃ মাদকাসক্তি কি? এ সমস্যার সমাধানে একজন সমাজকর্মীর ভূমিকা আলোচনা কর।

৮. মাদকাসক্তের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনকালে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা।

৯. মাদকাসক্ত ব্যক্তির চিকিৎসা এবং তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য পরিচালক নির্দেশ দিতে পারেন।

১০. এ আইনের বিধান লঙ্ঘনকারীর জন্য বিভিন্ন মেয়াদের দণ্ডের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মাদক দ্রব্যের ধরন অনুযায়ী অনুর্ধ্ব দু’বছর থেকে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

এ অধ্যাদেশের উপযোগিতাঃ মাদকদ্রব্যের ব্যাপক ব্যবহার বাংলাদেশের গোটা সমাজকে গ্রাস করে চলেছে। বিশেষ করে যুবশক্তি এ কারণে আজ সমাজের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থার প্রতিরোধকালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ একটি সময়োচিত পদক্ষেপ। এ অধ্যাদেশের যথাযথ বাস্তবায়নে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, অভিভাবক সমাজ সচেতন ব্যক্তিদের সক্রিয় ভূমিকা পালন অপরিহার্য।

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, যুব সমাজের জীবনীশক্তি রক্ষা এবং একটি সমৃদ্ধশালী জাতি গঠন করতে হলে মাদকদ্রব্য নিযন্ত্রণ করা একান্ত প্রয়োজন। আর এ কারণেই ১৯৮৯ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশের যথাযথ প্রয়োগ অপরিহার্য।

Share your love
Shihabur Rahman
Shihabur Rahman

Hey, This is Shihabur Rahaman, B.A (Hons) & M.A in English from National University.

Articles: 927

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *