প্রশ্নঃ ১৯৮৫ সালের পারিবারিকী অধ্যাদেশ এবং তার ধারা সমূহ বর্ণনা করো।
ভূমিকাঃ ১৯৮৫ সালের পারিবারিক আদালত আইন একটি জনকল্যাণধর্মী সামাজিক আইন। এটি পারিবারিক আদালত অর্ডিন্যান্স, ১৯৮৫ নামে পরিচচিত । পারিবারিক সমস্যার সমাধান, সংহতি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখা, সুখী দাম্পত্য জীবন যাপনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিসহ সমাজে প্রচলিত প্রতিষ্ঠিত নানা সমস্যা যুগউপযোগী সমাধানের লক্ষ্য পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ ১৯৮৫ প্রণয়ন করা হয়। আশির দশকে এটি বাংলাদেশ সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক আইন হিসেবে বহুল আলোচিত হয়।
১৯৮৫ সালের পারিবারিকী অধ্যাদেশঃ পারিবারিক শান্তির নিবাস সুখী পরিবার। ১৯৮৫ সালের পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ প্রণয়নের সমাজের অন্যতম পূর্বশর্ত পারিবারিক জীবনে বিবাহ বিচ্ছেদ, দাম্পত্য কলহ, যৌতুকপ্রথা এবং সন্তানদের উত্তরাধিকার ইত্যাদি জটিলতা বাংলাদেশের পরিবারসমূহের অন্যতম সমস্যা। পারিবারিক সংহতি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং সুখী দাম্পত্য জীবনযাপনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে১৯৮৫ সালের পারিবারিক অধ্যাদেশ জারি করা হয়। মূলত ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের সহজ প্রয়োগের নিশ্চয়তা বিধানের লক্ষ্যেই এটি জারি করা হয়।
আরো পড়ুনঃ কিশোর অপরাধ কি? কিশোর অপরাধের কারণ গুলো আলোচনা কর।
১৯৮৫ সালের পারিবারিক আদালত অর্ডিন্যান্সের উল্লেখযোগ্য ধারা সমূহ উপস্থাপন করা হলোঃ
পারিবারিক আদালত গঠনঃ এ অধ্যাদেশ অনুসারে পরিবারিক আদালতের সংখ্যা হবে মুন্সেফ আদালতের সমসংখ্যক এবং মুন্সেফগণই বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
পারিবারিক আদালতের এখতিয়ার: আদালত ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের বিধান অনুযায়ী যেসব বিষয়ে মামলা গ্রহণ বিচারকার্য সম্পাদন ও মামলা নিষ্পত্তি করতে পারবে সেগুলো হলো: ক. বিবাহ বিচ্ছেদ খ. দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার গ. মোহরানা ঘ. ভরণ পোষণ ও. সন্তানদের অভিভাবক ও শিশুদের তত্ত্বাবধান।
সমনজারিকরণঃ পারিবারিক আদালতে কোনো আরজি পেশ করা হলে আদালত বিবাধীকে হাজির হওয়ার জন্য সমন জারি করবে। বিবাদীকে মামলা দায়েরের ত্রিশ দিনের মধ্যে নির্দিষ্ট তারিখে হাজির হবার জন্য সমন জারি করবে এবং সে অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
আরো পড়ুনঃ বেকারত্ব কি? বাংলাদেশের বেকারত্ব দূরীকরণের উপায় সমূহ বর্ণনা কর।
বাদি-বিবাদি অনুপস্থিতিতে করণীয়ঃ মামলা শুনানির চর্দিষ্ট তারিখে সময় বাদি-বিবাদি উভয় অনুপস্থিত থাকলে মমালাটি খারিজ করে দিতে পারেন। সমন জারি করা সত্ত্বেও যদি বিবাদী হাজির নাহয়, তা হলে আদালত একতরফাভাবে মামলা পরিচালনা করতে পারবে। অনুরূপভাবে বাদি উপস্থিত না হলেও আদালত মামলা খারিজ করে দিতে পারেন। তবে খারিজ আদেশ ঘোষণার ৩০ দিনের মধ্যে বাদি পুনরায় মামলা পরিচালনার জন্য আদালতে অবেদন করতে পারবে।এক্ষেত্রে বাদি যদি আদালতকে সন্তুষ্ট – করতে পারে যে, মামলা শুনানিকালে সে কি কারণে কারণে অনুপস্থিত ছিল আদালত তার অনুপস্থিতির কারণ যৌক্তিক মনে করলে। মামলা খারিজ আদেশ প্রত্যাহার করে পুনরায় মামলা পরিচালনার জন্য নির্দিষ্ট দিন ধার্য করবেন।
গোপন বিচারঃ পারিবারিক আদালত যথার্থ মনে করলে বাদি-বিবাদী উভয় পক্ষের অনুরোধে আলোচ্য অধ্যাদেশের আওতায় সমগ্র মমলা বা এর অংশবিশেষ গোপনে পরিচালনা করতে পারবেন।
সাফী তলবঃ পারিবারিক আদালত যেকোনো ব্যক্তিকে আদালতে হাজির হয়ে সাক্ষ্যদান বা কোনো দলিল দাখিল করার জন্য আদেশ জারি করতে পারেন।
কোর্ট ফিঃ পারিবারিক আদালতে উপস্থাপিত যে-কোনো মামলার দরখাস্তের জন্য পঁচিশ টাকা কোর্ট ফি দিতে হবে।
বিধি প্রণয়ন ক্ষমতাঃ সরকার সরকারি গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশের উদ্দেশ্য কার্যকর করার জন্য বিধি প্রণয়ন করতে পারবেন।
বিচার অনুষ্ঠানঃ আদালতে মামলার বিচার কার্য পরিচালনার জন্য উভয়পক্ষের অনুরোধের প্রেক্ষিতে উন্মুক্ত পরিবেশের পরিবর্তে বিচারকের নির্দিষ্ট কামরায় বিচারকার্য সম্পাদন করতে পারেন। নির্দিষ্ট তারিখে আদালত সাক্ষীদের সাক্ষ্য রেকর্ড করবেন। সাক্ষ্য গ্রহণের পর আদালত শেষবারের মতো আপোস করার চেষ্টা করবেন। ব্যর্থ হলে আদালত লিখিত রায় প্রদান করবেন। রায়ের ভিত্তিতে উক্ত আদালত বা জেলা জজের আদেশে রায় কার্যকর করা হবে।
আপিলঃ আদালতের রায়ের প্রতি কোনো পক্ষ অসন্তোষ প্রকাশ করলে নকল তোলার সময় বাদ দিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে জেলা জজ আদালতে আপিল করতে পারবেন। উল্লেখ্য যে, ১৯৩৯ সালের মুসলিম বিবাহ ভঙ্গ অধ্যাদেশের ২(৮) (ঘ) ধারা সমূহের ক্ষেত্র ব্যতীত অন্যান্য বিবাহ ভঙ্গের ক্ষেত্রে পাঁচ হাজার টাকার কম দেনমোহরের ক্ষেত্রে কোনো আপিল করা যাবে না।
আরো পড়ুনঃ গ্রামীণ সমাজসেবা কি? বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজসেবা কার্যক্রম গুলোর বর্ণনা দাও।
উপসংহারঃ বাংলাদেশের নারীদের আইনগত অধিকার এবং স্বার্থরক্ষার ক্ষেত্রে পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সমাজে প্রচলিত এবং প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন ধরনের এবং পারিবারিক বিরোধ বা দাম্পত্য কলহের মীমাংসার ক্ষেত্রে ১৯৮৫ সালের পারিবারিক আদালত অর্ডিন্যান্স এক বিশ্বস্মরণীয় মাইল ফলক। নারীদের অধিকার নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি মুসলিম পারিবারিক জীবনে আইনের মাধ্যমে অধিকার প্রতিষ্ঠায় এ আইনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম।