fbpx

রাষ্ট্রবিজ্ঞান কী? রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের পদ্ধতি কত প্রকার ও কী কী?

প্রশ্নঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান কী? রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের পদ্ধতি কত প্রকার ও কী কী? সংক্ষেপে আলোচনা কর।

ভুমিকা: রাষ্ট্রবিজ্ঞান (Political Science) সমাজবিজ্ঞানের একটি শাখাবিশেষ; যেখানে পরিচালনা প্রক্রিয়া রাষ্ট্র, সরকার এবং রাজনীতি সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করা হয়। রাষ্টবিজ্ঞান একটি ব্যবস্থাপনাত্বক বিজ্ঞান যা রাষ্ট্রব্যবস্থা, সরকার, নীতিমালা, রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা, সামাজিক বিজ্ঞান, অর্থনীতি, আইন ও বিচারপতির ক্ষেত্রে গবেষণা এবং বিশ্লেষণে মূলত ব্যবহৃত হয়। এর মাধ্যমে মানুষের সামাজিক বিজ্ঞান এবং সার্বজনীন বিজ্ঞানের সংযোগ বিবেচনা করা হয় এবং রাষ্ট্র ও সমাজের কাঠামো সম্পর্কে সঠিক সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য গড়ে উঠে। 

রাষ্ট্রবিজ্ঞান পরিচিতি

রাষ্ট্রবিজ্ঞান হল রাজনীতি ও সরকারের তত্ত্ব এবং অনুশীলনের অধ্যয়ন। এটি একটি আন্তঃবিভাগীয় ক্ষেত্র যা ইতিহাস, অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান, দর্শন এবং অন্যান্য সামাজিক বিজ্ঞানের উপাদানগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে। রাজনৈতিক বিজ্ঞানীরা অধ্যয়ন করেন যে কীভাবে ক্ষমতা অর্জিত হয়, বজায় রাখা হয় এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যবস্থায় ব্যবহার করা হয়, উভয় দেশীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে। 

অধ্যাপক গিলক্রিস্ট এর মতে; ” Political Science deals with the State and Government.” অর্থাৎ ”রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাষ্ট্র ও সরকার নিয়ে আলোচনা করে৷”

ইউটিউবে ভিডিও লেকচার দেখুনঃ


অধ্যাপক গেটেল এর মতে; ”রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাষ্ট্রের অতীত; বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করে৷” 

অধ্যাপক বার্জেস এর মতে; ”রাষ্ট্রবিজ্ঞান হল স্বাধীনতা ও সার্বভৌমিকতার বিজ্ঞান৷”

সাধারণত, রাষ্টবিজ্ঞান তথ্য বিজ্ঞান, নীতি বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান, অর্থনীতি এবং প্রশাসনিক বিজ্ঞানের সংগঠিত সংকল্পনা বিজ্ঞানের মধ্যে বিশ্লেষণ এবং সংশোধনের পদ্ধতিগুলি ব্যবহার করে। সংক্ষেপে বললে, রাষ্টবিজ্ঞান হলো রাষ্ট্র ও সমাজের কাঠামো নির্ধারণ, নিরীক্ষণ, সংগঠন এবং ব্যবস্থাপনার জন্য আবদ্ধ একটি বিজ্ঞান।

আরো পড়ুনঃ ম্যাকিয়াভেলীবাদ কি? ম্যাকিয়াভেলীকে আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক বলা হয় কেন?

রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের পদ্ধতি

রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের পদ্ধতি ব্যাপক। যে কোন বিষয় বা শাস্ত্র সম্পর্কে জ্ঞান বা ধারণা লাভের জন্য যেমন এর পাঠ বা অধ্যয়ন জরুরি, তেমনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান সম্পর্কে জ্ঞান লাভের জন্য এর অধ্যয়ন, মূল্যায়ন প্রভৃতি সুশৃঙ্খল প্রণালী বা পদ্ধতি জানা জরুরি। নিম্নে রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের পদ্ধতি সমূহ আলোচনা করা হলো-

google news

১. ঐতিহাসিক পদ্ধতি (Historical Method): অতীতের জ্ঞান এবং বর্তমানের পর্যালোচনা ভবিষ্যতের ইঙ্গিতবাহী আলোচনার পথ প্রশস্ত করে। রাষ্ট্র সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রকৃতি জানতে হলে তাদের উদ্ভব ও ক্রমবিবর্তনের ধারা সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা দরকার। ঐতিহাসিক পদ্ধতির মাধ্যমে এ ধারণা লাভ করা যায়। এ পদ্ধতির মাধ্যমে রাষ্ট্র অতীতে কেমন ছিল এবং কিভাবে বর্তমান অবস্থায় উপনীত হয়েছে সে বিষয়ে ঐতিহাসিক তথ্য সংগ্রহ করে তা ব্যাখ্যা করা হয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী Pollock এর ভাষায়, “The historical method seeks an explanation of what institutions are trending to be, more in the knowledge of what they have been and how they, came to be, what they are, than in the analysis of then as they stand.”

২. পর্যবেক্ষণমূলক পদ্ধতি (Observational Method): রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের পদ্ধতি সমূহের মধ্যে পর্যবেক্ষণমূলক পদ্ধতি অন্যতম। Lord Bryce, Lowell প্রমুখ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ এ পদ্ধতির উপর গুরুত্বারোপ করেছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গঠন, প্রকৃতি, কার্যাবলি যথাসম্ভব ব্যাপক ও নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে পর্যবক্ষণ করলে কতকগুলো সাধারণ সূত্রের সন্ধান পাওয়া যায়। এগুলো রাষ্ট্রবিজ্ঞানে সাধারণ তত্ত্বের মর্যাদা লাভ করতে পারে যার মাধ্যমে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যয়ন সুচারুরূপে সম্ভব হতে পারে।

আরো পড়ুনঃ সেন্ট অগাস্টিনের রাষ্ট্রদর্শন ও ন্যায়তত্ত্ব সম্পর্কে আলোচনা কর

৩. পরীক্ষামূলক পদ্ধতি (Experimental Method): রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ অনেক সময় পরীক্ষামূলক পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকেন। সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত রাষ্ট্রগুলোতে উপযুক্ত ধরনের সরকার গঠনের জন্য গবেষণা চালানো হয়। তাছাড়া, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পর্যালোচনা এক অর্থে নতুন নতুন আইনকানুন, ন্যায়নীতির ধারণা এবং তত্ত্ব ও দর্শনের পরীক্ষামূলক আলোচনা মাত্র। এ ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফল অসন্তোষজনক প্রতিপন্ন হলে তা পরিহার করা হয় এবং সন্তোষজনক হলে অন্যান্য দেশে প্রয়োগের কথা বলা হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে অসুবিধা হল রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের উপাদানসমূহ সদা পরিবর্তনশীল, সচেতন এবং নিয়ন্ত্রণাধীন নয়।

৪. দার্শনিক পদ্ধতি (Philosophical Method): দার্শনিক পদ্ধতি প্রবক্তাদের মধ্যে প্লেটো, রুশো, টমাস মুর, বেন্থাম, হেগেল, কান্ট, হবস, গ্রীন প্রমুখ ব্যক্তিবর্গের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এ পদ্ধতি অনুসারে কতকগুলো বিষয়কে অনুমানের ভিত্তিতে স্বতঃসিদ্ধ বলে ধরে নেওয়া হয় এবং অবরোহ পদ্ধতি তে কতকগুলো সাধারণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। রাষ্ট্রের প্রয়োজন, প্রকৃতি, কার্যাবলি, এর আদর্শ ব্যক্তির সাথে তার সম্পর্ক প্রভৃতি বিষয়ে মীমাংসা দার্শনিক পদ্ধতিতে করা হয়।

৫. তুলনামূলক পদ্ধতি (Comparative Method): এ পদ্ধতিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রতিষ্টান ও ঘটনাবলির বিশ্লেষণ করা হয় এবং তুলনামূলক আলোচনার ভিত্তিতে কার্যকারণ সূত্র নির্ধারণ করা হয়। এ পদ্ধতিতে অতীত এবং বর্তমানের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যেও তুলনামূলক বিচার-বিশ্লেষণের মাধ্যমে কোন রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়। কোন একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থার ত্রুটিবিচ্যুতি এ পদ্ধতিতে স্পষ্টত প্রতিপন্ন হয়। তবে এ পদ্ধতি প্রয়োগের ক্ষেত্রেও সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। অ্যারিষ্টটল ১৫৮টি City State এর তুলনামূলক বিশ্লেষণের দ্বারা তাঁর রাষ্ট্রনীতির সিদ্ধান্তগুলো গ্রহণ করেছিলেন।

৬. আইনমূলক পদ্ধতি (Judicial Method): এ পদ্ধতি অনুসারে রাষ্ট্রকে একটি আইনমূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ্য করা হয়। আইনমূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আইন প্রণয়ন ও আইন কার্যকরী করার মাধমেই রাষ্ট্রের দায়িত্ব সম্পূর্ণ হয়। Prof. Gettel এর ভাষায়, “The judicial or legalistic method regards the state as a legal person or corporation existing for the creation and enforcement of law.”

আরো পড়ুনঃ স্বাধীনতা বলতে কি বুঝ? আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে স্বাধীনতার রক্ষাকবচগুলো আলোচনা কর।

৭. জীববিজ্ঞানমূলক পদ্ধতি (Biological Method): জীবদেহের সাদৃশ্যমূলক আলোচনার ভিত্তিতে রাষ্ট্রের গঠন, ক্রমবিকাশ, বিবর্তন, কার্যাবলি ইত্যাদি ব্যাখ্যা করাই এ পদ্ধতির মুখ্য উদ্দেশ্য। রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নের ক্ষেত্রেও এ ধরনের সাদৃশ্যমূলক আলোচনার স্বার্থকতা অতিমাত্রায় সীমাবদ্ধ। রাষ্ট্রের প্রকৃতি ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি অনেক সময় ভ্রান্ত ও বিপজ্জনক সিদ্ধান্ত সৃষ্টি করে।

৮. মনোবিজ্ঞানমূলক পদ্ধতি (Psychological Method): রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়েনের পদ্ধতি হিসেবে মনোবিজ্ঞানমূলক পদ্ধতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। রাষ্ট্রের স্বরূপ ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভের জন্য নাগরিকদের মানসিক প্রবণতা বিষয়ে জ্ঞান থাকা দরকার। তাছাড়া, রাজনৈতিক দলব্যবস্থা, নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা, জনমত প্রভৃতি বিষয় বিশ্লেষণের জন্য সামাজিক মনোবিজ্ঞানের সাহায্য নিতে হয়।

৯. অভিজ্ঞতামূলক পদ্ধতি (Empirical Method): আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যয়নে এ পদ্ধতি প্রয়োগের বিশেষ প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। অত্যাধুনিক আচরণবাদী রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণই অভিজ্ঞতাবাদী পদ্ধতির উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করে থাকেন। এ পদ্ধতিতে রাষ্ট্রবিজ্ঞান অনুশীলনের জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং বৈজ্ঞানিক অভিজ্ঞতার সাহায্য নেওয়া হয়।

১০.  সাক্ষাৎকার পদ্ধতি: এ পদ্ধতির মাধ্যমে সমাজের সর্বশ্রেণীর মানুষের নিকট থেকে সরাসরি তথ্য সংগ্রহ করা যায়। তাই বর্তমানে এ পদ্ধতি খুবই জনপ্রিয়।

১১. পরিসংখ্যানগত পদ্ধতি: বর্তমানে রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়নে সংখ্যাত্মক পদ্ধতিও অনুসরণ করা হয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞান যেহেতু সমাজবিজ্ঞানের একটি অংশ সেহেতু সমাজজীবনে অনেক বিষয় নিয়ে পরিসংখ্যানমূলক পদ্ধতির মাধ্যমে গবেষণা করতে হয়।

আরো পড়ুনঃ আইনসভা কি? আইনসভার ক্ষমতা হ্রাসের কারণসমূহ আলোচনা কর

১২. প্রতিষ্ঠানগত পদ্ধতি: সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ, রাজনৈতকি দল, প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে হলে এ পদ্ধতির মাধ্যমে অগ্রসর হতে হয়।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনা করার জন্য কোন পদ্ধতি সবচেয়ে বেশি প্রযােজ্য তা সঠিকভাবে নির্ণয় করা কঠিন। কারণ কোনো একটি ঘটনার সাথে ওতপ্রােতভাবে অনেকগুলো ঘটনা জড়িত থাকে, তাই বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে এদের বিশ্লেষণ করতে হয়।

Shihabur Rahman
Shihabur Rahman
Hey, This is Shihabur Rahaman, B.A (Hons) & M.A in English from National University.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

ফেসবুক পেইজ

কোর্স টপিক