fbpx

Robinson Crusoe বাংলা Summary

Key information of Robinson Crusoe

  • Author: Daniel Defoe
  • Type Of Work: Novel
  • Genre: Adventure story; novel of isolation
  • Language: English
  • Written Time: 1719
  • Written place: London, England
  • Date Of First Publication: 1719
  • Publisher: William Taylor
  • Narrator: Robinson Crusoe is both the narrator and main character of the tale.
  • Point Of View: Crusoe narrates in both the first and third person.
  • Tense: Past
  • Time Setting: From 1659 to 1694
  • Place setting: York, England; then London; then Sallee, North Africa; then Brazil; then a deserted island off Trinidad; then England; then Lisbon; then overland from Spain toward England; then England; and finally the island again
  • Protagonist: Robinson Crusoe
  • Themes: The ambivalence of mastery; the necessity of repentance; the importance of self-awareness
  • Motifs: Counting and measuring; eating; ordeals at sea
  • Symbols: The footprint; the cross; Crusoe’s bower

Character List of Robinson Crusoe

  • Robinson Crusoe
  • Friday
  • The Portuguese captain
  • The Spaniard
  • Xury
  • The widow

Robinson Crusoe Bangla Summary (বাংলায়)

রবিনসন ক্রুসো একটি বিখ্যাত উপন্যাস। উপন্যাসটি লিখেছেন একজন বিখ্যাত ইংরেজ ব্যবসায়ী, লেখক, সাংবাদিক ও গোয়েন্দা ড্যানিয়েল ডিফো Daniel Defoe. উপন্যাসটি প্রকাশ করা হয়েছিল ১৭১৯ সালে। এই উপন্যাসটিতে রবিনসন ক্রুসো নামের এক ব্যক্তির কাল্পনিক আত্মজীবনী রচনা করা হয়েছে। এই ব্যক্তি ভেনিজুয়েলার কাছে একটি নির্জন বিষুবীয় দ্বীপে পরিতক্ত অবস্থায় ২৮ বছর অবস্থান করেন। সেই সময় আমেরিকার উপজাতী, বন্দী, ও বিদ্রোহীদের সঙ্গে তার অনেক সংঘর্ষ হয়। পরে তার আত্মীয়-স্বজন তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে। এই উপন্যাসে রবিনসন ক্রুসো সর্বমোট চারটি সমুদ্র যাত্রা করেছিলেন চলো সেগুলো আমরা পর্যায়ক্রমে জেনে আসি।

রবিনসন ক্রুসো এর পরিচয়

১৬৩২ সালে ইয়র্ক শহরের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে রবিনসন ক্রুসো জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার অনেক ইচ্ছা ছিল তাকে আইনজীবী বানাবেন। যার কারণে তার বাবা তাকে লয়ে পড়াতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সে তার বাবার ইচ্ছাটাকে পছন্দ করতেন না রবিন্সন চাইতেন সমুদ্রযাত্রা করতে এবং অজানাকে জানতে। তার বাবাকে যখন সে বলল তার লয়ে পড়তে ইচ্ছে হয় না তার ইচ্ছে হয় সমুদ্র যাত্রা করতে এবং দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়াতে। তখন তার বাবা তাকে সমুদ্র যাত্রা করতে নিষেধ করল এবং সমুদ্র যাত্রার অনেক ভয়াবহ দিক তার সামনে তুলে ধরল। 

কিন্তু ছোটবেলা থেকেই রবিনসনের ইচ্ছা ছিল সে নাবিক হবে এবং বিভিন্ন এডভাঞ্চারাস কাজকর্ম করবেন। কিছুদিন রবিনসন তার বাবার কথামতো সমুদ্রযাত্রার ইচ্ছাটাকে দমিয়ে রাখলেন কিন্তু এর মানে এই নয় তার সমুদ্রযাত্রার স্বপ্ন সে ভুলে গিয়েছে। রবিনসন প্রায় ভাবতো সে তার স্বপ্নটাকে পূরণ করার জন্য প্রয়োজনে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাবেন। তার বয়স যখন ১৯ বছর তখন সে সমুদ্রযাত্রা করার একটি সুযোগ পেল যার কারণে সে বাড়িতে কাউকে না বলেই বাড়ি থেকে পালিয়ে সমুদ্রযাত্রার জন্য বের হলো।

১৬৫১ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর রবিনসনের প্রথম সমুদ্র যাত্রা।

রবিনসন তার প্রথম সমুদ্রযাত্রা শুরু করলো ১৬৫১ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর। রবিনসনের এক বন্ধুর বাবা জাহাজে করে লন্ডনে যাবে সেই সুবাদে রবিনসন তার বন্ধুর কাছ থেকে সমুদ্র যাত্রার নিমন্ত্রণ পেল। রবিনসন সিদ্ধান্ত নিল সে তার বাবা-মাকে না জানিয়েই বাড়ি থেকে লন্ডনের উদ্দেশ্যে তার প্রথম সমুদ্র যাত্রা করবেন। যার কারণে সে কাউকে কোন কিছু না বলে বাড়ি থেকে বেশ কিছু পাউন্ড নিয়ে বেরিয়ে পড়ল লন্ডনের উদ্দেশ্যে। 

ইউটিউবে ভিডিও লেকচার দেখুনঃ


কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত যাত্রার প্রথম থেকেই তাদের জাহাজে দুর্ভোগ দেখা দিল। বন্দর থেকে বেশি দূর না যেতেই তাদের জাহাজ প্রবল ঝড়ের কবলে পড়ে গেল। রবিনসন উত্তাল সাগরের বড় বড় ঢেউ দেখে ভয় পেয়ে গেল এবং অসুস্থ হয়ে পড়ল সাথে সাথে সে প্রতিজ্ঞা করলো সে যদি কোন ভাবে এখান থেকে ফিরে যেতে পারে তাহলে আর কোনদিন সে সুমুদ্র যাত্রা করবে না। এভাবেই সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ চলতে থাকল দুদিন ধরে। তারপরে সমুদ্র কিছুটা শান্ত হল। ৬ দিন পর তারা ইয়ার মাউন্ট এ পৌঁছালো। কিন্তু বাতাসের বেগটা উল্টোদিকে হওয়ার কারণে তাদের বন্দরের বাহিরে অবস্থান করতে হলো। 

কিন্তু প্রকৃতির শান্ত না হয়ে ঝড়ের বেগ আরো বাড়তেই শুরু করল। অষ্টম দিনে একটি বিরাট ঢেউ জাহাজের উপরে আছড়ে পড়ল এবং জাহাজের মালের ভরেই জাহাজ ডুবতে শুরু করল আর তার সাথে ঢেউ এর পানি তো আছেই। সাহায্যের জন্য জাহাজের ক্যাপ্টেন বাত্রা ছড়িয়ে দিলেন। তাদের ভাগ্য ভাল ছিল কারন অন্য একটি জাহাজ সে দিক দিয়েই যাচ্ছিল। সেই জাহাজটি তাদের লাইফবোটে সকলকে তুলে নিল। তারপরে তারা পায়ে হেঁটে হেঁটে ইয়ারমাউথ শহরে এসে পৌঁছায়। সেই শহরের মানুষ গুলো খুবই ভালো ছিল। তারা তাদের সাথে খুবই সুন্দর আচরণ করল এবং তারা তাদেরকে পড়ার জন্য নতুন পোশাক দিল এবং সেখান থেকে লন্ডনে ফিরে যেতে যে টাকা পয়সা লাগবে সেগুলো তারা ব্যবস্থা করে দিল। সমুদ্রের মধ্যে ঝড়ের কবলে পড়ে রবিনসন যে প্রতিজ্ঞা করেছিল সে কিন্তু তার প্রতিজ্ঞা ভুলে গেল এবং সে লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা দিল। অবশেষে লন্ডনে এসে পৌঁছালো।

গিনিতে রবিনসনের দ্বিতীয় সমুদ্রযাত্রা

রবিনসন খুবই বন্ধু সুলভ ছিলেন। লন্ডন শহরে আসার কিছুদিনের মধ্যে তার অনেক বড় বড় লোকের সাথে বন্ধুত্ব হল। তার বন্ধুদের মধ্যে একজন আফ্রিকার গিনিগামী জাহাজের ক্যাপ্টেন। তিনি জাহাজের ব্যবসা করতেন যার কারণে তিনি প্রায় গিনি উপকূলে যাতায়াত করতেন। সেই ক্যাপ্টেন একদিন রবিনসনকে বললেন, তুমি যদি কিছু মনোহরি মালামাল নিয়ে আমার জাহাজে করে গিনি উপকূলে যাও তাহলে তুমি মোটা অংকের টাকা লাভ করতে পারবে। 

রবিনসন তো এই ধরনের কিছু একটা করতে চাচ্ছিলেন। তাই সে লন্ডনের বসবাসরত তার কিছু আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে কিছু পাউন্ড ধার করল এবং সে সেই পাউন্ড দিয়ে কিছু প্লাস্টিকের খেলনা, কিছু পুঁতির মালা এবং আরো কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস কিনল যেটি ওই অঞ্চলের মানুষদের খুবই পছন্দের। এরপরে ঈশ্বরের নাম নিয়ে রবিনসন তার দ্বিতীয় বারের মতো যাত্রা শুরু করলেন। এই যাত্রায় রবিনসনের মোটা অংকের লাভ হল। 

অংকের হিসাব করলে দেখা যাবে ৫ পাউন্ডের জিনিসে সে লাভ করেছে ২০ পাউন্ড। এই যাত্রাতে রবিনসনের দুই ধরনের লাভ হল এক সে টাকা লাভ করতে পারল আর দুই সে জাহাজ চালানো অনেকটাই শিখে গেল। রবিনসনের আনন্দের শেষ থাকলো না। তাই সে তার লাভের টাকা তার একজন বন্ধু ভাবাপূর্ণ বিধবা নারীর কাছে রেখে দিলেন। এরপর রবিনসন দ্বিতীয় বারের মতো গিনিতে বাণিজ্য করার উপলক্ষে প্রস্তুতি নিতে থাকলেন।

রবিনসন এর তৃতীয় সমুদ্র যাত্রা

অল্পতে বেশি লাভের জন্য রবিনসন দ্বিতীয় বার বাণিজ্যর উদ্দেশ্যে গিনীতে যাত্রা করলেন। গিনি থেকে বাণিজ্য করে ফিরে আসার পথে কয়েকজন মুর দস্যু তাদের জাহাজে আক্রমণ করল এবং তাকে সহ সবাইকে ধরে ফেলল এবং ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রয় করে দিল। রবিনসনকে বিক্রয় করা হলো সাউথ আফ্রিকার স্যালি (Sallee) শহরের এক মনিবের কাছে। রবিনসনের মনিব প্রকৃতপক্ষে খুবই ভালো মানুষ ছিলেন। সে রবিনসনকে খুবই ভালোবাসতেন। রবিনসনের মনিবের মাছ ধরার অভ্যাস ছিলেন। এদিকে রবিনসন মাছ কিভাবে ধরতে হয় সেই টেকনিকটা খুবই ভালোভাবে জানতেন যার কারণে সে তার মনিবের কাছে আরও প্রিয় পাত্র হয়ে ওঠে। 

google news

রবিনসন সব সময় চেষ্টা করতো কিভাবে সে তার মালিকের কাছ থেকে পালিয়ে চলে যাবেন। কিন্তু সে কোনভাবেই পালানোর সুযোগ পাচ্ছিলেন না। এখানে প্রায় তার দুই বছর কেটে যায়। একদিন সে পালানোর একটি সুযোগ পেল। সে একটি মুর ছেলের সাথে করে সমুদ্রে মাছ ধরতে যায়। রবিনসন কৌশল করে নৌকাটি একটু গভীর সমুদ্রে নিয়ে যায় এবং মুর ছেলেটিকে ধাক্কা মেরে পানিতে ফেলে দেয়। এবং তাকে ভয় দেখায় যদি সে বাড়ি ফিরে না যায় তাহলে তাকে গুলি করে মেরে ফেলবে। আশ্চর্য বিষয় হলো মুর ছেলেটি তাকে ভয় না পেয়ে বরঞ্চ তাকে সাহায্য করতে চাইল। ছেলেটির কথা শুনে রবিনসন তাকে আবার নৌকায় তুলে নিল। আবার তারা যাত্রা শুরু করলো। 

দুইদিন বেস্ট কষ্ট করে চলার পর একটি পর্তুগিজ জাহাজের দেখা পেল। জাহাজটি তাদের কাছে আসতেই রবিনসন জাহাজের নাবিকদেরকে সব কিছু বলে দিল জাহাজের নাবিকগণ রবিনসনকে জাহাজে তুলে নিল এবং তাকে বাজিলের বন্দরে নামিয়ে দিল এবং জাহাজের ক্যাপ্টেন নিজের কাজের জন্য মোট ছেলেটিকে রবিনসনের কাছ থেকে ক্রয় করে নিল।

কিছুদিন ব্রাজিলের রবিনসনের খুব সুখেই দিন কাটলো। তিনি অনাবাদি জমি ক্রয় করে সেখানে চাষাবাদ শুরু করলেন। চাষাবাদ করে তিনি তার নিজের অবস্থার বেশ পরিবর্তন আনলেন এবং সেখানে তিনি উপনিবেশ স্থাপনকারী হিসেবে সফলতা লাভ করলেন। বাজিলে সেই সময়কার দাস-ব্যবসা ও তাদের অর্থনৈতিক সুবিধার কথা জানতে পেরে রবিনসন আগ্রহী হয়ে উঠলেন। অন্যদিকে রবিনসন ছোটবেলা থেকেই অস্থির চিত্রের ছিলেন। তার মাথায় আবার সমুদ্র যাত্রার ভূত চাপলো। সে চাইলো আবার সমুদ্র যাত্রা করবে। সেখানকার স্থানীয়রা তাকে পরামর্শ দিল গিনিতে গিয়ে বাণিজ্য করতে। রবিনসনের মাথায় সমুদ্র যাত্রা নেশা তো আছেই এবং স্থানীয়রা যখন তাকে গিনিতে গিয়ে দাস ব্যবসায়ের কথা বলল তখন রবিনসন আবার দাস সংগ্রহের জন্য গিনির উদ্দেশ্যে রওনা দিল।

গিনিতে বাণিজ্য করার জন্য রবিনসনের চতুর্থ সমুদ্র যাত্রা

রবিনসন বাণিজ্য করার উদ্দেশ্যে বাজিল থেকে চতুর্থবারের মতো গিনির দিকে রওনা দিলেন। সমুদ্র যাত্রার প্রথম কয়েকটা দিন তাদের খুব ভালোই যাচ্ছিল তবে হঠাৎ করে সমুদ্রে ভীষণ ঝড় উঠলো। সেই ঝড়ের কবলে রবিন্সনের জাহাজটি ত্রিনিদাদ দ্বীপের কাছে গিয়ে বালিতে আটকে গেল। তাদের জাহাজের তলাটি ভীষণভাবে আটকে যায় চরের বালিতে তারা কোনোভাবেই সেখান থেকে জাহাজটিকে সরাতে পারে না। 

জীবন বাঁচানোর তাগিদে তারা সেই জাহাজে রক্ষিত যে ছোট নৌকাগুলো ছিল সেগুলো তো করে ডাঙ্গার উদ্দেশ্যে রওনা দেয় কিন্তু আবহাওয়া খারাপ থাকায় একটা জোরে ঢেউয়ে তাদের নৌকা গুলো উল্টিয়ে দেয়। তারা সবাই ডুবে যায়। রবিনসনের ভাগ্য ভালো ছিল বলে সে পানির মধ্য থেকে ভেসে ওঠে এবং অনেক কষ্ট করে সাঁতার কেটে অর্ধমৃত অবস্থায় দ্বীপের কিনারায় এসে পৌঁছায়। এই দ্বীপের বন্য জীবজন্তুর ভয়ে রবিনসন সারারাত একটি গাছের ওপরে কাটায়।

সকালে ঘুম ভাঙলে রবিনসন দেখে আকাশ একদম পরিষ্কার। ঝড় উঠেছিল বলে মনে হয় না। রবিনসন লক্ষ্য করে ঝড়ের বেগ ওদের বড় জাহাজটিকে প্রায় ডাঙ্গার কাছেই নিয়ে এসেছে। রবিনসন ভাবল আমরা যদি জাহাজেই থেকে যেতাম তাহলে হয়তো আজ কাউকে মরতে হতো না। এখন ভেবে তা আর কি হবে। রবিনসনের প্রচন্ড খিদা পেয়েছে। সে জাহাজে গিয়ে খাবারের সন্ধান করতে লাগলো এবং সে দেখল জাহাজের খাবার সবগুলো ঠিকই আছে। সেখান থেকে সে পেট পুরে খেয়ে নিল। 

তারপর জাহাজ থেকে সে বেশ কয়েকটি তক্তা এবং ছুতোরের জিনিসপত্রগুলো তীরে আনলো। রবিনসন রাত কাটানোর জন্য দুই পাহাড়ের মাঝখানে একটু সমতল জায়গায় একটি মাচা বানালো। তারপরে সে বন্দুক হাতে নিয়ে পুরো দ্বীপটি ঘুরে দেখার জন্য বের হলো। সে যখন পাহাড়ের ওপরে উঠলো তখন তার মনটা একদম খারাপ হয়ে। গেল সে ভাবতে থাকলো ঈশ্বরই জানেন কতদিন থাকতে হবে এই দ্বীপে।

রাতে অবশ্যই তার কোন ঝামেলা হলো না। পরের দিন ঘুম থেকে উঠে তিনি স্থির করলেন প্রয়োজনীয় যে জিনিসগুলো জাহাজে এখনো ভালো আছে সেগুলো নামিয়ে আনতে হবে। সেদিন থেকে সময় পেলেই রবিন জাহাজ থেকে জিনিসপত্র নামিয়ে নিয়ে চলে আসেন। ভাটায় যখন পানি নিচে নেমে যায় তখন তিনি জাহাজের মালপত্র দ্বীপে নিয়ে চলে আসেন। সময় পেলে হয়তো পুরো জাহাজ টাই তিনি তুলে নিয়ে আসতেন। এই দ্বীপে আসার ১৪ দিনের মাথায় সমুদ্রে এমন ঝড় উঠলো তার ওই ভাঙ্গা জাহাজটাকে কোথায় যেন নিয়ে চলে গেল।

জাহাজ থেকে তিনি প্রায় সব জিনিসই নামিয়ে নিয়েছিলেন। এখন এইসব জিনিসপত্র রাখবে কোথায় সেটাও এক ভাবনা। অনেক খোঁজাখুঁজির পরে রবিনসন একটা পাহাড়ে ওঠার মধ্যপথে খানিকটা সমতল জায়গা খুঁজে পেলেন। তার উল্টোদিকে উঠে গেছে একটা খাড়া পাহাড়। সে দিক থেকে কোন বন্য জীবজন্তুর আক্রমণের সম্ভাবনা খুবই কম। এবং বাদ বাকি তিন দিকে তিনি নারকেল পাতা দিয়ে বেশ শক্ত করে এবং উঁচু করে বেড়া দিলেন। প্রয়োজন হলেই তিনি মই লাগিয়ে যাতায়াত করতেন আর ভেতরে ঢুকেই মইটা তুলে নামিয়ে রাখতেন মাটিতে। তিনি সব জিনিসপত্র সেখানেই রাখলেন এবং তৈরি করলেন একটি বড় থাকার মত ছাউনি। এছাড়াও পাহাড়ের এক অংশে বড় একটা গর্ত ছিল সেটাও তিনি ঘর হিসেবে ব্যবহার করলেন।

নির্জন দ্বীপে রবিনসনের জীবনযাত্রা

তার থাকার মত বাসা তৈরি করার পরে এবার তিনি ভাবলেন কিছু আসবার পত্রের প্রয়োজন। যদিও এসব তৈরিতে তার কোন অভ্যাস ছিল না। বিভিন্ন ধরনের যন্ত্র ব্যবহার করে তার আসবাবপত্রগুলো তৈরি করতে অনেক কষ্ট হচ্ছিল। প্রথমে তিনি বন থেকে কাঠ নিয়ে এসে তৈরি করলেন একটা চেয়ার, তারপরে টেবিল, সেল আরো কত কি।  এক ধরনের শক্ত জংলা গাছের কাঠ দিয়ে তৈরি করল কদাল। আর জাহাজের ভাঙ্গা একটা লোহার টুকরো পুড়িয়ে পিটিয়ে তৈরি করল জ্বালানি কাঠ কাটার কুড়াল। 

এর মধ্যেই একটা মজার ঘটনা ঘটলো। রবিনসন জাহাজ থেকে নামানোর জিনিসপত্র যখন নাড়াচাড়া করছিলেন তখন তিনি সেখানে একটা ছোট থলে পেলেন। থলেতি খুলে দেখলেন তাতে আছে কিছুটা তুস। তুস তার দরকার ছিল না। দরকার ছিল থলেতি।  তিনি তুস গুলো মাটিতে ফেলে দিলেন । এর কিছুদিন পরেই বৃষ্টি শুরু হল। বৃষ্টি হবার কয়েকদিন পর রবিনসন আশ্চর্য হয়ে গেল। সে দেখল যে তুস গুলো সে ফেলে দিয়েছিল সেগুলো থেকে কিছু অজানা গাছের বেশ অংকুর দেখা দিয়েছে। সে খুব আনন্দিত হল। সে কোদাল দিয়ে সামনের আরো কিছু জমি কুপিয়ে রাখল। 

একদিন দেখল আসলে সেই চারা গাছগুলো ধান গাছের আর সাথে আরো কিছু রয়েছে জব গাছের। তিনি এই ধান গাছের চারা গুলো সরিয়ে লাগিয়ে দিলেন । আর  কিছুদিন পর তিনি সেখান থেকে বেশ কিছু ধান এবং জব পেলেন। এইবার রবিনসন ভাবতে থাকলো আসলে এগুলো মাড়াই করবে কিভাবে। তার কাছে তো কোন যাতা কল নেই। রুতি ভাজবার জন্য তাওয়াও নেই। যাইহোক তিনি বুদ্ধি খাটিয়ে শক্ত কাঠ দিয়ে যাতা তৈরি করলেন। আর নরম মাটি থালার মত পিটিয়ে আগুনে পুড়িয়ে তৈরি করলেন রুটি ভাজার তাওয়া।

এবার রবিনসনের বড় সমস্যা হল পোশাকের। জাহাজে যে পোশাকগুলো ছিল সেগুলো কিছুদিন পর সব শেষ হয়ে গেল। আচ্ছা যাই হোক সেই বনে তো আর পোশাক তৈরি করার কল পাওয়া যাবে না। তখন আবার রবিনসন নতুন বুদ্ধি বের করলেন। রবিনসন ছাগল স্বীকার করে তার চামড়া ঘরের মধ্যে রেখেছিলেন। সেই চামড়া দিয়ে তিনি অনেক কষ্ট করে তৈরি করলেন লজ্জা ঢাকার মতো পোশাক। তার গাল ভর্তি দাড়ি আর গোফ এবং তার ওপরে ছাগলের পোশাক।  এমন একখানা চেহারা হয়েছে রবিনসনের যে যদি তার আত্মীয়-স্বজনরা তাকে দেখে তাহলে তো তারা অজ্ঞান হয়ে যাবে অথবা তারা ধরেই নিবে রবিনসন পাগল হয়ে গিয়েছে।

রবিনসন পৃথিবীর সাথে সম্পর্কহীন একটি দ্বীপে বাস করলেও সে তিন মাস বছরের হিসাব ঠিক ঠাক রেখেছিলেন। ১৬৫৯ সালের এক সেপ্টেম্বর রবিনসনের নৌকাডুবি হয় যা তার জানা ছিল। তারপর থেকেই রবিনসন প্রতিদিন পাহাড়ের গায়ে পরপর তারিখ লিখে সুন্দর করে একটি ক্যালেন্ডার তৈরি করেন। এবং প্রতিদিন সকালে উঠে একটা করে তারিখ কেটে দেন। শুধু তাই নয় তিনি প্রতিদিন যে সকল কাজগুলো করতেন সেগুলো লিখে রাখতেন। যেমন কিভাবে সে প্রথম মোম তৈরি করেছিল, কিভাবে সে সৌভাগ্য কমে শস্য বীজের অঙ্কুরিত হওয়া আবিষ্কার করেছিল, এবং কিভাবে সে মাটির নিচে ভাড়া (cellar) তৈরি করেছিল এবং অন্যান্য সকল কাজ তিনি লিখে রাখতেন।

১৬৬০ সালে রবিনসন অসুস্থ হয়ে যায় এবং সে কল্পনায় দেখতে পায় একজন ফেরেশতা তার কাছে এসেছে এবং তার অতীতের পাপ কাজের জন্য তওবা করতে আদেশ দিচ্ছে। এ সময় সে অন্তরে ধর্মীয় আলো উপলব্ধি করে এবং সর্বশক্তিমান ঈশ্বর যেন তাকে তার পূর্বের পাপের ব্যাপারে ক্ষমা করেছেন এমন একটি অনুভূতি তার অন্তরে চলতে থাকে। সুস্থ হয়ে রবিন পুরো দ্বীপে ভালোভাবে জরিপ চালায় এবং আবিষ্কার করে সে আসলে দ্বীপে অবস্থান করছে। তিনি আরো বেশি আশাবাদী হয়ে ওঠেন এবং নিজেকে এই দ্বীপের রাজা মনে করেন। 

রবিনসন এই দ্বীপের মটুক বিহীন রাজা।  যতদূর দৃষ্টি যায় সবটাই তার রাজত্ব। তিনি যখন খেতে বসতেন তখন তার কুকুর বিড়াল গুলো বস্তু তার চারপাশে। তা দেখে মনে হতো রবিনসন একজন রাজা আর ওরা যেন তার প্রজা। রবিনসন একটি টিয়া পাখি ও ছাগলকে পোষ মানায় এবং তাদের প্রশিক্ষণ দেয়।  তারপরে সে একটি ছোট নৌকা তৈরি করে দ্বীপের চারদিকে নৌকা দিয়ে ঘুরে দেখার চেষ্টা করে।  কিন্তু বিশাল বড় এক ঢেউয়ের আঘাতে সে প্রায় মরতে বসেছিল। 

আরো একবার প্রাণ ফিরে পাওয়ার জন্য সৃষ্টি কর্তার নিকট শুকরিয়া আদায় করলেন। রবিন্সন যখন তীরে পৌছায় তখন তার টিয়া পাখিটি তার নাম ধরে ডাকে। এভাবে শান্তিতেই আরো বেশ কয়েকটি বছর পার করে দিলেন তিনি। কিন্তু এভাবে বেশিদিন কাটলো না। কিছুদিনের মধ্যেই দেখা দিল নতুন এক ধরনের অশান্তি।

সৈকতে মানুষের পায়ের ছাপ

রবিনসন সৈকতের পাশ দিয়ে হাটছিলেন। হঠাৎ করে সে মানুষের পায়ের ছাপ লক্ষ্য করলেন। এইটা দেখার পরে সেই খুবই চিন্তিত হয়ে পড়ল। প্রথমে সে ভাবলো এগুলো হয়তো শয়তানের পায়ের ছাপ হতে পারে। কিন্তু পরক্ষণেই সে আবার ভাবল এই দ্বীপে তো কোন জনমানব নাই তাহলে এই পায়ের ছাপ কিভাবে আসলো, কোথা থেকে আসলো এগুলো তার মাথার মধ্যে ঘুরপাক খেতে লাগলো। সে অনেক অনুসন্ধান করে কোন কিছু খুজে পেলো না। তাই সে অনেক ভয়ে ভয়ে থাকতে লাগলো। সে সারাদিন ভয় ভয় চলাফেরা করলেও রাতে ঘুমের মাঝে মাঝেই স্বপ্ন দেখতো কিছু লোক তাকে আক্রমণ করতে তার দিকে এগিয়ে আসছে। 

কারো সন্ধান না পেয়ে রবিনসন বুঝতে পারলেন এগুলো নরখাদকের পায়ের ছাপ। অতীতে সে গল্প শুনেছিল এই এলাকাগুলোতে নরখাদক থাকে। রবিনসন নিরাপত্তা হীনতায় ভোগার কারণে তার ঘরের দেয়ালগুলো দিগুণ করে মজবুত করলো যাতে কেউ তাকে আক্রমণ করতে না পারে। এতেও রবিনসনের পুরো ভয় কিন্তু কাটলো না। সে অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে নরখাদকদের খুঁজতে থাকলো। তার ছাগল গুলোকে তার মাটির নিচের ঘরে পালন করতে থাকলো এবং সেখানেই সে রান্নাবান্না করতে থাকলো।

হঠাৎ সাগরের তীরে পাঁচখানা নৌকার ভিড়

এত কষ্টের মধ্যে দিয়ে রবিনসনের কেটে গেল প্রায় দুইটি বছর। রবিনসন এখন প্রায় সেই ভয় গুলোর কথা ভুলেই গিয়েছে। এমনই এক সকালে ঘুম থেকে উঠে বাহিরে যেতেই রবিনসন দেখতে পেল সমুদ্রের কিনারায় পাঁচটি নৌকা। নৌকাগুলোকে আরও স্পষ্ট করে দেখার জন্য রবিনসন পাহাড়ের উপরে উঠল। সেখান থেকে রবিনসন যেটি দেখল তাতে তার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসলো। প্রায় ৩০ জনের মতো নরখাদক বিরাট এক আগুনের কুণ্ডলীর চারদিক দিয়ে ঘুরে ঘুরে নাচছে আর বিদঘুটে এবং বিবর্ষ রকমের চিৎকার করছে। 

একটু পরেই নরখাদকরা তাদের নৌকা থেকে দুইজন লোককে টানতে টানতে তীরের বালিতে নামিয়ে ফেলল। একজনকে তো সাথে সাথেই মেরে ফেলল। আর অন্যজন তাদের একটু অন্যমনস্কতার সুযোগ নিয়ে হাতের বাঁধন খুলে এক দৌড় দিল। নরখাদকরা ছুটতে থাকলো তার পিছন পিছন। কিন্তু নরখাদকরা সেই লোকটির সাথে দৌড়ে পারছিলেন না। ওই লোকটি সোজা রবিনসনের দিকে আসছিল। রবিনসন ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে বসে বসে সব দেখছিলেন। 

প্রথমে রবিনসনের খুবই ভয় হয়েছিল কিন্তু যখন দেখল ওদের মধ্যে একজন ফিরে যাচ্ছে তখন রবিনসন বাকি দুজনের হাত থেকে লোকটিকে বাঁচাবে বলে মনস্থির করল। রবিনসনের হাতে ছিল একটি বন্দুক। নরখাদকের একজন রবিনসনের দিকে এগিয়ে আসতেই রবিনসন তাকে জোরে একঘা লাগিয়ে দিল। আর লোকটি অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল। বাকি আরেকজন নরখাদক রবিনসনের দিকে লক্ষ্য করে তীর মারছিল। তখনই রবিনসন তার হাতে থাকা বন্দুকটি দিয়ে সেই নরখাদকটিকে গুলি করল এবং সে ওইখানেই মারা গেল।

ফ্রাইডেকে উদ্ধার

যে তিনজন নরখাদক ওই লোকটিকে মারতে এসেছিল তাদের তো রবিনসন ভালই ব্যবস্থা করল কিন্তু রবিনসন যে লোকটিকে বাঁচালো সেই লোকটি বন্দুকের শব্দ শুনে দিল এক দৌড় । রবিনসন অতি কষ্টে সেই লোকটিকে ধরে আনলো এবং তার ভয় ভাঙিয়ে দিল। তখন লোকটি বারবার রবিনসনের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছিল এবং তার পা ধরে মাফ চাচ্ছিল। রবিনসন সেই লোকটিকে তার বাড়িতে নিয়ে গেল এবং তাকে থাকতে দিল। 

সেই লোকটিকে রবিনসন কিছু খেতেও দিল তারপর বিছানা দেখিয়ে বলল ঘুমাতে। লোকটি ভয়ে ক্ষুধায় তৃষ্ণায় প্রায় আধমরা হয়ে গিয়েছিল। এবার ঘুমিয়ে একটু সুস্থ হয়ে উঠেই আবার রবিননের পা নিজের মাথায় রেখে বারবার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছিল। সেই লোকটি রবিনসনের বসতা মেনে নিলেন। এই পুরো ঘটনাটা ঘটেছিল ইংরেজি ফ্রাইডে মানে শুক্রবারে তাই রবিনসন ওই লোকটির নাম দিলেন ফ্রাইডে।

ফ্রাইডে কে দক্ষ বানানো

এতদিন এই নির্জন দ্বীপে রবিনসন একা ছিলেন এবার তার একজন সাথী হল। ফ্রাইডে খুবই বুদ্ধিমান এবং উৎফুল্ল স্বভাবের ছিলেন কিন্তু তিনি কথা বলতে পারতেন না। রবিনসন তাকে খুব যত্ন করে কিছু ইংরেজি শব্দ এবং ধর্মীয় জ্ঞান শেখালো। ফ্রাইডে রবিনসন কে জানায় নরখাদকরা বেশ কয়েকটি জাতিতে বিভক্ত এবং তারা তাদের শত্রুদের ধরে ধরে মাংস খায়। ফ্রাইডে আরো জানান নরখাদকরা তাকে একটি ভাঙ্গা জাহাজ থেকে উদ্ধার করেছে আর জাহাজটি ছিল স্প্যানিশদের। স্প্যানিশরা পার্শ্ববর্তী কোন দ্বীপেই বাস করে। 

ফ্রাইডের মাথা খুবই পরিস্কার ছিল। সে যা শুনত সেটাই মনে রাখতে পারতো। খুব অল্প কিছুদিনের মধ্যে ফ্রাইডে সব কাজকর্ম শিখে নিল এবং তার মনিবের প্রতি তার ভক্তি ও ভালোবাসা দেখে রবিনসন খুবই মুগ্ধ হল। এর জন্য রবিনসন পরবর্তী জীবনে বারবার বলতেন অমন বিশ্বাসী ভৃত্য বোধ হয় কেউ কোনদিন পায়নি যেটি ছিল ফ্রাইডে। এই ভাবেই তাদের হাসি কান্না দুঃখের মধ্য দিয়ে কেটে গেল 27 টি বছর।

রবিনসনের আরো দুইজন সঙ্গী পাওয়ার গল্প

এর মধ্যে রবিনসন আরো দুইজন সঙ্গী পেয়েছিলেন। ফ্রাইডে আর রবিনসন নরখাদকদের দেশ দেখার জন্য একটি ছোট নৌকা বানালো এবং নৌকায় করে তারা সমুদ্রের মধ্যে রওনা দিল নরখাদুকদের দেখবে বলে। রওনা দেওয়ার আগে তারা দেখতে পায় সমুদ্র তীরে তিনখানা নৌকা। রবিনসন দূরবীন দিয়ে দেখলেন আগের মতই কয়েকজন নরখাদক দুইজন লোককে বেঁধে রেখেছে এবং প্রচুর মারধর করছে এবং নরখাদকরা আয়োজন করছে তাদেরকে জীবন্ত পুড়িয়ে ফেলবার। 

ওই দুইজন লোকদের মধ্যে একজনার গায়ে ইউরোপিয়ান পোশাক পরিহিত মানে স্প্যানিশ আর আরেকজনকে ফ্রাইডে দেখা মাত্রই আনন্দে চিৎকার দিয়ে উঠল । তখন রবিনসন আর ফাইডে বন্দুক হাতে নিয়ে তাদেরকে আক্রমণ করল। এতে মাত্র চার জন ছাড়া বাকি সবাইদেরকে মেরে ফেলল তারা দুইজন। ওই চারজন আধমরা অবস্থায় কোনোভাবে তাদের নৌকা নিয়ে পালিয়ে গেল। ফ্রাইডে এবং রবিনসন এই দুজনকে হাত পায়ের বাঁধন খুলে দিয়ে তাদেরকে সুস্থ করে তুলল। এদের একজন স্প্যানিশ দেশের লোক আর অন্যজন ফ্রাইডেের স্বজাতি। ফ্রাইডে তার স্বজাতিকে দেখামাত্রই চুমুতে চুমুতে গাল ভরে ফেলল এবং অস্থির করে তুলল লোকটিকে। পরে জানা গেল ওই লোকটি আসলে ফ্রাইডর বাবা।

তারা একটু সুস্থ হয়ে উঠলে তাদের কাছ থেকে রবিনসন জানতে পারল একটু কাছেই একটি জাহাজ ডুবে গিয়েছে। তাতে কয়েকজন রয়েছে স্প্যানিশ আর কয়েকজন অন্য।  তাদের কাছে না আছে অস্ত্র না আছে কোন যন্ত্রপাতি। রবিনসন তাদের সব কথা শুনে তাদেরকে নিজের দ্বীপে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করতে সম্মত হল কিন্তু শর্ত দিল যে তারা এখানে সবাই রবিনসনের কথামতো চলবে এবং তাকে মান্য করবে এবং কখনো তার বিরোধিতা করবে না।

রবিনসন আর ফ্রাইডেে ওইসব লোকদেরকে তাদের দ্বীপে আনার জন্য একটা নৌকা বানানো এবং সাথের কিছু খাবার পানি এবং অন্যান্য খাবার নিল। তারপর সেই নৌকায় করে ফ্রাইডে তার বাবা এবং ওই স্প্যানিশ লোকটি এবং রবিনসন তাদের উদ্ধার করার জন্য যাত্রা শুরু করল।

রবিনসন কৌশলে তার স্বজাতিদের উদ্ধার করলেন

একদিন দুইদিন এভাবে তাদের ৮ টি দিন পার হয়ে যায়। ফ্রাইডে লক্ষ্য করে তাদের দ্বীপের দিকে একটি জাহাজ এগিয়ে আসছে। ফ্রাইডে খবরটি রবিনসনকে দেয়। রবিনসন খবরটি পেয়ে খুবই খুশি হয় তবুও যেন তার মন থেকে সন্দেহ কিছুতেই দূর হচ্ছিল না সেই জাহাজটি এদিকে কেন আসছে এইটা সে বোঝার জন্য আড়াল হয়ে ব্যাপারটা লক্ষ্য করতে লাগলো। জাহাজ থেকে তিনজন বন্দিকে ধরে নিচে নামাচ্ছে ১১ জন লোক। ওই লোক দুইতার হাত-পা বাঁধা। ১১ জনের মধ্যে দুজন সেই বন্দীদের পাহারা দিতে লাগলো। রবিনসন দেখল তারা তাদের স্বজাতি অর্থাৎ শ্বেতাঙ্গ। ফ্রাইডে আর রবিনসন সেই দুই জনকে আটক করল এবং সেই তিনজনকে মুক্ত করে দিল। যাদের বন্দি করেছিলেন তাদের একজন হলেন জাহাজের ক্যাপ্টেন এবং বাকি একজন হলেন জাহাজের ফাস্ট মেড এবং আর একজন সাধারণ যাত্রী।

রবিনসন তাদের কাছ থেকে জানতে চাইলেও কেন তাদেরকে আটক করা হয়েছে। প্রথমে তারা কোন কিছুই বলছিল না এবং রবিনসন কোনভাবেই বুঝতে পারছিল না তারা কোন জাতি কিন্তু পরের রবিনসন বুঝতে পারল তারা রবিনসনের স্বজাতি অর্থাৎ ইংরেজ (শ্বেতাঙ্গ)। তারা রবিনসনকে জানালো জাহাজের খালাসীরা ষড়যন্ত্র করে ক্যাপ্টেন আর মেড দের বন্দি করেছে। আসলে তাদের মূল উদ্দেশ্য হলো তাদেরকে এই নির্জন দ্বীপে ফেলে রেখে জাহাজটি নিয়ে পালানো। রবিনসন আর ফ্রাইডে তাড়াতাড়ি তাদের হাতের বন্ধন খুলে দিল এবং তাদের সাথে একটি চুক্তি করল তাদেরকে বলল তাদেরকে এই দ্বীপের শাসনকর্তা হিসেবে মেনে নিতে হবে এবং তাদেরকে ইংল্যান্ডে ফিরে যাওয়ার জন্য সাহায্য করতে হবে।  আর এই শর্তে যদি তারা রাজি হয় তাহলে রবিনসন এবং ফ্রাইডে তাদেরকে উদ্ধার করবে। জাহাজের ক্যাপ্টেন এক বাক্যে রাজি হয়ে গেল এবং ফ্রাইডে এবং রবিনসনকে ঈশ্বরের প্রেরিত দূত হিসেবে মেনে নিল।

তারপর তারা পাঁচ জন মিলে বাকিদের খুঁজে বের করল। এরপর ক্যাপ্টেন তাদের সাথে ভান করে বলল যে আসলে এটা একটা বড় টেরিটরি। এদের শাসক হলো রবিনসন। দ্বীপের মাঝখানে একটি দুর্গ রয়েছে আর সেখানে ৫০ জনের একটা বাহিনী রয়েছে। ক্যাপ্টেন রবিনসনকে জানায় তাদের নেতা সহ আরো ছাব্বিশ জন রয়েছে। এখানে অনেক কৌশলে রবিনসন এবং ক্যাপ্টেন মিলে সেই বিদ্রোহীদের হাত থেকে জাহাজটিকে রক্ষা করল। রবিনসন এখানে শুধু তাদের হাত থেকেই রক্ষা করলোই বরং  তারা জাহাজটিও ফিরে পেল। তারা জাহাজ থেকে খাবার নিয়ে তাদের দ্বীপে আসলো এবং রবিনসন দীর্ঘ ২৮ বছর পর তার স্বজাতিদের খাবার খেলো। এই বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার পর তারা সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের নিকট বারবার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে লাগলো।

দ্বীপ থেকে রবিনসনের বাড়ি ফিরা

১৬৮৬ সালের ১৯শে ডিসেম্বর রবিনসন স্প্যানিশদের জন্য অপেক্ষা না করে যা কিছু ব্যবহারের জিনিসপত্র ছিল সবগুলো গুছিয়ে রেখে সেগুলো তাদের জন্য ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে একটা চিঠি লিখে সেখানে রেখে দিলেন। রবিনসন ফ্রাইডাকে নিয়ে জাহাজে উঠল এবং দেশের দিকে রওনা দিল। রবিনসন দীর্ঘ ৩৫ বছর পরে আবারো তার দেশের মাটিতে পা দিল। 

তার পরিবারের প্রায় সবাই মারা গিয়েছিল শুধুমাত্র তার দুই বোন জীবিত ছিল। রবিনসন বাণিজ্য করতে যাওয়ার আগে সে তার বিধবা বান্ধবীটির কাছে যে সম্পদ রেখে গিয়েছিল সেগুলো সে ফিরে পেল। তারপরে রবিনসন লেসবন ঘুরে তার পর্তুগিজ বন্ধুদের কাছে যায়। সেখানে গিয়ে সে দেখে তার উপনিবেশ টি বেশ লাভজনক অবস্থায় পৌঁছেছে। 

রবিনসন তার সমস্ত জমি বিক্রি করে দেয় এবং সে তার বোন এবং বিধবা বান্ধবীটি কে তার অর্ধেক অংশ দান করে দেয়। এবার রবিনসনের বাজিলে যাওয়ার অনেক ইচ্ছা হয় কিন্তু রবিনসন ক্যাথলিক হওয়ায় সেই ইচ্ছা পরিত্যাগ করে। এরপর রবিনসন একটি বিয়ে করে এবং একসময় তার স্ত্রী ও মারা যায়। 

১৬৯৪ সালে রবিনসন আবার ইস্ট ইন্ডিজ এর দিকে ব্যবসায়ী মন-মানসিকতা নিয়ে যাত্রা শুরু করে। এবং পরবর্তীতে সে তার সেই দ্বীপ ভ্রমণ করে। সেই দ্বীপে রবিনসন যাওয়ার পর দেখে সেখানে স্প্যানিশরা সুন্দরভাবে জীবন যাপন করছে । এবং তার সেই দ্বীপ এখন একটি উন্নয়নশীল দ্বীপে পরিণত হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

ফেসবুক পেইজ

কোর্স টপিক