শিশু কল্যাণ কাকে বলে? শিশু কল্যাণ আইনের স্বরূপ ব্যাখ্যা কর।

 প্রশ্নঃ শিশু কল্যাণ কাকে বলে? শিশু কল্যাণ আইনের স্বরূপ ব্যাখ্যা কর।

earn money

ভূমিকা: শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ। শিশুদের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করা মানে পুরো জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। শিশুরা নিষ্পাপ কিন্তু তারা তাদের অধিকার, ভালোবাসা, আগ্রহ ও সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। প্রতিবছর হাজার হাজার শিশু জন্ম নিচ্ছে। তাদের খাদ্য, বাসস্থান ও চিকিৎসার ও শিক্ষার ব্যবস্থা করতে পিতামাতা প্রায় ব্যর্থ হচ্ছে। তাদের শিক্ষা ও যথাযথ সামাজিকীকরণের জন্য শিশু কল্যাণ নামে একটি কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। যা সর্বদা শিশুদের কল্যাণে কাজ করে। শিশুদের কল্যাণই পারে শিশুদেরকে যোগ্য নেতা তৈরির মাধ্যমে ভবিষ্যৎ কর্ণধার তৈরী করা।

শিশুকল্যাণ: শিশু কল্যাণের প্রত্যয় ব্যাপক। শিশু কল্যাণ বলতে জন্ম থেকে বয়ঃসন্ধিকাল পর্যন্ত শিশুদের শারীরিক, মানসিক, আর্থিক, সামাজিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ এবং কল্যাণের লক্ষ্যে কর্মসূচিকে বোঝায়। এটি কোনো বৈষম্য ছাড়াই দেশের সকল শিশুদের মেধা ও ন্যায্য সামাজিকীকরণের জন্য কাজ করে।

আরো পড়ুনঃ কিশোর অপরাধ কি? কিশোর অপরাধের কারণ গুলো আলোচনা কর।

হ্যাজেল ফ্রেডারিকসেন: “শিশুকল্যাণ বলতে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক গৃহীত সেসব সামাজিক, অর্থনৈতিক ও দৈহিক কার্যক্রমকে বুঝায় যেগুলো সকল শিশুর দৈহিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, মানসিক ও আবেগের উন্নতি ও সার্বিক কল্যাণে নিয়োজিত।”

ইউটিউবে ভিডিও লেকচার দেখুনঃ


Dr. Md. Ali Akbar: Elements of social welfare নামক গ্রন্থে বলেন, “শিশুকল্যাণ বলতে কোন শিশুর জন্মের পূর্বের ও পরের শৈশবকালের ও স্কুল পূর্বে হতে বয়ঃসন্ধিকাল পর্যন্ত যত্ন ও রক্ষণাবেক্ষণকে বুঝায়।”

ভারতীয় সমাজকর্ম বিশ্বকোষ: “শিশুকল্যাণ বলতে শিশুদের সামগ্রিক কল্যাণকে নির্দেশ করে। এটি শিশুর দৈহিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, আবেগীয় ও সামাজিক সুপ্ততার পরিপূর্ণ বিকাশে নিশ্চিতকরণে প্রয়োজনীয় সকল সেবাকে অন্তর্ভুক্ত করে।”

সমাজকর্ম অভিধান: “শিশুকল্যাণ হচ্ছে মানব সেবা ও সমাজকল্যাণ কর্মসূচির অংশবিশেষ এবং শিশুর সংরক্ষণ, পরিচর্যা ও সুস্থ বিকাশের আদর্শমুখী।”

শিশু কল্যাণ আইনের স্বরূপ

শিশু কল্যাণ আইনের উদ্দেশ্য: শিশুদের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও আর্থিক কল্যাণ নিশ্চিত করা।

শিশু কল্যাণ আইনের আওতা: শিশু কল্যাণ আইনের আওতায় সকল বয়সের শিশু রয়েছে। তবে, সাধারণত ০ থেকে ১৮ বছর বয়সের শিশুদেরকে শিশু হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

আরো পড়ুনঃ বেকারত্ব কি? বাংলাদেশের বেকারত্ব দূরীকরণের উপায় সমূহ বর্ণনা কর।

শিশু কল্যাণ আইনের নীতিমালা: শিশু কল্যাণ আইনের নীতিমালা হলো:

  • শিশুর অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া।
  • শিশুর সর্বোচ্চ কল্যাণ নিশ্চিত করা।
  • শিশুর সামাজিকীকরণ ও ব্যক্তিত্ব বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি করা।
  • শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করা।

শিশু কল্যাণ আইনের বিধানাবলী: শিশু কল্যাণ আইনের বিধানাবলী নিম্নরূপ:

  • শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করা।
  • শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা ও পুষ্টির অধিকার নিশ্চিত করা।
  • শিশুদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
  • শিশুদের যৌন নির্যাতন ও শিশুশ্রম রোধ করা।
  • শিশুদের বিবাহের বয়স ১৮ বছর নির্ধারণ করা।
  • শিশুদের অধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে শাস্তির বিধান করা।

শিশু কল্যাণ আইনের গুরুত্ব:

  • শিশু কল্যাণ আইন শিশুদের অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করে।
  • শিশু কল্যাণ আইন শিশুদের সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠার সুযোগ সৃষ্টি করে।
  • শিশু কল্যাণ আইন সমাজে সুস্থ ও সুন্দর পরিবেশ তৈরিতে সহায়তা করে।

বাংলাদেশে শিশু কল্যাণ আইন: বাংলাদেশে শিশু কল্যাণ আইনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

বাংলাদেশ শিশু আইন, ১৯৭৪: এই আইনে শিশুদের অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন বিধান রয়েছে।

বাংলাদেশ শিশুশ্রম (নিষিদ্ধকরণ ও প্রতিরোধ) আইন, ১৯৯৬: এই আইনে ১৮ বছরের কম বয়সী শিশুদের শ্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ শিশু বিবাহ নিরোধ আইন, ১৯২৯: এই আইনে ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিবাহ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

বাংলাদেশে শিশু কল্যাণ আইনের প্রয়োগ: বাংলাদেশে শিশু কল্যাণ আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করার জন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

  • শিশু কল্যাণ আইনের প্রচার ও প্রশিক্ষণ: সরকার শিশু কল্যাণ আইনের প্রচার ও প্রশিক্ষণের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
  • শিশু কল্যাণ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা: সরকার শিশু কল্যাণ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে শিশুদের সুরক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে।
  • শিশু কল্যাণ পরিদর্শন: সরকার শিশু কল্যাণ পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করে শিশুদের অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে।

আরো পড়ুনঃ গ্রামীণ সমাজসেবা কি? বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজসেবা কার্যক্রম গুলোর বর্ণনা দাও।

উপসংহার: পরিশেষে, শিশু কল্যাণ জাতির ভবিষ্যৎ চালকদের সামাজিক, শারীরিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে অনন্য ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশে শিশু কল্যাণের গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। এটি মূলত শিশুদের জন্ম থেকে কৈশোর পর্যন্ত যথাযথ সামাজিকীকরণের আওতায় এনে সুন্দর সমাজ গঠনের এক অনন্য প্রয়াস। এটি শিশু কল্যাণ হিসাবে বিবেচিত হয়। তাই শিশু কল্যাণ শিশুদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ।

Shihabur Rahman
Shihabur Rahman
Hey, This is Shihabur Rahaman, B.A (Hons) & M.A in English from National University.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

ফেসবুক পেইজ

কোর্স টপিক