fbpx

 সংবিধানের শ্রেণিবিভাগ ও বৈশিষ্ট্য গুলো আলোচনা কর।

 প্রশ্নঃ সংবিধানের শ্রেণিবিভাগ ও বৈশিষ্ট্য গুলো আলোচনা কর।

ভুমিকাঃ সংবিধান হচ্ছে রাষ্ট্রের মৌলিক আইন ও পবিত্র দলিল। সংবিধানের মাধ্যমেই রাষ্ট্র ও সরকার পরিচালিত হয়ে থাকে। রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য অঙ্গ হচেছ সরকার। সংবিধানের মাধ্যমে রাষ্ট্র ও সরকারের পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারিত হয়ে থাকে। সংবিধানের মাধ্যমে একটি রাষ্ট্রের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায়। তাই সংবিধানকে রাষ্ট্রের দর্পণ বলা হয়।

সংবিধানের প্রামাণ্য সংজ্ঞা: সংবিধান হচ্ছে জাতির পবিত্রতম দলিল। সংবিধান হচ্ছে রাষ্ট্রের মৌলিক আইন। সংবিধান সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার বণ্টন ও পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারণ করে থাকে। এটা সরকারের বিভিন্ন-বিভাগ, আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতা বন্টন ও পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারণ করে থাকে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এরিস্টটল থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সংবিধানের সংজ্ঞা দিয়েছেন। 

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এরিস্টটলের মতে- কোন রাষ্ট্র নিজেকে পরিচালনার জন্য যে পথ বেছে নেয় তাই সংবিধান।

ইউটিউবে ভিডিও লেকচার দেখুনঃ


অধ্যাপক ফাইনার বলেন, ‘রাষ্ট্রের মৌলিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে পরস্পরের সমন্ধ হলো সংবিধান।

সংবিধানের বিভিন্ন প্রকারভেদ আলোচনা করা হলো:

লেখার ভিত্তিতে সংবিধান:

লিখিত সংবিধান: যে সংবিধান একটি নির্দিষ্ট দলিলে লিপিবদ্ধ থাকে তাকে লিখিত সংবিধান বলে। এ ধরনের সংবিধানে রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা, সরকারের বিভিন্ন ক্ষমতা ও কর্তব্য, নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্য ইত্যাদি বিষয় সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত থাকে। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের সংবিধানই লিখিত।

আরো পড়ুনঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের গঠন, ক্ষমতা ও কার্যাবলী আলোচনা কর।

অলিখিত সংবিধান: যে সংবিধান একটি নির্দিষ্ট দলিলে লিপিবদ্ধ থাকে না, বরং বিভিন্ন আইন, ঐতিহ্য, রীতিনীতি, আদালতের রায় ইত্যাদির ভিত্তিতে গড়ে ওঠে তাকে অলিখিত সংবিধান বলে। যুক্তরাজ্যের সংবিধান অলিখিত সংবিধানের একটি উদাহরণ।

google news

পরিবর্তনের ভিত্তিতে সংবিধান:

সুপরিবর্তনীয় সংবিধান: যে পদ্ধতিতে আইনসভা দেশের সাধারণ আইন পাস করে সংবিধানের সংশােধন বা পরিবর্তন করে তাকে সুপরিবর্তনীয় সংবিধান বলে। এক্ষেত্রে, আইনসভার সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটেই সংবিধান সংশােধন বা পরিবর্তন করা যায়।

দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান: আইনসভায় সাধারণ আইন পাস করে যে সংবিধানকে সংশােধন বা পরিবর্তন করা যায় না বা পরিবর্তন করতে গেলে ‘বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়, তাকে দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান বলা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান প্রভৃতি দেশের সংবিধান দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান।

সংবিধানের বৈশিষ্ট্যঃ নিম্নে উত্তম সংবিধানের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করা হলো-

১. সুস্পষ্টতাঃ শাসনতন্ত্রের নীতি ও ধারাসমূহ সুস্পষ্ট সুনির্দিষ্ট এবং সুনিশ্চিত হওয়া আবশ্যক যাতে তার অর্থ সম্পর্কে দ্বিমত দেখা না দেয়। সুতরাং, সে শাসনতন্ত্রই উত্তম বলে বিবেচিত হবে যা দ্ব্যর্থ পূর্ণ ভাষা ও শব্দ পরিহার করে প্রাঞ্জল এবং অর্থপূর্ণ ভাষায় রচিত।

২. সংক্ষিপ্ততাঃ সংবিধানের বিভিন্ন ধারা ও উপধারা সংক্ষিপ্ত হওয়া বাঞ্ছনীয় যাতে তার মধ্যে অযথা অপ্রয়োজনীয় প্রসঙ্গের অনুপ্রবেশ না ঘটে। তবে সামগ্রিকভাবে বিভিন্ন রাষ্ট্রের গঠন এবং কিভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পরিচালিত হবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যবস্থার উল্লেখ থাকতে হবে।

৩. মৌলিক অধিকারের অন্তর্ভূক্তিঃ সংবিধানে জনগণের মৌলিক অধিকারসমূহ অন্তর্ভূক্তি থাকা আবশ্যক। শাসন বিভাগ জনগণের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ করতে চাইলে জনগণ সরকারের বিরুদ্ধে শাসনতন্ত্র ভঙ্গের অভিযোগ আনয়ন করতে পারে। ফলে সরকারের স্বৈরাচারী প্রবণতা রুদ্ধ হয়, জনগণের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ থাকে।

আরো পড়ুনঃ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বলতে কী বোঝো? বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষার উপায় সমূহ আলোচনা কর।

৪. সময়োপযোগিতাঃ উত্তম সংবিধানকে অবশ্যই সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হয়। শাসনতন্ত্রকে অবশ্যই জনগণের এ পরিবর্তিত চাহিদা ও আকাঙ্ক্ষার সাথে সামঞ্জস্য রক্ষা করে চলতে হবে। অন্যথায়, শাসনতান্ত্রিক বিধিবিধান ও উদ্দেশ্যের সাথে জনগণের ইচ্ছার দ্বন্দ্ব ও সংঘাত দেখা দিবে।

৫. সার্বভৌম ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষাঃ এটা উত্তম সংবিধানের অপর একটি বৈশিষ্ট্য। ‍উত্তম সংবিধানে রাষ্ট্রের আইনগত সার্বভৌমত্ব ও সরকার এবং রাজণৈতিক সার্বভৌমত্ব অর্থাৎ, জনগণের মধ্যে ভারসাম্য থাকা একান্ত আবশ্যক। অন্যথায়, বিপ্লব ও গণঅভ্যুত্থানের ভয় থেকে যায়।

৬. গণতন্ত্রঃ উত্তম সংবিধানের আর একটি বৈশিষ্ট্য হলো গণতন্ত্র। গণতন্ত্র না থাকলে উত্তম সংবিধান নিশ্চিত করা যায় না। K.C.Wheare বলেছেন, “উত্তম সংবিধানের জন্য গণতন্ত্রই হলো উত্তম ক্ষেত্র।”

৭. সহজ সংশোধন পদ্ধতিঃ উত্তম সংবিধানকে অবশ্যই একটি সহজ সংশোধন পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়। তবে এমন সহজসাধ্য হওয়া উচিত নয়, যাতে অহেতুক পরিবর্তনের সুযোগ থাকে।

৮. লিখিত রূপঃ উত্তম সংবিধান লিখিত হবে বলেই প্রত্যাশা করা হয়। শাসনব্যবস্থার স্থিতিশীলতা, নাগরিকদের অধিকার এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রদেশগুলোর অধিকার রক্ষার জন্য লিখিত সংবিধানই কামনা করা হয়।

৯. জনমতের অগ্রাধিকারঃ উত্তম সংবিধান জনমতের প্রতিফলন ঘটায়। উত্তম সংবিধান হবে জনমতের ধারক ও বাহক। জনমতের প্রতি লক্ষ্য রেখেই সংবিধান পরিবর্তিত ও পরিবর্ধিত হয়ে যুগোপযোগী হবে।

১০. বিচার বিভাগের প্রাধান্যঃ সংবিধানের প্রাধান্য সুনিশ্চিত করার জন্য বিচার বিভাগের প্রাধান্য নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য বিচার বিভাগের হাতে সংবিধানকে ব্যাখ্যা করার ক্ষমতা প্রদান করতে হবে। বিচার বিভাগ হবে সংবিধানের রক্ষক ও অভিভাবক।

আরো পড়ুনঃ নির্বাচক মন্ডলীর সংজ্ঞা দাও। আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নির্বাচক মন্ডলীর ভূমিকা আলোচনা কর। 

উপসংহারঃ একটি উত্তম সংবিধান হল এমন একটি সংবিধান যা একটি রাষ্ট্রের জনগণের অধিকার, স্বাধীনতা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করে। এটি একটি রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থাকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য একটি মৌলিক কাঠামো প্রদান করে। রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা ও অগ্রগতি নিশ্চিত করে এবং ন্যায়বিচার ও ঐক্য ও সংহতি বজায় রাখে।

Shihabur Rahman
Shihabur Rahman
Hey, This is Shihabur Rahaman, B.A (Hons) & M.A in English from National University.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

ফেসবুক পেইজ

কোর্স টপিক