প্রশ্নঃ সামাজিকীকরণ ও সুশাসনের সংজ্ঞা দাও।
সামাজিকীকরণ কী?
মানব শিশু ভূমিষ্ঠ হবার পর তাকে সামাজিক পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে টিকে থাকার প্রয়োজনে অনেক কিছু শিখতে হয়। এ শিক্ষণ প্রক্রিয়া জন্মের পর থেকে শুরু হয় এবং তার জীবনব্যাপি চলতে থাকে। শিশুর এ শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় প্রথমে তার মা-বাবা, পরিবারের সদস্যরা, প্রতিবেশি, আত্মীয়-স্বজন এবং পরবর্তীতে তার শিক্ষক, সহযোগী, চেনা অচেনা অনেকেই খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এ শিক্ষণ প্রক্রিয়া মানব শিশুকে ভাষা, আচার আচরণ, প্রথা পদ্ধতি, মূল্যবোধ, আদব-কায়দা ইত্যাদি সম্পর্কে অবহিত করানোর মাধ্যমে তাকে সামাজিক মানুষ হয়ে উঠতে সহায়তা করে। জীবনব্যাপি চলতে থাকা এই শিক্ষণ প্রক্রিয়াকেই সামাজিকীকরণ বলে।
সামাজিকীকরণের প্রামাণ্য সংজ্ঞা: সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় ব্যক্তি মূলত: সংস্কৃতি সম্পর্কে অবহিত হয়। বিভিন্ন সমাজ বিজ্ঞানীদের মতে, সামাজিকীকরণ ব্যতীত সমাজে জীবন-যাপন করা সম্ভব নয়।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের জনসংখ্যা কাঠামোর বৈশিষ্ট্য সমূহ আলোচনা কর।
সামাজিকীকরণ প্রসঙ্গে মনোবিজ্ঞানী বোগারডাস (Bogardus) বলেছেন, “সামাজিকীকরণ হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে ব্যক্তি জনকল্যাণের নিমিত্তে একত্রে নির্ভরযোগ্য আচরণ করতে শেখে। এটি করতে গিয়ে সামাজিক আত্মনিয়ন্ত্রণ, দায়িত্ব ও সুসামঞ্জস্য ব্যক্তিত্বের অভিজ্ঞতা লাভ করে।”
Kingsley Davis তাঁর Human Society গ্রন্থে বলেছেন, “যে প্রণালীতে মানব শিশু পূর্ণাঙ্গ সামাজিক মানুষে পরিণত হয় তাই সামাজিকীকরণ।”
Ogburn and Nimkoff বলেন, “যে পদ্ধতিতে ব্যক্তি নিজ নিজ মানবগোষ্ঠীর ব্যবহারিক মূল্যবোধের সাথে সামঞ্জস্য প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়, তাই সামাজিকীকরণ।”
সুশাসন কি?
সুশাসন (Good Governance) হচ্ছে সার্বিক উন্নতির জন্য একটি দেশের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সম্পদের সুষম ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনে ক্ষমতা প্রয়োগের পদ্ধতি। এটি এমন একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রতিফলন যেখানে শাসক ও শাসিতের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় থাকবে, স্বাধীন বিচার বিভাগ থাকবে, গণতন্ত্র থাকবে, আইনের শাসন থাকবে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে, এবং সর্বোপরি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকবে।
৯০ এর দশকে জাতিসংঘ, ইউএনডিপিসহ বেশ কিছু সংস্থা সুশাসন সম্পর্কে চিন্তাভাবনা শুরু করে। ১৯৮৯ সালে সর্বপ্রথম বিশ্ব ব্যাংক এক সমীক্ষায় সুশাসন শব্দটি ব্যবহার করেছিল। পরবর্তীতে, বিশ্ব ব্যাংক ১৯৯২ সালে সুশাসনের সংজ্ঞা প্রদান করে যা ‘‘শাসন প্রক্রিয়া ও উন্নয়ন’’ নামক রিপোর্টে উল্লেখ করে। বর্তমানে, সুশাসন শব্দটি প্রায়শই জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো দ্বারা ব্যবহৃত হয়। সুশাসনের প্রধান লক্ষ্যগুলো হচ্ছে দুর্নীতি হ্রাস করা, সংখ্যালঘুদের মতামতকে বিবেচনায় নেওয়া, সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় নিপীড়িত মানুষের কণ্ঠস্বর শোনা এবং জনগনের প্রয়োজনে সক্রিয়ভাবে সাড়া দেওয়া।
আরো পড়ুনঃ সামাজিকীকরণ বলতে কি বুঝ? সামাজিকীকরণে পরিবার ও ধর্মের ভূমিকা আলোচনা কর। ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনের প্রভাব আলোচনা কর
সুশাসনের প্রামাণ্য সংজ্ঞা:
বিশ্বব্যাংকের মতে, উন্নয়নের জন্য একটি দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সম্পদ ব্যবস্থাপনায় যে পদ্ধতিতে ক্ষমতা প্রয়োগ করা হয় তাকে সুশাসন বলে।
UNDP এর মতে, ‘‘শাসন হলো অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক কর্তৃত্বের চর্চা যার
মাধ্যমে একটি দেশের সকল স্তরের কার্যাবলী পরিচালনা করা যায়।”
ম্যাককরনীর মতে, “সুশাসন বলতে রাষ্ট্রের সঙ্গে সুশীল সমাজের, সরকারের
সঙ্গে শাসিত জনগণের, শাসকের সঙ্গে শাসিতের সম্পর্ক বোঝায়।’’
আরো পড়ুনঃ সমকালীন বাংলাদেশের সমাজ ও সংস্কৃতির উপর নগরায়নের প্রভাব আলোচনা কর।
G. Bilney-এর মতে, সুশাসন হচ্ছে একটি দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক সম্পদের কার্যকর ব্যবস্থাপনা যেটা উন্মুক্ত, স্বচ্ছ, জবাবদিহিতাপূর্ণ এবং ন্যায়সঙ্গত “।
কফি আনান-এর মতে, “সুশাসন মানবাধিকার এবং আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা নিশ্চিত করে, গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে, জনপ্রশাসনের স্বচ্ছতা এবং সক্ষমতাকে প্রবর্তন করে।’’