The Grass is Singing Bangla Summary

The Grass is Singing Bangla Summary

সংক্ষিপ্ত জীবনী: ডরিস লেসিং (Doris Lessing)

ডরিস লেসিং ১৯১৯ সালের ২২ অক্টোবর ইরানের কেরমানশাহ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পুরো নাম ছিল Doris May Tayler Lessing। তিনি ছিলেন ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক এবং নাট্যকার। তার পিতা ছিলেন একজন ব্রিটিশ সেনা কর্মকর্তা এবং মা ছিলেন একজন নার্স। শৈশবের কিছু সময় ইরানে কাটানোর পর পরিবার আফ্রিকার রোডেশিয়া (বর্তমান জিম্বাবুয়ে)-তে চলে যায়। সেখানে তিনি প্রকৃতি, ঔপনিবেশিক সমাজব্যবস্থা এবং নারী-পুরুষ বৈষম্য খুব কাছ থেকে দেখেন, যা পরবর্তীতে তার লেখায় গভীরভাবে প্রতিফলিত হয়।

লেসিং অল্প বয়সেই লেখালেখি শুরু করেন এবং কিছুদিন আফ্রিকায় শিক্ষকতা করেন। পরে তিনি ইংল্যান্ডে চলে আসেন এবং সেখানেই ধীরে ধীরে একজন প্রতিষ্ঠিত সাহিত্যিক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি ছিলেন তীব্র রাজনৈতিক সচেতন ও সমাজ সমালোচক। তার লেখায় উপনিবেশবাদ, লিঙ্গবৈষম্য, পারিবারিক সংকট, ব্যক্তির একাকিত্ব, মানসিক টানাপোড়েন ও সমাজ পরিবর্তনের চিত্র ফুটে ওঠে। তার সবচেয়ে বিখ্যাত উপন্যাস হলো The Golden Notebook (1962)। এ বইকে নারীবাদী সাহিত্যের এক যুগান্তকারী কাজ হিসেবে ধরা হয়। এছাড়া তার অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রচনার মধ্যে রয়েছে,

  • The Grass is Singing (1950)
  • Children of Violence সিরিজ (1952–1969)
  • The Good Terrorist (1985)
  • Mara and Dann (1999)

ডরিস লেসিং ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। তিনি সায়েন্স ফিকশন, আত্মজীবনী, রাজনৈতিক উপন্যাস ও মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণমূলক সাহিত্য লিখেছেন। সাহিত্যে তার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি অসংখ্য পুরস্কার লাভ করেন এবং ২০০৭ সালে তিনি নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন। নোবেল কমিটি তাকে “নারী অভিজ্ঞতার মহাকাব্যিক ভাষ্যকার” বলে অভিহিত করে। লেসিং ছিলেন প্রচারবিমুখ কিন্তু দৃঢ়চেতা ব্যক্তিত্ব। তিনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত লিখে গেছেন। ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর তিনি লন্ডনে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে আজও বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রভাবশালী ও সাহসী সাহিত্যিক হিসেবে গণ্য করা হয়।

আরো পড়ুনঃ To The Lighthouse Bangla Summary

Key Facts

  • Full Title: The Grass is Singing
  • Original Title: The Grass is Singing
  • Author: Doris May Lessing (1919–2013)
  • Title of the Author: Voice of Feminism and Colonial Critique
  • Prize: Nobel Prize in Literature (2007)
  • Source: Influenced by her African childhood in Southern Rhodesia (now Zimbabwe), colonial society, racial tension, and gender struggles
  • Written Time: 1949
  • First Published: 1950 (by Michael Joseph, London)
  • Publisher: Michael Joseph (UK); Harper & Brothers (US)
  • Genre: Psychological Novel / Postcolonial Novel / Tragedy
  • Form: Prose novel (single continuous narrative, divided into chapters)
  • Structure: Linear narrative with foreshadowing, psychological depth, and social critique
  • Tone: Tragic, ironic, critical, and analytical
  • Point of View: Third-person omniscient narrator
  • Significance: A landmark in postcolonial literature. It exposes racial conflict, gender inequality, psychological breakdown, and the failure of colonial ideology in Southern Africa
  • Language: English
  • Famous Line: “Mary Turner, wife of Richard Turner……..was found murdered on the front veranda.”
  • Setting:
  • Time Setting: Mid-20th century (colonial Rhodesia, before independence)
  • Place Setting: Southern Rhodesia (modern Zimbabwe) — mostly on an isolated farm in the African veld

Key Notes- বাংলায়

  • Colonial Conflict – Race and Power: উপন্যাসটি শ্বেতাঙ্গ ইউরোপীয় বসতি স্থাপনকারী এবং কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান শ্রমিকদের মধ্যে বৈষম্য ও শোষণকে তুলে ধরে। এখানে উপনিবেশিক সমাজব্যবস্থার ভেতরের ভয়, অবিশ্বাস, এবং ক্ষমতার সম্পর্কগুলো প্রকাশিত হয়েছে।
  • Psychological Breakdown – Mary Turner: নায়িকা মেরি টার্নার প্রথমে এক স্বাধীনচেতা নারী, কিন্তু বিয়ের পর দমবন্ধ করা খামারজীবনে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। একাকিত্ব, হতাশা, এবং অবহেলায় তার মানসিক অবনতি ঘটে, যা শেষে করুণ পরিণতির দিকে নিয়ে যায়।

Key Notes- English

  • Colonial Conflict – Race and Power: The novel highlights the inequality and exploitation between white European settlers and black African laborers. It reveals the underlying fear, mistrust, and power relations within the colonial social system.
  • Psychological Breakdown – Mary Turner: The heroine, Mary Turner, begins as an independent-minded woman, but after marriage, she breaks down under the suffocating farm life. Loneliness, frustration, and neglect lead to her psychological decline, which ultimately drives her toward a tragic end.

Background- বাংলা: ডরিস লেসিং-এর The Grass is Singing উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় ১৯৫০ সালে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে। তখন আফ্রিকা এবং ইউরোপ—দুই মহাদেশেই ছিল বড় ধরনের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তন। উপন্যাসটির পটভূমি দক্ষিণ রোডেশিয়া (বর্তমান জিম্বাবুয়ে), যেখানে লেসিং তার শৈশব ও যৌবনের অনেকটা সময় কাটিয়েছেন। উপনিবেশিক সমাজে শ্বেতাঙ্গ বসতি স্থাপনকারী এবং কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান জনগণের মধ্যে বৈষম্য, ভয়, ও অবিশ্বাস ছিল প্রবল। এই সময় আফ্রিকান কৃষ্ণাঙ্গদের জীবনে দারিদ্র্য ও বঞ্চনা ছিল নিত্যদিনের বাস্তবতা, আর ইউরোপীয়দের জীবনযাত্রায় ছিল কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার অহংকার। নারীর অবস্থানও ছিল সীমাবদ্ধ, বিশেষ করে গ্রামীণ খামারজীবনে। 

লেসিং নিজে এই সমাজব্যবস্থার ভেতরের ভণ্ডামি ও বৈষম্য প্রত্যক্ষ করেছিলেন, যা তার লেখায় গভীরভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। উপন্যাসের নায়িকা মেরি টার্নারের জীবনের পতন আসলে এক প্রতীক, যা উপনিবেশিক শ্বেতাঙ্গ সমাজের ভেতরে লুকিয়ে থাকা অস্থিরতা, দমননীতি ও নৈতিক অবক্ষয়কে উন্মোচিত করে। তাই The Grass is Singing কেবল ব্যক্তিগত জীবনের ট্র্যাজেডি নয়, বরং একটি নির্দিষ্ট সময়ে আফ্রিকান উপনিবেশিক বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি।

চরিত্রসমূহ – বাংলায়

প্রধান চরিত্রসমূহ

  • মেরি টার্নার (নায়িকা): উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র। শহরে একজন স্বাধীনচেতা নারী হিসেবে জীবন শুরু করলেও, ডিককে বিয়ে করার পর সে খামারের কঠোর বাস্তবতায় বন্দি হয়ে পড়ে। একাকীত্ব, হতাশা ও মানসিক অস্থিরতায় ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ে। শেষ পর্যন্ত মোজেসের হাতে তার মৃত্যু ঔপনিবেশিক বিভ্রমের পতন এবং ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডির প্রতীক হয়ে ওঠে।
  • ডিক টার্নার (নায়ক): মেরির স্বামী, সংগ্রামী এক শ্বেতাঙ্গ কৃষক। দুর্বল, অস্থিরচিত্ত এবং চাষাবাদে বারবার ব্যর্থ। আর্থিক ও মানসিক স্থিতি দিতে অক্ষম হওয়ায় মেরির হতাশা আরও গভীর হয়। তিনি উপনিবেশিক আফ্রিকায় দরিদ্র শ্বেতাঙ্গ বসতিদের স্বপ্নভঙ্গের প্রতীক।
  • মোজেস (আফ্রিকান ভৃত্য): টার্নার পরিবারের কালো গৃহকর্মী। শান্ত, শৃঙ্খলাবদ্ধ ও রহস্যময় ব্যক্তিত্ব। মেরির সঙ্গে তার সম্পর্ক ভয়, আধিপত্য ও দমিত আকর্ষণে ভরা। শেষ পর্যন্ত সে মেরিকে হত্যা করে, যা বর্ণবৈষম্যের শোষণের সহিংস প্রতিশোধের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়।
  • চার্লি স্ল্যাটার: ধনী ও সফল এক শ্বেতাঙ্গ কৃষক, যে শক্তিশালী বসতি স্থাপনকারী সমাজের প্রতিনিধিত্ব করে। বাস্তববাদী, ক্ষমতাধর ও নির্মম। টার্নারদের ব্যর্থতার দিকে অবজ্ঞাভরে তাকায়। সে ঔপনিবেশিক ঔদ্ধত্য, বর্ণগত শ্রেষ্ঠত্ববোধ এবং কঠোরভাবে বেঁচে থাকার নীতির প্রতীক।
  • টনি মার্স্টন: আফ্রিকায় সদ্য আগত তরুণ ইংরেজ, কৃষিকাজ শেখার আগ্রহে আসে। শুরুতে সংবেদনশীল ও আদর্শবাদী হলেও ধীরে ধীরে ঔপনিবেশিক সমাজের দুর্নীতি ও নিষ্ঠুরতা উপলব্ধি করে। সে বহিরাগত হিসেবে নৈতিক সচেতনতা ও ঔপনিবেশিক ব্যবস্থার প্রতি প্রশ্ন তোলার প্রতীক।

গৌণ চরিত্রসমূহ

  • স্থানীয় শ্রমিকরা: খামারের আফ্রিকান শ্রমিকরা, যাদের নাম বা কণ্ঠ নেই। তারা দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করে এবং সবসময় শোষণের শিকার হয়। তারা দক্ষিণ রোডেশিয়ার ঔপনিবেশিক সমাজে দমিত সংখ্যাগরিষ্ঠের প্রতীক, যারা নীরবে পুরো ব্যবস্থার বোঝা বয়ে বেড়ায়।
  • মিস্টার ও মিসেস স্ল্যাটার: চার্লি স্ল্যাটারের পরিবার। তারা ঔপনিবেশিক বসতিদের প্রতিষ্ঠিত কর্তৃত্ব ও জীবনযাত্রার প্রতীক। নিজেদের সুবিধা রক্ষা করে চলে, আবার অন্যদের ব্যর্থতার কড়া সমালোচনা করে।
  • অন্য শ্বেতাঙ্গ প্রতিবেশীরা: সামান্য উপস্থিত minor চরিত্র, যারা বসতি স্থাপনকারীদের গসিপ, বিচার এবং পক্ষপাতদুষ্ট মনোভাবকে তুলে ধরে।

উপন্যাসের দম্পতি ও সম্পর্কসমূহ

  • মেরি টার্নার ও ডিক টার্নার: তাদের বিবাহ কাহিনির মূল কেন্দ্রবিন্দু, তবে তা ভরা হতাশা, দারিদ্র্য ও মানসিক দূরত্বে। এটি ব্যর্থতা, বিভ্রম ভঙ্গ, এবং ঔপনিবেশিক স্বপ্নের পতনের প্রতীক।
  • মেরি টার্নার ও মোজেস: একটি নিষিদ্ধ ও প্রতীকী সম্পর্ক। এতে ভয়, দমন এবং অপ্রকাশিত অন্তরঙ্গতা রয়েছে। তাদের বন্ধন উপনিবেশক ও উপনিবেশিতের বিপজ্জনক টানাপোড়েনকে প্রতিফলিত করে।
  • ডিক টার্নার ও চার্লি স্ল্যাটার: তাদের সম্পর্ক নির্ভরতা ও সমালোচনার প্রতীক। ডিক স্ল্যাটারের সাফল্যকে অনুসরণ করতে চায়, আর স্ল্যাটার ডিকের দুর্বলতাকে সমালোচনা করে।

বন্ধুত্ব ও সামাজিক পরিমণ্ডল

  • শ্বেতাঙ্গ বসতি সম্প্রদায়: চার্লি স্ল্যাটারের মতো প্রতিবেশীরা সামাজিক প্রেক্ষাপট তৈরি করে। তারা উপনিবেশিক সমাজের গসিপ, পক্ষপাত এবং বর্ণবাদী শ্রেষ্ঠত্ববোধকে ধারণ করে।
  • আফ্রিকান সম্প্রদায়: উপন্যাসে প্রায় নীরব থাকলেও তাদের উপস্থিতি টার্নারদের জীবনকে সংজ্ঞায়িত করে। তাদের শোষণ ও দমিত ক্রোধই উপন্যাসের ট্র্যাজেডির ভিত্তি তৈরি করে।

Plot সামারি- বাংলা 

উপন্যাসের সূচনা ও হত্যার পরিণতি: উপন্যাসের শুরুতেই দেখা যায়—মেরি টার্নারকে তার নিজের বাড়ির চাকর মোজেস হত্যা করেছে। খবরটা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং সবার মধ্যে কৌতূহল তৈরি হয়। স্থানীয় শ্বেতাঙ্গরা মনে করে—এটি ছিল “অবশ্যই ঘটার মতো ঘটনা,” কারণ শ্বেতাঙ্গ গৃহিণী আর কৃষ্ণাঙ্গ চাকরের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে সমাজে আগে থেকেই নানা ধারণা ছিল। চার্লি স্ল্যাটার, প্রতিবেশী কৃষক, খবর পেয়ে মেরির মৃতদেহ দেখতে আসে এবং সঙ্গে সঙ্গে পুলিশে খবর দেয়। 

পরে সার্জেন্ট ডেনহ্যাম কয়েকজন পুলিশ নিয়ে উপস্থিত হয় এবং মোজেসকে গ্রেফতার করে। এই সময়ে টনি মার্স্টন, চার্লির খামারের নতুন সহকারী, পুরো ঘটনাটি কাছ থেকে দেখে। সে বর্ণনা করে কীভাবে মেরির লাশ বারান্দায় পড়ে থাকতে দেখেছিল। তবে টনি দ্বিধায় থাকে—সে কি পুলিশের কাছে পুরো সত্য বলবে, নাকি কিছু গোপন রাখবে। শেষে, আদালতের রায়ে বলা হয়—মোজেস যখন হত্যাকাণ্ড ঘটায় তখন সে সম্পূর্ণ সুস্থ মস্তিষ্কে ছিল, নেশাগ্রস্ত নয়। 

মেরির শৈশব, পারিবারিক টানাপোড়েন ও স্বাধীন জীবনের শুরু: উপন্যাসের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হয় দক্ষিণ আফ্রিকার দোকানগুলোর বর্ণনা দিয়ে। এসব দোকান সাধারণত খাবার, কাপড়, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রি করত, সাথে মদও পাওয়া যেত। ইউরোপীয় শ্বেতাঙ্গদের কাছে এই দোকানগুলো ছিল যেন ইংল্যান্ডের কথা মনে করিয়ে দেওয়ার এক প্রতীকী স্থান। মেরির বাবা ছিলেন রেলওয়ের ছোটখাটো কর্মচারী। তিনি সংসারের অল্প আয়টুকুও মদ খেয়ে শেষ করতেন। যদিও মাতাল অবস্থায় তিনি হিংস্র হতেন না, তবে সংসার টিকিয়ে রাখা ছিল মায়ের জন্য কঠিন। এজন্য প্রায়ই বাবা-মায়ের মধ্যে ঝগড়া হতো। মেরির শৈশব ছিল দুর্ভাগ্যপূর্ণ—ছোটবেলাতেই তার ভাই-বোন দুজনেই ডিসেন্ট্রিতে মারা যায়। সে সময়ে তার বাবা-মা কিছুদিন একে অপরের কাছাকাছি এলেও তাদের সম্পর্ক ছিল অশান্ত। পরে মেরিকে বোর্ডিং স্কুলে পাঠানো হয়। সেখানে সে খুশি থাকে, কারণ পারিবারিক বিবাদ ও মায়ের অভিযোগ থেকে মুক্তি পায়। 

১৬ বছর বয়সে মেরি স্থায়ীভাবে বাড়ি ছেড়ে দেয়। সে একটি টাইপিস্ট/সেক্রেটারির চাকরি নেয় এবং স্বাধীনভাবে থাকা শুরু করে। পরিবার থেকে মুক্ত হয়ে সে আরও আত্মনির্ভর হয়। ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে মেরির মা মারা যান এবং বাবা দূরে বদলি হন। বাবার প্রতি তার কোনো সহানুভূতি ছিল না; বরং তার মৃত্যু মেরিকে আরও মুক্ত করে। এভাবে মেরির শৈশবের সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন হয়। এরপর মেরি একটি মেয়েদের ক্লাবে থাকতে শুরু করে এবং একটি অফিসে সেক্রেটারির চাকরি করে। সেখানে তার বন্ধুবলয় তৈরি হয়, খেলাধুলা ও পার্টি ছিল তার নিয়মিত অভ্যাস। এই সময়টিকে বলা হয় তার জীবনের “Golden Age”, যেখানে সে স্বাধীন, সুখী, এবং অবিবাহিত ছিল।

বন্ধুত্বের আঘাত, ভাঙা এনগেজমেন্ট ও ডিকের আগমন: কয়েক বছর পর মেরির বান্ধবীরা একে একে বিয়ে করে ফেলে এবং সংসারী হয়ে ওঠে। তাদের জীবনে বড় পরিবর্তন আসে। কিন্তু মেরি তখনো অবিবাহিত, সুখী এবং ভাবনাহীনভাবে ক্লাবে মেয়েদের সাথে সময় কাটায়। একদিন সে তার এক বিবাহিত বান্ধবীর বাড়ির বারান্দায় বসে থাকতে থাকতে হঠাৎ শুনে ফেলে, দুই বান্ধবী তার সম্পর্কে কথা বলছে। তারা বলে, মেরি কখনোই বিয়ে করতে পারবে না, তার জীবন শিশুসুলভ, আর চেহারাতেও সে আকর্ষণীয় নয়। এসব কথা শুনে মেরি ভীষণ কষ্ট পায়। এতদিন যাদের বন্ধু ভেবেছিল, তারা আড়ালে তাকে নিয়ে উপহাস করছে—এটা বুঝে তার আত্মবিশ্বাস ভেঙে যায়।

এরপর সে দ্রুত বিয়ের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। একজন ৫৫ বছর বয়সী (Widower) লোকের সাথে তার এনগেজমেন্ট হয়। কিন্তু যখন সেই লোকটি শারীরিক সম্পর্কে যেতে চায়, তখন মেরির ভেতরে তীব্র ঘৃণা জেগে ওঠে। সে ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে ওঠে এবং বাগদান ভেঙে সম্পর্ক ছিন্ন করে দেয়। এই ঘটনার খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। পরিচিতরা মেরিকে নিয়ে উপহাস করে, কেউ কেউ ভাবে সে মানসিক ভারসাম্য হারাচ্ছে। মেরি ভিতরে ভিতরে ভীষণভাবে ভেঙে পড়ে। ঠিক এই সময়েই তার জীবনে ডিক প্রবেশ করে।

মেরি ও ডিকের দেখা, প্রস্তাব ও বিয়ে: এরপর খুব শীঘ্রই মেরির সাথে ডিক টার্নারের দেখা হয়। ডিক ছিল একজন গরীব শ্বেতাঙ্গ কৃষক। তার খামারে জীবনের বেশিরভাগ সময় সে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেছে। দুর্ভাগ্যজনক কারণে এবং দারিদ্র্যের জন্য প্রতিবেশীরা তাকে উপহাস করে “Jonah” নামে ডাকত। ডিক আসলে বিয়ে করতে ভয় পেত, কারণ সে জানত তার দারিদ্র্য আর ব্যর্থ খামারজীবন কোনো মেয়েকে সুখ দিতে পারবে না। তবুও মেরিকে দেখার পর সে তাকে ভুলতে পারছিল না। কয়েক মাস পর সে আবার শহরে ফিরে আসে এবং এক পর্যায়ে মেরিকে প্রপোজ করে। 

অনেক দ্বিধা-দ্বন্দ্ব সত্ত্বেও মেরি রাজি হয়, কারণ সে তখন ভেতরে ভেতরে সামাজিক চাপ ও একাকিত্বে ভুগছিল। এরপর মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে তাদের বিয়ে হয়ে যায়। কিন্তু ডিক সৎভাবে স্বীকার করে যে, তার আর্থিক অবস্থা এতই খারাপ যে হানিমুনের ব্যবস্থা করাও সম্ভব নয়। আশ্চর্যজনকভাবে মেরির এতে কোনো আপত্তি ছিল না; বরং ভিতরে ভিতরে স্বস্তি পেয়েছিল, কারণ দাম্পত্য জীবন ও যৌনতা নিয়ে তার একধরনের ভয় কাজ করছিল। বিয়ের পর মেরি ডিকের খামারে আসে। সেখানে প্রথমেই তার মধ্যে বিব্রতবোধ জাগে। ডিক তাকে তার কৃষ্ণাঙ্গ চাকর স্যামসনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। কিন্তু মেরি প্রথম দেখাতেই স্যামসনকে অপছন্দ করে এবং তার প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করে।

মেরির সংসার, স্যামসনকে বরখাস্ত ও দোকানের অভিজ্ঞতা: বিয়ের পর মেরি তার কিছু জমানো টাকা দিয়ে ঘর সাজানোর জন্য আসবাবপত্র ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনে। খামারের একঘেয়ে জীবনে সময় কাটানোর জন্য সে সেলাই করে বা ঘরের সাজসজ্জার কাজ করে দিন কাটাতে থাকে। কিছুদিন পর একদিন সে বুঝতে পারে, স্যামসন তার পুডিং বানানোর জন্য রাখা কিশমিশ (raisins/কিচমিচ) চুরি করেছে। এই ঘটনায় মেরি প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয় এবং এক রকম রাগের মাথায় স্যামসনকে কাজ থেকে বরখাস্ত করে দেয়।

এদিকে, ডিকের প্রতিবেশী চার্লি স্ল্যাটার তাকে বারবার তামাক চাষ করার পরামর্শ দেয়। চার্লির মতে, এটাই সবচেয়ে লাভজনক ফসল। কিন্তু ডিক জেদ করে তার কথা শোনে না। সে ভুট্টা, সূর্যমুখী, তুলোসহ নানা ফসল চাষের চেষ্টা করে, কিন্তু কোনোটাই লাভজনক হয় না। অবশেষে ডিক চিন্তা করে একটি কাফির স্টোর (native store) খুলবে এবং সেটি চালানোর দায়িত্ব মেরিকে দেবে। প্রথমে মেরি কঠিনভাবে অস্বীকার করে, কারণ সে কালো গ্রাহকদের সঙ্গে লেনদেন করতে চায়নি। কিন্তু পরে অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাজি হয়।

দোকান চালানোর সময় হঠাৎ একদিন মেরির চোখে তার পুরনো অফিসের একটি বিজ্ঞাপন পড়ে। সেখানে টাইপিস্ট চাওয়া হচ্ছিল। এই বিজ্ঞাপন দেখে মেরির পুরনো স্বাধীন জীবনের কথা মনে পড়ে যায়। পরদিনই সে তাড়াহুড়ো করে ব্যাগ গুছিয়ে শহরের দিকে রওনা হয়। সে আগে যে মহিলা ক্লাবে (Ladies’ Club) থাকত, সেখানে গিয়ে ওঠার চেষ্টা করে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয়, তারা কোনো বিবাহিত মহিলাকে ক্লাবে রাখে না। এদিকে অফিসে গিয়ে মেরি দেখে, টাইপিস্টের পদ ইতিমধ্যেই পূর্ণ হয়ে গেছে। ঠিক তখনই ডিক শহরে আসে। অনেক অনুরোধ ও বোঝানোর পর সে মেরিকে আবার খামারে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।

ডিকের অসুস্থতা, মেরির কঠোরতা ও মোজেসের প্রতি দ্বন্দ্ব: একদিন ডিক মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়ে। তার জ্বর ও শারীরিক দুর্বলতা বাড়তে থাকলে চার্লি স্ল্যাটার ডাক্তার নিয়ে আসে। ডাক্তার মেরিকে পরামর্শ দেন, বাড়িটিকে মশার হাত থেকে রক্ষা করতে চারপাশে সুরক্ষা ব্যবস্থা (মশারি/ঘেরা) তৈরি করতে হবে। ডিক অসুস্থ থাকায় ফার্মের দায়িত্ব পুরোপুরি মেরির ওপর এসে পড়ে। শুরুতে মেরি এই দায়িত্ব নিতে অনিচ্ছুক থাকলেও পরবর্তীতে সে অত্যন্ত কঠোর হয়ে ওঠে। মেরি সবসময় একটি চাবুক (sjambok) সাথে রাখত, যা সে শাসনের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করত।

একদিন কাজের লোক মোজেস পানি খাওয়ার জন্য কাজ থামালে মেরি রেগে গিয়ে চাবুক দিয়ে তার মুখে আঘাত করে। এই আঘাত ও অপমান মোজেসকে গভীরভাবে ক্ষুব্ধ করে তোলে। সে মনে মনে প্রতিশোধ নেওয়ার শপথ করে। এই ঘটনাই তাদের সম্পর্কে এক বিপজ্জনক মোড় নিয়ে আসে। মেরি কালো চাকরদের ঘৃণা করত এবং তাদের মানুষ হিসেবে নয়, বরং নিচু চোখে দেখত। যারা কাজে দেরি করত, তাদেরকে সে অতিরিক্ত বোঝা বইয়ে শাস্তি দিত। এই অমানবিক আচরণ ধীরে ধীরে খামারের লোকদের মধ্যে বিদ্বেষ তৈরি করে।

বাড়ি ফিরে মেরি ডিককে নতুন করে পরামর্শ দেয়— এবার যেন তামাক চাষ শুরু করে। অনেক চিন্তা-ভাবনার পর ডিক রাজি হয়ে যায় এবং তামাক চাষ শুরু করে। প্রথমে সবকিছু আশাব্যঞ্জক মনে হলেও জানুয়ারির ভয়াবহ খরায় তামাক গাছগুলো নষ্ট হয়ে যায়। এতে ডিক আবারও আর্থিকভাবে ভেঙে পড়ে এবং দিন চালানোর জন্য ঋণ নিতে বাধ্য হয়। এদিকে, মেরির ভেতরে এক অদ্ভুত পরিবর্তন শুরু হয়। বাইরে থেকে সে কালো চাকরদের ঘৃণা করলেও, ভেতরে ভেতরে মোজেসের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়তে থাকে। সে অজান্তেই তার দিকে তাকিয়ে থাকে, তার কাজ লক্ষ্য করে, আর নিজের মনোভাব নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে যায়।

মেরি ও মোজেসের সম্পর্কের টানাপোড়েন: কয়েক মাস পর, মোজেস মেরিকে জানায় যে সে আর কাজ করবে না। এ কথা শুনে মেরি খুব কষ্ট পায় এবং ভেঙে পড়ে। তার একাকীত্ব এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে, সে মোজেসকে অনুরোধ করে যেন কাজ না ছাড়ে। মোজেস এই পরিস্থিতির সুযোগ নেয়। সে মেরিকে বলে— এক গ্লাস পানি নিয়ে আসতে। মেরি বাধ্য হয়ে পানি দেয়। এরপর মোজেস তাকে বিছানায় শুতে বলে, এবং নিজের কোট দিয়ে মেরিকে ঢেকে দেয়। 

এখানেই বোঝা যায়, তাদের সম্পর্ক আর প্রথাগত “কর্মচারী ও মালিক” সম্পর্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এরপর থেকে মোজেস আর কাজ ছাড়ার কথা তোলে না। বরং ধীরে ধীরে তার প্রভাব মেরির জীবনে বেড়ে ওঠে। এখন মোজেস খুবই অনাড়ম্বর ভঙ্গিতে মেরির সঙ্গে কথা বলে— যেন সমান সম্পর্কের জায়গা থেকে। অন্যদিকে, মেরিও তার কথা মেনে চলে। বাইরের সমাজের কাছে সে এখনও “শ্বেতাঙ্গ মালিক,” কিন্তু ভেতরে ভেতরে সে মোজেসের প্রতি মানসিকভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।

চার্লি ও টনির সন্দেহ, মোজেসের প্রস্থান: একদিন চার্লি স্ল্যাটার ডিকের কাছে এসে ফার্ম বিক্রি করার পরামর্শ দেয়। ডিকের অর্থনৈতিক অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে, চার্লি মনে করে ফার্ম বিক্রি করাই শ্রেয়। এসময় চার্লি বুঝতে শুরু করে যে মেরি ও মোজেসের মধ্যে একধরনের অস্বাভাবিক ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়েছে। যদিও স্পষ্ট প্রেমমূলক সম্পর্ক নয়, তবুও চার্লি একটা বিপজ্জনক সম্পর্কের আভাস পায়। তাই সে ডিককে সতর্ক করে এবং এখান থেকে সরে যেতে বলে।

এদিকে টনি মার্স্টনও মেরির আচরণ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। টনি ভাবে— মেরি হয়তো মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে এবং তার ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন। একদিন টনি নিজ চোখে দেখে, মোজেস মেরির কাপড় গুছিয়ে দিতে সাহায্য করছে। এই দৃশ্য দেখে টনি হতবাক হয়। সে ভাবে, ডিককে অবশ্যই জানানো দরকার, যাতে ডিক মোজেসকে কাজ থেকে বরখাস্ত করে। কিন্তু সেই একই সন্ধ্যায় মোজেস রহস্যজনকভাবে কাজ ফেলে চলে যায়। এরপর কিছু সময় সে আর ফার্মে ফিরে আসে না।

মেরির শেষ রাত: ফার্ম ছেড়ে যাওয়ার আগের দিন হঠাৎ করে মেরির ঘুম ভেঙে যায়। প্রথমে সে শান্ত বোধ করে, কিন্তু অল্প পরেই গভীর অস্থিরতা তাকে গ্রাস করে। ভোর হওয়ার আগেই সে বাড়ির চারদিকে হাঁটতে থাকে এবং বারবার মোজেসের কথা ভাবে। মেরির মনে হয় মোজেস হয়তো দোকানের কাছে আছে। এই ভেবে সে দোকানের দিকে যায়, কিন্তু ভয়ে আবার ফিরে আসে। তখন টনির সঙ্গে তার দেখা হয়, এবং টনি তাকে শান্ত করার চেষ্টা করে। সন্ধ্যায় মেরি আর খাবার খায় না। ডিক তাকে বলে—তাকে ডাক্তার দেখানো দরকার। তখন মেরি জবাব দেয়, সে আসলে সবসময়ই মনের দিক থেকে অসুস্থ ছিলো।

রাত গভীর হলে ডিক ঘুমিয়ে পড়ে। মেরি জেগে ওঠে এবং ভাবে—মোজেস এসেছে। সে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়। হঠাৎ করেই মোজেস অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসে। সে মেরির মুখে হাত চাপা দিয়ে ছুরির মতো ধারালো ইস্পাতের অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। মুহূর্তের মধ্যেই মেরি মারা যায়। বৃষ্টি নামতে শুরু করে। মেরির রক্ত বৃষ্টির পানির সাথে মিশে বারান্দায় গড়িয়ে পড়ে। মোজেস প্রথমে অস্ত্রটা ফেলে দেয়, আবার হাতে তুলে নেয়, তারপর আবার ফেলে রেখে যায়। সে ডিককে কিছুই জানায় না, শুধু চুপচাপ বেরিয়ে যায়। রাতের বাকি সময় মোজেস বনে বসে থাকে, আর সকালে নিজে থেকে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে।

Detailed সামারি- বাংলা 

অধ্যায় ১: “হত্যা, নীরবতা ও উপনিবেশিক সমাজের মুখোশ”

হত্যাকাণ্ড ও সংবাদপত্রের প্রতিবেদন: অধ্যায়টির শুরুতেই পাঠক একটি ছোট সংবাদপত্রের প্রতিবেদনের মাধ্যমে কাহিনির কেন্দ্রে প্রবেশ করে। “Murder Mystery” শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, ডিক টার্নারের স্ত্রী মেরি টার্নার খুন হয়েছেন এবং টার্নারদের খামারের এক “হাউসবয়” অপরাধ স্বীকার করেছে। খুনের উদ্দেশ্য বলা হয়েছে চুরি, কিন্তু সংবাদটির ভেতরে এক অদ্ভুত শীতলতা রয়েছে। পাঠক বুঝতে পারে, এটি কেবল একটি সাধারণ খুন নয়, বরং উপনিবেশিক শ্বেতাঙ্গ সমাজের ভেতরে জমে থাকা বৈষম্য ও ভয়ের প্রতিফলন। আশ্চর্যের বিষয়, গ্রামীণ সমাজ সাধারণত যেকোনো ঘটনার গসিপে মেতে ওঠে, কিন্তু এই হত্যার খবর সবাই চেপে যায়। মনে হয় যেন নীরবতার মধ্যেই একধরনের “সম্মতি” কাজ করছে—মেরি ও ডিককে নিয়ে আলোচনা না করাই শ্রেয়। এখানে পাঠকের কাছে প্রথম ইঙ্গিত আসে যে, এই হত্যাকাণ্ড ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি হলেও, এর গভীরে রয়েছে সামাজিক ভণ্ডামি ও দমননীতির প্রতিচ্ছবি।

টার্নার দম্পতি ও সামাজিক বৈষম্য: এই অধ্যায়ে স্পষ্ট হয়ে ওঠে টার্নার দম্পতির সঙ্গে স্থানীয় শ্বেতাঙ্গ সমাজের সম্পর্ক। ডিক ও মেরি নিজেদের আলাদা রাখতেন, সমাজে মিশতেন না। তাদের বাড়িঘর ছিল অগোছালো, যা ধনী শ্বেতাঙ্গদের চোখে “অসভ্য” বলে মনে হতো। ফলে তারা গসিপে “Poor Whites” নামে পরিচিত হন। এই শব্দটি মূলত আফ্রিকানারদের (ডাচ বংশোদ্ভূত গরিব কৃষক) জন্য ব্যবহৃত হলেও ব্রিটিশ শ্বেতাঙ্গদের ক্ষেত্রে এটি ছিল অপমানজনক। শ্বেতাঙ্গ সমাজের নীতি ছিল “Esprit de corps”—অর্থাৎ সবাই মিলে সম্মান বজায় রাখা। কিন্তু টার্নাররা সেই ঐক্য ভেঙে ফেলেছিল, তাই তারা সমাজচ্যুত হয়। হত্যাকাণ্ডের পরেও ডিক কিছুটা সহানুভূতি পেলেও মেরিকে সমাজ “অপবিত্র” ও “অবাঞ্ছিত” হিসেবে চিহ্নিত করে। এখানে বোঝা যায়, মেরির প্রতি বিরূপতা আসলে ব্যক্তিগত নয়; এটি উপনিবেশিক শ্রেণিবিভাজন ও ভণ্ডামিরই প্রতিফলন।

তদন্ত, মোজেসের আত্মসমর্পণ ও শ্বেতাঙ্গ মনোভাব: মেরির মৃতদেহ আবিষ্কারের পর খামারের কালো শ্রমিকরা খবর দেয় চার্লি স্ল্যাটারকে। স্ল্যাটার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে খবর দেয়, এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই ছয়জন কৃষ্ণাঙ্গ পুলিশ এসে পড়ে। অদ্ভুতভাবে, খুনি মোজেস নিজেই আত্মসমর্পণ করে। সে শান্তভাবে বলে, “আমি এসেছি।” এটি মাতাবেলে সংস্কৃতির সঙ্গে মিলে যায়, যেখানে অপরাধী ভাগ্যের কাছে নিজেকে সমর্পণ করে। তবে শ্বেতাঙ্গ দৃষ্টিতে এই আত্মসমর্পণ “মহৎ” হলেও, তারা বর্তমানকে সবসময় “অপবিত্র” হিসেবে দেখে। এই আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়েই বোঝা যায়, মোজেস কেবল ব্যক্তিগতভাবে অপরাধী নয়; সে উপনিবেশিক দমন ও বঞ্চনার শিকার। এদিকে ডিক পাগলের মতো অবস্থায় ঝোপ থেকে বেরিয়ে আসে, কিন্তু কৃষ্ণাঙ্গ পুলিশরা তাকে স্পর্শ করে না, কারণ আইন অনুযায়ী কালো পুলিশ শ্বেতাঙ্গকে হাত দিতে পারত না। ঘটনাটি দেখায়, আইন ও শাসনব্যবস্থার ভেতরেই ছিল জাতিগত বৈষম্য ও ভয়ের কাঠামো।

চার্লি স্ল্যাটার, টনি মার্স্টন ও শ্বেতাঙ্গ বিচারবোধ: অধ্যায়ে চার্লি স্ল্যাটার ও টনি মার্স্টনের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। স্ল্যাটার ছিলেন নির্মম, নৃশংস এবং সফল কৃষক, যিনি সবসময় নিজের কর্তৃত্ব চাপিয়ে দিতে চাইতেন। মেরির মৃত্যুতে তিনিই নেতৃত্ব নেন, যেন খামার ও তদন্তের দায়িত্ব তারই। অপরদিকে, তরুণ টনি মার্স্টন মেরির দেহ খুঁজে পান এবং তাকে কুকুরের হাত থেকে সরিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেন। টনি ছিলেন সংবেদনশীল ও দ্বিধাগ্রস্ত; তিনি বুঝতে পারেন উপনিবেশিক সমাজের নিষ্ঠুরতা, তবে তার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর শক্তি রাখেন না। সার্জেন্ট ডেনহ্যাম ও স্ল্যাটার একসঙ্গে টনিকে জেরা করেন, কিন্তু তাদের দৃষ্টি ছিল সংকীর্ণ—তারা শুধু নিশ্চিত করতে চায় যে “একজন কালো মানুষ শ্বেতাঙ্গ নারীকে হত্যা করেছে।” টনি সত্য বুঝলেও নীরব থাকে, কারণ জানত কোনো সত্যই এই সমাজে গ্রহণযোগ্য হবে না। এই পর্বে লেসিং দেখান, কীভাবে সত্য গোপন হয়ে যায়, আর শ্বেতাঙ্গ সমাজ কেবল নিজেদের নিরাপত্তা আর প্রভুত্ব রক্ষায় মনোযোগী হয়।

মেরির দেহ, মোজেসের পরিণতি ও টনির প্রস্থান: তদন্তের শেষ পর্যায়ে দেখা যায়, মেরির দেহ পুলিশের গাড়িতে তোলা হলেও মোজেসকে তার পাশে বসানো হয়নি, কারণ সামাজিক নিয়মে এক কালো মানুষ মৃত শ্বেতাঙ্গ নারীর পাশে বসতে পারত না। তাকে হাঁটিয়ে থানায় নেওয়া হয়। আশ্চর্যের বিষয়, মোজেস কোনো প্রতিবাদ করে না, বরং নির্বিকারভাবে নির্দেশ মানে। অন্যদিকে, টনি ক্রমেই বিভ্রান্ত হতে থাকে। সে জানত, মেরিরও কিছু দোষ ছিল, কিন্তু শেষ বিচারে কে দায়ী তা বলা সম্ভব নয়। তবু সমাজের আদালত কেবল একটাই বলবে—“মোজেস মেরিকে হত্যা করেছে।” এই অন্যায্য ব্যবস্থার অংশ হতে না চেয়ে টনি অবশেষে খামার ছেড়ে চলে যায়। পরে সে খনিজ শিল্পে কাজ নিলেও আবার ব্যর্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত অফিসের চাকরিতে যোগ দেয়—যে জীবন থেকে পালাতে এসেছিল, তাকেই মেনে নিতে হয়। টনির এই প্রস্থান প্রতীকী; উপনিবেশিক সমাজে মানবিকতা ও ন্যায়ের কোনো জায়গা নেই।

(প্রথম অধ্যায় The Grass is Singing পাঠককে একটি হত্যাকাণ্ডের খবর দিয়ে শুরু হলেও ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়, এটি কেবল একটি ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি নয়। এটি উপনিবেশিক শ্বেতাঙ্গ সমাজের নৃশংসতা, বৈষম্য, এবং দমননীতির নগ্ন চিত্র। মেরির মৃত্যু, মোজেসের নির্বিকার আত্মসমর্পণ, স্ল্যাটারের নির্মম কর্তৃত্ব এবং টনির নীরব প্রস্থান—সবই মিলে লেসিং এক অন্ধকার ও নিষ্ঠুর সমাজের মুখোশ সরিয়ে দেন।)

অধ্যায় ২ : শৈশব, স্বাধীনতা ও বিবাহের পথে মেরির যাত্রা

শৈশব ও পারিবারিক অশান্তির ছায়া: উপন্যাসের দ্বিতীয় অধ্যায় আমাদের নিয়ে যায় মেরির অতীত জীবনে। তার শৈশব কেটেছে দক্ষিণ আফ্রিকার ছোট্ট এক বসতিতে, যেখানে দোকান ছিল জীবনের কেন্দ্রবিন্দু। এই দোকান ইউরোপীয় শ্বেতাঙ্গদের জন্য ছিল একধরনের প্রতীক, যা তাদের মনে করিয়ে দিত অদেখা মাতৃভূমি ইংল্যান্ডের কথা। মেরি ছোটবেলায় সেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটাত, যদিও তার মা তাকে স্থানীয় দোকানদারের কন্যার সঙ্গে খেলতে দিতেন না। দোকানই ছিল সেই জায়গা, যেখানে মেরির বাবা নিয়মিত মদ কিনতে যেতেন। ফলে পারিবারিক জীবনে শুরু থেকেই বিরাজ করত আর্থিক টানাপোড়েন। মেরির মা প্রায়ই অভিযোগ করতেন যে তার স্বামী সমস্ত অর্থ মদে উড়িয়ে দেয়, আর সংসার চালানো হয়ে পড়ে কঠিন। তবে মদ্যপ অবস্থায়ও বাবা হিংস্র না হয়ে বরং হাসিখুশি থাকতেন, অথচ স্থানীয় কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি তিনি ছিলেন রূঢ় ও অবমাননাকর। এর মধ্যে এক বছর মেরির ভাই-বোন উভয়েই অসুস্থ হয়ে মারা যায়। এই দুঃখের সময়ে বাবা-মা সাময়িকভাবে কাছাকাছি এলেও, মেরির কাছে শৈশবের সুখ মানে ছিল এই অদ্ভুতভাবে দুঃখের মধ্যে পাওয়া শান্তি।

স্কুল, পরিবার থেকে মুক্তি ও একাকী জীবনযাপন: মেরির পরিবার কয়েকবার জায়গা পরিবর্তন করলেও তার কাছে সব জায়গাই একরকম মনে হতো। অবশেষে তাকে বোর্ডিং স্কুলে পাঠানো হয়, যেখানে সে পরিবারের অশান্তি থেকে মুক্তি পেয়ে খুশি থাকে। ষোলো বছর বয়সেই মেরি স্থায়ীভাবে বাড়ি ছাড়ে এবং টাইপিস্ট হিসেবে কাজ শুরু করে। তখন থেকেই সে স্বাধীন জীবনকে বেছে নেয়। বিশ বছর বয়সে তার একটি ঘনিষ্ঠ বন্ধুবলয় তৈরি হয়, আর এই জীবন তাকে আরও আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। মায়ের মৃত্যু ও বাবার বদলি তার ওপর কোনো প্রভাব ফেলে না; বরং সে আরও মুক্তি অনুভব করে। পঁচিশ বছর বয়সে বাবার মৃত্যু হলে তার শৈশবের সঙ্গে শেষ যোগসূত্রও ছিন্ন হয়, আর সে পূর্ণ স্বাধীনতার স্বাদ পায়। মেরির জীবনের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হয়ে ওঠে তার সুখী মানসিকতা, যদিও তার সৌন্দর্য সাধারণ মানের ছিল।

“গোল্ডেন এজ” ও অবিবাহিত জীবনের পরিতৃপ্তি: ত্রিশ বছর বয়সেও মেরির জীবনে তেমন কোনো পরিবর্তন আসে না। সে মনে করত যেন তার বয়স এখনো ষোলো। সে অফিসে বসের সেক্রেটারি হিসেবে কাজ করত এবং চাইলে আলাদা ফ্ল্যাটে থাকতে পারত। তবু সে মেয়েদের ক্লাবে থাকতে পছন্দ করত, কারণ এটি তাকে বোর্ডিং স্কুলের পরিবেশ মনে করিয়ে দিত। সেখানে সে সম্মানিত ও কর্তৃত্বপূর্ণ অবস্থান উপভোগ করত। প্রতিদিনের রুটিনে অফিস, ক্লাব, খেলা, পার্টি আর সামাজিক আড্ডা তার জীবনে এনে দিত ছন্দ। এই সময়কে বর্ণনাকারী “Golden Age” বলে অভিহিত করেছেন—একটি সময় যখন মেরি সুখী একাকিত্বে এবং স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দে ভরা ছিল। তার সমবয়সী বান্ধবীরা বিয়ে ও সন্তান নিয়ে ব্যস্ত হলেও, মেরি সেই জীবন থেকে দূরে ছিল। শৈশবের পারিবারিক অভিজ্ঞতা তাকে বিয়ে সম্পর্কে বিতৃষ্ণ করেছে, আর যৌনতা তার কাছে বিরক্তির কারণ ছিল। সে বিশ্বাস করত বিয়ে না করেও জীবন সুখে কাটানো যায়।

সামাজিক চাপ, অপমান ও বিবাহের সিদ্ধান্ত: কিন্তু এই শান্ত ও নিরুদ্বেগ জীবন একদিন আচমকাই ভেঙে যায়। এক বান্ধবীর বাড়ির বারান্দায় বসে সে শুনে ফেলে অন্য দুই বান্ধবীর গসিপ—তারা বলছে মেরি কখনো বিয়ে করতে পারবে না, তার চেহারা আকর্ষণীয় নয়, আর সে একেবারেই শিশুসুলভ। এই কথাগুলো শুনে মেরি ভেতরে ভেতরে ভেঙে পড়ে। এতদিন সে মনে করত বন্ধুরা তাকে সম্মান করে, কিন্তু গোপনে তারা তাকে বিদ্রূপ করে—এ সত্য তাকে গভীরভাবে আঘাত করে। সে হঠাৎ পোশাক-আচরণ বদলাতে শুরু করে এবং পুরুষদের সামনে অস্বস্তি বোধ করে। গসিপের আঘাতে সে মরিয়া হয়ে বিবাহের চেষ্টা করে। একসময় একজন বয়স্ক ব্যক্তির (Widower of 55 years old) সঙ্গে বাগদান করে, কিন্তু যখন সেই ব্যক্তি শারীরিক সম্পর্কের চেষ্টা করে, মেরির মনে প্রবল বিতৃষ্ণা জাগে। সে পালিয়ে আসে এবং চারপাশের সমাজ তাকে নিয়ে আরও উপহাস শুরু করে। এই ভাঙনের মধ্যে ডিকের আবির্ভাব ঘটে। ডিক ছিল একজন কৃষক, যে শহরে আসা পছন্দ করত না, কিন্তু একদিন সিনেমায় গিয়ে মেরিকে দেখে আকৃষ্ট হয়। ধীরে ধীরে তাদের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। যদিও ডিক ছিল দরিদ্র ও ক্লান্ত কৃষক, তার সরলতা মেরিকে বিবাহের সিদ্ধান্ত নিতে প্ররোচিত করে। অবশেষে একদিন ডিক প্রস্তাব দেয়, আর মেরি তা গ্রহণ করে। দুই সপ্তাহ পর তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়।

(অধ্যায় ২ মূলত মেরির শৈশব থেকে শুরু করে অবিবাহিত স্বাধীন জীবন এবং অবশেষে সামাজিক চাপে বিবাহে পৌঁছানোর যাত্রাকে তুলে ধরে। দোকান, পারিবারিক অশান্তি, স্কুল-জীবনের মুক্তি, “গোল্ডেন এজ”-এর সুখ এবং হঠাৎ গসিপের আঘাতে ভাঙন—সব মিলিয়ে এই অধ্যায় তার মানসিক জগৎকে উন্মোচিত করে। লেসিং দেখান, মেরি আসলে বিয়ে করতে চায়নি; কিন্তু সমাজ ও পরিবেশের চাপ, অপমান ও আত্মপরিচয়ের সংকট তাকে ডিকের প্রস্তাব গ্রহণে বাধ্য করে। এখান থেকেই শুরু হয় তার দাম্পত্য জীবনের নতুন অধ্যায়, যা পরবর্তীতে ট্র্যাজেডিতে রূপ নেয়।)

অধ্যায় ৩ – খামারে প্রথম রাত ও দাম্পত্য জীবনের সূচনা

খামারে আগমন ও প্রথম অভিজ্ঞতা: মেরি ও ডিক বিয়ের পরদিন রাতে খামারে পৌঁছায়। মেরি নিজেকে বোঝায়—এখন থেকে সে “প্রকৃতির কাছাকাছি” থাকবে, যদিও অন্তরে সে শহরের জীবনের প্রতি বেশি আকৃষ্ট। দাম্পত্য জীবনের নতুন অভিজ্ঞতার জন্য সে উদ্‌গ্রীব থাকে এবং দারিদ্র্যের বাস্তবতা তার কাছে এখনো তেমন ভয়ের কিছু মনে হয় না। কিন্তু খামারে পৌঁছেই সে হতাশ হয়। চাঁদের আলোয় বাড়িটি তার কাছে অন্ধকার, বন্ধ এবং দমবন্ধ লাগছিল। সে বাড়ি থেকে দূরে গাছের ঝোপের দিকে হেঁটে যায়, কিন্তু একটি পাখির শব্দে ভয় পেয়ে আবার ফিরে আসে। এই ছোট্ট ঘটনাটিই তার ভেতরের আতঙ্ক, অচেনা পরিবেশের প্রতি ভীতি ও ভবিষ্যৎ দাম্পত্য জীবনের অনিশ্চয়তার প্রতীক হয়ে ওঠে।

বাড়ির অভ্যন্তর ও ডিকের নিঃসঙ্গতা: বাড়ির ভেতরে ঢুকে ডিক প্রদীপে প্যারাফিন (ক্যারোসিন তেল) ঢালে, যার গন্ধে মেরি বমি বমি অনুভব করে। মেরি বুঝতে পারে ডিক ভয় পাচ্ছে—সে হয়তো হতাশ হবে। তাই মেরি কৃত্রিম হাসি দিয়ে তাকে আশ্বস্ত করে। ডিক চা বানাতে গেলে মেরি ঘরের দেয়ালে দুটি ছবি দেখতে পায়—একজন নারীর ছবি (চকলেটের বাক্স থেকে কাটা) আর একটি শিশুর ছবি (ক্যালেন্ডার থেকে ছেঁড়া)। এই ছবি দেখে মেরি হঠাৎ উপলব্ধি করে ডিক কতটা নিঃসঙ্গ। ডিক ফিরে এসে ছবি দুটি দেয়াল থেকে নামিয়ে নেয় এবং বলে বহু বছর এগুলো দেখেনি। ছবিগুলো পরে মেঝেতে পড়ে থাকে, শেষে ডিক সেগুলো মুচড়িয়ে কোণে ফেলে দেয়—ঘরে কোনো ডাস্টবিন পর্যন্ত নেই। ডিক প্রস্তাব করে, চাইলে তারা নতুন ছবি লাগাতে পারবে। মেরি তখন তাকে নিয়ে একধরনের মায়া ও সুরক্ষার অনুভূতি পায়। ডিক বলে, এখন থেকে চা ঢালা তার “কাজ”—যা মেরির জন্য এক নতুন দায়িত্বের সংকেত। এভাবেই পাঠক বুঝতে পারে—ডিকের জীবনে মেরির আগমন তাকে আশা দিয়েছে, কিন্তু সেই আশার ভেতরে আছে গভীর একাকিত্ব।

শৈশব স্মৃতি, আতঙ্ক ও দাম্পত্য রূপান্তর: ডিক জানায়, সে নিজের হাতে এই ঘর তৈরি করেছে। ঘরের একটি পর্দা ছিল, যা এম. স্ল্যাটারের হাতের কাজ। ডিক যখন খামারের গল্প করছিল, মেরি হঠাৎ অনুভব করে যেন সে আবার তার শৈশবের বাড়িতে ফিরে গেছে—সেই পুরনো ঝগড়া, দমবন্ধ পরিবেশের স্মৃতি তার সামনে ভেসে ওঠে। আতঙ্কিত হয়ে সে প্রস্তাব করে শোবার ঘরে যেতে। ডিক সেখানে একটি বড় “পুরোনো ধাঁচের খাট” কিনেছিল, যা তার কাছে সুখ ও সম্পূর্ণতার প্রতীক। কিন্তু খাটে বসে মেরির মুখের অখুশি ভাব দেখে ডিক ভেতরে ভেতরে অপরাধবোধে ভোগে। সে ভাবে—মেরিকে বিয়ে করে হয়তো ভুল করেছে। মেরির দৃষ্টিকোণ থেকে যৌন অভিজ্ঞতাটি খুব একটা খারাপ মনে হয়নি, তবে এটিকে তার কাছে অর্থহীনও মনে হয়। অন্যদিকে ডিকের মনে অপরাধবোধ থেকেই যায়। তবে এই অপরাধবোধই হয়তো তাদের একসঙ্গে থাকার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। রাতে মেরি ঘুমিয়ে পড়ে ডিকের হাত ধরে—যেন অনিশ্চিত সম্পর্কের মাঝেও সে সাময়িক নিরাপত্তা খুঁজে পায়।

দাম্পত্যের প্রতীকী সূচনা: এই অধ্যায়ের শেষাংশে পাঠক বুঝতে পারে—মেরি ও ডিকের সম্পর্কের ভিত্তি শুরু থেকেই নড়বড়ে। মেরি শহরপ্রীয় মানুষ, প্রকৃতিকে ভালোবাসার কথা বললেও খামারের বাস্তবতায় আতঙ্কিত। ডিক নিঃসঙ্গ ও অপরাধবোধে ভোগা এক কৃষক, যে মেরিকে সুখ দিতে পারবে কি না তা নিয়ে চিন্তিত। দুজনের প্রথম রাত কাটে অস্বস্তি, অনিশ্চয়তা ও গোপন হতাশায় পূর্ণ। তবে তারা একে অপরকে আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করে—ডিক নিজের অপরাধবোধের মধ্যেও মেরিকে সঙ্গী করতে চায়, আর মেরি ভয়ের ভেতরেও তার হাত ধরে ঘুমোয়। এই প্রথম রাতটি কেবল দাম্পত্য জীবনের সূচনা নয়, বরং তাদের ভবিষ্যৎ দুঃখ, দারিদ্র্য, মানসিক ভাঙন ও ট্র্যাজেডির আভাস।

(অধ্যায় ৩ মূলত মেরি ও ডিকের দাম্পত্য জীবনের সূচনা বর্ণনা করে। খামারের নির্জনতা, অস্বস্তিকর পরিবেশ, ডিকের নিঃসঙ্গতা ও মেরির ভীতি—সবকিছু মিলে তাদের সম্পর্কের মধ্যে অনিশ্চয়তার বীজ বপন করে। প্রথম রাতেই বোঝা যায়—এ সম্পর্ক প্রেম বা আনন্দে নয়, বরং একাকিত্ব, দায়বদ্ধতা ও আতঙ্কে বাঁধা। পরবর্তী অধ্যায়গুলোতে এই অনিশ্চয়তা ধীরে ধীরে ভয়াবহ রূপ নেবে।)

অধ্যায় ৪ – খামারে প্রথম সকাল ও শ্বেতাঙ্গ–কৃষ্ণাঙ্গ সম্পর্ক

অস্বস্তিকর সকাল ও স্যামসনের পরিচয়: বিয়ের পরের সকালে মেরি জেগে ওঠে একা। কিছুক্ষণ পর ডিক পায়জামা পরে ঘরে আসে। তাদের মধ্যে হয় একধরনের অসামঞ্জস্যপূর্ণ ও ভদ্রতাপূর্ণ আলাপ। হঠাৎ এক বৃদ্ধ কৃষ্ণাঙ্গ ভেতরে প্রবেশ করে। ডিক তাকে পরিচয় করিয়ে দেয়—সে হলো স্যামসন, খামারের পুরনো চাকর। ডিক মজার ছলে বলে—“খারাপ বুড়ো শূকর নয়।” কিন্তু মেরির কাছে স্যামসনের স্বাভাবিক, নির্ভীক ভঙ্গি একেবারেই অগ্রহণযোগ্য লাগে। মেরি ছোটবেলা থেকেই শিখেছিল—মেয়েদের স্থানীয় কৃষ্ণাঙ্গদের ভয় পেতে হবে এবং দূরে থাকতে হবে। ফলে স্যামসনের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতে তার ভেতরে জন্ম নেয় আতঙ্ক, ঘৃণা ও একধরনের শ্রেণি–বর্ণভিত্তিক অস্বস্তি।

স্যামসনের কাজ ও খামারের নিয়মকানুন: মেরি বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়, আবার ঘুরে এসে দেখে স্যামসন বিছানা গুছাচ্ছে। পরে স্যামসন তাকে রান্নাঘর দেখায়। সেখানে দেখা যায়—খাবার তালাবদ্ধ থাকে, যাতে চাকররা অনুমতি ছাড়া কিছু নিতে না পারে। তবে স্যামসন ইশারায় বোঝায়—ডিক তাকে চুপিসারে অল্প কিছু খাবার নিতে দেয়। রান্নাঘরের পাশেই স্যামসন দেখায় একটি লোহার লাঙলের চাকতি (plow disc), যেটি বাজানো হয় সকালবেলা শ্রমিকদের জাগাতে এবং দুপুরে খাবারের বিরতির সংকেত দিতে। মেরি খামারের এই নিয়ম দেখে বিস্মিত হয়, তবে সে এটিকে গ্রহণ করতে বাধ্য। ধীরে ধীরে মেরির কাছে স্পষ্ট হয়—এই খামারের জীবনযাপন শহরের স্বাধীন জীবনের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।

ডিকের রাগ ও মেরির অসহায়তা: অল্প কিছুক্ষণ পর ডিক ফিরে আসে এবং হঠাৎ স্যামসনের ওপর চিৎকার শুরু করে। সে কথা বলে “কিচেন কাফির” ভাষায়—একধরনের বিকৃত উপভাষা, যা শ্বেতাঙ্গরা কৃষ্ণাঙ্গ চাকরদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ব্যবহার করে। ডিক অভিযোগ করে—স্যামসন নাকি কুকুরগুলোকে খাওয়ানোর বদলে জঙ্গলে ছেড়ে দিয়েছে, কারণ সে অলস। ডিকের রাগে মেরি বিস্মিত হয়। নিত্যদিনের নানা সমস্যার কারণে ডিক স্পষ্টতই চাপে ছিল। নাস্তা শেষ করেই সে আবার কাজে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর কুকুরগুলো নিজেরাই ফিরে আসে, যা প্রমাণ করে ডিকের অভিযোগ হয়তো অতিরঞ্জিত। মেরি রান্না করার চেষ্টা করে, কিন্তু এতে সে নতুন এবং অদক্ষ। শেষে সে একটি হ্যান্ডবুক নিয়ে বসে—কিচেন কাফির ভাষা শেখার জন্য—যাতে অন্তত স্যামসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়।

প্রতীকী অর্থ: এই অধ্যায়ের ঘটনাগুলো উপন্যাসে বড় প্রতীক বহন করে। স্যামসনের নির্লজ্জ স্বাভাবিকতা মেরির কাছে হুমকির মতো মনে হয়—যা আসলে শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে বদ্ধমূল ভয় ও কুসংস্কারের প্রকাশ। ডিকের রাগও শুধু স্যামসনের ভুল নয়, বরং তার ব্যর্থ খামারজীবনের চাপের বহিঃপ্রকাশ। মেরির রান্না শেখার অদক্ষতা এবং কিচেন কাফির বই হাতে বসা প্রতীকী করে তার নতুন জীবনের অনভ্যস্ততা, অক্ষমতা এবং সাংস্কৃতিক বিচ্ছিন্নতাকে। এভাবেই খামারের প্রথম সকালই পাঠককে জানিয়ে দেয়—এই দাম্পত্য জীবনের ভিত্তি হবে অবিশ্বাস, চাপ, এবং বর্ণবৈষম্য।

(অধ্যায় ৪–এ মেরির প্রথম সকালেই স্পষ্ট হয় খামারের অস্বস্তিকর বাস্তবতা। স্যামসনের সঙ্গে সম্পর্ক, ডিকের রাগ, আর মেরির নতুন দায়িত্ব—সবকিছু মিলিয়ে বোঝা যায় মেরির শহুরে আরামদায়ক জীবন এখন অতীত। তার সামনে অপেক্ষা করছে এক দমবন্ধ করা, বৈষম্য–ভরা খামারজীবন।)

আরো পড়ুনঃ A Passage to India Bangla Summary

অধ্যায় ৫ – গৃহস্থালির দ্বন্দ্ব ও মেরির অস্থিরতা

গৃহসজ্জা, স্যামসনের বিদায় ও নতুন চাকরের আগমন: মেরি প্রথমে নিজের সঞ্চিত অর্থ দিয়ে কাপড়, রঙ ও নানা জিনিস কিনে ঘর সাজানোর চেষ্টা করে। এক মাসের মধ্যেই ঘর গুছিয়ে ফেলার রুটিনে সে কিছুটা আনন্দ খুঁজে পায়। সকালে ডিকের সঙ্গে চা খায়, সারাদিন সেলাই করে, আর রাতে ভালো ঘুম হয়। সে ভাবে—ডিককে খুশি করতে পারছে, কিন্তু ডিক এখনো তাকে একধরনের ভাই-বোনের মতো দূরত্বপূর্ণ আচরণ করে। এরপর মেরি কিচেন কাফির শেখা শুরু করে এবং স্যামসনের সঙ্গে কড়া ভাষায় ব্যবহার করতে থাকে। একদিন কিশমিশ হারানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে সে স্যামসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে এবং তার বেতন থেকে টাকা কেটে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে স্যামসন চাকরি ছেড়ে দেয়। ডিক বিদায় জানাতে স্যামসনের প্রতি স্নেহ দেখায়, যা মেরিকে হতবাক করে। স্যামসনের পর নতুন চাকর আসে, কিন্তু মেরির কঠোর আচরণের কারণে সে-ও ভয়ে কাজ করতে পারে না। মেরি তখন গৃহকর্মে ব্যস্ত হয়ে ওঠে, কিন্তু ভেতরে ভেতরে অস্থিরতা তাকে গ্রাস করতে শুরু করে।

গরম, মানসিক ক্লান্তি ও মেরির চরম প্রতিক্রিয়া: দিন যত গড়ায়, মেরি তীব্র গরমে অসহ্য হয়ে ওঠে। তার মনে হয় জীবনের সবকিছু একঘেয়ে ও অর্থহীন। নতুন চাকরের সঙ্গে আচরণেও সে অতিরিক্ত কঠোর হয়ে ওঠে। নার্ভাস চাকরটি ভুল করে একটি প্লেট ভাঙলে মেরি তাকে তৎক্ষণাৎ বরখাস্ত করে। পরে সে ঘর পরিষ্কার করতে গিয়ে এমনভাবে ঘষতে থাকে যেন কালো চামড়ার ত্বক ঘষে তুলে ফেলছে—যা তার অবচেতন ঘৃণা ও সহিংস মানসিকতাকে প্রকাশ করে। পরবর্তী চাকরটি অনেক অভিজ্ঞ, সে যান্ত্রিক ভঙ্গিতে কাজ করে। এই নির্লিপ্ত আচরণও মেরির কাছে বিরক্তিকর মনে হয়। ডিক একসময় মেরিকে খামারের কাজে সঙ্গে নিতে চায়, কিন্তু মেরি চাকরের ব্যাপারে সন্দিহান থাকে। খামারে গিয়ে কাজের কিছুই বুঝতে পারে না, আর বাড়ি ফিরে নতুন চাকরের উপর সন্দেহ করতে থাকে। গরম, একঘেয়েমি ও অবিশ্বাসের মধ্যে তার মেজাজ ক্রমেই খিটখিটে হয়ে ওঠে।

দাম্পত্য দ্বন্দ্ব, স্ল্যাটারদের আগমন ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতা: গরম ও কাজের চাপে ডিক ও মেরির মধ্যে তর্ক বাড়তে থাকে। একদিন পানি অপচয়ের বিষয় নিয়ে তারা ঝগড়া করে। ডিক পরে দুঃখপ্রকাশ করলেও মেরির মনে ক্ষোভ জমে থাকে। একই সময়ে চাকরের ওপর অতিরিক্ত কাজ চাপিয়ে দিয়ে সে তাকে মানসিকভাবে ভেঙে ফেলে। এ অবস্থায় স্ল্যাটার দম্পতি খামারে আসে। মিসেস স্ল্যাটার আন্তরিকভাবে মেরির প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করলেও মেরি তা অপমান ভেবে নেয়। ফলে তার সঙ্গে মেরির ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে না। স্ল্যাটাররা চলে গেলে ডিক দুঃখ পায়, কিন্তু মেরি স্বস্তি অনুভব করে। ডিক মেরিকে মিসেস স্ল্যাটারের সঙ্গে দেখা করতে বলেন, কিন্তু মেরি তা অস্বীকার করে। পরবর্তীতে চাকরও চাকরি ছাড়ার কথা জানায়। ডিক তখন নিয়ম ভেঙে সরাসরি চাকরকে বলে—মেরি এখনো শিখছে এবং ভবিষ্যতে তার কাজের চাপ কমবে। এই ঘটনায় ডিক ও মেরির মধ্যে প্রবল ঝগড়া হয়। মেরি চিৎকার করে তার মায়ের কণ্ঠস্বরের মতো হয়ে ওঠে—“কষ্টভোগী নারীর” কণ্ঠে। ডিকও নতুন রূপে কঠোর আচরণ করে। ফলে তাদের দাম্পত্য জীবনে প্রথমবার প্রবল ফাটল স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

ভবিষ্যতের আশঙ্কা ও মেরির ভাঙন: চাকর চলে যাওয়ার পর মেরি একা গৃহস্থালির কাজ সামলাতে চেষ্টা করে, কিন্তু ভেতরে ভেতরে ক্লান্তি ও হতাশা বাড়তে থাকে। রাতে একা বারান্দায় হাঁটতে হাঁটতে সে নিজের পুরোনো শহুরে জীবনের কথা ভাবে এবং ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাঁদে। সে বোঝে—তার স্বাধীন, সুখী, নিরুদ্বেগ জীবন চিরতরে শেষ হয়ে গেছে। এদিকে ডিক স্ল্যাটারের উপদেশ শুনেও চাষাবাদের পরিকল্পনা পরিবর্তন করতে চায় না। আর্থিক সংকট আরও বাড়তে থাকে। ডিক ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয় এবং বলে হয়তো তাদের সন্তান নেওয়া পিছিয়ে দিতে হবে। কিন্তু মেরি এতে স্বস্তি পায়, কারণ সে এখনো দাম্পত্য জীবনে মানিয়ে নিতে পারছে না। স্থানীয় শ্বেতাঙ্গ সমাজ থেকেও তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। মেরির চাকর রাখার অক্ষমতা, সামাজিক সম্পর্ক অস্বীকার, এবং ডিকের আর্থিক ব্যর্থতা—সবকিছু মিলিয়ে তাদের দাম্পত্য জীবনের ভাঙনের পূর্বাভাস আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

(অধ্যায় ৫–এ মেরির গৃহস্থালি জীবন, চাকরদের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব, ডিকের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান ঝগড়া এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে। গরম, একঘেয়েমি ও হতাশা মিলে তার মানসিক ভাঙন শুরু হয়। একই সময়ে ডিকের আর্থিক দুর্বলতা ও ব্যর্থ খামারজীবন তাদের সম্পর্ককে আরও সংকটে ফেলে। এ অধ্যায় পাঠককে দেখিয়ে দেয়—টার্নার দম্পতির জীবন কেবল দাম্পত্য সমস্যায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং গভীর সামাজিক, অর্থনৈতিক ও মানসিক সংকটে জর্জরিত।)

অধ্যায় ৬ : ব্যর্থ স্বপ্ন ও ভাঙা প্রত্যাবর্তন

রেলস্টেশন ভ্রমণ ও ডিকের ঋণের বোঝা: ডিক আর মেরি খুব কমই রেলস্টেশনে যেত। সপ্তাহে দু’বার একজন আফ্রিকান কর্মী তাদের জন্য পোস্ট আর বাজার নিয়ে আসত। মাসে একবার তারা গাড়ি করে যেত ভারী জিনিস আনার জন্য। একদিন এমন ভ্রমণে মেরি দেখল একজন অচেনা লোক ডিককে “জোনাহ” বলে ডাকল এবং বলল তার খামারে নাকি বন্যা এসেছে। মেরি অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলে ডিক অনিচ্ছা সত্ত্বেও জানাল, সে বিয়ের আগে ঐ লোকের কাছ থেকে ২০০ পাউন্ড ঋণ নিয়েছিল, এখনও ৫০ পাউন্ড বাকি। এই ছোট্ট ঘটনা মেরির মনে সন্দেহের বীজ বপন করে। সে লক্ষ্য করতে শুরু করল ডিকের দুর্বলতা—কাঁপা হাত, অস্থিরতা, অযথা রাগ। মেরির কাছে ডিক ক্রমশ অস্থির আর অনিশ্চিত মনে হতে লাগল।

মৌমাছি, শূকর আর টার্কি পাখি—অর্থহীন স্বপ্নের ব্যর্থতা: স্টেশনে মেরির হাতের মৌমাছি পালনের একটি পুস্তিকা ডিকের মাথায় নতুন স্বপ্ন জাগায়। সে হাইভ বানায়, বিশেষ ঘাস লাগায়, ঘণ্টার পর ঘণ্টা মৌমাছির জন্য অপেক্ষা করে, অথচ শেষে সবই ব্যর্থ হয়। পরে সে শূকর পালনের পরিকল্পনা করে। দামী খোঁয়াড় বানায়, দুধ টকিয়ে রাখে, দুর্গন্ধ ছড়ায়, অথচ শূকর আনার কিছুদিনের মধ্যেই মারা যায়। ডিক ব্যর্থতাকে ঢাকতে বলে, শূকর অসুস্থ ছিল। এরপরও থামেনি তার বিভ্রম—সে টার্কি পাখি আর পরে খরগোশ পালনের নতুন স্বপ্ন দেখে। প্রতিটি স্বপ্নই ভেঙে যায়, অর্থ ও শ্রম নষ্ট হয়। মেরির চোখে এগুলো “castle in the air”—আকাশকুসুম কল্পনা। তার ভেতরে ক্ষোভ জমে, কিন্তু সে নীরবে তা চেপে রাখে, মনে মনে তিক্ত হতে থাকে।

কফির দোকান, দাম্পত্য বিরোধ ও মেরির হতাশা: ডিক এবার সিদ্ধান্ত নেয় খামারে “কাফির স্টোর” খুলবে। সে ভাবে, এটি হবে সোনার খনি। মেরি শান্তভাবে বলে কাছেই তো দোকান আছে, তবে গ্রাহক আসবে কেন? ডিক তা শুনতে চায় না। দোকান তৈরি হয়, সাইকেল আনা হয়, কিন্তু সব নষ্ট হয়ে যায়। ক্ষতি বাড়তেই থাকে। মেরি ভাবে—এই টাকা দিয়ে ঘর বড় করা যেত, আসবাব আনা যেত। দোকানে কাজ করতে সে রাজি হয় না, কিন্তু ডিকের চাপে তাকে বসতে হয়। দিনে দিনে সে আরও রূঢ় ও কঠোর হয়ে ওঠে, কালো গ্রাহকদের প্রতি ঘৃণা তার ভেতরে জমতে থাকে। সাইকেল না বিক্রি হওয়া, টাকার ক্ষতি, ডিকের অবাস্তব চিন্তা—সব মিলিয়ে মেরির মন ভেঙে যায়। সে ভাবে, তার জীবনটা ফাঁদে আটকে গেছে।

পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা ও ব্যর্থ প্রত্যাবর্তন: অবশেষে মেরি সিদ্ধান্ত নেয়—সে আর সহ্য করতে পারবে না। একদিন খবরের কাগজে তার পুরনো অফিসের চাকরির বিজ্ঞাপন দেখে তার মন আনন্দে ভরে ওঠে। পরদিনই ব্যাগ গুছিয়ে চিঠি লিখে বাড়ি ছাড়ে। স্ল্যাটারের খামারে গিয়ে চার্লিকে বলে স্টেশনে নামিয়ে দিতে। শহরে ফিরে সে আনন্দে ডুবে যায়, পুরনো ক্লাবে যায়, হোটেলে ওঠে। অফিসে গিয়ে দেখে পদটি পূর্ণ হয়েছে। টাকা শেষ, পথ বন্ধ। ঠিক তখনই দরজায় ডিক হাজির—ক্লান্ত, অসহায় ভঙ্গিতে বলে: “মেরি, আমাকে ছেড়ে যেয়ো না।” মেরি ভেতরে ভেতরে ভেঙে পড়লেও তার সাথে ফিরে আসে। আবার আগের জীবন, আগের হতাশা। এবার আর পালানোর পথ নেই, শুধু একঘেয়েমি, তিক্ততা আর অনিবার্য পতনের দিকে ধাবমান জীবন।

(অধ্যায় ৬-এ লেসিং দেখিয়েছেন—ডিকের দায়িত্বজ্ঞানহীন স্বপ্ন আর মেরির ভেতরে জমে থাকা হতাশা কীভাবে সম্পর্ককে ভেঙে দেয়। মৌমাছি, শূকর, টার্কি পাখি, দোকান—সবই অর্থহীন স্বপ্নের প্রতীক। মেরির পালানোর ব্যর্থ চেষ্টা প্রমাণ করে—সে দাম্পত্য, সমাজ আর নিজের মানসিক বন্দিদশা থেকে মুক্তি পায় না। এই অধ্যায়ে ধীরে ধীরে তাদের জীবনের ট্র্যাজেডি পূর্ণ রূপ নিতে শুরু করে।)

অধ্যায় ৭ : কর্তৃত্ব, দমন ও বিবাহের সংকট

শীতের সকাল ও ডিকের অসুস্থতা: জুন মাস, মেরির প্রিয় ঋতু। শীতল ভোরে সে মাটির উপর দিয়ে হাঁটে, প্রকৃতির শীতল স্পর্শে কিছুটা প্রাণ ফিরে পায়। ডিকও এসময় তার সাথে নরমভাবে ব্যবহার করে, ভয় পায় মেরি আবার পালিয়ে যেতে পারে। কিন্তু হঠাৎই ডিক অসুস্থ হয়ে পড়ে। জ্বরে কাতর হয়ে বাড়ি ফিরে আসে এবং শয্যাশায়ী হয়। চিকিৎসক এসে সতর্ক করে বলেন, বাড়ি মশার জন্য অনিরাপদ এবং মেরির নিজেকেও বিশ্রামে যেতে হবে। মেরির মনে এক অদ্ভুত ক্ষোভ জন্মায়—অসুস্থ ডিককে দেখে সে তাকে দুর্বল আর নিরর্থক মনে করে। এখান থেকেই সে ধীরে ধীরে স্বামীর জায়গা দখল করে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা শুরু করে।

শ্রমিকদের উপর মেরির কঠোর শাসন: ডিক শয্যাশায়ী, আর মেরি নেমে আসে খামারের জমিতে। হাতে চাবুক নিয়ে সে আত্মবিশ্বাসী বোধ করে। শ্রমিকদের হুঁশিয়ারি দেয়, সময়মতো না এলে মজুরি কেটে নেওয়া হবে। কিন্তু অনেকেই দেরি করে আসে, কেউ কেউ চলে যায়। তবু মেরি একগুঁয়েভাবে কঠোর শাসন চালাতে থাকে। শিশু থেকে বৃদ্ধ—সবাইকে সে ঘৃণাভরে দেখে, মনে মনে তাদের ‘অসভ্য’ বলে গাল দেয়। মেরির রাগ, দমন ও ঘৃণা তাকে যেন সাময়িক এক আনন্দ দেয়। ডিক তাকে সতর্ক করে বেশি কঠিন না হতে, কিন্তু মেরি নিজের ভেতরে একরকম বিজয়ের উল্লাস অনুভব করে।

মোজেসকে প্রহার ও ক্ষমতার বিভ্রম: একদিন কাজের সময় শ্রমিক মোজেস কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে বিশ্রাম নিলে মেরি ক্ষিপ্ত হয়। সে তাকে পানি চাইতে শুনে বাজে বকবকানি বলেই উপহাস করে। মোজেস ইংরেজি বলে হাসি ছড়ালে, ক্ষুব্ধ মেরি চাবুক দিয়ে তার মুখে আঘাত করে। রক্তাক্ত মোজেস নীরবে দাঁড়িয়ে থাকে, আর মেরি একইসঙ্গে ভয় ও তৃপ্তি অনুভব করে। সে জানে, আইন অনুযায়ী তার শাস্তি হতে পারে, কিন্তু শ্বেতাঙ্গের ক্ষমতাই তাকে নিরাপদ রাখবে। রাতে সে ভাবে—ডিক যেখানে ব্যর্থ, সেখানে সে শক্তি দেখাতে পেরেছে। এ আঘাত কেবল মোজেসের শরীরে নয়, মেরির আত্মার গভীরে ক্ষমতার বিভ্রম তৈরি করে, যা তার দাম্পত্য সম্পর্কে আরও বিভাজন সৃষ্টি করে।

স্বপ্ন, দ্বন্দ্ব ও অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ: ডিক সুস্থ হতে শুরু করলে মেরি হিসাব-নিকাশ সামনে আনে, কঠোরভাবে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা বলে। সে চায়—তারা ঋণ শোধ করুক, তামাক চাষে মন দিক এবং যত দ্রুত সম্ভব এই খামার ছেড়ে ‘সভ্যতা’র কাছে ফিরে যাক। কিন্তু তার কল্পনার ভবিষ্যতে ডিকের কোনো জায়গা নেই। ডিক ভীত হয়—সে খামার ছাড়তে চায় না। মেরির কণ্ঠে আশার ঝলক দেখে সে তামাকের বার্ন বানানোর প্রতিশ্রুতি দেয়, অথচ মনে মনে আতঙ্কে ভোগে। এই মুহূর্তে স্পষ্ট হয়, দুজনের দাম্পত্যজীবন পরস্পরবিরোধী স্বপ্নে টিকে আছে—মেরির স্বপ্ন শহুরে স্বাধীনতা, আর ডিকের স্বপ্ন খামারের প্রতি নিবেদন।

(অধ্যায় ৭-এ ডিকের অসুস্থতা মেরিকে খামারের দায়িত্বে টেনে আনে, যেখানে সে নির্মম শাসক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে। শ্রমিকদের প্রতি তার ঘৃণা, মোজেসকে আঘাত করা, আর ডিকের অক্ষমতাকে অবজ্ঞা—সবই তাকে আরও শক্তিশালী মনে করায়, কিন্তু ভেতরে ভেতরে দাম্পত্যকে ভেঙে দেয়। অধ্যায়টি মূলত ক্ষমতার বিভ্রম, জাতিগত দমন, এবং দাম্পত্যের অনিবার্য ভাঙনের পূর্বাভাস বহন করে।)

অধ্যায় ৮ : দাম্পত্যের ভাঙন, দারিদ্র্য ও মোজেসের প্রত্যাবর্তন

দারিদ্র্যের দুঃস্বপ্ন ও মাতৃত্বের আকাঙ্ক্ষা: অধ্যায়ের শুরুতে দেখা যায়, মেরি নিজের স্বপ্নগুলো ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলছে। খামার থেকে শহরে ফিরে যাওয়ার আশা তার চোখে ম্লান হয়ে আসে। তামাকের খামার খরা ও অনাবৃষ্টিতে নষ্ট হয়, ঋণ আরও বাড়ে। ডিক নতুন করে টাকা ধার করতে অস্বীকার করে, আর মেরি বুঝতে পারে—এই খামার ছেড়ে চলে যাওয়া এখন অসম্ভব। তার দিন কাটে অলস ঘুমে, ক্লান্ত দেহে, মাথাব্যথায়। সে নিজের জীবনকে অর্থহীন ভাবতে থাকে এবং ডিকের অনির্ধারিত চরিত্রে আরও বিরক্ত হয়। একসময় সে ডিককে সন্তান নেওয়ার প্রস্তাব দেয়। যদিও সে শিশুকে পালনের দায়িত্ব ভয় পায়, তবুও অন্তরে একাকীত্ব ভরাট করার জন্য একটি “ছোট মেয়েশিশু” কামনা করে। কিন্তু ডিক দরিদ্রতার কথা বলে অস্বীকার করে। এই প্রত্যাখ্যান মেরির ভেতরে আরও শূন্যতা ও হতাশার জন্ম দেয়।

ডিকের হতাশা ও কৃষিজীবনের সংকট: ডিক নিজের ব্যর্থতা মেনে নিতে পারে না। সে একসময় ভেটেরিনারি পড়তে চেয়েছিল, পরে অফিসে কাজ করেছে, অবশেষে দক্ষিণ রোডেশিয়ার কৃষিজীবন বেছে নিয়েছে। অথচ প্রতিবারই ব্যর্থতা তাকে ঘিরে থাকে। ডিকের উপর মেরির চাপ বাড়তেই থাকে—সে বলে পরের বছর সর্বত্র ভুট্টা (mealies) লাগাতে। কিন্তু ডিক ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। সে শ্রমিক সংকট, মেরির কঠোর শাসন আর সরকারের নীতিকে দোষারোপ করে। আফ্রিকানদের সে “অলস” ও “অশ্রদ্ধাশীল” বলে অভিহিত করে, আর সরকারকে “nigger-lovers” আখ্যা দেয়। ডিকের এই ক্ষোভ ও অবসাদ তাকে ভেতরে ভেতরে ভেঙে দেয়। সে সস্তা নেটিভ সিগারেট খেতে শুরু করে, শ্রমিকদের আরও খারাপভাবে ব্যবহার করে। মেরি বিরক্ত হয়, কিন্তু একই সঙ্গে অনুভব করে ডিক যেন ধীরে ধীরে আফ্রিকান শ্রমিকদের মতোই নীচে নেমে যাচ্ছে।

মোজেসের প্রত্যাবর্তন ও অস্বস্তিকর নৈকট্য: এমন সময়ে, গৃহকর্মীরা একে একে কাজ ছেড়ে চলে যায়। মেরির খারাপ নাম ছড়িয়ে পড়েছে, তাই আর কেউ আসতে চায় না। বাধ্য হয়ে ডিক খামার শ্রমিকদের মধ্য থেকে একজনকে বাড়িতে আনে—সে হলো মোজেস, যাকে দুই বছর আগে মেরি চাবুক দিয়ে প্রহার করেছিল। মেরি প্রথমে প্রবল আপত্তি করে, কিন্তু ডিক জানায়—মোজেসই একমাত্র ভরসা। অনিচ্ছা সত্ত্বেও মেরি রাজি হয়। ঘরে কাজ করতে করতে মেরি তাকে বারবার পর্যবেক্ষণ করে। তার শক্ত দেহ, নিখুঁত কাজ তাকে অস্বস্তি ও বিরক্তিতে ফেলে। এক সকালে মেরি ডিম তুলতে গিয়ে দেখে মোজেস নদীর ধারে ধোয়ামোছা করছে। সে ইচ্ছে করেই তার সামনে উঠে দাঁড়ায়, যেন উপস্থিতি জানান দিচ্ছে। মেরি হঠাৎ নতুনভাবে চারপাশকে উপলব্ধি করে, মনে এক অদ্ভুত অস্থিরতা তৈরি হয়।

মানসিক টানাপোড়েন ও গোপন আকর্ষণের সূচনা: মেরি মোজেসকে ঘরের ভেতরে দেখে প্রচণ্ড রেগে যায়। তাকে জোর করে আবার মেঝে মাজতে দেয়, যদিও কাজ আগেই শেষ হয়েছিল। একের পর এক অপ্রয়োজনীয় কাজ করিয়ে সে নিজের কর্তৃত্ব বোঝাতে চায়। কিন্তু অজান্তেই এই কর্তৃত্বের আড়ালে মেরির মনের ভেতর এক অচেনা টান কাজ করতে থাকে। ডিকের সঙ্গে অসুখী দাম্পত্য, যৌনজীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতা, আর একাকীত্বের চাপে মেরি নিজের প্রতিচ্ছবি আয়নায় দেখে কেঁদে ফেলে। রাতের খাবারে ডিক তাকে বোঝায়—মোজেসই তাদের সবচেয়ে ভালো কর্মচারী। সে আর মেরির আচরণ সহ্য করতে পারছে না। অবশেষে মেরি চুপচাপ রাজি হয় মোজেসকে রাখতে। কিন্তু এই চুপচাপ রাজি হওয়ার মধ্যেই তৈরি হয় এক নীরব স্বীকারোক্তি—মেরি ধীরে ধীরে এক বিপজ্জনক সম্পর্কের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

(অধ্যায় ৮ পুরোপুরি মেরির হতাশা, নিঃসঙ্গতা ও মানসিক অস্থিরতার ছবি তুলে ধরে। শহরে ফেরার আশা ভেঙে যায়, মাতৃত্বের স্বপ্নও মুছে যায়, আর ডিকের ব্যর্থতা তাকে আরও ক্ষুব্ধ করে তোলে। এই পরিস্থিতিতে মোজেসের পুনরাগমন কেবল একজন কর্মচারীর নয়, বরং মেরির মানসিক টানাপোড়েনের প্রতীক হয়ে ওঠে। এই অধ্যায়ের শেষে স্পষ্ট হয়, দাম্পত্য ভাঙনের ভেতর মেরি এক বিপজ্জনক আবেগের খেলায় জড়িয়ে পড়তে চলেছে, যা পরবর্তী কাহিনিকে আরও উত্তাল করে তোলে।)

অধ্যায় ৯ : মেরি ও মোজেস—অদৃশ্য বন্ধন ও মানসিক দাসত্ব

মোজেসের চলে যাওয়ার ইচ্ছা ও মেরির ভাঙন: অধ্যায়ের শুরুতে দেখা যায়, মেরি সম্পূর্ণ ক্লান্ত ও শূন্য জীবনে দিন কাটাচ্ছে। সে কাজ করে, আবার কাজ ফাঁকি দিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা নিস্তব্ধ হয়ে বসে থাকে। মুরগিরা মারা যাচ্ছে, কিন্তু তাতেও তার কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। তার জীবনের একমাত্র সক্রিয় দিক হলো মোজেসের সঙ্গে সম্পর্ক। হঠাৎ মোজেস জানায়, মাস শেষে সে কাজ ছেড়ে চলে যাবে। মেরি ভেঙে পড়ে কেঁদে ফেলে—এমনকি নিজের অজান্তেই মোজেসকে থাকতে অনুরোধ করে। মোজেস তাকে শান্ত করে, জল খাওয়ায়, এমনকি বিছানায় শুইয়ে দেয়। এই সময়ই মেরি প্রথমবার কোনো কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের দেহ স্পর্শ করে। ঘটনাটি মেরির ভেতর এক অদ্ভুত টানাপোড়েন সৃষ্টি করে—সে নিজের অবস্থানকে অস্বীকার করতে পারে না। এই মুহূর্তে বোঝা যায়, মেরি এক বিপজ্জনক নির্ভরতার মধ্যে জড়িয়ে পড়ছে।

শক্তির অদলবদল ও মানসিক অধীনতা: মোজেসের চলে যাওয়ার হুমকি বাস্তবায়িত হয় না। বরং সে সরাসরি জানায়—“Madame asked me to stay. I stay to help Madame.” মেরি বুঝতে পারে, সে এখন সম্পূর্ণ মোজেসের হাতে বন্দি। মেরির রাগ ও বিরক্তি সত্ত্বেও মোজেস তাকে প্রশ্ন করে, তার কাজ ভালো কিনা। মেরি স্বীকার করে যে কাজ ভালো, কিন্তু তবুও কেন সে সবসময় রাগান্বিত থাকে? এই প্রশ্নে মেরি নির্বাক হয়ে যায়। এখানেই শক্তির অদলবদল ঘটে—মোজেস আর কেবল ভৃত্য নয়, বরং নিয়ন্ত্রণকারী শক্তি হয়ে ওঠে। মেরি তার নির্দেশ মেনে চলে, তার রান্না খায়, তার পরামর্শে শোনে। ফলে মেরি ধীরে ধীরে নিজের কর্তৃত্ব হারায় এবং এক ধরনের মানসিক দাসত্বে আটকে যায়।

স্বপ্ন, ভয় ও অতীতের ছায়া: মেরির মানসিক টানাপোড়েন বাড়তেই থাকে। রাতে ঘুমের মধ্যে দুঃস্বপ্ন তাকে গ্রাস করে। স্বপ্নে মোজেস তাকে ছুঁতে বাধ্য করে, আবার কখনো তার বাবার সঙ্গে মোজেসের মুখ মিলেমিশে যায়। স্বপ্নে সে দেখে ডিক মারা গেছে, আর মোজেস বাড়ির ভেতর প্রবেশ করছে। তার শৈশবের ভয়, বাবার সঙ্গে সম্পর্ক, আর মোজেসের উপস্থিতি একসঙ্গে মিশে যায়। ঘুম ভেঙলেও মেরি শান্তি পায় না। বরং আরও আতঙ্কিত হয়, কারণ মোজেস তার পাশে চা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। মেরি চেষ্টা করে বোঝাতে যে সে ভয় পাচ্ছে না, কিন্তু ভেতরে ভেতরে সে মোজেসের শক্তিকে স্বীকার করে ফেলে। এই দুঃস্বপ্নগুলো প্রতীক হয়ে ওঠে—মেরি নিজের অতীত ও বর্তমানের মধ্যে দিক হারাচ্ছে, এবং মোজেস তার ভেতরে এক নিষিদ্ধ টান তৈরি করছে।

অসুস্থ ডিক ও দাম্পত্যের অদৃশ্য বিলুপ্তি: এই অধ্যায়ে ডিক ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়। ডাক্তার এসে মেরিকে দোষারোপ করে—মশা প্রতিরোধের ব্যবস্থা না করার জন্য। চার্লি স্ল্যাটারও আসে এবং মনে মনে ভাবে, ডিক মারা গেলে তার জমি সে দখল করবে। কিন্তু এই সময়ও মেরি স্বামীর যত্নে নিজের কর্তৃত্ব দেখায় না। শ্রমিকদের তদারকির দায়িত্ব নেওয়ার বদলে সে সারারাত ডিককে পাহারা দেয়। পরবর্তীতে মোজেস নিজেই ডিকের যত্ন নেওয়ার প্রস্তাব দেয় এবং কার্যত বাড়ির কর্তৃত্ব নিজের হাতে টেনে নেয়। মেরি এতে সম্মত হলেও ভেতরে ভেতরে আতঙ্কিত হয়—ডিকের প্রতি তার কোনো মনোযোগ নেই, বরং তার সারা মন ভরে থাকে মোজেসের উপস্থিতি নিয়ে। ডিক ধীরে ধীরে সুস্থ হলেও মেরি যেন আর তার স্বামীকে দেখতে পায় না, কেবল মোজেসের শক্তিকে অনুভব করে।

(অধ্যায় ৯ স্পষ্ট করে যে মেরি আর মোজেসের মধ্যে সম্পর্ক কেবল প্রভু-ভৃত্যের সীমায় নেই। এখানে জন্ম নেয় এক জটিল, বিপজ্জনক বন্ধন। মেরি নিজের কর্তৃত্ব হারিয়ে মানসিকভাবে মোজেসের হাতে বন্দি হয়ে পড়ে। দুঃস্বপ্ন, ভয়, অবচেতন আকর্ষণ এবং দাম্পত্যের ব্যর্থতা—সব মিলিয়ে এই অধ্যায়টি উপন্যাসের এক গুরুত্বপূর্ণ বাঁক। মেরি এখন আর কেবল এক অসুখী স্ত্রী নয়, বরং এক বন্দি নারী, যে নিজের অজান্তেই ভৃত্যের হাতে শক্তি সমর্পণ করেছে। মোজেসের “upper hand”—অধ্যায়ের শেষ লাইন—এই ক্ষমতা পরিবর্তনের নির্মম বাস্তবতাকে তুলে ধরে।)

অধ্যায় ১০ : গসিপ, পতন ও শেষ সংকেত

স্ল্যাটার পরিবার ও সামাজিক গসিপের জাল: অধ্যায়ের শুরুতেই বোঝা যায়, ডিক আর মেরি বহু বছর ধরে জেলা জুড়ে গসিপের শিকার। এর মূল কারণ স্ল্যাটার দম্পতি। মিসেস স্ল্যাটার বারবার মেরির শীতল ও অবজ্ঞাপূর্ণ ব্যবহার পেয়েছেন এবং সেই ক্ষোভ থেকে তিনি মেরিকে নিয়ে গুজব ছড়িয়েছেন। অন্যদিকে চার্লি স্ল্যাটার মেরির একবারের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাকে অতিরঞ্জিত করে গল্প করেছেন। ফলে মেরি–ডিকের ব্যক্তিগত জীবনের ঘটনাগুলো লোকমুখে রূপকথার মতো ছড়িয়ে পড়ে। এতে শুধু তাদের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়নি, বরং তারা “অস্বাভাবিক” দম্পতি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এখানে বোঝা যায়, দক্ষিণ রোডেশিয়ার শ্বেতাঙ্গ সমাজের ছোট গণ্ডির ভেতরে গসিপ ছিল সামাজিক শাস্তির এক প্রকার অস্ত্র।

চার্লি স্ল্যাটারের লোভ ও ডিক–মেরির ভাঙন: চার্লি মূলত নিজের স্বার্থেই টার্নার পরিবারকে ঘিরে রেখেছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ তাকে ধনী করলেও তার অর্থলোভ থেমে যায়নি। ডিকের দারিদ্র্য ও ব্যর্থতাকে সে নিজের ফার্ম সম্প্রসারণের সুযোগ হিসেবে দেখছে। দুই বছর পর যখন সে টার্নারদের খোঁজ নিতে আসে, তখন ডিককে রোগে জর্জরিত, অসুস্থ আর হতাশ অবস্থায় দেখে। ডিক স্বীকার করে, মেরি মানসিকভাবে ভেঙে গেছে—কোনো কিছুর প্রতি আর আগ্রহ নেই। চার্লি ডিককে ফার্ম বিক্রি করতে রাজি করাতে চায়, কিন্তু ডিক অনড় থাকে। তবুও চার্লি স্পষ্টভাবে বোঝায়—শ্বেতাঙ্গ সমাজের সামাজিক মানদণ্ড রক্ষার জন্য টার্নারদের আর নীচে নামতে দেওয়া যাবে না। চার ঘন্টা ধরে তর্কের পর ডিক ভেঙে পড়ে এবং ফার্ম বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই পর্যায়ে ডিকের পতন শুধু অর্থনৈতিক নয়, বরং সামাজিক মর্যাদার দিক থেকেও নিশ্চিত হয়।

টনি—“প্রগতিশীল” নবাগত ও ভেতরের দ্বন্দ্ব: চার্লি দ্রুত টার্নারদের জায়গায় টনি নামে এক তরুণ ইংরেজকে বসানোর পরিকল্পনা করে। টনি শিক্ষিত, বইপত্রে ভরা, আবার নিজেকে প্রগতিশীল ভাবতে ভালোবাসে। সে ডিককে করুণা করে, আবার তার সংগ্রামকে রোমান্টিকভাবে কল্পনা করে। কিন্তু বাস্তবে টনির দৃষ্টিভঙ্গিও সীমাবদ্ধ। মেরির অস্বাভাবিক আচরণ দেখে সে মানসিক অসুস্থতার ধারণা করে। একদিন হঠাৎ টনি দেখে, মোজেস মেরিকে পোশাক পরাতে সাহায্য করছে। ঘটনাটি তাকে গভীরভাবে ধাক্কা দেয়। সে ভাবে, এক শ্বেতাঙ্গ নারী যদি কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষের সঙ্গে সম্পর্কিত হয়, তবে তা পশুর সঙ্গে সম্পর্কের মতো। এখানেই বোঝা যায়, টনির তথাকথিত প্রগতিশীলতা আসলে ভঙ্গুর—যৌনতা ও বর্ণবাদের মিলিত ভয় তাকে আঘাত করে। টনি মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয়, মোজেসকে বিদায় করতেই হবে।

আরো পড়ুনঃ Sons and Lovers Bangla Summary

মেরি–মোজেস–টনির সংঘাত ও সংকেত: এই অধ্যায়ের শেষ অংশে দেখা যায়, মেরি আর মোজেসের সম্পর্ক এতটাই গভীর হয়ে গেছে যে বাইরে থেকেও তা ধরা পড়ছে। মেরি প্রকাশ্যে মোজেসকে “খুব কাছের” ভঙ্গিতে আদেশ করছে, যা টনিকে স্তম্ভিত করে তোলে। ডিক চোখ নামিয়ে নেয়, মেরি বুঝে যায় চার্লি ও টনি কিছু “টের পেয়েছে।” পরে মেরি বারবার অসংলগ্নভাবে বলে ওঠে—“সে চলে যাক,” যদিও বোঝা যায় না কাকে বোঝাচ্ছে। মোজেস দরজায় এসে টনিকে প্রশ্ন করে, মেরি কি যাচ্ছে? টনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে, আর তখনই মোজেস সরে যায়। কিন্তু মেরি টনিকে দোষ দেয়—সে সবকিছু নষ্ট করেছে। এ ঘটনার পর টনি নিশ্চিত হয়, মোজেসকে কাজ থেকে সরাতেই হবে। তবে মেরি এখন সম্পূর্ণ মানসিক ভাঙনের মধ্যে বন্দি—সে কেবল মোজেসের প্রভাবেই “জীবন্ত” মনে হয়। এই মুহূর্তে বোঝা যায়, বিপর্যয়ের শেষ ধাপ একেবারেই কাছে চলে এসেছে।

(অধ্যায় ১০-এ ডিক–মেরির ব্যক্তিগত সংকটকে ঘিরে সামাজিক গসিপ, চার্লির লোভ, টনির দ্বিধা এবং মেরি–মোজেসের সম্পর্ক সব এক সুতোয় গাঁথা হয়। এখানে দক্ষিণ রোডেশিয়ার বর্ণবাদী সামাজিক কাঠামো ও অর্থনৈতিক স্বার্থপরতা উন্মোচিত হয়েছে। মেরির মানসিক পতন এবং মোজেসের ক্রমবর্ধমান শক্তি ইঙ্গিত দেয়, উপন্যাস এখন ট্র্যাজিক সমাপ্তির দিকে দ্রুত এগোচ্ছে।)

অধ্যায় ১১ : শেষ রাত্রি ও মৃত্যুর মাধ্যমে সমাপ্তি

মেরির অস্থির মানসিকতা ও অদ্ভুত শান্তি: অধ্যায়ের শুরুতে মেরি মাঝরাতে ঘুম ভেঙে জেগে ওঠে। প্রথমে সে অস্বাভাবিক এক শান্তি অনুভব করে। কিন্তু এই শান্তি স্থায়ী হয় না। দ্রুত সে কেঁদে ওঠার মধ্য দিয়ে ভেঙে পড়ে। ডিক তাকে জিজ্ঞেস করে, তারা চলে যাচ্ছে বলে কি সে দুঃখিত? মেরি উত্তর দেয় না। বরং ডিকের উপস্থিতি তাকে বিরক্ত করে। জানালা দিয়ে সূর্যোদয় দেখতে দেখতে তার আনন্দ আবার যন্ত্রণায় পরিণত হয়। সে মনে করে রাত তাকে ধ্বংস করবে, অথচ সে বুঝতে পারে না কী অপরাধে শাস্তি প্রাপ্য। এমন অবস্থায় সে বাড়িকে মৃতপ্রায় কল্পনা করে—যেন প্রকৃতি একদিন একে গিলে ফেলবে। এখানে মেরির মানসিক অস্থিরতা স্পষ্ট—শান্তি আর আতঙ্ক মিলেমিশে আছে, এবং সে মৃত্যুকে স্বাগত জানানোর মতো প্রস্তুত হচ্ছে।

মোজেসের অদৃশ্য উপস্থিতি ও মেরির বিভ্রম: ডিক কাজে চলে গেলে মেরি মোজেসকে ডাকতে যাচ্ছিল, তবে আবার থেমে যায়। তার মনে হয় মোজেস বনের ভেতরে অপেক্ষা করছে, আর দেখা হলেই সব শেষ হয়ে যাবে। দিনের বেলায় ঘুমিয়ে সে সময় কাটিয়ে দেয়, আবার জেগে উঠে পাগলপ্রায় হয়ে ঘরে মোজেসের চিহ্ন খোঁজে। দোকানে হঠাৎ মোজেসকে দেখে সে চিৎকার করে পালিয়ে যায়। মেরির কাছে এখন মোজেস বাস্তবের চেয়ে বড় এক ছায়া—যিনি তার পাপ, অপরাধ আর মুক্তির প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছেন। সে টনির উপরও ভরসা করতে পারে না, কারণ সে বোঝে, টনি তাকে “বাঁচাবে” না। মেরির বিভ্রম তাকে একান্তভাবে মোজেসের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।

মানসিক ভাঙন, অপরাধবোধ ও মৃত্যুর মুহূর্ত: বিকেলের পর ডিক তাকে ডাক্তার দেখানোর প্রস্তাব দেয়, টনি-ও একমত হয়। কিন্তু মেরি বলে, সে বহু বছর ধরেই অসুস্থ, তার অসুখ হৃদয়ের ভেতরে। রাতে বিছানায় শোয়, কিন্তু মনে হয় ঘরে মোজেস দাঁড়িয়ে আছে। সে ঘর ঘুরে বেড়ায়, কার্পেট ও পর্দার স্পর্শকে পশুর লোমের মতো অনুভব করে। শেষ পর্যন্ত বারান্দায় এসে অল্প স্বস্তি পায়। হঠাৎ অন্ধকার ভেদ করে মোজেস বেরিয়ে আসে। মেরি অপরাধবোধে ভেঙে পড়ে, কিছু বলতে যায়, কিন্তু মোজেস তার মুখ চেপে ধরে অস্ত্র দিয়ে হত্যা করে। তার রক্ত মিশে যায় বৃষ্টির জলে, যেন প্রকৃতি নিজে এই মৃত্যুতে সাক্ষী দিল।

মোজেসের সিদ্ধান্ত ও প্রতীকী সমাপ্তি: মোজেস প্রথমে দ্বিধা করে—অস্ত্র ফেলে দেয়? আবার অস্ত্র তুলে নেয়, আবার ফেলে দেয়। ডিক তখন ঘুমোচ্ছে—মোজেস মনে করে তাকে অনেক আগেই পরাজিত করেছে। টনির কুঁড়েঘরের সামনে গিয়ে তার শ্বাসপ্রশ্বাস শোনে, যেন শ্বেতাঙ্গ সমাজের প্রতীকী উপস্থিতিকেও উপেক্ষা করছে। শেষ পর্যন্ত সে বনে গিয়ে দাঁড়ায়, বিদ্যুতের আলোয় মেরির নিথর দেহ ঝলক দিয়ে ওঠে। মোজেস জানে সে পালাবে না; পরের দিন সকালে আত্মসমর্পণ করবে। এই মুহূর্তে উপন্যাসের ট্র্যাজিক পরিণতি সম্পূর্ণ হয়—শ্বেতাঙ্গ দম্পতির ভাঙন, মেরির মৃত্যু, আর কৃষ্ণাঙ্গ মোজেসের উত্থান।

(অধ্যায় ১১ The Grass is Singing–এর চূড়ান্ত সমাপ্তি। এখানে মেরির মানসিক পতন, মোজেসের প্রতিশোধ, আর ঔপনিবেশিক সমাজের ভঙ্গুরতা একসাথে ফুটে ওঠে। মেরির মৃত্যু শুধু একজন নারীর ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি নয়; এটি দক্ষিণ রোডেশিয়ার বর্ণবাদী শাসন, সামাজিক ভয়, এবং দমিত সম্পর্কের ভয়াবহ প্রতিফলন। বৃষ্টি ও রক্তের মিশ্রণ এই প্রতীক বহন করে—শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যের যুগ শেষের দিকে এগোচ্ছে।)

থিমসমূহ:

  • Race and Colonialism: উপন্যাসের বড় থিম হলো বর্ণবাদ আর উপনিবেশ। শ্বেতাঙ্গরা নিজেদের শ্রেষ্ঠ ভাবে এবং কৃষ্ণাঙ্গদের শোষণ করে। মেরি ও মোজেসের সম্পর্ক এই ভয়ের প্রতীক। এটি দেখায় যে বর্ণবাদ শুধু সমাজ নয়, মানুষের ভেতরের সম্পর্কও নষ্ট করে।
  • Loneliness and Isolation: মেরি টার্নার একসময় স্বাধীন মেয়ে হলেও বিয়ের পর খামারে একাকী হয়ে যায়। তার স্বামী ডিক তাকে বুঝতে পারে না। এই একাকীত্ব ধীরে ধীরে তাকে মানসিকভাবে ভেঙে দেয়। উপন্যাসটি দেখায় একা হয়ে গেলে মানুষ কতটা ভঙ্গুর হয়ে পড়ে।
  • Gender and Marriage: মেরির বিয়ে তাকে মুক্তি দেয় না, বরং ফাঁদে ফেলে। ডিকের দারিদ্র্যতা আর অক্ষমতা তাকে আরও কষ্ট দেয়। নারীর জন্য বিয়ে সবসময় নিরাপদ নয়—বরং সামাজিক কাঠামো তাকে দুর্বল করে তোলে।
  • Psychological Breakdown: মেরির মন ধীরে ধীরে ভেঙে যায়। একাকীত্ব, দারিদ্র্য, আর ভয় তাকে পাগলামির দিকে ঠেলে দেয়। শেষ পর্যন্ত তার মৃত্যু মানসিক পতনেরই ফল। এই থিম দেখায়, দমন আর অবহেলা মানুষকে ধ্বংস করে দিতে পারে।

Quotes

  1. Quote: “She used to cry over her sewing.” – (The Grass is Singing,  Narrator, Early Life of Mary, Chapter-2)

বাংলা অর্থ: “সে সেলাই করতে করতে প্রায়ই কেঁদে ফেলত।”

Explanation: This line shows Mary’s mother’s sorrow. She was broken by family misery and cried while sewing.

ব্যাখ্যা: এই লাইন মেরির মায়ের দুঃখকে দেখায়। সংসারের কষ্টে তিনি ভেঙে পড়তেন এবং সেলাই করার সময়ই কান্নায় ভেসে যেতেন।

  1. Quote: “I will take two and six off the ticket of every one of them that isn’t at work in ten minutes.” – (The Grass is Singing, Mary to Workers, Chapter- 7)

বাংলা অর্থ: “যে দশ মিনিটের মধ্যে কাজে ফিরবে না, তার মজুরি থেকে দুই শিলিং ছয় পেনি কেটে নেব।”

Explanation: Mary threatens the workers with wage cuts. She treats them like property, not humans.

ব্যাখ্যা: মেরি শ্রমিকদের মজুরি কেটে নেওয়ার হুমকি দেয়। সে তাদের মানুষ নয়, সম্পত্তি বা যন্ত্রের মতো ব্যবহার করে।

  1. Quote: ‘‘White civilization’ which will never, never admit that a white person, and most particularly, a white woman, can have a human relationship, whether for good or for evil, with a black person.’’ – (The Grass is Singing, Narrator, Chapter -1)

বাংলা অর্থ: “‘শ্বেতাঙ্গ সভ্যতা’ কখনোই মানবে না যে কোনো শ্বেতাঙ্গ, বিশেষ করে শ্বেতাঙ্গ নারী, একজন কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের সঙ্গে মানবিক সম্পর্ক রাখতে পারে, তা ভালো হোক বা মন্দ।”

Explanation: The narrator exposes colonial hypocrisy. Society denies any equal human bond between black and white.

ব্যাখ্যা: কথক ঔপনিবেশিক সমাজের ভণ্ডামি প্রকাশ করছেন। সমাজ শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গের মধ্যে মানবিক সম্পর্ককে অস্বীকার করে।

  1. Quote: “Mary Turner, wife of Richard Turner……..was found murdered on the front veranda.” – (The Grass is Singing, Opening Line, Chapter -1)

বাংলা অর্থ: “রিচার্ড টার্নারের স্ত্রী মেরি টার্নারকে সামনের বারান্দায় মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।”

Explanation: The novel begins with Mary’s murder. It sets a tragic tone for the story.

ব্যাখ্যা: উপন্যাস শুরু হয় মেরির হত্যার মধ্য দিয়ে। এটি পুরো কাহিনির ট্র্যাজিক আবহ তৈরি করে।

  1. Quote: “A bad business.” – (The Grass is Singing, Charlie Slatter & Sergeant Denham Chapter -1)

বাংলা অর্থ: “একটি ভীষণ খারাপ ঘটনা।”

Explanation: Mary’s murder is dismissed casually. The whites cover up the truth to protect themselves.

ব্যাখ্যা: মেরির হত্যাকে তুচ্ছভাবে দেখানো হয়। শ্বেতাঙ্গরা সত্য গোপন করে নিজেদের সুরক্ষা করে।

  1. Quote: ‘‘She’s not fifteen any longer: it is ridiculous! Someone should tell her about her clothes.’’ – (The Grass is Singing, Mary’s Friends Gossip, Chapter – 2)

বাংলা অর্থ: “সে আর পনেরো বছরের মেয়ে নয়; এটা হাস্যকর! কেউ তার পোশাক নিয়ে তাকে সতর্ক করা উচিত।”

Explanation: This shows the social pressure Mary faces for being unmarried at thirty. Her friends mock her clothes and lifestyle.

ব্যাখ্যা: এখানে মেরির ওপর সমাজের চাপ দেখানো হয়েছে। ত্রিশ বছরেও অবিবাহিত থাকায় বন্ধুরা তার পোশাক ও জীবনযাত্রা নিয়ে ঠাট্টা করে।

  1. Quote: “She was extremely happy, so happy that she dreaded going home at holiday time.” – (The Grass is Singing, Mary at Boarding School, Chapter – 2)

বাংলা অর্থ: “সে ভীষণ আনন্দিত ছিল, এতটাই যে ছুটির সময় বাড়ি যাওয়ার কথাই তাকে ভীত করত।”

Explanation: This line shows Mary’s happiest time at school. It also shows her fear of returning to her unhappy family.

ব্যাখ্যা: এই লাইন মেরির সবচেয়ে সুখের সময় বোঝায়। একই সঙ্গে তার অসুখী সংসারে ফিরে যাওয়ার ভয়ও প্রকাশ করে।

  1. Quote: “The old boy kept his eyes on the ground and said, ‘Good morning, missus’.” – (The Grass is Singing, Samson the Cook, Chapter – 4)

বাংলা অর্থ: “বৃদ্ধ লোকটি চোখ নামিয়ে বলল, ‘গুড মর্নিং, ম্যাডাম।’”

Explanation: This shows how Africans had to stay submissive and silent before whites.

ব্যাখ্যা: এখানে বোঝানো হয়েছে কীভাবে কৃষ্ণাঙ্গদের সবসময় নিচু হয়ে শ্বেতাঙ্গদের সামনে নীরব থাকতে হতো।

  1. Quote: “We don’t like niggers murdering white women.” – (The Grass is Singing, Police Officer, Chapter – 1)

বাংলা অর্থ: “আমরা চাই না কৃষ্ণাঙ্গরা শ্বেতাঙ্গ নারীকে হত্যা করুক।”

Explanation: This line reveals the racism of colonial society, where white lives were valued more than black lives.

ব্যাখ্যা: এখানে ঔপনিবেশিক সমাজের বর্ণবাদ প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে শ্বেতাঙ্গ জীবনের মূল্য কৃষ্ণাঙ্গ জীবনের চেয়ে বেশি ধরা হতো।

  1. Quote: “The bush was conquering the farm.” – (The Grass is Singing, Narrator about the Land, Chapter – 11)

বাংলা অর্থ: “জঙ্গল ধীরে ধীরে খামারকে গ্রাস করে নিচ্ছিল।”

Explanation: This shows nature’s power over human efforts. It symbolizes the failure of Dick’s farming dream.

ব্যাখ্যা: এখানে প্রকৃতির শক্তি মানুষের প্রচেষ্টার ওপর প্রাধান্য বিস্তার করছে। এটি ডিকের কৃষি-স্বপ্নের ব্যর্থতার প্রতীক।

  1. Quote: “A steady, insistent screaming from every bush and tree.” – (The Grass is Singing, Narrator About Nature, Chapter – 1)

বাংলা অর্থ: “প্রতিটি গাছপালা থেকে অবিরাম, জেদি এক চিৎকার শোনা যাচ্ছিল।”

Explanation: This line shows the loud cry of cicadas. It creates an atmosphere of fear and tension in the story.

ব্যাখ্যা: এই লাইন ঝিঁঝিঁ পোকার অবিরাম ডাক বোঝায়। এটি কাহিনির মধ্যে ভয় ও অস্থিরতার আবহ সৃষ্টি করে।

  1. Quote: “The veld was dim. Everything was on the verge of colour.” – (The Grass is Singing, Narrator About the Land, Chapter – 11)

বাংলা অর্থ: “ভেল্ড (আফ্রিকার তৃণভূমি) ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন, কিন্তু সবকিছু যেন রঙ ফুটে ওঠার প্রান্তে দাঁড়িয়েছিল।”

Explanation: This line shows the strength of nature. It symbolizes the eternal cycle of land beyond human control.

ব্যাখ্যা: এখানে প্রকৃতির শক্তি দেখানো হয়েছে। এটি মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ভূমির চিরন্তন চক্রের প্রতীক।

  1. Quote: “They were married by special licence two weeks later.” – (The Grass is Singing, Narrator about Mary and Dick’s Marriage, Chapter – 2)

বাংলা অর্থ: “বিশেষ অনুমতিতে মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যেই তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়।”

Explanation: This shows Mary and Dick’s hasty marriage. It was not love but fear and necessity that joined them.

ব্যাখ্যা: এখানে মেরি ও ডিকের তাড়াহুড়ো করে বিয়ের কথা বলা হয়েছে। এটি ভালোবাসা নয়, বরং ভয় ও প্রয়োজন থেকে জন্ম নিয়েছিল।

  1. Quote: “It is bad enough living in a pigsty like this.” – (The Grass is Singing, Mary about the Farm, chapter – 5)

বাংলা অর্থ: “এমন নোংরা শূকরের খোঁয়াড়ের মতো জায়গায় থাকা ভীষণ কষ্টকর।”

Explanation: This shows Mary’s disgust with farm life. She hates poverty and feels trapped in the house.

ব্যাখ্যা: এখানে মেরির খামারজীবনের প্রতি ঘৃণা প্রকাশিত হয়েছে। সে দারিদ্র্যকে ঘৃণা করে এবং নিজেকে বন্দি মনে করে।

ভাষার অলংকার

  • ব্যঙ্গ: এটি তখন ঘটে যখন বাস্তবতা প্রত্যাশার বিপরীত হয়। যেমন, মেরি ডিককে বিয়ে করে ভেবেছিল নিরাপত্তা পাবে, কিন্তু বিয়ে তাকে আরও একাকী ও দুঃখী করে তোলে। এটি উপনিবেশিক স্বপ্ন ও ব্যক্তিগত জীবনের ব্যর্থতা প্রকাশ করে।
  • রূপক: এটি হলো তুলনা যেখানে “মতো” বা “যেন” ব্যবহার হয় না। যেমন, মেরির একাকীত্বকে এক কারাগার বলা হয়েছে, যা বোঝায় সে জীবনে কতটা বন্দি বোধ করে।
  • প্রতীক: এখানে বস্তু গভীর অর্থ প্রকাশ করে। যেমন, উপন্যাসে দহনকারী সূর্য দমন, কষ্ট আর উপনিবেশিক জীবনের ধ্বংসাত্মক শক্তির প্রতীক।
  • সূর্য: দমন ও কষ্টের প্রতীক। খামারে দহনকারী সূর্য সবসময় মেরিকে কষ্ট দেয়। এটি আফ্রিকার প্রকৃতির কঠোরতা এবং সেই চাপকে বোঝায় যা শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গ উভয়কেই ধ্বংস করে।
  • বাড়ি: একাকীত্ব ও পতনের প্রতীক। গরম আর ভাঙাচোরা বাড়িতে মেরি বন্দি বোধ করে। এটি তার একাকীত্ব, মানসিক দমবন্ধ অবস্থা এবং বিয়ের ব্যর্থতাকে প্রকাশ করে।
  • জমি: উপনিবেশিক সংগ্রামের প্রতীক। ডিক বারবার জমি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়। জমি যেন তাকে প্রতিরোধ করে। এটি আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ বসতি স্থাপনকারীদের স্বপ্নের ব্যর্থতাকে প্রকাশ করে।
  • মোজেস: প্রতিরোধ ও প্রতিশোধের প্রতীক। আফ্রিকান চাকর মোজেস মেরির সঙ্গে জটিল সম্পর্ক গড়ে তোলে। শেষে মেরিকে হত্যা করা নিপীড়িতদের উপনিবেশিক ক্ষমতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের প্রতীক।
  • বৃষ্টি: শুদ্ধি ও সমাপ্তির প্রতীক। শেষে মেরির রক্ত বৃষ্টির জলে মিশে যায়। এটি তার জীবনের ধুয়ে যাওয়া এবং শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যের প্রতীকী সমাপ্তি বোঝায়।

আরো পড়ুনঃ Heart of Darkness Bangla Summary

Moral Lesson:

  • Racism destroys humanity.
  • Loneliness weakens the soul.
  • Marriage can become a trap.
  • Suppression leads to violence.

Share your love
Mr. Abdullah
Mr. Abdullah

This is Mr. Abdullah, a passionate lover and researcher of English Literature.

Articles: 65

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *