প্রশ্নঃ উপনিবেশবাদ বলতে কি বুঝ?
ভূমিকা: আন্তর্জাতিক রাজনীতির ইতিহাসে ঔপনিবেশিক শাসন একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে শক্তিশালী দেশগুলো বিভিন্ন উপায়ে বিশ্বের বিভিন্ন দুর্বল রাষ্ট্রগুলোকে দখল করে ঔপনিবেশিক শাসন কায়েম করে। প্রাচীন মিশর, পারস্য, রোম, গ্রিস এবং প্রাচীন সভ্যতার কেন্দ্রভূমিগুলো যুদ্ধের মাধ্যমে অন্য দেশে নিজেদের উপনিবেশ স্থাপন করেছে।
উপনিবেশবাদ: উপনিবেশ শব্দটির প্রাচীন অর্থ অন্যত্র, দূরে, পরিত্যক্ত স্থানে আবাসস্থল নির্মাণ করে সাময়িকভাবে কিংবা চিরস্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করা। ঔপনিবেশিকতার আধুনিক অর্থ হচ্ছে এক জাতির উপর অন্য জাতির আধিপত্য বিস্তার। এ আধিপত্য বিস্তারের ফলে প্রধানত জাতি তার আপন ভাগ্য নির্ধারণের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামরিক ক্ষমতা হারায়।
আরো পড়ুনঃ সমকালীন বাংলাদেশের সমাজ ও সংস্কৃতির উপর নগরায়নের প্রভাব আলোচনা কর।
ব্যুৎপত্তিগত অর্থে উপনিবেশবাদ: ল্যাটিন শব্দ Colonia থেকে ইংরেজি Colony বা উপনিবেশ শব্দটির উৎপত্তি হয় । উপনিবেশ শব্দটির মূল অর্থ মানব সমাজের একটি স্থানান্তরিত অংশ।
উপনিবেশবাদের প্রামাণ্য সংজ্ঞা: আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিভিন্ন লেখক বিভিন্নভাবে উপনিবেশবাদের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিম্নে তাদের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সংজ্ঞা প্রদান করা হলো :
রুপার্ট এমারসন এর মতে, “উপনিবেশবাদ হলো কোন বিদেশি জনসাধারণের উপর দীর্ঘ সময় ধরে শাসন প্রতিষ্ঠা এবং তা বজায় রাখার ব্যবস্থা। ‘Encyclopaedia of Social Seience’ গ্রন্থে উপনিবেশবাদের দুটি অর্থ উল্লেখ করা হয়েছে (i) দেশীয় সীমান্তের বাইরে অপর কোন রাষ্ট্রীয় সীমানায় বসতি স্থাপন। (ii) রাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন কোন একটি ভূখণ্ডে যা উক্ত রাষ্ট্রের কাছে আনুগত্য প্রকাশ করে।
A. G. Frank উপনিবেশবাদের সংজ্ঞায় উল্লেখ করেছেন, “উপনিবেশবাদ হলো বিভিন্ন জনপদের মধ্যে আধিপত্যের জোরালো সম্পর্ক।”
আরো পড়ুনঃ ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনের প্রভাব আলোচনা কর
টাউনসেন্ড (Townsend) ও পিক (Peak) এর মতে, “উপনিবেশবাদ বলতে এক বিশেষ ধরনের শোষণকেই বুঝায়।”
উপসংহার: পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, উপনিবেশবাদ বলতে বুঝায় কোন অঞ্চলের মানুষের উপর সাম্রাজ্যবাদী নীতি অনুসরণকারী অন্য কোনো সার্বভৌম রাষ্ট্রের শাসন। তবে এ ধারণা সময়ের সাথে সাথে তাল মিলিয়ে পরিবর্তিত হচ্ছে।