প্রবেশন এবং প্যারোল কি? এদের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ কর।

প্রশ্নঃ প্রবেশন এবং প্যারোল কি? এদের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ কর।

প্রবেশন: প্রবেশন অর্থ “পরীক্ষাকাল”। প্রবেশন বলতে কোন অপরাধীকে তার প্রাপ্য শাস্তি স্থগিত রেখে, কারারুদ্ধ না রেখে বা কোন প্রতিষ্ঠানে আবদ্ধ না করে সমাজে খাপ খাইয়ে চলার সুযোগ প্রদান করাকে বোঝায়। অর্থাৎ প্রবেশন শব্দটি কিশোর অপরাধীদের ক্ষেত্রে জড়িত। কিশোররা সাজাপ্রাপ্ত হলে তাদের জেলখানায় না নিয়ে প্রবেশন অফিসারের তত্ত্বাবধানে রেখে সংশোধন করানো হয় যাতে ভবিষ্যতে আর অপরাধ না করে। প্রবেশন ব্যবস্থায় প্রথম ও লঘু অপরাধে আইনের সাথে সংঘর্ষে বা সংস্পর্শে আসা শিশু-কিশোরেরা বা অন্য কোন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তিকে প্রথম ও লঘু অপরাধে দায়ে কারাগারে বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে না রেখে আদালতের নির্দেশে প্রবেশন অফিসারের তত্ত্বাবধানে এবং শর্ত সাপেক্ষে তার পরিবার ও সামাজিক পরিবেশে রেখে কৃত অপরাধের সংশোধন ও তাকে সামাজিকভাবে একীভূতকরণের সুযোগ দেয়া হয়।

প্যারোল: যখন একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামী কে নির্দিষ্ট কারণে, নির্দিষ্ট সময়ের জন্য আইনের নজরদারিতে সাময়িক সময় এর জন্য ‍মুক্তি প্রদান করা হয়। ভিআইপি বা অন্যান্য সকল শ্রেণীর কয়েদী বা হাজতি বন্দীদের নিকট আত্মীয়ের যেমন বাবা-মা, শ্বশুর-শাশুড়ি, স্বামী-স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি এবং আপন ভাই বোন মারা গেলে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্যারোলে মুক্তি দেওয়া যাবে।

আরো পড়ুনঃ সমকালীন বাংলাদেশের সমাজ ও সংস্কৃতির উপর নগরায়নের প্রভাব আলোচনা কর।

ভিআইপি বা অন্যান্য সকল শ্রেণীর কয়েদী বা হাজতি বন্দীদের নিকট আত্মীয়ের মৃত্যুর কারণ ছাড়াও কোন আদালতের আদেশ কিংবা সরকারের বিশেষ সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্যারোলে মুক্তি দেয়া প্রয়োজন হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্যারোলে মুক্তি দেয়া যাবে। তবে উভয় ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও দূরত্ব বিবেচনায় প্যারোল মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষ সময় নির্ধারণ করে দিবেন। বন্দীকে সার্বক্ষণিক পুলিশ প্রহরাধীনে রাখতে হবে।

মুক্তির সময়সীমা কোন অবস্থাতেই ১২ ঘণ্টার অধিক হবে না তবে বিশেষ ক্ষেত্রে সরকার মুক্তির সময়সীমা হ্রাস বা বৃদ্ধি করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করবেন। কোন বন্দী জেলার কোন কেন্দ্রীয়, জেলা, বিশেষ কারাগার, সাব জেলে আটক থাকলে ওই জেলার অভ্যন্তরে যে কোনো স্থানে মঞ্জুরকারীকর্তৃপক্ষ প্যারোল মঞ্জুর করতে পারবেন। অপরদিকে কোনো বন্দি নিজ জেলায় অবস্থিত কেন্দ্রীয়, জেলা, বিশেষ কারাগার, সাব জেলে আটক না থেকে অন্য জেলায় অবস্থিত কোন কেন্দ্রীয়, জেলা, বিশেষ কারাগার, সাব জেলে আটক থাকলে গন্তব্যের দুরুত্ব বিবেচনা করে মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষ প্যারোল মঞ্জুর করতে পারবেন।

প্রবেশন ও প্যারোলের মধ্যে পার্থক্য

প্রবেশন ও প্যারোলের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। যেমন-

আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের জনসংখ্যা কাঠামোর বৈশিষ্ট্য সমূহ আলোচনা কর। 

পার্থক্যের বিষয়প্রবেশনপ্যারোল
১. মুক্তিপ্রবেশন ব্যবস্থায় অপরাধীকে কারাভোগের পূর্বেই মুক্তি দেয়া হয়।কিন্তু প্যারোল ব্যবস্থায় কিছুদিন সাজাভোগের পর অপরাধীকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেয়া হয়।
২. কার্যকরীতাপ্রবেশন ব্যবস্থা মূলত শিশু-কিশোরদের ক্ষেত্রে কার্যকরী।প্যারোল ব্যবস্থা মূলত বয়স্ক অপরাধীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়;
৩. মেয়াদপ্রবেশনের মেয়াদ স্বল্পকালীন।পক্ষান্তরে, প্যারোলের মেয়াদ দীর্ঘকালীন।
৪. মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্তপ্রবেশনারকে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় মূলত আদালত।কিন্তু প্যারোলে মুক্তি প্রদানের সিদ্ধান্ত দেয় প্যারোল বোর্ড।
৫. পরিবেশপ্রবেশনের বিচারব্যবস্থা ঘরোয়া পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়।পক্ষান্তরে প্যারোলের বিচারব্যবস্থা জনসম্মুখে হয়ে থাকে।
৬. শর্তভঙ্গের শাস্তিপ্রবেশনের শর্তভঙ্গ করলে বিচারের পুরো শাস্তি ভোগ করতে হয়।অন্যদিকে প্যারোলের শর্ত ভঙ্গ করলে বাকি মেয়াদের শাস্তি ভোগ করতে হয়।
৭. হেয় প্রতিপন্নপ্রবেশন ব্যবস্থায় অপরাধী হেয় প্রতিপন্ন হয় না।পক্ষান্তরে প্যারোলের পূর্বে অপরাধী জেল খাটার মাধ্যমে অনেকটাই হেয় প্রতিপন্ন হয়।
৮. সিদ্ধান্তপ্রবেশন মূলত বিচার বিভাগীয় সিদ্ধান্ত।পক্ষান্তরে প্যারোল একটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত।

উপসংহার: উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে, প্রবেশন ও প্যারোলের মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান। এর মাধ্যমে অপরাধীদের কল্যাণে বেশ কিছু সুবিধা প্রদান করা হয়।

Share your love
Riya Akter
Riya Akter

Hey, This is Riya Akter Setu, B.A (Hons) & M.A in English from National University.

Articles: 747

3 Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *