প্রশ্নঃ ১৮৩৪ সালের দরিদ্র সংস্কার আইনের গুরুত্ব লিখো।
ভূমিকা: ১৮৩৪ সালের দরিদ্র সংস্কার আইন ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ আইন ছিল যা দরিদ্রদের সহায়তা করার জন্য পূর্ববর্তী ব্যবস্থাগুলির পরিবর্তে একটি নতুন ব্যবস্থা চালু করেছিল। এটি ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যে দরিদ্রদের সহায়তার একটি কেন্দ্রীভূত ব্যবস্থা চালু করেছিল। এর আগে, দরিদ্রদের সহায়তা স্থানীয় সরকারের উপর নির্ভর করত, যা প্রায়শই অপ্রতুল বা অকার্যকর ছিল। এই আইনের ফলে, দরিদ্রদের সহায়তা একটি জাতীয় বিষয়ে পরিণত হয়েছিল এবং একটি কেন্দ্রীয় সরকার সংস্থা, পৌরসভা দরিদ্র আইনের পরিষদ দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল।
গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা: ১৮৩৪ সালের সংস্কার আইন মূলত সময়ের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে প্রণয়ন করা হয়। অর্থাৎ ১৬০১ সালের আইনের মাধ্যমে যা কিছু বাস্তবায়ন হয়নি। ১৮৩৪ সালের আইনের মাধ্যমে দরিদ্রদের জন্য বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করা হয়েছে। তাই যে সকল ক্ষেত্রে এ আইনকে গুরুত্বপূর্ণ বলে দাবি করা হয়। সেগুলো নিম্নরূপ:
আরো পড়ুনঃ বেকারত্ব কি? বাংলাদেশের বেকারত্ব দূরীকরণের উপায় সমূহ বর্ণনা কর।
১. অর্থনৈতিক ক্ষেত্র: অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ হতে বিচার করলে দেখা যায় যে, এ আইন সরকারের দরিদ্র আইন বাস্তবায়নের ব্যয়ভার অনেকাংশে হ্রাস করতে সক্ষম হয়। এ আইন প্রণয়নের তিন বছরের মধ্যে ইংল্যান্ডে দরিদ্র সাহায্য ব্যয় এক তৃতীয়াংশ কমে যায়। তাই W.A. Friedlander বলেন, “অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ১৮৩৪ সালের দরিদ্র সংখ্যার কম খরচ হয়েছে তাই এটি সফল।” এটা ১৮৩৪ সাল হতে ১৮৩৭ সালের মধ্যে দরিদ্রদের ত্রাণ বাবদ এক তৃতীয়াংশেরও অধিক খরচ কমিয়েছে।
২. রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে: এ আইন কাঠামোর আওতায় দরিদ্র আইন কমিশন বিভিন্ন অনুসন্ধানমূলক জরিপের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ইংল্যান্ডের দারিদ্র্যের প্রধান কারণ হিসেবে নিম্নশ্রেণির লোকদের মধ্যকার রোগ-ব্যধির ব্যাপকতাকে চিহ্নিত করে এর ফলে এ আইনে যে সমস্ত ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছিল তার মধ্যে ১৮৪০ সালে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধের জন্য সরকারিভাবে টিকাদান ব্যবস্থা ছিল উল্লেখযোগ্য। এছাড়া কলেরা, টাইফয়েড ও গুটিবসন্ত প্রতিরোধে বিনামূল্যে টিকাদানের ব্যবস্থা করা হয়।
৩. স্বাস্থ্যসেবা গঠন: সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতিকল্পে ১৮৪৭ সালে Poor Law Board গঠন করা হয়। এই বোর্ড এর কার্যকারিতা ও ক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে পার্লামেন্টের একজন সদস্যকে সভাপতির দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। এ কমিটি একটি জনস্বাস্থ্য আইন প্রণয়ন করে। বস্তি এলাকার বাসস্থান উন্নয়ন, পানি সরবরাহ, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন, মহামারি, সংক্রামক ব্যাধি ও বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধের জন্য কার্যকরি ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
৪. সমস্যা চিহ্নিতকরণ: প্রতিটি সমস্যার সমাধান করতে হলে না প্রথমত তাকে মূল উৎস অনুসন্ধান করতে হবে। সমস্যার উৎস | অনুসন্ধান করলেই এর সমাধান করা সহজ হবে। তাই এক্ষেত্রে ১৮৩৪ সালের আইনে সমস্যার উৎস অনুসন্ধান করার জন্য দরিদ্র আইন বোর্ড গঠন করে। এ বোর্ড যেসব সমস্যার জরিপ করে তা হলো:
আরো পড়ুনঃ গ্রামীণ সমাজসেবা কি? বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজসেবা কার্যক্রম গুলোর বর্ণনা দাও।
- অসহায়ত্বে অন্যতম কারণ রোগ ব্যাধির ব্যাপকতা।
- রোগ ব্যাধির কারণেই মানুষ সাহায্য নির্ভর হয়।
- অস্বাস্থ্যকর বাসস্থান এবং পুষ্টিহীনতা রোগ ব্যাধির মূল কারণ।
- শহরের বস্তি এলাকার ঘনবসতি ও অস্বস্তিকর পরিবেশ, ঝগড়া-বিবাদ, অপরাধ প্রবণতা, রোগ বিস্তার প্রভৃতির মূল কারণ।
- মৃতদেহের সৎকারের অব্যবস্থা মহামারির অন্যতম কারণ।
৫. সামঞ্জস্য বিধান: ১৮৩৪ সালের আইনের মাধ্যমে কাজের বিভিন্ন অংশ ও প্রশাসনের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করার চেষ্টা করা হয়। ফলে দ্বৈততা পরিহারসহ সময় শ্রম ও অর্থের অপচয় রোধ করা সম্ভব হয়। এছাড়া অন্যান্য আইনের সাথে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয়।
উপসংহার: এই আইনের ফলে, ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যে দরিদ্রদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়। দরিদ্রদের জন্য কাজের সুযোগ বৃদ্ধি পায় এবং তাদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের সুযোগও বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও, এই আইনের ফলে, ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যে দারিদ্র্য দূরীকরণে একটি নতুন নীতিমালা প্রবর্তিত হয়। এই নীতিমালার মূল উদ্দেশ্য ছিল দরিদ্রদেরকে স্বাবলম্বী করে তোলা।