প্রশ্নঃ দান সংগঠন সমিতি কি? এর মূল লক্ষ্য ও কার্যক্রম গুলো লিখ।
ভূমিকা: উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে শিল্প বিপ্লবের ফলে ইংল্যান্ড ও আমেরিকার সমাজে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। এই পরিবর্তনের ফলে দারিদ্র্য, বেকারত্ব, অপরাধ প্রভৃতি সামাজিক সমস্যার প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। এই সমস্যাগুলো সমাধানে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগেরও প্রয়োজন দেখা দেয়। এই প্রেক্ষাপটে ইংল্যান্ডের লন্ডনে ১৮৬৯ সালে প্রথম দান সংগঠন সমিতি গঠিত হয়। এরপর আমেরিকায়ও এই ধরনের সমিতির সংখ্যা বাড়তে থাকে।
মূল লক্ষ্য: দান সংগঠন সমিতির মূল লক্ষ্য ছিল বিভিন্ন ত্রাণ সংগঠনগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন করা। এছাড়াও এই সমিতির উদ্দেশ্য হলো:
আরো পড়ুনঃ বেকারত্ব কি? বাংলাদেশের বেকারত্ব দূরীকরণের উপায় সমূহ বর্ণনা কর।
- পুনরাবৃত্তি রোধের জন্য লন্ডনের বিভিন্ন দান সংগঠন সমিতির কার্যাবলির সমন্বয় সাধন;
- প্রত্যেক সংস্থাকে সংস্কার কাজের সাথে পরিচিত করা;
- সকল সাহায্যদানের বিষয়ে একটি রেজিষ্ট্রি ব্যুরো স্থাপন করা;
- বস্তুগত সাহায্যদানের পরিবর্তে দরিদ্রদের আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনে ব্যক্তিগত সেবা প্রদান; এবং
- দারিদ্র্য প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহণে উৎসাহিত হওয়া।
দান সংগঠন সমিতির প্রধান কার্যাবলি হলো:
- দারিদ্র্য ও অন্যান্য সামাজিক সমস্যার কারণ ও প্রভাবসমূহ অধ্যয়ন করা
- দারিদ্র্য ও অন্যান্য সামাজিক সমস্যা সমাধানে কার্যকর কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা
- দরিদ্র ও অসহায় ব্যক্তিদের সহায়তা করা
- দান সংগঠন সমিতির অবদান
আমেরিকার দান সংগঠন সমিতি
১৮৬১ সালে আমেরিকায় সৃষ্ট গৃহযুদ্ধ মানুষের সামগ্রিক জীবনে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে। ফলশ্রুতিতে ১৮৭৩ সালে অর্থনৈতিক মন্দার সৃষ্টি হয়। গৃহযুদ্ধের পর ১৮৬৯ সালে মন্দাবস্থা অনেক ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং সমষ্টিগত সমস্যা ও বিশৃঙ্খলা ডেকে আনে। অবস্থার প্রয়োজনে ইংল্যান্ডে ১৮৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত দান সংগঠন সমিতির অনুকরণে আমেরিকাতেও দান সংগঠন আন্দোলন শুরু হয়। ১৮৭৭ সালে আর. এইচ. গার্টিন নিউইয়র্কের বাফেলো শহরে সর্বপ্রথম দান সংগঠন সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন।
প্রধান তিনটি নীতিমালা অনুসরণ করে এই সমিতির কার্যক্রম পরিচালিত হতো:
১. স্থানীয় দান সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে বোর্ড গঠন করে এগুলোর মধ্যে সহযোগিতা স্থাপন করা।
২. কেন্দ্রীয়ভাবে দরিদ্রদের গোপনীয় তালিকা প্রস্তুত করা।
৩. বন্ধুভাবাপন্ন পরিদর্শকের মাধ্যমে সকল সাহায্যার্থীর সামাজিক অবস্থা তদন্ত সাপেক্ষে সাহায্যের ধরন নিরূপণ করা।
আরো পড়ুনঃ কিশোর অপরাধ কি? কিশোর অপরাধের কারণ গুলো আলোচনা কর।
সমাজকর্মের বিকাশে দান সংগঠন সমিতির ভূমিকা: দান সংগঠন সমিতি সমাজকর্মের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই সমিতির মাধ্যমে সমাজকর্মের পেশাগত রূপায়ণ শুরু হয়। দান সংগঠন সমিতির কার্যক্রমের ফলে সমাজকর্মের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত অবদানগুলি লক্ষ্য করা যায়:
- সমাজকর্মের একটি বৈজ্ঞানিক ভিত্তি গড়ে উঠে।
- সমাজকর্মের ক্ষেত্রে তত্ত্ব ও পদ্ধতির বিকাশ ঘটে।
- সমাজকর্মের ক্ষেত্রে পেশাদারতা বৃদ্ধি পায়।
- দান সংগঠন সমিতি এখনও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সমাজসেবা কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
উপসংহার: দান সংগঠন সমিতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বড় অবদান হলো ইংল্যান্ডে ও আমেরিকাতে আধুনিক পেশাদার সমাজকর্মের ভিত্তি স্থাপন ও বিকাশ সাধন। এর নীতিমালার আওতায় দরিদ্রদের প্রকৃত অবস্থা তদন্তের স্বার্থে সমাজকর্মের প্রশিক্ষণের উপর জোর দেয়া হয়। সুতরাং বলা যায় দান সংগঠন সমিতি হলো পেশাগত সমাজকর্মের বিকাশের প্রস্তাবক, ধারক ও বাহক।